somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হ্রদ-পাহাড় ও সবুজের দেশে (পর্ব দুই)

১১ ই জুলাই, ২০১০ রাত ৮:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফ্ল্যাসব্যাক

হিরোর মত দৌড়াতে দৌড়াতে উঠেই গেলাম শ্রীমংগলগামী ট্রেইনে। টিকেট তো কাটি নাই। এখন জরিমানা করলে তো পুরা ধরা, এমনিতেই টাকা পয়সার অভাব। তাই টিটি ধরার আগে আমরাই টিটির হাতে ধরা দিলাম। আমরা যে কতটা অসহায়, ঘুরতে এসে সর্বস্ব খুইয়ে এখন পথের ভিখারী হয়ে গেছি তাই টিকেট কেনার টাকা নাই এই সহজ কথাটা টিটিকে বুঝাতে বেশী সময় লাগল না। বাংলাদেশ রেলওয়ের ইতিহাসে আমরাই মনে হয় প্রথম স্টুডেন্ট ফেয়ার(৬৬%)দিয়েছিলাম। ৪০টাকার ভাড়া ২০টাকা।টিটিকে দীর্ঘ জীবনের দোয়া দিতে চাওয়ায় সে বেশ ভাবের সাথেই এই দোয়াকে অভিশাপ হিসেবে গন্য করল। টাকা বাচানোর খুশি আর দুপাশের অকল্পনীয় সৌন্দর্য দেখতে দেখতে মন প্রশান্তিতে ভরে গেল। ঢাকা-সিলেট রেল পথ আমার দেখা সব চেয়ে সুন্দর। পড়ন্ত বিকেলে চা বাগানের পাশ দিয়ে ট্রেন যখন ঝিকঝিক শব্দে এগিয়ে যায় তখন পুরো দৃশ্যপট টাই বেশ স্বর্গীয় লাগে।
কুলাউড়া থেকে শ্রীমংগল পৌছাতে খুব বেশী সময় লাগে না। প্রায় ৩০মিনিটের মধ্যেই আমরা শ্রীমংগল স্টেশনে নেমে গেলাম। আহ...আবার শ্রীমঙ্গল। শ্রীমংগল স্টেশন আমার জন্য খুবই স্মৃতিবিজরিত, যতবারই এখানে আসি প্রতিবার নতুন করে ভাললাগে। এই রুটের সবচেয়ে কর্মব্যস্ত স্টেশন। কি দিন কিবা রাত, এখানের কোলাহল কখনও থামে থাকে না। হকারেরা কেউ শ্রীমংগলের বিখ্যাত লেবু বিক্রি করছে তো কেউ অতীব সুস্বাদু শ্রীমঙ্গলের ট্রেডমার্ক আনারস। যদি কেউ এই আনারস না খেয়ে থাকেন তাহলে একবার ট্রাই করে দেখবেন, আপনিও এর প্রেমে পরে যাবেন।

শ্রীমঙ্গল চৌরাস্তা
স্টেশন থেকে বেড়িয়েই কোন রকম একটা হোটেল ঠিক করে ফেললাম। স্টেশন রোড দিয়ে কিছুটা এগিয়ে গেলেই বেশ কয়েকটা হোটেল আছে। আপনার রূচি ও সাধ্য অনুযায়ী সব মানের হোটেলই পাবেন। প্রতিদিনের ভাড়া হিসেবে আপনাকে গুনতে হবে ১৫০-১২০০টাকা পর্যন্ত।
শ্রীমঙ্গল খুব ছোট একটা শহর। দেখলে আপনার মনেই হবে না যে এই শহরেই বাংলাদেশের চা শিল্পের এক বিরাট কর্মযঙ্গ চলে। চৌরাস্তা পার হলেই শহর শেষ, চা বাগানের শুরু। বিকেলে এখানে একটাই কাজ করা যেতে পারে, সেটা হল শ্রীমঙ্গলের আরেক ট্রেডমার্ক নীলকন্ঠের চা খাওয়া যেতে পারে। এর বিশেষত্ব হল বিভিন্ন রঙের লেয়ারের চা। প্রতি লেয়ার ১০ টাকা করে। ৫ লেয়ার ৭ লেয়ার পর্যন্ত আপনি চা খেতে পারেন। তবে আমার কাছে এই লেয়ার চা কেন জানি একদমই ভালো লাগে না। আমি কোন স্বাদ পাইনা। এর চেয়ে লেবু চা, গ্রীন টি, আর আদা দিয়ে তাদের স্পেশাল চা টাই আমার কাছে বেশী ভাল লাগে।

বিখ্যাত চা এর দোকান, নীলকন্ঠ
নীলকন্ঠ থেকে চা খেয়ে যখন রওনা দিলাম তখন শ্রীমঙ্গলের আকাশ গাঢ় অন্ধকারে ডুবে গেছে। আমরা শুরু করলাম হাইকিং। চমত্তকার পিচ ঢালা রাস্তা। আড্ডা দিতে দিতে শহরের দিকে হেটে যাচ্ছি। হঠাত দূর বাগানের মাঝ থেকে এক করুন বাশিঁর সুর শুনে থমকে দাড়াঁলাম। চারিদিকে অন্ধকার, আকাশে চাদঁ, চা বাগানের উপর লক্ষ লক্ষ জোনাকীর মিটমিটে আলো আর করুন সুরের আর্তি আমাদের বিমুগ্ধ করে রাখল বেশকিছুক্ষন। রাস্তার পাশেই বসে উপভোগ করলাম প্রকৃতির এই স্বর্গীয় রূপ। অনেক চেষ্টা করেও ক্যামেরায় রাতের ছবি তুলা যায় নি, তাই সেই মূহুর্ত গুলো শেয়ার করতে পারলাম না বলে দুঃখিত।
হোটেলে ফেরার সময় পেট্রোল পাম্প এর সামনে থেকে একটা জীপ রিজার্ভ করে নিলাম।পরদিন সকালে যাব লাউয়াছড়া রিসার্ভ ফরেস্ট।


রাস্তার দুপাশের বিস্তৃত চা বাগান, রাতে এখানেই জ্বলে মিটিমিটি জোনাকী

সন্ধ্যা রাতে ভেসে আসে করুন বাশিঁর সুর

পাচঁ লেয়ারের চা

পরদিন খুব ভোরে উঠে পরলাম। সময়মতই চলে আসল রিসার্ভ করা আমাদের সেই মান্ধাতার আমলের জীপ। লাউয়াছড়ায় পৌছাতে আধা ঘন্টার ও কম সময় লাগল। লাউয়াছড়া এখন একটি NGO দ্বারা রক্ষনাবেক্ষন করা হয়। এদের কিছু লিস্টেড গাইড আছে, তাদের নিয়েই আপনাকে বনে ঢুকতে হবে। এখানে হাটাঁর জন্য কয়েকটি বেশ ট্রেইল বানানো আছে। তাই হারিয়ে যাবার চিন্তা নেই। কিন্তু আপনি যদি হারিয়েই যাতে চান গভীর বনে তাহলে আমার এডভাইস হল গাইড নেবেন না। সাধারন ট্রেইলে হাটবেন না। যে দিক দিয়ে কোন পথ যায় নি সেখান দিয়েই হাটা ধরবেন। যাদের রক্তে adrenaline বেশী তারাই এই কাজটা করে দেখতে পারেন। নরমাল ট্রেইল দিয়ে বন দেখা আর নিজেই নিজের ট্রেইল তৈরী করে বন দেখার মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। কিন্তু এর বিপদ কিন্তু সাংঘাতিক। লাউয়াছড়ার ২টা জিনিস কে সবসময় মাথায় রাখবেন।
১। চিনে জোক- আপনার পায়ের উন্মুক্ত অংশে, আংগুলের ফাঁকে, হাতে, ঘাড়ে, গলায়...যে জায়গাতে গাছের পাতার সাথে আপনার শরীরের সংস্পর্শে আসবে সেখানেই এই রক্ত শোষা জোক কামড়ে ধরবে। আপনি বুঝতেও পারবেন না। রক্ত খাওয়া শেষ হলেই কেবল এরা আপনাকে ছেড়ে দেবে। এরপর ঐ জায়গা থেকে শুধু ব্লিডিং হবে। এমন ও কথা শুনা যায়, এই জোক নাকি আপনার যৌনাঙ্গ আর চোখ দিয়েও শরীরের ভিতর ঢুকে যেতে পারে।তাই গভীর বনে ঢুকার নিয়ত করলে সাথে লবন পানি রাখুন। আর জোক যখন ই দেখতে পারবেন এমন ভাবে বের করবেন যেন তার দাতেঁর অংশ ভিতরে না থেকে যায়।

কখন যে ধরল, টেরই পেলাম না

২। চোরা কাটাঁ- জোক কামড় দিলে বুঝা যায় না। কিন্তূ এই চোরা কাটাঁ সব সময় তার তীক্ষ্ণ কাটাঁ ফুটাতে ব্যস্ত থাকে। যে জায়গাতেই লাগুক ব্যথা তো পাবেনই সাথে জুটবে জ্বলুনি আর চুলকানি। ভাগ্য খারাপ থাকলে এলার্জিক reaction ও হতে পারে।


চল যাই গহিন বনে.।

শুরু হল বন

বনের মাঝ দিয়ে চলে গেছে ট্রেন লাইন

এই যে চলে আসছে ট্রেন....
আমরা একটা ছড়া দিয়ে হাটা শুরু করেছিলাম। আস্তে আস্তেই বন গভীর হয়ে গেল। মাঝে মাঝেই সামনে এগুনোর কোন পথ ছিল না। ছুড়ি দিয়ে গাছের ডাল কেটে কেটে বনের আরও গভীরে প্রবেশ করেছি। এর মধ্যেই কয়েক’শ বার জোক ধরেছিল। আর চোরা কাটাঁর কথা নাই বা বললাম। এমন জায়গায় ট্রেকিং করার একটা নিময় হল পিছনের জন সবসময় তার সামনের জনের হাত-পা কে নজরে রাখে। মাঝে মাঝে আমাদের ছড়ার পানিতে crawling ও করতে হয়েছে

গহিন বনের দিকে...

এমন ছড়াতেই থাকে জোক

গাছের পাতায় হাত লাগলেই চুলকানি

পাক্কা ৫ ঘন্টা ইচ্ছে মত ট্রেকিং করে আমরা গিয়ে পড়লাম একটা চা বাগানে। সেখানে পানির বোতল গুলো রিফিল করে আবার আমাদের জীপের দিকে ব্যাক করলাম। এই লাউয়াছড়া এডভেঞ্চার টা আমার সারাজীবন মনে থাকবে।অনেক কষ্ট হয়েছিল, কিন্তু মনে তখন এক অন্যরমক আনন্দ...
পরের পর্বে যাব এক অতীব সুন্দর হ্রদ দেখতে...
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুলাই, ২০১০ রাত ৮:৩৩
২৪টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×