somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিখে নেই জীবন রক্ষাকারী কিছু পদ্ধতি [২]

০৩ রা আগস্ট, ২০১০ বিকাল ৩:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জ্বলন্ত আগুন সব সময়ই আকর্ষনীয়। এত বড় হবার পরেও হাতের সামনে জ্বলন্ত আগুন দেখলে একটু খোঁচা-খুঁচি না করে থাকতে পারিনা। বিশেষ করে সামনে মোমবাতি জ্বলতে দেখলে শিখার সাথে আঙ্গুল দিয়ে কাটাকুটি না খেললে তো জীবনটাই বৃথা মনে হয়। কিন্তু এই আগুনই ভয়াবহ সব দূর্ঘটনার জন্য দায়ী। নিমতলির সেই বিভৎস ট্রেজেডির কথা নিশ্চয়ই আমরা ভুলে যাই নাই। আগুন দিয়ে হাত-পা পুড়ে যাওয়া খুব অস্বাভাবিক একটি ব্যাপার না। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না আগুনে পুড়ে গেলে তাৎক্ষনিকভাবে কি কি প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে পারি। কত টুকু পুড়ে গেলে আমরা বাসাতেই এর চিকিৎসা করতে পারি আর কতটুকু পুড়ে গেলে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে এটাও অনেকে জানি না।

চলুন শিখে নেই আগুনে পুড়ে যাওয়ার কিছু জরুরী প্রাথমিক চিকিৎসা।

বাসা বাড়ীতে বিভিন্ন কারনে আগুন দিয়ে দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। সাধারনত গরম পানি, গরম জিনিস-পত্র (পাতিল, খুন্তি, কড়াই ইত্যাদি), রাসায়নিক পদার্থ (এসিড), কারেন্ট...
আগুনে পুড়ে যাবার তীব্রতার উপর ভিত্তি করে একে তিন ভাগে ভাগ করা যায়

ফার্ষ্ট ডিগ্রি বার্নঃ
সাধারনত ১ থেকে ২ ইঞ্চির মত জায়গা পুড়ে গেলে...।চামড়ার উপরের অংশ টা লাল হয়ে যায় আর ব্যথা করতে পারে সাথে জ্বলুনি ও হতে পারে। এটা খুব সিরিয়াস টাইপ পূড়া না বাসাতেই এর চিকিৎসা সম্ভব।

সেকেন্ড ডিগ্রি বার্নঃ
একটু বেশী পুড়ে গেলে...। এই ক্ষেত্রে চামড়ায় তীব্র ব্যথা হয়, পুড়ে যাওয়া স্থানে লাল রঙের ক্ষত দেখা দেয় এমনকি ফোস্কা ও পরতে পারে।
এই ধরনের পুড়া ক্ষত যদি খুব ছোট হয় (৩ইঞ্চির কম) তাহলে এর ট্রিটমেন্ট বাসাতেই করা সম্ভব।
কিন্তু এর বেশী পুড়ে গেলে অথবা যদি সেন্সেটিভ কোন জায়গা পুড়ে যায় (যেমন- মুখ)তাহলে দেরী না করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

থার্ড ডিগ্রি বার্নঃ
খুব বাজে ভাবে শরীরের কোন অংশ পুড়ে গেলে...। ৩ইঞ্চির বেশী অথবা সেন্সেটিভ কোন অংশ পুড়ে গেলে সাথ সাথেই তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। এ ক্ষেত্রে চামড়ার উপরের অংশের সাথে সাথে নীচের অংশের ও ক্ষতি হয়ে যায়। অনেক সময় নার্ভ পুড়ে যাওয়ার ফলে সেই জায়গায় কোন সেন্স ই থাকে না।
তাড়াতাড়ি হাসপাতাল দৌড়ান

ছোট-খাটো পুড়ে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা
১। সবার প্রথমেই পুড়ে যাওয়া অংশ টিকে ঠান্ডা করুন। এর জন্য কলের পড়ন্ত ঠান্ডা পানিতে (running tap water) ক্ষত স্থান টি ১০-১৫মিনিট ধরে রাখুন।

কখন ও বরফ সরাসরি ক্ষত স্থানে লাগাবেন না। এতে লাভের চাইতে ক্ষতি হবে বেশী।

২। ঠান্ডা হয়ে গেলে একটি পরিষ্কার গজ কাপড় দিয়ে ক্ষত স্থান টিকে হাল্কা করে ঢেকে রাখুন। বেশী জোরে পেঁচিয়ে রাখবেন না। তা হলে পুড়ে যাওয়া জায়গা থেকে গরম ভাপ রের হতে পারবে না, ফলে ফোস্কা পরে যাবে। ভুলেও তুলা দিয়ে ক্ষত জায়গা ঢাকবেন না। তুলা ক্ষত স্থানের সাথে লেগে যেতে পারে।
৩। ফোস্কা যদি পরেই যায় তাহলে সেটাকে গালাবেন না। ইনফেকশন হয়ে যেতে পারে।
৪। ক্ষত স্থানে ভুলেও কোন ধরনের তেল জাতীয় দ্রব্য (মাখন/ ক্রীম) লাগাবেন না। তেল জাতীয় পদার্থ ভিতরের তাপ কে ধরে রাখবে, বের হতে দিবে না। ফলে ক্ষত আর ও খারাপ হবে।
৫। ব্যাথা খুব বেশী হলে প্যারাসিটামল জাতীয় ড্রাগ খাওয়া যেতে পারে।
৬। সাবধান থাকতে হবে যাতে ইনফেকশন না হয়।
টুথ পেস্ট থেরাপী : আজকাল এটা বেশ জনপ্রিয় হয়ে গেছে। আগুনে পুড়ে যাবার সাথে সাথেই যদি সেখানে টুথ পেস্টের প্রলেপ দেয়া যায় তাহলে ব্যাথা খুব তাড়াতাড়ি চলে যায় আর ফোস্কা ও পরে না। অনেকেই আবার টুথ পেস্টের সাথে ডিমের সাদা অংশ মিশিয়ে প্রলেপ দিয়ে দেয়। কিছুক্ষনের মধ্যেই ম্যাজিকের মত ব্যাথা গায়েব হয়ে যায়। মনে রাখতে হবে পুড়ে যাবার সাথে সাথেই এই ট্রিটমেন্টে কাজ দিবে। দেরী করলে আর কাজ হবে না।
এর পরেও যদি ইনফেকশন হয়েই যায়, তাহলে সোজা ডাক্তার >>>


গরম পানি দিয়ে পুড়ে গেলে কি করব? ভিডিও দেখি

ফোস্কা পরলে কি করব ??

খুব বেশী পুড়ে গেলে (থার্ড ডিগ্রি/ সেন্সেটিভ কেস)
এই ক্ষেত্রে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। সেই সাথে নীচে বিষয় গুলো খেয়াল রাখবেন-
১। কাপড় যদি পোড়া জায়গায় লেগে থাকে তাহলে সেটা সরানোর চেষ্টা করবেন না।
২। ক্ষত স্থানকে একটি পরিষ্কার ও ভেজা কাপড় (গজ ব্যান্ডেজ হলে ভালো)হাল্কা ভাবে দিয়ে ঢেকে রাখুন। গজ না থাকলে ভেজা তোয়ালে ও ব্যবহার করতে পারেন।
৩। শরীরের খুব বেশী অংশ পুড়ে গেলে স্থির পানিতে ক্ষত স্থান ডুবিয়ে রাখা ঠিক না। এর ফলে রোগী শকে চলে যেতে পারে।
৪। সম্ভব হলে ক্ষত স্থান টিকে হার্ট লেভেলের উপরে রাখার চেষ্টা করুন। যদি আপনি শিওর না থাকেন তাহলে যেমন আছে সেভাবেই রেখে দিন আর হাসপাতালে নিয়ে যান।

পরিশেষেঃ আগুন খুবই দরকারী আর ভয়ংকর একটি শক্তি। এর সাথে পোংটামি না করাই ভালো। :-B
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা আগস্ট, ২০১০ বিকাল ৩:২৮
৩৪টি মন্তব্য ৩৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×