কার্তিকের ধানের মঞ্জরী সাক্ষী
সাক্ষী তার চিরল পাতার টলমলে শিশির
সাক্ষী জ্যোৎস্নার চাদরে ঢাকা নিশিন্দার ছায়া
অকাল বার্ধক্যে নত কদম আলী
তার ক্লানত্দ চোখের অাঁধার
আমি চিনি, আমি তার চিরচেনা স্বজন একজন।
আমি জমিলার মা'র
শূন্য খা খা রান্নাঘর শুকনো থালা সব চিনি
সে আমাকে চেনে।
হাত রাখো বৈঠায়, লাঙলে, দেখো
আমার হাতের স্পর্শ লেগে আছে কেমন গভীর। দেখো
মাটিতে আমার গন্ধ, আমার শরীরে
লেগে আছে এই সি্নগ্ধ মাটির সুবাস।
আমাকে বিশ্বাস করো, আমি কোনো আগন্তুক নই।
মাহবুব সাদিক ও আবিদ আনোয়ারের সম্পাদনায় অনন্যা প্রকাশ করেছে সংকলনটি। সম্পাদকদের ভূমিকাটা উপরি-পাওনা। হুমায়ুন আজাদের নি:সঙ্গ শেরপা থেকে একটি উদ্ধৃতি দেয়া আছে আধুনিক বাঙলা কবিতা সম্পর্কে, সংক্ষেপিত কিন্তু তার সমালোচনার ধার কত তীব্র ছিল তা বুঝার জন্য যথেষ্ট। তুলে দিচ্ছি...
চলিস্নশের দশকে, যখন আধুনিক কবিতার প্রতিষ্ঠা পাকা হয়ে গেছে, তখন যাঁরা বাঙলা কবিতার অঙ্গনে আসেন, তাঁদের এক গোত্র: ফররুখ আহমদ, আহসান হাবীব, সিকান্দার আবু জাফর, আবুল হোসেন, সৈয়দ আলী আহসান, গোলাম কুদ্দুস, মতিউল ইসলাম, আজিজুর রহমান, তালিম হোসেন.... এদের মধ্যে মনোযোগ আকর্ষণ করেন মাত্র চারজন: ফররুখ আহমদ, আহসান হাবীব, আবুল হোসেন ও সৈয়দ আলী আহসান...ফররুখ আহমেদের 'সাত সাগরের মাঝি' কতিপয় স্মরণীয় কবিতাখচিত হওয়ার সত্ত্বেও আধুনিক চেতনার শস্য নয়। উচ্চকণ্ঠ এ-কবি নজরুল ইসলামের পরিশীলিত উত্তরাধিকারী;- জীবনবোধ, কাব্যভাবনা, আঙ্গিকচেতনা ও সংবেদনশীলতায় তাঁর কবিতা আধুনিকতার স্পর্শরহিত....
....আহসান হাবীবের প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'রাত্রিশেষ' বেরোয় 1947-এ; এবং এ-কাব্যেই সর্বপ্রথম একজন মুসলমান কবি ব্যাপক বিংশশতকী চেতনাসহ আত্মপ্রকাশ করেন...
********************************
উল্টে পাল্টে দেখলাম সংকলনটি। কয়েকটি কবিতা পড়লাম। অন্য সময় আবার পড়া যাবে। একটি কবিতা বেছে বের করলাম ব্লগে দেয়ার জন্য:
দোতলার ল্যান্ডিং
মুখোমুখি ফ্ল্যাট
একজন সিঁড়িতে, একজন দরজায়
: আপনারা যাচ্ছেন বুঝি?
: চলে যাচ্ছি, মালপত্র উঠে গেছে সব।
: বছর দুয়েক হলেঅ, তাই নয়?
: তারো বেশি। আপনার ডাকনাম শানু, ভালো নাম?
: শাহানা, আপনার?
: মাবু।
: জানি।
: মাহবুব হোসেন। আপনি খুব ভালো সেলাই জানেন।
: কে বলেছে। আপনার তো অনার্স ফাইন্যাল, তাই নয়?
: এবার ফাইন্যাল।
: ফিজিক্সে-এ অনার্স।
: কী আশ্চর্য। আপনি কেন ছাড়লেন হঠাৎ?
: মা চান না। মানে ছেলেদের সঙ্গে বসে...
: সে যাক গে, পা সেরেছে?
: কি করে জানলেন?
: এই আর কি? সেরে গেছে?
: ও কিছু না, প্যাসেজটা পিছলে ছিলো মানে...
: সত্যি নয়। উঁচু থেকে পড়ে গিয়ে...
: ধ্যাৎ। খাবার টেবিলে রোজ মাকে অত জ্বালানো কি ভালো।
: মা বলেছে?
: শুনতে পাই। বছর দুয়েক হোল, তাই না।
: তারো বেশি। আপনার টবের গাছের ফুল এসেছে?
: নেবেন? না থাক। রিকসা এলো, মা এলেন, যাই।
: যাই। আপনি সন্ধে বেলা ওভাবে কখনো পড়বেন না, চোখ যাবে, যাই।
: হলুদ শার্টের মাঝখানে বোতাম নেই, লাগিয়ে নেবেন, যাই।
: যান, আপনার মা আসছেন। মা ডাকছেন, যাই।
*****************************
হাসান মোরশেদকে শুভেচ্ছা। পুরো সংকলনটাই যে তার শুভেচ্ছায় পাওয়া।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



