somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

“MeToo” ঝড়ে তোলপাড় গোটা বিশ্ব

১৯ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশের নারী সমাজই এখন #MeToo ঝড়ে ঘুরপাক খাচ্ছে। যৌন হেনস্থার বিরুদ্ধে দেশ-বিদেশের নারী সমাজ যেই স্টাইলে আন্দোলন করছে তাতে কম বেশি নারী-পুরুষ সবাই ক্ষতিগ্রস্থ হবে। এই আন্দোলন সফল হোক তবে আন্দোলনকে পুঁজি করে কেউ ফায়দা লুটছে কি না এই প্রশ্ন থাকাটাও অযৌক্তিক কিছু নয়। প্রশ্নটা না হয় ভবিষ্যতের জন্যে তোলা রাখলাম। সময় গড়ালে সব জানা যাবে।

আসলে #MeToo মানেটা কি? এর মানে হলো #আমিও। #আমিও কি? #আমিও হলো- #আমিও যৌন হেনস্থা অথবা যৌন নির্যাতন অথবা যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছি।

#MeToo আন্দোলনের নারীরা দশ পনেরো বছর আগের ঘটনা যেভাবে অকপটে গণমাধ্যমে সিনেমার গল্পের মতো নিজেদের যৌন হেনস্থার কথা বলে যাচ্ছে এটা আন্দোলন নয়, এটা পুরুষ সমাজকে কাজী নজরুলের “সংকল্প” কবিতাটাকে স্মরণ করিয়ে দেয়ারই প্রয়াস। সম্ভবত নারী ঘরে বসে থাকতে থাকতে বিকলাঙ্গ হয়ে যাচ্ছে। ঘর সংসার আর এখন তাদের ভাল লাগছে না।

যাই হোক কথা হলো কোন নারী যদি কাছের বা দূরের, পরিচিত বা অপরিচিত কোন পুরুষদ্ধারা যৌন হেনস্থা বা যৌন নির্যাতনের শিকার হোন তাহলে উনি বা ভুক্তভোগী ঐ নারী সরাসরি আইনের আশ্রয় নিতে বাঁধা কোথায়? কেন গণমাধ্যমেই তাকে সব হারানোর নির্মম ঘটনাটা সাহিত্যের ভাষায় বলে বেড়াতে হবে। এটা কি আন্দোলন? নাকী পুরুষকে হেনস্থা করার আধুনিক কৌশল?

আজ এক শ্রেণীর নারীরা যেভাবে পুরুষদের বিরুদ্ধে #MeToo গল্প উপস্থাপন করছে এটা মোটেও শোভনীয় নয়। এলিট শ্রেণীর অনেক নারীই অকপটে #MeToo গল্প বলে যাচ্ছে, আর অপরদিকে যার বিরুদ্ধে বা যাকে নিয়ে #MeToo গল্পটা সেই গল্পের পুরুষটা মানুষের চোখে হয়ে যাচ্ছে চরিত্রহীন। একবার কি ভেবে দেখেছেন আপনার বলা দশ পনেরো বছর আগের ঘটনার মানুষটা এখন বিবাহিত। তারও পরিবার সন্তান আছে। সমাজে তার মান-সম্মান আছে, গ্রহণযোগ্যতা আছে। জানিনা কার প্ররোচনায় এই #MeToo আন্দোলন।

#MeToo তো পুরুষদের ক্ষেত্রেও হয়। কই আজ পর্যন্ততো কোন পুরুষকে দুই কলম লিখতে দেখলাম না! #MeToo কি শুধু নারীর জীবনেই ঘটে?

আপনাদেরকে একটা সত্যিকারের ঘটনা বলি-
আমার এক দূর সম্পর্কের ভাই। ঘটনার সময় তার বয়স ছিল ধরেন ১২/১৩। তখন তাদের বাড়িতে টেলিভিশন ছিল না। তাদের পাশের বাড়িতে টিলিভিশন ছিল। আমার ঐ ভাইটা প্রতি রাতেই স্কুলের পড়া, রাতের খাবার শেষে ঐ বাড়িতে গিয়ে টেলিভিশন দেখতো এবং প্রায় সময়ই ঐ বাড়ির বড় মেয়ের সাথে একটা রুমে ঘুমাতো। আমার ভাই যতদিন ঐ বাড়িতে ঘুমিয়েছিল প্রায় ততোদিনই সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখতো তার হাফপ্যান্টের বাটন জিপার দু’টোই খোলা আর হাফপ্যান্টটা ভিজা। সে ভাবতো হয়তো ঘুমের মধ্যে পশ্রাব করে দিয়েছিল তাই তার হাফপ্যান্ট ভিজে যেতো। এভাবে অনেক দিন অতিবাহিত হওয়ার পর একদিন আমার ঐ ভাই বুঝদার হয়ে গেলো, তার পর যা হবার তাই হলো (বাকীটা নিজগুনে বুঝে নিয়েন)। আমাদের চারপাশে এরকম আরও অনেক ঘটনা আছে।

যেটা বুঝাতে চেয়েছি সেটা হলো- এই মেয়েটা এখন বিবাহিতা। তিন সন্তানের জননী। বেশ ভাল শিক্ষিতা। খুব ধনাঢ্য পরিবারে বিয়েও হয়েছে। এখন যদি আমার ঐ ভাই #MeToo আন্দোলনে শরীক হয়ে সব গড়গড় করে বলে দেয় তাহলে একবার ভাবেনতো ঐ মেয়েটার কি হবে?

পুরুষরাও যদি #MeToo গল্প বলা শুরু করে তবে লাখ না হোক হাজারটাতো বের হবে, তাই নয় কি?

অতীতের অনাকাঙ্খিত ঘটানাকে ভুলে যাওয়াই উত্তম। জোর করে বর্তমানে নিয়ে আসার মধ্যে কোন সুফল আছে বলে মনে হয় না।
মার্কিন নারীবাদী লেখক মিউরিয়েল রুকেসার এর একটি বিখ্যাত উক্তি “যদি একজন নারী তার জীবনের সত্য প্রকাশ করে, তাহলে কী হবে? পৃথিবী দুই ভাগ হয়ে যাবে”।

সত্যিই পৃথিবী দুই ভাগ হয়ে যাচ্ছে। #MeToo এর ঝড় বাংলাদেশ, ভারতসহ বিশ্বের অনেক দেশেই দমকা হাওয়ায় বয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের লক্ষ লক্ষ নারী আজ অন্যের প্ররোচনা বলেন আর রাতারাতি ফেমাস হওয়ার লোভে বলেন খুব সাবলিল ভাষায় নাম পরিচয় প্রকাশ করেই তাদের জীবনে ঘটে যাওয়া যৌন হেনস্থার কথা বলা শুরু করেছে। কিন্তু এই নারী সমাজ আজও টের পায়নি যে, আজকে যেই পুরুষটা তার গল্প শুনে দুঃখ প্রকাশ করছে, দু’দিন পর সেই পুরুষটাই তাকে ছিঃ ছিঃ করে দূরে তাড়িয়ে দিবে। গণমাধ্যমগুলোর কথা বলতে গেলে একদিকে কিছু মুনাফালোভী রংঢং মেখে তা প্রকাশ করে নিজেদের আখের গুচাচ্ছে। অন্যদিকে নারী-পুরুষের মধুর সম্পর্কে ফাঁটল ধরাচ্ছে। গণমাধ্যমগুলো এখনও বুঝতে পারছে না যে, এভাবে চলতে থাকলে নারী-পুরুষের এই সম্পর্ক ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবে।

#MeToo আন্দোলনকে পূর্ণ সমর্থন এবং নারীর প্রতি শ্রদ্ধা সম্মান রেখেই বলছি- পুরুষের দিকে এভাবে এলোমেলো তীর না ছুড়ে, প্রথমেই গণমাধ্যম, আন্দোলনে না এসে, তথ্য প্রমাণসহ সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নিয়ে সোজা পুলিশ স্টেশন বা আদালতে যান। দেশের প্রচলিত আইনেই তাদের বিচার হবে। যদি ন্যায় না মিলে তখন আন্দোলনে যান। যদি আপনার উপর সত্যিই অন্যায়, অবিচার হয়ে থাকে তবে এর ন্যায্য বিচার আদায়ের জন্য সারাদেশ আপনার সাথে থাকবে। অযথা পুরুষের সাথে বিরোধ করে কি লাভ? দিন শেষে ঘরে ফিরে নিজের পরিবারের পুরুষদের মুখওতো দেখতে হবে।

শেষ করছি এই বলে যে, মন থেকে ঘৃনা করি #MeToo জন্মদাতাদের। যাদের নোংরা মন মানসিকতার জন্যে গোটা পুরুষজাতি কলংকিত, লজ্জিত।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:০৭
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×