গত ৩ বছরধরে আমার লাইফের সবচেয়ে বেশী সময় কেটেছে নীলক্ষেতে। ওখানটায় একটা বইয়ের দোকানে প্রায়ই যাই, বসে থাকি, বই দেখি, বই কিনি, বই বিক্রি দেখি, ভালো লাগে আমার। অনেকেই বই কেনে, কবিতার বই, হাদিসের বই, গল্পের বই (যদিও সেই দোকানে গল্পের বইয়ের পরিমাণ আশংকাজনক ভাবে কম, কারণ বেশীরভাগ বইগুলো আমিই দখল করে ফেলেছি। নতুন কোনো কালেকশন আসলে যাতে আমার জন্য বরাদ্ধ রাখার দাবি করা আছে। অনেক অত্যাচার করি সেই ভাইয়ের প্রতি। তিনিও হাসিমুখে সয়ে যান একজন বই প্রেমিকের নির্মম অথচ যায়েজ অত্যাচার)। বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন ধরনের বই কেনে। আমার এইসব দেখতে ভালো লাগে।
বইয়ের দোকানে প্রেমিক প্রেমিকা আসলে আমি তাদেরকে বেশ আগ্রহ নিয়ে দেখি। আগ্রহ নিয়ে দেখার কারণ হল এই যে তারা প্রেম করার সময়তেও বই পড়ার জন্য একটা সময় খুঁজে নিয়েছে এই ভেবে। শুনেছি প্রেম মানুষকে মাতাল করে দেয়, সব ভুলিয়ে দেয়। এই সব ভোলার-কালেও তারা যে বইকে ভোলে নি তাই দেখে আমার ভালো লাগে।
সাথে এও লক্ষ্য করি যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রেমিক বইপড়ুয়া হলে বইয়ের দোকানে এসে প্রেমিকা অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে আকাশ বাতাস দেখে । আর প্রেমিক যখন বই কেনা শেষ করে তখন মেয়েটি ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে, “এতক্ষণ ধরে মানুষ বই কেনে? বাব্বা পারোও বটে”।
আর প্রেমিকা বই পাগল হলে প্রেমিক পুরুষ বইয়ের দোকানে এসে কেবলই অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে প্রেমিকার মুগ্ধ নয়নের দিকে, যে নয়নের দৃষ্টি তখন প্রেমিকের না-জানা মানুষের নামের ওপরই নিবদ্ধ থাকে।
গত বুধবার এক প্রেমিকযুগলকে দেখলাম বইয়ের দোকানে। প্রেমিকা পূর্ব পরিকল্পিতভাবেই বাছাই করল হুমায়ূন আহমেদের কয়েকটি দামি বই। আর প্রেমিকটি কী আন্তরিকতার সাথেই না তার দাম পরিশোধ করল, দেখেই ভালোই লাগল। এইসব দেখে দেখে মনের দুঃখ মেটাই।
কিন্তু একটু শূন্যতাও আছে। কখনো দেখলাম না একইসাথে দুইজন বই পাগল প্রেমিক প্রেমিকাকে। যারা বই কিনতে এসে গল্প করছে বিভিন্ন লেখক, কবি নিয়ে, - “শক্তির কবিতাগুলো পড়েছ তুমি, কী অসাধারণ তাই না?” প্রেমিকা তখন আকুল হয়ে বলছে- “আর, আর পূর্ণেন্দু পত্রী? ওর কথা কেন বল না তুমি? ও তো আরও ভালো লেখে, ঐ যে পাহাড় আর মেঘের কবিতা? ওর মতন চমৎকার কবিতা কি আর দুটি হতে পারে?”
কখনো শুনি নি আমি, কখনো দেখি নি আমি। দেখতে ভীষণ ইচ্ছে করে।
আমার আরও কিছু লেখা পড়তে আসুন- https://duwriter.blogspot.com/ এই ঠিকানায়।