somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার বান্দর বেলা [পর্ব দুই]

২৯ শে জুলাই, ২০১০ রাত ১:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঢং ঢং ঢং ঢং ঢং ঢং....ধড়ফড় করে উঠে বসলাম। কেয়ামত শুরু হয়ে গেল নাকি?? ঘুটঘুটে অন্ধকার, কিছু দেখা যাচ্ছে না। কি হচ্ছে কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। ধীরে ধীরে রুমের বাতি গুলো জ্বলে উঠল। কোথায় আছি, কেন আছি কিছু বুঝতে পারছি না। সব কিছু কেমন অচেনা মনে হচ্ছে।রায়হান ভাই, আমাদের সেকশনের prefect (রূমের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি)সবাই কে তাড়া দিয়া ঘুম থেকে তুলে দিচ্ছে।ওহ... এটা তাহলে ঘুম ভাঙ্গার বেল।হুকুম আসল ১৫মিনিটের মধ্যে ফ্রেশ হয়ে পিটি ড্রেস (নীল হাফ প্যান্ট, সাদা টি-শার্ট আর ক্যাম্বিস সু)পড়ে রেডি হতে হবে।
বাইরে তখনও আলো ফুটে নাই। জয়নুল আর কুদরতের মাঝখানের জঙ্গলের কাক গুলো কা কা করে ডাকা শুরু করেছে মাত্র। এমনই কাক ডাকা ভোরে এক ঝাঁক আধা ঘুমন্ত নিষ্পাপ বালক পিটি করতে শিশির ভেজা মাঠে পা রাখল।
সেটা পিটি না আর্মি ট্রেনিং এটা নিয়ে আমাদের সবসময়ই doubt ছিল। মাঠে নেমেই ২ চক্কর দৌড়। সবার সাথে তাল মিলায়ে দৌড়াইতে হবে, পিছিয়ে পরলেই পিঠে বোঝা নিয়ে আরো এক্সট্রা ২চক্কর। এই শাস্তি টা যে কি ভয়াবহ সেটা যে একবার ভোগ করেছে সেই ভালো জানে। তাই সবাই প্রানপনে দৌড়াত... ২চক্কর শেষ হওয়ার আগেই আমরা সবাই ভাদ্র মাসের কুকুরের মত হাঁফাচ্ছি।যেই একটু রেস্ট নিতে যাব, সাথে সাথে বাঁশি বেজে উঠল...এখন ২চক্কর জগিং...এরপর হাঁটা....কোমর ঘুরাও...হাত-পায়ের মাসল গুলো স্ট্রেচ কর...উঠ-বস কর...বুক ডাউন মারো...হাত-পায়ের কবজি ঘুরাও...আবার বুক ডাউন মারো...ওরে বাবা রে।ছাইড়া দে মা কাইন্দা বাঁচি অবস্থা। :(
অমানবিক এক ঘন্টা ড্রিলিং করে বিধস্থ হয়ে হাউসে ব্যাক করলাম। এখন ভাবতে খুব অবাক লাগে ...এটাও আস্তে আস্তে অভ্যাস হয়ে গেল। যত রাতেই ঘুমাই না কেন এখন ও আমার ৫টার দিকে ঘুম আপনা আপনি ভেঙে যায় (সাথে সাথেই আবার নতুন উদ্যোমে ঘুমাই...এটা অবশ্য আলাদা কথা)।

গরমের দিনে পিটি করা টা খুব কষ্টকর না হলেও শীতকালে সেটা থার্ড ডিগ্রি টর্চারের চেয়ে কিছু কম ছিল না। এমনি তেই শীতকালে ঘুম থেকে উঠা বেশ কষ্টকর। লেপের নীচ থেকে বের হতেই ইচ্ছা করে না। তার উপর যদি এত ভোরে উঠা লাগে তাহলে কেমন লাগে? আমাদের ক্যাম্পাস অনেক খোলামেলা তাই জব্বর কুয়াসা পড়ত। দু হাত দূড়ের কিছু দেখা যেত না। এমনই ঠান্ডার মধ্যে হাফ প্যান্ট পড়ে মাঠে দৌড়াতে কেমন লাগে আপনারাই বলেন?
ডিনারের পর থেকেই শুরু হত আমাদের সব নিষিদ্ধ কাজ কারবার। রাতে ১০টার মধ্যে ঘুমানোটা নিয়মের মধ্যে থাকলেও আমরা সেটায় বিশেষ আমল দিতাম না। রাত ২টা ৩টা পর্যন্ত নিষিদ্ধ কার্যে লিপ্ত থাকতাম। সেসব কাহিনী পরে বলব। কারন এখন ও আমি সিনিয়র হই নি।কিন্তু আমার বান্দর হওয়া শুরু হয়ে গেছে। ২মাস যেতে না যেতেই ১৫-২০মিনিট বেশী ঘুমানোর ট্রিকস আবিষ্কার করে ফেললাম।
নাইট গাউনের বদলে পিটি ড্রেস পড়ে ঘুমাতে যেতাম। এমন কি মুজ়ো টাও বাদ দিতাম না। সকাল হলে সবাই উঠে দৌড়া দৌড়ি করত। আর আমি আরামসে শুয়ে থাকতাম।শীতকালে লেপের নীচে গুটিশুটি মেরে শুয়ে থাকার মজাই আলাদা।ফাইলাল বেল পড়লে জুতো পড়ে ভদ্র ছেলের মত লাইনে গিয়ে দাঁড়াতাম।
রাতে ঘুমানোর সময় আমাদের নাইট গাউন পড়ে ঘুমাতে হত। এটা ছিল অবশ্য পালনীয় একটি নিয়ম। ছেলেরা ঠিক ঠাক মত নিয়ম মেনে ঘুমালো কিনা সেটা চেক করতে রাত ১২টার দিকে একটা কম পাওয়ারের টর্চ আর হাতে একটি বেত নিয়ে আমাদের হাউস টিউটর নজরুল স্যার রুমে রুমে হানা দিত। আমরা লেপের নীচে গুটিসুটি মেরে পড়ে থাকতাম। সেই সময় এমন ভাবে লেপ টাকে শরীরের নীচে গুঁজে রাখতাম যান স্যার লেপ তুলে দেখতে না পারেন আমরা কি পড়ে আছি।
স্যার ও কিভাবে যেন হঠাৎ করেই বেশ চালাক হয়ে গেল। আগে প্রতিদিন ঠিক ১২ টার দিকেই রাউন্ডে বের হতেন। কিন্তু হঠাৎ করেই তিনি অনিয়মিতভাবে হানা দেয়া শুরু করলেন। কোন দিন তিনি আসবেন, কখন আসবেন তার কোন ঠিক নাই। মহা মুসিবতে পড়া গেল। এত সাবধান থাকা যায়। যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়- একরাতে আমি ধরা খেয়ে গেলাম। এরপর যেই একটা বারি দিল হাতের তালুতে...। মনে পড়লে এখনো তীব্র জ্বলুনি টের পাই। X(
পিটি করার সময়ে আমরা অনেক মজা করতাম। মার্চ পাস্ট করার সময় সামনের জন কে ল্যাং মারাতাম। বেশী কিছু করা লাগত না- শুধু সামনের জনের ডান পা কে বাম দিকে ঠেলে দিলেই সে হুমড়ি খেয়ে পড়বে তার সামনের জনের উপর। এভাবে চেইন রিয়েকশন শুরু হয়ে যেত...সাথে সাথেই শুরু হয়ে যেত কিলা কিলি। এত কিছু হত কিন্তু সবই হত নিঃশব্দে। কথা বললেই তো শাস্তি পেতে হবে। আর শাস্তির যা বাহার ছিল...
কান ধরে মাঠ চক্কর, নীল ডাউন হয়ে মাঠ চক্কর, যার সাথে কথা বলছ তাকে ঘড়ে তুলে দৌড়াও-এক চক্কর তুমি ওর ঘাড়ে পরের চক্কর সে তোমার ঘাড়ে। কিন্তু সবচেয়ে বড় Irony হল এই মড়ার পিটি করার সময় ই দুনিয়ার কথা ঠোটের আগায় কিলবিল করত। পাশের জন কে কিছু না বলতে পারলে বুক টা খা খা করত।

পিটি'র একটা ঘটনা খুব মনে পড়ছে।
একবার ভোরে পিটি করছিলাম হঠাত্ দেখি সূর্যের একদিক কেমন যেন কালো হয় যাচ্ছে। মনে হচ্ছিল সূর্যকে কি যেন গিলে ফেলছে। আস্তে আস্তে একটা রিং এর মত হয়ে গেল। স্যার বললো এটা কে সূর্য গ্রহন বলে। আর পার্থ বললো এটা রাহুর কাজ। রাহু একটা রাক্ষস। সেদিন রাতেই রাহু-কেতুর কাহিনী শুনি। কে যে এই গল্পটা বলেছিল কিছুতেই সেটা মনে করতে পারছি না।গল্পটা কিন্তু বেশ মজার। আমার এখন ও বেশ মনে আছে

গল্পটা এমন-

রাহু কেতু দুই অসুর ভাই। দেবতাদের সাথে অসুরদের খালি মারামারি লাগত। কিন্তু অসুরেরা পারত না।খালি ধোলাই খাইত। দেবতারা অমৃত পান করত বলে তারা ছিল অমর।তো একবার এই রাহু কেতু অমৃত চুরি করে খেয়ে ফেলে। এটা আবার সূর্যদেব কি করে যেন দেখে ফেলে আর নারায়ণের কাছে চুকলি করে,নারায়ণ যিনি কৃষ্ণ নামে খ্যাত, তিনিই রাহুর মুন্ডচ্ছেদ করেন.. । দেবরাজ তখন সামসুর মত এক কোপে রাহুর গলা কেটে ফেলে। কিন্তু অমৃত পান করায় রাহু মরেনা। কাটা গলা নিয়াই সূর্যদেবকে সে গিলে ফেলে। কিন্তু কাটা মাথা দিয়ে সূর্যদেব আবার বের হয়ে আসে।রাহু আবার খায়, আবার বের হয়ে আসে....। (দীপান্বিতা আপু দ্বারা গল্পটা সম্পাদিত)

চলবে....

আমার বান্দর বেলা [পর্ব এক] - Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুলাই, ২০১০ রাত ৮:০৪
২৮টি মন্তব্য ২৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখনো নদীপারে ঝড় বয়ে যায় || নতুন গান

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২০

এ গানের লিরিক আমাকে অনেক যন্ত্রণা দিয়েছে। ২৪ বা ২৫ এপ্রিল ২০২৪-এ সুর ও গানের প্রথম কয়েক লাইন তৈরি হয়ে যায়। এরপর ব্যস্ত হয়ে পড়ি অন্য একটা গান নিয়ে। সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×