যখন থেকে ধর্মের বীজ বোনা শুরু হয়েছে তখন থেকেই ধর্ম বিশ্বাসকে নৈতিকতার একমাত্র উৎস হিসেবে ধরা হয়েছে। পশ্চিমা বিশ্বে খ্রিস্ট ধর্ম আবির্ভাবের আগে থেকেই ধর্মকে নৈতিকতার উৎস হিসাবে পুঁজি করে মানুষদের মগজ ধোলাই করা হয়েছে, এবং ব্যাপক ভাবে প্রচার করা হয়েছে যে ধর্মই নৈতিক মূল্যবোধ শিক্ষার একমাত্র সম্বল।
আমাদের দেশের দিকে তাকালে আমারা দেখতে পারি ছোটবেলা থেকেই আমাদের মাথায় এই ব্যাপার গুলো খুব সুন্দর ভাবে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। যেমন আমাদের অনেকের ক্ষেত্রেই এমন হয় যে বাংলা শেখানোর আগেই বাসায় হুজর রেখে বা মসজিদ অথবা মক্তবে পাঠিয়ে আরবি শেখানো হয় যদিও সেটা কোন অর্থ বোঝা ছাড়াই পড়ান হয় । অনেক বাচ্চাদের বাবা-মাকে বলতে শোনা যায় এই সোনা এটা করে/বলে না আল্লাহ গোনা দিবে এইরকম আরও অনেক কিছু। অন্যান্য ধর্মানুসারিদের ক্ষেত্রেও একই । আমাদের ছোটবেলা থেকেই ধর্মের সাথে নৈতিকতাকে এক করে এমনভাবে ভাবানো হয় যেটা আমরা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরেও ভাবতে বাধ্য হই যে সমস্ত নৈতিকতা বুঝি ধর্ম থেকেই আয়ত্ত করা সম্ভব। কিন্ত আসলেই কি ধর্মের সাথে নৈতিক মূল্যবোধের আদ্যও কোন সংযোগ বিদ্যমান বা এটাই কি একমাত্র উৎস?
আমরা কি আসলেই নামজ, রোজা, হজ্জ, যাকাত পূজা পার্বণ করে নিজেদেরকে সমস্ত খারাপ কাজ থেকে দূরে রাখতে পারি। যদি তাই হত তাহলে পৃথিবীতে ধর্মের নামে এত মারামারি, হানাহানি, বিদ্বেষ, সন্ত্রাস কোথা থেকে আসে? এগুলি আসে এই কারনেই যে, আসলে ধর্ম কখনই মানবজাতির জন্য নৈতিকতার উৎস হিসাবে ভূমিকা রাখেনি। বরঞ্চ মানুষের মাঝে সমস্ত কুসঙ্কশার আর অন্ধকারের অন্যতম উৎস হচ্ছে এই সমস্ত ধর্ম। ধর্ম মানেই বেহেস্তের লোভ আর দোযখের ভয় । প্রতিটা ধর্মের বিদাতাই ভাল কাজ করলে পুরষ্কারের কথা বলে আর খারাপ কাজ করলে বলে শাস্তির কথা । সুতরাং এখান থেকে পরিষ্কার বোঝাই যায় যে পুরষ্কারের লোভটাই প্রধান। আর যেখানে পুরষ্কারই মুখ্য সেখানে নৈতিকতা শুধুই প্রদর্শন মাত্র । আমরা যদি একটু খেয়াল করে লক্ষ্য করি তাহলে দেখতে পাব পূজা, প্রার্থনা, নামাজ, রোজা, হজ্জ, যাকাত এগুলি সবই হচ্ছে নৈতিকতার ধার না ধেরে উপরওয়ালার এবং সাধারণ মানুষদের আশীর্বাদ পাওয়ার উন্মাদনা মাত্র । আর এ কারনেই আমরা দেখতে পাই মানুষের এবং সমাজের প্রতি যাদের অবজ্ঞা এবং প্রতারণা বেশি তারাই আল্লাহ-বিল্লাহ করে বেশি। বাংলাদেশের খুব কম রাজনৈতিক নেতা বা ব্যবসায়ী আছেন যাদের নামের আগে আলহাজ্ব নেই তার কারন এই “আলহাজ্ব” ব্যাপারটি মানুষের মধ্যে তাদের বিশ্বস্ত ও সম্মানী হিসেবে স্থান করতে সাহায্য করে । কাজেই দেখা যাচ্ছে ধর্মই একমাত্র ব্যবস্থা যেখানে সমস্ত আকাম কুকাম করেও পাড় পেয়ে যাওয়ার সুন্ধর উপায় বাতলে দেয়া আছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১১:৩৪