সেই প্রামাণ্যচিত্রে একজন আত্মঘাতীর সার্বক্ষণিক সঙ্গী তার খালাতো ভাইয়ের সাক্ষাৎকার নেয়া হলো। দীর্ঘ কালো কুচকুচে দাড়ির সেই প্রবল ধর্মবিশ্বাসী যুবকটি যা বললো, তা বিস্ময়কর। তাকে উত্তেজিত মনে হলো না। ফ্যানাটিক বলতে যে ছবি আমাদের চোখের সামনে ভাসে, তার সাথে তার কোনো মিল নেই। তার গলার স্বর অত্যন্ত নীচু। তার কণ্ঠে ভক্ত-পূজারীর নিবেদন। সে জানালো, "এরা আত্মঘাতী নয়, তারা কোরানের নির্দেশ পালন করছে, আল্লাহর আইনকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করার জন্য তারা জীবন দিচ্ছে। এ জীবন তো তুচ্ছ বিষয়। তাদের জন্য পরকালে অপেক্ষা করছে অসীম সুখের জীবন। "
"যদি আমার সেই সাহস থাকতো তবে আমিও জীবন দিতাম আল্লাহর পথে। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমা করবেন আমার এই ভীরুতাকে।"
এই যুবকের সাথে দেখা হয়েছিল পররাষ্ট্র মন্ত্রী জ্যাক স্ট্র-এর। পাশের চেয়ারে বসা জ্যাককে এই যুবক অত্যন্ত ঠান্ডা গলায় বলেছে, " কোরানের সংজ্ঞা অনুযায়ী তুমি আমার শত্রু। তুমি আল্লাহর আইনের বিরোধী। তোমাকে হত্যা করা আমার জন্য অশেষ সওয়াবের। নিশ্চয়ই আমি সুযোগ পেলে আল্লাহকে খুশি করবো।"
এসব কথা নিতান্ত পাগলের প্রলাপ মনে হতে পারে। কিন্তু যেহেতু সমস্যার গোড়াকে আমরা নিমর্ূল না করে টিকিয়ে রাখি সেহেতু সত্যিকার বিষয়টি চাপা পড়েই থাকে। যারা এরকম আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করছে তাদের যুক্তিটা অকাট্য। যদি কোরান সত্যি হয়, যদি কোরানের বক্তব্য বাস্তবায়নের দায়িত্ব মুসলমানের উপর বর্তায়, তবে এদের কার্যক্রমকে ধর্মবিরোধী বলার উপায় নেই। একজন ধর্মবিশ্বাসী, যে চূড়ান্ত সত্য জানে সে সেই সত্য পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করার জন্য আপ্রাণ লড়াই করবে, এটাকে স্বাভাবিক মানবীয় গুণই বলা যায়। তাই সারা পৃথিবীতে নানা ধরনের মুসলিম থাকলেও অন্তর থেকে কেউ এসব আত্মঘাতী বোমাবাজদের ঘৃণা করেন না, বরং একধরনের সহানুভূতির দৃষ্টিতেই ব্যাখ্যা করেন তাদের কার্যক্রম। কারণ তাদের ধর্মের প্রাধান্য তারাও দেখতে চান।
মৌলবাদ তাই গণতন্ত্র বিরোধী। গণতন্ত্র হচ্ছে by the people- জনগণের শাসন। কিন্তু কিছু কিছু ধর্মের রয়েছে নিজস্ব আইন ব্যবস্থা, যা তারা দাবী করেন ঈশ্বরের আইন হিসেবে এবং সেই আইন তারা প্রতিষ্ঠিত দেখতে যান বিশ্বজুড়ে। মুসলিমদের শরিয়া এবং ইহুদিদের হালাকা তেমনি কিছু নীতি-পদ্ধতি। এসব নীতি-পদ্ধতিতে জনগণের ইচ্ছা বা ভূমিকার কোনো সুযোগ নেই। মূলত: আল্লাহ-খোদা-ঈশ্বরের নামে ধর্মীয় নেতাদের ফতোয়ায় পৃথিবী চালানোর ইচ্ছা তাদের।
গণতন্ত্র যখন ক্ষমতা জনগণের হাতে তুলে দিতে চায়, দেশ চালাতে চায় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে, বিচার ব্যবস্থায় আসে জনমত ও জুরিদের চিন্তা-চেতনার প্রতিফলন তখন কতটা অন্যায় হওয়ার আশংকা থাকে? এসব পদ্ধতি কি ধর্ম, ঈশ্বর ও ধর্মগ্রন্থের প্রতিপত্তিতে ধ্বস নামায়? গণতন্ত্রকে ধর্মের কেন এত ভয়?