somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খালি পিডাইতে ইচ্ছা করে - ৮

২১ শে মে, ২০১২ রাত ১০:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




অনিয়মিত এই সিরিজটা যারা আগে পড়েননি, তাদের জন্য কয়েকটা কথা বলা যেতে পারে। এই লেখাগুলোতে আমি এমন কিছু ঘটনা শেয়ার করে থাকি, যেগুলো আমার সাথে ঘটে। এমন কিছু ঘটনা যেগুলো বেশ বিরক্তিকর। মেজাজ খারাপ করে দেবার জন্যে যথেস্ট। ঘরে বাইরে যথেস্ট ঠান্ডা মেজাজের মানুষ হিসেবে পরিচিত বলেই তাৎক্ষণিকভাবে কিছু করা সম্ভব হয়ে ওঠেনা। তাই ব্লগের পাতায় মনে ক্ষোভ টুকু উগড়ে দেয়া!

আচ্ছা এবারে শুরু করি তাহলে!

ঘটনা ১
মাস তিনেক আগে। সিটিং সার্ভিসের বাসে চড়ে ভার্সিটি যাচ্ছি। বড়জোড় ১০-১৫ মিনিটের রাস্তা। চলতি পথে অনেক হকার ওঠে গাড়িতে, নানান রকম পণ্যের পসরা নিয়ে, একথা সবাই জানেন। কমবয়সী বা শিশু হকারদের সংখ্যাও কিন্তু অনেক। সেদিন একরকমই একটি ১০-১১ বছরের বাচ্চা উঠেছিলো বাসে নিউজপেপার বিক্রি করতে। চলতি পথে হটকেকের মতো চলে তো কেবল কমদামী নিউজপেপারগুলোই। ওই ছেলেটাও সেগুলোই বিক্রি করছিল। আমার সিটটা ছিলো বাসের মোটামুটি শেষের দিকে। বাস প্রায় ভর্তি থাকলেও পেছনের একটা তিন সিটের আসনে উইন্ডো সিটে একটা আল্ট্রামর্ডার্ণ ছেলে (যাদের আজকাল আমরা ডিজুস জেনারেশন বলি) বসে ছিলো। বাকী দুটো সিট ছিলো খালি। তো নিউজেপার বিক্রেতা ছেলেটা মনে হয় সকাল থেকে কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলো, সে অই ফাকা সিট দুটোর একটায় বসে পড়লো। সাথে সাথে ছেলেটা চিৎকার করে উঠল- ফকিন্নির বাচ্চা এখানে বসছস ক্যান? অথচ ছেলেটা আর বাচ্চাটার মাঝে একটা সিটের ব্যবধান! বাচ্চাটা অবাক হয়ে তাকাল, তারপর উঠে দাঁড়াল। আমি হতবাক হয়ে ছেলেটাকে ভালো করে খেয়াল করলাম চুলে কালার, কানে রিং পড়া, ট্রাইসেপসের উপর দিয়ে আধখানা ট্যাটু দেখা যাচ্ছে। হাতে একটা লেটেস্ট মডেলের আইফোন। সহজাত রিফ্লেক্সে আমি বলে ফেললাম, এটা পালবিক ট্রান্সপোর্ট। ও বসলে সমস্যা কোথায়? আমি ভেবেছিলাম আশেপাশের অন্যান্য যাত্রীরা আমাকে সমর্থন দেবে, কারণ ছেলেটা কথাটা এতই জোরে বলেছিলো যে আশেপাশের অনেকেই খেয়াল করেছিলো। কিন্তু আবারো অবাক হলাম! উলটো আমার সাথে একজন তর্ক করতে উদ্বুদ্ধ হলো, হকার বাচ্চাটা তো টিকেট কেটে বাসে উঠেনি যে তার সিটে বসার অধিকার আছে হ্যান ত্যান... আমি আর কথা বাড়াই নি। তবে সেই মূহুর্তে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছিলো- এইসব ছেলেদের বাপ-মায়ের মাথার ঘাম পানি করা পরিশ্রমে আজ বেঁচে আছিস, এদের জমি আত্নসাৎ করা টাকায় তোদের আইফোন কেনা। বেজন্মা ফকিন্নির বাচ্চা যদি কেউ হয় তাহলে সেটা তোরা, অই বাচ্চাটা না!


ঘটনা ২
আর জে এস সি তথা "অফিস অফ রেসিস্ট্রার অফ জয়েন্ট স্টক কোম্পানীজ অ্যান্ড ফার্মস" নামটা অনেকেই শুনে থাকবেন হয়ত। এখানেই একটা সোসাইটি নিবন্ধনের প্রয়োজনে যেতে হয়েছিলো কয়েক মাস আগে। এখন অনলাইনেই রেজিস্ট্রেশনের আবেদন সংক্রান্ত সকল কাজ সেরে ফেলা যায়- সুতরাং আমিও আর কষ্টকর কাগুজে মাধ্যমে না গিয়ে অন্তর্জালেই সেরে ফেললাম সবকিছু। রেজিস্ট্রি ফি টাও জমা দিয়ে আসা হলো। এরপর দিন যায় মাস যায় "পেন্ডিং রেজিস্ট্রেশন" স্ট্যাটাস টা আর পালটায় না। উপায়নন্তর না দেখে অফিসে গেলাম। ইনফরমেশন সেকশন থেকে তথ্য নিয়ে প্রথমে এক ভদ্রলোকের কাছে গেলাম। উনি আমাকে নানাবিধ প্রশ্ন করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন যে আমার কাজ ওনার সাথে না, তমুক সাহেবের সাথে। গেলাম ওনার ডেস্কে। সেখান থেকে আরেক ডেস্ক, আরেক ডেস্কে পাঠানো হলে বুঝতে পারলাম এসব আসলে সময়ক্ষেপণের কৌশলমাত্র, কিছু উপরি না দিলে রেজিস্ট্রেশন মিলবে না। ৮৫০ টাকা রেজিস্ট্রেশন ফি হলে উপরি কত হবে এটা নির্ধারণ করছিলাম মনে মনে, পাশ থেকে একজন এগিয়ে এলো। বেশ কিছু প্রশ্ন করলো আমাকে, ক্যানো এসেছি কি কাজ ইত্যদি। আমি তখনই বুঝতে পারলাম ভদ্রলোক দালাল। আমি তার সব প্রশ্নের ঠিকঠাক জবাব দিয়ে গেলাম। কারণ শেষে কি বলে জানার আগ্রহ হচ্ছিলো খুব। কথাবার্তা শেষ করে উনি জানালেন। ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে নাকি যেকোন রেজিস্ট্রেশন করিয়ে দেবেন। তমুক অ্যাসোসিয়েটস এর একটা ভিজিটিং কার্ড ও ধরিয়ে দেয়া হলো। আমি এমন ভাব করলাম, যে টোপ গিলে ফেলেছি। প্রথমে অফিস থেকে নিচে নামলাম। লোকটাও নামছে আমার সাথে। এদিক ওদিক ঘুরে একটা ফটোকপির দোকানে ঢুকে অপ্রয়োজনীয় কিছু ডকুমেন্ট কপি করালাম। উনি আমার সঙ্গেই আছে। তারপর হেঁটে হেঁটে বেশ দুরের একটা ডিবিবিএল বুথে গেলাম। টাকা তুলতে গিয়ে একটু দূরে দাঁড়ানো লোকটাকে বললাম আচ্ছা আপনি কি আমার জন্যে নিচে নেমেছেন? (আমি তো জানিই!) উনি বললেন- হ্যাঁ। আমি একটা বোকাবোকা হাসি দিয়ে বললাম, আজকে তো আমি আর যাবো না ওখানে। অন্য কাজ আছে আমার। স্যরি! লোকটার চেহারা হয়েছিলো দেখার মতো। অবশেষে কারওয়ান বাজারের সিগন্যালে এসে মনে মনে বললাম, রেজিস্ট্রেশনের ক্ষ্যাতা পুড়ি!

বোনাস হিসেবে মাথায় জেগেউঠলো অমর সেই বাণীঃ বাংলাদেশে খুনের লাইসেন্স লাগে না, ভালো কাজ করতে লাইসেন্স লাগে।



আজ এপর্যন্তই। ভালো থাকবেন সবাই!

আগের পর্বগুলো এখানে!
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ১০:০৬
২১টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×