somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প দা তি ক

২৮ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ১০:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(দেখতে দেখতে somewhereinblogএ আমার অনেক দিন হয়ে গেল। ২০০৮/৯ সন থেকে আছি। খুব নিয়মিত না হলেও আছি। মাঝে মধ্যে ছোট লেখা লিখলেও মূলত ধারাবাহিক কিছু রচনা লিখেছি। তার মধ্যে এখন পর্যন্ত 'আঁতুড় ঘর' লেখাটি বই আকারে প্রকাশিত হয়েছে। কিছুটা পাঠকপ্রিয়ও হয়েছে। পরের ধারাবাহিকটি ছিল বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে রচিত একটি স্মৃতি নির্ভর উপন্যাস। নাম 'ফিরে দেখা এক জন্মকথা'। এই ধরনের লেখার পাঠক ব্লগে খুব বেশি থাকে না। তবু লেখা এই ব্লগে দেয়ার অন্য একটি কারণ হলো লেখাটি ধারাবাহিক লেখার একটি দায়বদ্ধতা অন্তত নিজের কাছেই তৈরি করা। নিজে খুব অলস প্রকৃতির কারণে কোন লেখাই শেষ করা হয়ে ওঠে না। এ ছাড়া আরেকটি কারণের কথা উল্লেখ করতেই যে লেখাটির সংরক্ষণ। এ জন্য এই ব্লগের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। এবারেও একটি ধারাবাহিক উপন্যাস প্রকাশ করছি।নাম 'প দা তি ক' । পটভূমি বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গ। পাঠকের সহযোগিতা কামনা করি।)

প দা তি ক /১


মানুষের গন্ধ পশু আর দেবতারা চেনে ভাল। শেষপর্যন্ত বাঘ যখন লাশটাকে টেনে নিয়ে যায়,তখন তার পা’এর ছাপ বা রক্তচিহ্ন থাকে নিশানা। দেবতারা কোন ছাপচিহ্ন রাখে না। কিন্তু জীবন এক নিরুপম গন্ধময় অভিযাত্রা। পশু আর দেবতা ঘেরা এই জীবন। এই জীবনে মানুষের গন্ধই ঠিক করে দেয় মানুষের নিশানা।

ক’দিন যাবৎ এই বস্তি অঞ্চলের দোকানগুলোর খুব মন্দা। খদ্দের কম। রাত আটটার পরই কেমন শুনশান, ঝিমিয়ে পড়া।
‘বস্তি’ মানে আবহমান কালের বাস্তুহারা। দেশ খোয়ানো, বর্ণ খোয়ানো, ভাষা খোয়ানো, জীবন জীবিকার নিত্য নতুন অনুষঙ্গে তাড়িত—চোর ডাকাত, ফড়ে দালাল,মেয়ে চালান, চোরা চালান এ লিপ্ত মানুষ, মানুষের সমষ্টি, যারা শরীরী শ্রমের আইনানুগ দক্ষতাকে যেন এক ভিন্ন মাত্রায় ঠাট্টা করতে ভালবাসে। ‘বস্তি’ মানে এদের ঘর ছাউনি, ছাউনির সমষ্টি, জল নর্দমা তথা যাবতীয় অস্বাস্থ্যের সমাহার।
রেল কোম্পানির জায়গা। এক পাশে হিমালয়গামী পতিত রেল লাইন। আরেক পাশে দুমড়ানো মুচড়ানো ঘরের সারি। সবকিছুই গায়ে গা লাগানো। শিলিগুড়ি টাউন স্টেশন সংলগ্ন নাম গোত্রহীন বস্তিটাকে রেলবস্তি হিসেবেই সবাই জানে।
এখানে সব পাওয়া যায়। কী পাওয়া যায় না বলা মুষ্কিল। মধ্য শিলিগুড়ির এই অংশটা নিজের প্রয়োজনে নিজের মত করেই জন্ম নিয়েছে। আধা বিহার, আধা বাঙাল, আধা পাহাড়, আধা তরাইয়ের এই বিচিত্র সহাবস্থান। ফলে নানা পেশাজীবীর আধার এই রেলবস্তি। শহর বানিজ্যের হংকং মার্কেট কিছুটা তফাতে হলেও তার অতি প্রয়োজনীয় শ্রম শক্তিরও এক চমৎকার জোগানদার এই বস্তি। সময়টা ১৯৮০র দশক। ক্ষমতার পালা বদল হয়ে গেছে রাজ্যে। বামপন্থীরা ক্ষমতায়।


ক’দিন যাবৎ এদিকে বেড়ে গেছে সাদা পোশাকের আনাগোনা। কোথায় কে মরে, কোথায় কোন হাঙ্গামা,--পুলিশী কর্তব্যের শেষ ভরসা এই বস্তি। তাই ওদের এদিকে আনাগোনা মানেই শহর- শরীরে কোথাও আঘাত লেগেছে। আর এই আঘাতের পরিণাম যে এখানকার দু’একজনের জেল হাজত তা বলাই বাহুল্য।
সাধারণত এখানে সন্ধ্যে হলেই ভিড়ের মাত্রা বেড়ে যায়। ভিড় বলতে চারপাশে ছড়ানো ছিটানো মদের দোকান। সঙ্গে চা পানের দোকান। কিন্তু ভিড় বলতে এই পঞ্চাশটাকা পুঁজির তেলেভাজার দোকানে আবার আলাদা এক মাত্রা। কারণ দোকানদার ঊর্মিলা। কুপির আলোয় ফুটন্ত এক কড়াই তেলের সামনে জলচৌকির উপর বসে থাকা ঊর্মিলা। মনে হবে গর্জন তেল মাখা এক প্রতিমা কাজে ব্যস্ত, আর তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা খদ্দেরের জোড়া জোড়া চোখ। সেখানে মদের অনুষঙ্গ তেলেভাজা না দৃশ্যপটের ঊর্মিলা বোঝা যায় না। এর মধ্যে পুলিশ বা পুলিশের টিকটিকি কেউ কেউ ভাবে ডিউটিতে এলে মদটা বিনে পয়সায় হলেও তেলেভাজাটা হয় না।‘মাগি দজ্জাল বড়’।
মুখ দেখে মনে হবে না ভিড়ের রহস্য ঊর্মিলা জানে। এই সন্ধ্যেবেলায় কেন, ঊর্মিলা কোন সময়ই তার শরীর বিষয়ে খুব সচেতন থাকার অবকাশ পেয়েছে বলে মনে হয় না। এই সন্ধ্যেবেলার দু’তিন ঘন্টা দোকানদারিতে সে এতটাই মগ্ন থাকে যে কে কোন দৃষ্টিতে তাকে দেখছে সে সব নিয়ে ভাবার মুহুর্তও তার কাছে থাকে না। পাশাপাশি মদ আর তেলেভাজার গন্ধ সারা অঞ্চলময় ক্রমে ছড়িয়ে পড়ছে। তাতে তার মেজাজও খুব তীব্র পর্যায়ে থাকে। যত রাত বাড়তে থাকে ততই যেন গলতে থাকে অন্ধকার। যেন বা আত্মহারা কিছুটা। অবশ্য তারমধ্যেই কিছু মানুষের চোখ থাকে চকচকে। সতর্ক। কেননা তাদের ডিউটি রয়েছে। যেমন সুবোধ। (ক্রমশ:)
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ১০:১১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×