ধারণা করা হয়, মিটিং সংক্রান্ত ভুলের কারণে আমেরিকান ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলি বছরে ৩৭ বিলিয়ন ডলার গচ্চা দিয়ে থাকে। স্টিভ জবস অ্যাপলকে তেমন কোম্পানির একটা হতে দেন নাই। কিংবদন্তীর সিইও জবস নিচের ৩ উপায়ে মিটিং লাইনে রাখতেন।
১. যতটা সম্ভব আকারে ছোট রাখতেন মিটিং
জবসের দীর্ঘদিনের সহকর্মী ছিলেন কেন সিগ্যাল। জবসের সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা নিয়ে তার বই ‘ইনসেইনলি সিম্পল’।
কেন সিগ্যাল-এর বই ‘ইনসেইনলি সিম্পল’
অ্যাপলের সাবেক ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর অব অ্যাডভার্টাইজিং কেন সিগ্যাল
এ বইয়ের একটা গল্প এরকম। অ্যাড এজেন্সির সাথে অ্যাপলের সাপ্তাহিক মিটিং শুরু হবে একটু পরে। জবস হঠাৎ করেই একজনকে লক্ষ্য করলেন। সিগ্যাল লিখেছেন, জব একদম থমকে যান। মিটিং রুমের একটা জিনিসের দিকে তিনি এমনভাবে তাকিয়ে থাকেন যে মনে হচ্ছিল কোথাও সমস্যা আছে। হঠাৎ করেই জবস লরিকে পয়েন্ট করে জিজ্ঞেস করলেন, “আপনি কে?’’
লরি তখন শান্তভাবেই তাকে বুঝিয়ে বলেন যে, তাকে এই মিটিংয়ে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে, কারণ তিনি মার্কেটিং প্রজেক্টের একটি অংশ।
জবস তার কথা শুনলেন। এরপর ভদ্রভাবে তাকে মিটিং থেকে চলে যেতে বললেন। বললেন, “আমার মনে হয় না এই মিটিং-এ আপনাকে আমাদের দরকার হবে, লরি।”
নিজের ব্যাপারেও একই রকম নির্মম ছিলেন তিনি। একবার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা টেক জগতের কেউকেটাদের ছোট আয়োজনে তাকে আমন্ত্রণ জানালে তিনি সে অনুষ্ঠানে যেতে রাজি হন নাই। জবসের আপত্তি ছিল, প্রেসিডেন্ট তার রুচির সঙ্গে যায় না এমন খুব বেশি সংখ্যক লোকজনকে দাওয়াত দিয়ে ফেলেছেন।
২. জবস নিশ্চিত করতেন, এজেন্ডার প্রত্যেকটা বিষয়ে নির্দিষ্ট কারো দায়িত্ব রয়েছে
২০১১ সালে অ্যাপলের এক ‘ফিচার ইনভেস্টিগেটিং কালচারে’ ফরচুনের রিপোর্টার অ্যাডাম ল্যাশিনস্কি জবসের ব্যবহৃত আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ার কয়েকটি নিয়ে ডিটেইল রিপোর্ট করেন। এই প্রক্রিয়াগুলির কারণেই অ্যাপল বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান কোম্পানিগুলির একটি হতে পেরেছে। জবসের মানসিকতার সবচেয়ে কার্যকর জায়গা ছিল ‘জবাবদিহীতার মানসিকতা’। এর মানে হলো, কাজ এমনভাবে চলত যাতে প্রত্যেকেই জানত কোন কাজের দায়িত্ব কার।
অ্যাডাম ল্যাশিনস্কি
ল্যাশিনস্কি এভাবে লিখেছেন—
এমনকি অভ্যন্তরীণ অ্যাপলস্পিকের একটা নামও—‘ডিআরআই’—অর্থাৎ, ডাইরেক্টলি রেস্পনসিবল ইন্ডিভিজুয়াল অথবা সরাসরি দায়ী ব্যক্তি। প্রায়ই অ্যাপলের মিটিং-এর এজেন্ডায় সেই ডিআরআই’র নাম দেখা যেত, ফলে সবাই-ই জানতো কে দায়ী বা কাজটির দায় কার ওপর। অ্যাপলের এক প্রাক্তন কর্মচারী বলেছেন, অ্যাপলের কার্যকরী যেকোনো মিটিং-এ একটা অ্যাকশন লিস্ট থাকতো। প্রতিটি অ্যাকশন বা কাজের সাথে ডিআরআই-এর নাম থাকত। কেউ যখন জানতে চাইত কোনো প্রজেক্টের জন্য আসলে কার সাথে যোগাযোগ করতে হবে, সেই ডিআরআই-এর নাম আশেপাশে এতই শোনা যেত যে সে তা বুঝে নিতে পারত।
এই পদ্ধতি কাজ করে। গ্লোরিয়া লিন অ্যাপলের আইপড টিম থেকে ফ্লিপবোর্ডের প্রোডাক্ট টিমে চলে আসেন এবং সাথে করে ডিআরআই-দের নিয়ে আসেন। শুরুর দিকে তারা খুবই সহায়তা করেছিল। কিউরা-তে গ্লোরিয়া লিন লিখেছেন, ‘ দ্রুত বেড়ে উঠতে থাকা একটা কোম্পানিতে প্রচুর এবং প্রচুর কাজ থাকে, অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ টেবিলে পড়ে থাকে তার কারণ এই না যে লোকজন দায়িত্বহীন, কারণ তারা আসলেই খুব ব্যস্ত। যখন আপনি কোনো কিছুকে আপনার সন্তানের মত মনে করবেন তখন আপনি সেটা সম্পর্কে আসলেই যত্ন নিবেন।
৩. জবস পাওয়ার পয়েন্টের আড়ালে লুকাতে দিতেন না কাউকে
‘স্টিভ জবস’ বায়োগ্রাফির লেখক ওয়াল্টার আইজ্যাকসন বলেছেন, ‘জবস ফর্মাল প্রেজেন্টেশন খুবই অপছন্দ করতেন, কিন্তু তিনি জড়তাবিহীনভাবে সামনাসামনি কথা বলা পছন্দ করতেন
ওয়াল্টার আইজ্যাকসন
প্রতি বুধবার বিকালে তিনি একটি এজেন্ডা-বিহীন মিটিং করতেন তার মার্কেটিং এবং বিজ্ঞাপনী টিমের সাথে। স্লাইড শো নিষিদ্ধ ছিল। কারণ জবস চাইতেন তার টিম প্রযুক্তির দিকে না ঝুঁকে প্যাশনেটলি তর্ক করুক এবং ক্রিটিক্যালি চিন্তা করুক।
জবস একবার আইজ্যাকসনকে বলেছিলেন, লোকজন চিন্তা করার বদলে যেভাবে স্লাইড প্রেজেন্টেশন দেয় তা আমি পছন্দ করি না। লোকজন প্রেজেন্টেশন তৈরি করে কোনো সমস্যাকে মোকাবেলা করে। আমি চাই তারা সমস্যাটির সাথে জড়িত হোক, অনেকগুলি স্লাইড দেখানোর বদলে টেবিলে বসে আলোচনা করুক। যারা ভালোভাবে জানে তারা কী ব্যাপারে কথা বলছে তাদের পাওয়ারপয়েন্ট প্রয়োজন হয় না
সূূত্রঃ এফএফপি নিউজ