somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মহিলা, শিশু ওপ্রতিবন্ধী

২৪ শে মে, ২০১৩ দুপুর ২:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সকাল হতেই মাছের ব্যবসায়ী, তরকারির ব্যবসায়ী, গার্মেন্টস কর্মী, স্কুল, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস-আদালত গামী বিভিন্ন শ্রেণী, পেশা, বর্ণের মানুষের সাথে সাথে ব্যস্ত হতে থাকে নগরী। রাজপথে বাড়তে থাকে যানবাহনের চাপ। সবারই নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছানোর তাড়া। যে যেভাবে পারে ছুটতে থাকে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পৌঁছাতে হবে সবাইকে। একটু বেশি দূরত্বে যাদের গন্তব্য, ব্যক্তিগত গাড়ি যাদের নেই, সিএনজির অতিরিক্ত ভাড়া প্রতিদিন গোনার সামর্থ্য যাদের নেই সেইসব ছাপোষা মানুষের একমাত্র ভরসা পাবলিক বাস। এই বাসে চলতে গিয়ে পকেটমারের হাতে মানিব্যাগ, মোবাইল খোয়ানো, দীর্ঘপথ গরমে ঘামে যাতায়াত করা, ভাড়া নিয়ে কন্ডাক্টরের সাথে ক্যাচাক্যাচি, আঘাত পাওয়া সহ প্রতিদিন কত যে সমস্যায় পড়তে হয় ভুক্তভুগী মাত্রই জানেন। এর মধ্যে পাবলিক বাসে যাতায়াতকারী নারীদের ভোগান্তিটা আরো বেশি।

বাসগুলোতে সাধারণত তিন-চারটি থেকে সর্বোচ্চ নয়টি আসন মহিলা, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত থাকে। মহিলাদের কেন শিশু ও প্রতিবন্ধীদের সাথেই এ আসন ভাগাভাগি করে নিতে হয়, এ প্রশ্ন নিয়ে ভাবার সময় এখনো আসে নি। চলুন, তারচেয়ে আমরা বরং ভাবি এ আসনগুলোর অবস্থান নিয়ে। এগুলোর অবস্থান হয়ে থাকে সাধারণত বাসের একদম সামনে, আগুন গরম ইঞ্জিনের একদম উপরে বা তার খুব কাছাকাছি। যে কোন ধরনের দুর্ঘটনায়, তা সেটা চালকের অসাবধানতায় হোক বা হরতালে পিকেটারের আচানক আক্রমনেই হোক, সবার আগে ক্ষতিগ্রস্থ হবে এসব আসনের যাত্রীরাই। তবুও ভারী মালপত্রের সাথে গাদাগাদি করে কোনমতে নারীরা বাসে জায়গা পেলেই নিজেকে ভাগ্যবতী মনে করেন। এমন মনে করার কারণও আছে। গাদাগাদি করে বসা নারীদের দেখে আপনার মনে পড়ে যাবে কুরবানীর মৌসুমে ট্রাকে করে আনা গরু ছাগলগুলোর কথা। প্রতিদিন এভাবেই অনেক কষ্ট সহ্য করে পাবলিক বাসে যাতায়াত করতে হয় স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় বা অফিসগামী নারীদের।

এখন তো আর সেই বেগম রোকেয়ার যুগ নয় যে, নারীরা শুধু ঘরের কাজেই সীমাবদ্ধ। প্রতিদিন কাজের উদ্দেশ্যে, স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্যে প্রচুর নারীকে ঘরের বাইরে আসতে হচ্ছে, যাতায়াত করতে হচ্ছে পাবলিক বাসে। অথচ বাসে সেই মান্ধাতার আমলের মত মহিলাদের সাথে আবার শিশু ও প্রতিবন্ধীও জন্য সংরক্ষিত আসন তিনটি থেকে সর্বোচ্চ নয়টি। এ কয়টি আসন পূরণ হয়ে গেলে বাসে নারীদের উঠা একেবারে নিষিদ্ধ বলে অধ্যাদেশ জারি করে বসে ড্রাইভার, হেল্পার থেকে শুরু করে অন্য সব যাত্রী। নারীর নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই নাকি তারা নারীদের বাসে উঠতে দেন না  নারীর প্রতি এতই সমব্যথী তারা তাই রোদ, বৃষ্টি মাথায় নিয়ে, রাত গভীর হতে থাকলেও বাসের একটা সিটের আশায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয় নারীদের। আর ওদিকে নারীকে পেছনে ফেলে পুরুষ যাত্রীরা টপাটপ বাসে উঠে বসে পড়ে ঐ নারীর জন্যই সংরক্ষিত আসনে। তারপর হেল্পারের উদ্দেশ্যে হাঁক ছাড়ে, ‘’ঐ, মহিলা উঠাবা একটাও, সিট নাই।‘’ এমনটা যে শুধু লোকাল বাসেই দেখা যায় তা নয়। অনেক কাউন্টার বাসের ক্ষেত্রেও দেখা যায়, নারী টিকেট কেটে অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছে। শুধু সিট নেই বলে তাকে বাসে উঠতে দেওয়া হচ্ছে না। তারপরেও অনেক নারী সিট নেই জেনেও জোর করে বাসে উঠে পড়েন। এই জ্যামভরা শহরে গন্তব্যে পৌঁছানোটাই বড় কথা, সিটে বসে পৌঁছালেন নাকি দাঁড়িয়ে পৌঁছালেন এত কিছু ভাবার সময় নেই তাদের। আর সব যাত্রীদের মত দাঁড়িয়ে যাবার অনুমতি পাবার জন্যও তাকে যেন অনেকটা দয়া ভিক্ষাই করতে হয়। ঠিক তখনই হয়ত পাশ থেকে মন্তব্য ছুঁড়ে দেবে কোন যাত্রী, ‘’আগে মহিলা দেখলে সিট ছেড়ে দিতাম। এখন আর দিই না। মেয়েরা তো এখন সম অধিকার চায়।‘’ যেন খুব রসিকতা করা হলো, অন্য যাত্রীরাও তাকে সমর্থন দিয়ে তখন হাসতে শুরু করে দেবে। এসব মাথা পঁচা লোকগুলোকে কে বোঝাবে যে, এতই যদি নারীদের সম অধিকার থাকতো, তবে বাসের ৫০টি আসনেরর যেকোন আসনেই যেগুলোর নাম নাকি আবার পুরুষ সিট হা হা হা তাদের বসার অধিকার থাকত। শিশু ও প্রতিবন্ধীদের সাথে সিট ভাগাভাগি করে তাদের বসতে হতো না। ৫০টি আসনের মধ্যে মাত্র ৩টি ক্ষেত্র বিশেষে ৯টি আসন নারীদের জন্য বরাদ্দ করে যেন মহাকাজ উদ্ধার হয়ে গেছে আবার প্রায়শই দেখা যায়, সেই আসন পুরুষদেরই দখলে। এর নাম সম অধিকার ঘরে, বাইরে অন্য কোথাও নারীর অধিকার নিয়ে কারো মাথাব্যথা থাকে না, বাসে উঠলেই শুধু কারো কারো ‘’সম অধিকার চেতনা’ একেবারে মাথাচাড়া দিয়ে উঠে।

এসব নিয়ে প্রতিদিন প্রতিটি পাবলিক বাসে একবার না একবার ক্যাঁচাল হবেই, এটা জানা কথা। তাই এসব ক্যাঁচাল এড়ানোর জন্য নারীদের বাসে উঠতে দেওয়া হয় না। যেমন মাথা ব্যথা হলে আমরা মাথা কেটে ফেলি, এটা ঠিক তেমনি। যদিও বাসে শুধু নারীদের জন্যই ক্যাঁচাল হয়, এমন প্রমাণ পাওয়া যায় না। পুরুষ যাত্রীরা নিজেরা নিজেরা ও কন্ডাক্টরের সাথে ভাড়া সংক্রান্ত ইস্যুতে প্রায়ই মারামারি, ধস্তাধস্তি, হাতাহাতি, বাসে উঠার সময় ধাক্কাধাক্কি করে প্রচুর ক্যাঁচাল সৃষ্টি করে অন্য যাত্রীদের বিরক্তির কারণ হন। এমন কি কেউ কেউ সুযোগ বুঝে নারীদের যৌন হয়রানিও করে থাকে। হাতেনাতে চিহ্নিত করার পরেও এদের বিরুদ্ধে তেমন কোন পদক্ষেপ কখনো নেওয়া হয় না। ইদানিং অবশ্য নারীরা বেশ সাহসী হয়ে উঠছেন। তাই মাঝে মাঝে তাদেরকে দেখা যায় আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে যৌন হয়রানির নায়ককে দু চারটা থাপ্পড় বা স্যান্ডেলের বাড়ি কষিয়ে দিতে। এই আঘাতগুলোও আবার গিয়ে লাগে অন্য পুরুষ যাত্রীদের গায়ে। তারা সেই নায়কের পক্ষে সাফাই গেয়ে গেয়ে মুখোশ খুলে নিজেদের সুপ্ত ধর্ষক রূপটা সবার সামনে তুলে ধরেন এবং শেষমেশ মাথা ব্যথা হলে মাথা কেটে ফেলা ফর্মূলার উপসংহারে গিয়ে পৌঁছান যে, নারীদের বাসে উঠতে দেওয়া উচিত নয়।

আমাদের মত অসভ্য লোকের দেশে নারী ও পুরুষের চলাচলের জন্য আলাদা বাস থাকা উভয় পক্ষের জন্যই নিরাপদ। সেক্ষেত্রে একজন পুরুষ যেমন তার মা, বোন বা স্ত্রী-সন্তানের সাথেও এক বাসে উঠতে পারবে না, তেমনি একজন নারীও পারবে না তার বাবা, ভাই বা স্বামী-সন্তানের সাথে এক বাসে করে কোথাও পৌঁছাতে। বৃহত্তর স্বার্থে ও যাবতীয় ক্যাঁচাল এড়ানোর জন্য এই নিয়ম কিন্তু সবাইকে মেনে নিতেই হবে। যেদিন আমরা সভ্য হতে পারবো, সেদিনই কেবল এক বাসে সহযাত্রী হয়ে নারী ও পুরুষ একত্রে চলতে পারবে। তার আগ পর্যন্ত নারী থাকুক শিশু ও প্রতিবন্ধীদের কাতারে, ওটাই তার উপযুক্ত জায়গা।

৪টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক্যারাভান-ই-গজল - তালাত আজিজ

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৬ ই জুন, ২০২৪ ভোর ৬:৩১


ভারতীয় অন্যতম গজল শিল্পীদের তালিকায় তালাত আজিজের নাম অবশ্যই থাকবে বলে আমার ধারনা। তার বেশ কিছু গান আমার শোনা হয়েছে অনেক আগেই। জগজিৎ সিং, পঙ্কজ উদাস ও গুলাম আলী সাহেবের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ওহাবী-সালাফি-মওদুদীবাদ থেকে বাঁচতে আরেকজন নিজাম উদ্দীন আউলিয়া দরকার

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই জুন, ২০২৪ দুপুর ২:৩৩

১.০
ঐতিহাসিক জিয়া উদ্দীন বারানী তার তারিখ-ই-ফিরোজশাহী বইতে শায়েখ নিজাম উদ্দীনের প্রভাবে এই উপমহাদেশে জনজীবনে যে পরিবর্তন এসেছিল তা বর্ণনা করেছেন। তার আকর্ষণে মানুষ দলে দলে পাপ থেকে পূণ্যের পথে যোগ... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই ৩০ জন ব্লগারের ভাবনার জগত ও লেখা নিয়ে মোটামুটি ধারণা হয়ে গেছে?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৬ ই জুন, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৯



গড়ে ৩০ জনের মতো ব্লগার এখন ব্লগে আসেন, এঁদের মাঝে কার পোষ্ট নিয়ে আপনার ধারণা নেই, কার কমেন্টের সুর, নম্রতা, রুক্ষতা, ভাবনা, গঠন ও আকার ইত্যাদি আপনার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আর্তনাদ

লিখেছেন বিষাদ সময়, ১৬ ই জুন, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২১

গতকাল রাত থেকে চোখে ঘুম নাই। মাথার ব্যাথায় মনে হচ্ছে মাথার রগগুলো ছিঁড়ে যাবে। এমনিতেই ভাল ঘুম হয়না। তার উপর গতকাল রাত থেকে শুরু হয়েছে উচ্চস্বরে এক ছাগলের আর্তনাদ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মন তার আকাশের বলাকা || নিজের গলায় পুরোনো গান || সেই সাথে শায়মা আপুর আবদারে এ-আই আপুর কণ্ঠেও গানটি শুনতে পাবেন :)

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১৬ ই জুন, ২০২৪ রাত ১০:০০

ব্লগার নিবর্হণ নির্ঘোষ একটা অসাধারণ গল্প লিখেছিলেন - সোনাবীজের গান এবং একটি অকেজো ম্যান্ডোলিন - এই শিরোনামে। গল্পে তিনি আমার 'মন তার আকাশের বলাকা' গানটির কথা উল্লেখ করেছেন। এবং এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×