somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লুল মেয়ে ....!!!

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১১:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



১।
গাওছিয়া তে প্রচন্ড ভিড়, সুমন ভাই সামনে আমি পিছনে, বেশ কিছু সময় ঘোরা ফেরা করছি, প্রায় চিৎকার করে বল্লাম ''কোন দিকে মুন্না মামার দোকান সেটা যদি আপনি ভুলে যান তাহলে আপনাকে এনে লাভ হল কি?'' বিরক্ত বোধ করছি, এমন সময় পিছন থেকে একটা চাপ অনুভব করলাম। এখানে ঢোকার পর থেকেই মানুষের চাপা চাপির মধ্য আছি। তবে এ চাপ টা অন্য রকম, মনে হল কে যেন তার দেহের ভর আমার পিঠের উপর দিয়ে দিয়েছে, মেয়ে মানুষই মনে হচ্ছে ;) বেশ নরম নরম অনুভুতি........... :P, কোন দিকে যাবারও উপায় নাই তারপরও সামনের দিকে ঝুকে গেলাম... চাপ নেই... মিনিট খানেক যেতে না যেতেই আবার.... তবে এবার আলতো করে.... কয়েক সেকেন্ড ছুয়ে রেখে দূরে যাওয়া.....
তার পর আবারও....
আবার....
অস্বস্তি লাগতে লাগল.... ইচ্ছাকৃত না অনিচ্ছাকৃত বুঝতে পারছি না... অনিচ্ছাকৃত হলে পিছনে তাকানো শোভন নয়.. আর ইচ্ছাকৃত হলে?
আবারও...
না দেখতেই হয় ব্যাপারটা.. মেয়েটাকে....:P
ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকালাম..... এক রূপবতী মেয়ে, আমার মতই লম্বা হবে.... আমি তাকাতেই সে তার বা হাত টা সামনের দিকে দিয়ে, চোখ দিয়ে এমন ভাবে ইশারা করল যেন সে বলতে চায় 'সামনে যাও, পিছনে লাইন লেগে গেছে...' বিধস্ত হয়ে গেলাম, সুন্দরীর এক ইশারায় মুখ দিয়ে কোন রকমে সরি (তাও ঝাপসা) শব্দটা বেরিয়ে এলো।
আবারও চাপ শুরু হলো... তবে এবার আলতোর সাথে ডানে বামে ঘষা ঘষি টাইপের... ;) বেশ কয়েকবার চলল। সুমন ভাই সামনে দাঁড়িয়ে পড়লেন, ডানের গলি না বা-য়ের গলি...... এমন সময় পিঠে আলতো ছোয়ার পাশা পাশি তার থুতনি আমার বা কাধ স্পর্শ করল.... একটা গন্ধ একাকার করে দিল আমাকে (ওটা ছিল Miss Dior - Eau de Parfum- চিনতে কষ্ট হয়নি).... আমার মনে হল এখনই সময়.....
এখনই....
সুমন ভাই ঘুরলেন বা-দিকে আর আমি ঘুরলাম ডান দিকে... ডান দিকে ঘুরেই ঝেড়ে দৌড় দেবার মত অবস্হা.... একে ওকে পাড়িয়ে মাড়িয়ে বেরিয়ে এলাম.... বুক ভরে দম দিলাম...

৪৫ মিনিটে চা সিগারেট চলল বেশ কয়েক রাউন্ড... তারপর হাজির হলেন সুমন ভাই.... এসেই খুব ভাবের সাথে সিগারেট ধরাতে ধরাতে বল্ল 'কি মিয়া ঝাপায়ে লাফায়ে চলে আইলা যে.. বায়েই তো মামার দোকান ছিল' বল্লাম কাজ তো দুই মিনিটের, এতক্ষন কি করলেন আপনি?
'তুমি বেশ উত্তেজিত, কি ব্যাপার?'
বল্লাম সব ঘটনা... বুঝলেন ভাই পুরাই লুল মেয়ে....!!
সুমন ভাই লম্বা করে সিগারেটের টান দিয়ে ধুয়া উপরে দিকে ছেড়ে উদাস হয়ে বল্লেন
'মেয়ের নাম নোভা, লুল নয় লুল নয় খুব সাহসী মেয়ে....!
আমি কিছু সময় সুমন ভাইয়ে মুখের দিকে চেয়ে (হা করেই হয়ত) রইলাম। তারপর মুখ দিয়ে একটি অস্পষ্ট আওয়াজ বের হল 'ও...!!'

২।
ঈদে বাসের টিকিট পাওয়া খুবই মুশকিল হলেও কোন ঝামেলা ছাড়াই এসি গাড়ির সি/২ সিট পেয়ে গিয়েছিলাম (নাইট কোচ)। যথা সময়ের বদলে পুরো ১:৪০ মিনিট পর যখন গাড়ি আসলো তখন মধ্যরাত প্রায়.... বাসে ওঠার আগেই কানে হেড ফোন ভালোভাবে গুজে দিয়ে সমস্ত pink floyd সিলেক্ট করে দিলাম। জার্নিতে আমার pink floyd ভালো লাগে.....!! বাসে উঠে সিটে বসলাম। পাশের সিটে একজন রমনী, জানালার দিকে মুখ ঘুরানো, ঘুমন্তই মনে হল... চোখ বুজে ফেল্লাম.... নেশায় থাকলে pink floyd এ বেশি আরাম B-)...

যথারীতি পাশের সিটের জন ঘুমের মধ্যে আমার কাধের উপর মাথা দিয়ে ফেলল (যথারীতি = যে আমার পাশে বসুক না কেন ঘুমের ভিতরে আমার কাছে চলে আসবেই.. আজব!!)। কিন্তু কথা হল এসি বাসের সিট বড়, আমার সিট থেকে তার সিট একটু নিচে নামানো... কি হল বুঝলাম না.. চোখ মেলতেই হল.. সাভার বাজার.. তাকালাম তার দিকে.... কিন্তু তাকে না দেখে আমার চোখে ভাসতে লাগল jessica alba দড়ি ধরে মাথার উপর দিয়ে ঘুরাচ্ছে... কেমনে কি..!! গলা খাকরি দিলাম.. প্রথমে আস্তে তারপর জোরে.. কাজ হল.. মুখ ঘুরিয়ে জানালার পাশে নিয়ে গেল.. চোখ বন্ধ করলাম...
কিছুক্ষন বাদে আবার মাথা চলে আসলো.. মাথার সাথে এবার হাত.. তার বা হাতটা আমার কনুইয়ের একটু চেপে ধরল, শরীরটা যেন এলিয়ে দিয়েছে.... চোখ মেল্লাম.. সাটুরিয়া.. তাকালাম.... আবারও সেই একই কেস... jessica alba দড়ি ঘুরাচ্ছে... কেমনে কি??? যদি দেখতেই হয় তাহলে দেখব scarlett johansson কে... সেই Lost in Translation থেকে দেখে শুনে বড় করলাম.. এখন alba দড়ি ঘুরায় কেন..!!
এক্সকিউজ মি, হ্যালো...
কাজ হল না.. ফোন দিই কাউকে.. ফোনে জোরে জোরে কথা বল্লে সরে যাবে.... দিলাম ফোন জাহিদকে (লুল লিজেন্ড:P)। ফোন ধরেই বল্ল ''খুব জরুরী কোন কিছু?''
না এমনি গল্প করবার জন্য ফোন দিলাম..
''উফ দিলিতো রিদম টা নষ্ট করে''
কিসের রিদম?
''ন্যাকা... বোঝ না... নতুন বিবাহিত দম্পতির মধ্য রাতের রিদম কি...''
মিন মিন করে বল্লাম ২বছর ৭ মাসেও নব্য দম্পতি?
''রাখ ফোন'' কেটে দিল....
এক্সকিউজ মি... আধো বোজা আধো খোলা চোখে তাকালো, খুব বিরক্তের সাথে পাশ ফিরল.. এদিকে আমার jessica alba দড়ি ঘুরাচ্ছে...! চোখ বুজলাম...

চলে এলো মাথা.... এবার হাত দিয়ে আমার টি সার্টের হাতা এমন ভাবে খামচি দিয়ে ধরল যে টি সার্টের গলাই বড় হয়ে যাবে ( H&M টি সার্ট ১৫০ টাকা দিয়ে কিনেছি ঢাকা কলেজের সামনে থেকেB-))
চোখ মেল্লাম... পাটুরিয়া ফেরী ঘাট.... jessica alba...!
এক্সকিউজ মি... বলার সাথে সাথে আমার বা হাতটা ধরে তার বুকের সাথে চেপে ধরল শক্ত করে... আস্তে করে হাত সারনোর চেষ্টায় ব্যার্থ হলাম..... jessica alba দড়ি ঘুরাচ্ছে.. কানে বাজছে laura branigan এর self contro... জোরে হাত টান দিলাম... হাত ছাড়বে না.. টানা টানি ধ্বস্তা ধস্তি অবস্থা.. সফল হলাম... এত বিরক্ত চোখে তাকাল যেন মহা ভার‌ত অশুদ্ধ হয়ে গেছে.... ওপাশে মুখ ফিরিয়ে নিল...

ঘামে ভিজে গেছি... এসি কি শালারা বন্ধ করে দিসে..? এই গান কেন বাজে? যে গান সিলেক্ট করেছি তাতে তো দিব্যি ৫ ঘন্টা চলার কথা... বুঝলাম না কিছুই... দ্রুতো সিট থেকে উঠে দরজার কাছে চলে গেলাম, সুপারভাইজার জানাল এই ফেরীতে উঠবে....
ফেরী ওপারে চলে আসলে বাসে প্রবেশ করে দেখি আমার সিটে এক ভদ্র লোক বসে আসে হাতে মি টুইস্ট চিপস.. দেখেই বল্ল
''আসলে ঈদের সময় তো, এক জায়গাতে সিট পাইনি.. আমার সিট একদম পিছনে, তাই কাউকে কিছুই বলতেও পারিনি চেঞ্চ করবার কথা, নেন চিপস খান..''
না থাক, থ্যাংকস।
বল্ল ''আরে নিন না'', আমি তাকলাম মেয়েটির দিকে... চোখে চোখ পড়তেই চোখ দিয়ে এমন একটা দুষ্টমি হাসি দিল যে jessica alba আবার দড়ি ঘুরাতে শুরু করল... চোখের ইশারায় বল্ল নিতে.. নিলাম এক টুকরো মি টুইস্ট..!
বল্লাম আপনারা এখানেই বসেন... আমি পিছনে যাচ্ছি...
ভদ্র লোক সলজ্ব হাসি দিলে বল্লেন ''একদম পিছনে কিন্তু''
ইটস ওকে...
''সো কাইন্ড''
তার দিকে তাকালাম.... চোখ দিয়ে একটা লুক দিল.. মানে এই রকম ''ওকে যাও''

পিছনে বসলাম... জাহিদ ফোন দিল... ''কিরে কি খবর?''
বল্লাম তোর কি খবর?
''বিড়ি ব্রেক''
নব্য দম্পতি ব্যাপারটা কি?
''বিয়ে কর, সব বুঝতে পারবা.. কখন কি বলে রিদম বাড়াতে হয়....''
সব খুলে বল্লাম.. এত মায়াবি চেহারা jessica alba কে দেখেছিলাম The Sleeping Dictionary তে।
জাহিদ বল্ল ''বুকের সাথে চেপে ধরল মানে কি? বুকের কোথায়;)''
বুকের সাথে মানে বুকের সাথে..
''বাবা তুমি আবার এত হুজুর হলে কবে থেকে? বুকের সাথে মানে বুকের সাথে.. বাহ!''
বল্লাম পুরাই লুল রে....
''তোমারে পিছনে পাঠানোর কৌশল... দেখো গে দিব্যি লুতুপুত খেলছে.. বিপ বিপ বিপ.. তোমার ভদ্র লোক ভেপু বাজাচ্ছে.... বিপপপপপপপপপপ.. আর তুমি বাসে পিছনে বসে ঝাকি খাও, মাথা গুতো খাও ছাদে.. মনে মনে সান্তনা দাও এসি বাসের স্প্রিং ভালো... ঝাকি কম লাগে.. আসলে লুল না.... বুদ্ধিমতি মেয়ে....
চুপ করে রইলাম.....
''কিরে চুপ কেন?''
তখন মুখ দিয়ে একটি অস্পষ্ট আওয়াজ বের হল ''ও...!!''










২৮টি মন্তব্য ২৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×