somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প দা তি ক

২১ শে আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১২:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


লিংক---পদাতিক/২৪


২৫
বেলা পড়ে আসছে। এবার উঠতে হবে। শরীরে একটা আলস্য বাসা বেঁধেছে জাহানারা বুঝতে পারে। কিন্তু কারণ বুঝতে পারে না। আজকাল আর বিকেলের দিকে মাসির বাড়িতেও যেতে ইচ্ছে করে না। কিন্তু যেতে হয়,কয়েকটা কাজ পড়ে থাকে বিকেলের জন্য।
আজ জাহানারা সবে উঠতে যাবে, এমন সময়ই দরজার ফাঁক দিয়ে একটা মুখ। প্রায় আঁতকে উঠেও জাহানারা সামলে নিয়ে দেখে সুবোধ।
--কী চমকে গেছ খুব?
--হ, তা একটু—কিন্তু অসময়ে আইলা যে—শরীল ঠিক আছে তো? এই বলে জাহানারা এগিয়ে গিয়ে সুবোধের গা’এ হাত দিতে চায়—কিন্তু সুবোধ সেই সুযোগ না দিয়ে জাহানারাকে পাঁজা কোলে করে তুলে নেয়। বলে—
--সময় অসময় বুঝি না। বলতে বলতে জাহানারাকে বিছানায় আস্তে করে শুইয়ে দিয়ে সে দরজা বন্ধ করে ঘুরে তাকাতেই দেখে জাহানারা উঠে বসে পড়েছে। অবাক চোখে এক দৃষ্টে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
সুবোধ ঘরে ঢুকতেই গন্ধটা জাহানারা পেয়েছিল। জানে এটা মদের গন্ধ। আগেও দু’তিনদিন পেয়েছে। বারবার সুবোধকে বলেও-ছে এই গন্ধটা পেলে আমার শিলিগুড়ির কথা মনে পড়ে। খুব কষ্ট পাই। বলেনি যেটা, সেটা হলো অনতি পুরনো সেই ভয়টা আবার শরীর মনে পাথরের মত আছড়ে পড়তে থাকে। এতো আমার সহ্যেরও বাইরে সুবোধ! তবু সুবোধ বোঝাতে চেষ্টা করেছে যে কষ্টের কথা কি জোর করে ভোলা যায়—কষ্টের উপর সময়ের প্রলেপ না পড়া পর্যন্ত কষ্ট-তো সহ্য করতে হয়। আর সেই জন্য-তো আমি আছি। প্রতি মুহূর্তেই তুমি মনে করবে সেই কষ্ট আমি তোমার কাছ থেকে নিয়ে নিই। এভাবেই-তো আমরা একজন আরেক জনের কষ্ট ভাগ করে নিচ্ছি। আর সেই জন্যই-তো আমরা এক সঙ্গে থাকছি—তাই না? আর দোষটা মদের নয়—দোষটা মানুষের।–এভাবে এতো সুন্দর করে সুবোধ বলতে পারে যে জাহানারা সহজেই তার কষ্টের কথা কিছু সময়ের জন্য ভুলতেও পারে।
কিন্তু আজ ব্যাপারটার প্রতিক্রিয়া একইরকম হলো না। অথচ কতদিন দুপুরের দিকে সে সুবোধকে আশা করেছে। কতদিন ভারী হয়ে ওঠা একাকীত্ব নিয়ে একসময় কাজে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে বলে বেরিয়েও গেছে।
দরজা বন্ধ করে আবার কাছে যেতেই জাহানারা বলে উঠলো—
--মুখে গন্ধ পাই য্যান—
--ও-হো—আর বলো না---।সুবোধ আর বলতেও পারলো না। জাহানারা দু হাতে তার জামা ধরে টানতে টানতে বিছানার উপর শুইয়ে দিল। তারপর বলতে লাগলো—আমি কিছু জানি না, জানতাম চাই-ও না—তুমি কইলাম আর ঐ সব খাবা না—খাইলে আমি কইলাম আল্লাহ্‌ তোমারে ছাড়তো না । বলতে বলতে জাহানারা সুবোধের হাতের টানে ঝরে পড়লো সুবোধের বুকের উপর। তবু জাহানারা বলতে লাগলো—হায়, কারে আমি কী কই—কে আমার কথা শুনে—উফ্‌ আর পারি না। একসময় আর কথা বলতেও পারে না জাহানারা।

সন্ধে হয়ে গেছে একটু আগেই। জাহানারা চোখ খুলে দেখে ঘরময় আবছা অন্ধকার। বাইরের সদ্য জ্বলা আলোর রেশ ঘরময় ছড়িয়ে আছে। পাশে সুবোধ ঘুমে বেহুশ।
বিছানা থেকে নেমে এসে একটা অর্ধেক পোড়া মোম জ্বালিয়ে সুবোধকে কিছুক্ষণ ধরে দেখলো সে। এই কি সেই সুবোধ—যাকে সে চেনে অথবা চেনে না—অথচ কি মায়া জড়ানো মুখখানি। শুধু আপনই মনে হয়। জন্মাবধি একজনকে এই আপনার জন ভাবার পরিসর বা সুযোগ কোথায়-ই বা ছিল--। জেগে থাকলে এসব দেখার অবসর হয় না। কিন্তু এখন একটু চোখ ভরে দেখতে গিয়েও কত সংশয়। না, থাক।
জাহানারা দরজা খুলে বাইরে এলো। সামনেই রেললাইন। কিছুক্ষণ পরপরই গাড়ি যায়। কাজের বাড়ি যেতে হলে লাইন পার হয়েই তাকে যেতে হয়। দেরি হয়ে গেছে—আজ আর কাজের বাড়ি যাবে কিনা ভাবছে। শরীরের ক্লান্তি এখন মনেও ছড়িয়ে পড়েছে। আলো ঠিকরানো রেললাইন যেন তা ছুঁয়ে ছুঁয়ে চলে যাচ্ছে। প্রথম প্রথম এই রেললাইন দেখে তার বুক কাঁপত। ভয় করত। এখনো করে হয়তো। তবে সয়ে গেছে বলে এখন আর অতটা টের পায় না। আজ আবার কেন সেই ভয়টা এসে উঁকি দিচ্ছে ! মনটা এত ভারীই বা বোধ হচ্ছে কেন? হঠাৎ করে সুবোধের আসাটা তার কাছে কাঙ্ক্ষিত হলেও সুবোধকে দেখে কেমন যেন স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না। খুব বেশি বুঝতে না পারলেও সংশয় জাগে যে এখানকার বেঁচে থাকার তীব্রতার মধ্যে সুবোধ কি খানিক অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছে ! তার নিজের শরীরের অবস্থাটার কথাও-তো সুবোধ জানে না। জানানো হয়নি। জানানোর মতো যেন অবসরই নেই। আর জানাবেই বা কী, ভাবলে নিজেরই কেমন অসহায় বোধ হয়। আসলে তারা-তো এখনও ভাসমান। গন্তব্য-হীন ভাসমান জীবনে সন্তানের কথা ভাবতে গিয়ে জাহানারার চিন্তা ভাবনা কেমন জট পাকিয়ে যায়।

এ-সব সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে জাহানারা হঠাৎ করেই ভীষণ রকম চমকে উঠলো। নিকটবর্তী লাইন দিয়ে ট্রেনটা প্রচণ্ড গতিতে চলে গেল। কিছুটা কেঁপেও উঠলো জাহানারা। রেল লাইনের ধারে ধারে ঘর—সে কি অজান্তে লক্ষণ রেখায় পা রেখেছিল? ভাবার আগেই সে ত্রস্ত পায়ে ঘরে ঢুকে সুবোধের পাশে বিছানায় মুখ গুজে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়লো। তখনও সে কাঁপছে। পেটে সন্তানের ভ্রূণ—এই ভাবনায় জাহানারা ভেতরে ভেতরে এক ভাঙনের মুখে গিয়ে পড়ল। আর কাঁদবোনা—সুবোধকে দেয়া সেই কথার অনেকদিন পর একসময় সে কান্নায় প্রকৃতই বিস্রস্ত হয়ে পড়লো।(ক্রমশ:)

সর্বশেষ এডিট : ২১ শে আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১২:১৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামাস বিজয় উৎসব শুরু করেছে, ইসরায়েল বলছে, "না"

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:০৮



গতকাল অবধি হামাস যুদ্ধবিরতী মেনে নেয়নি; আজ সকালে রাফাতে কয়েকটা বোমা পড়েছে ও মানুষ উত্তর পশ্চিম দিকে পালাচ্ছে। আজকে , জেরুসালেম সময় সন্ধ্যা ৮:০০টার দিকে হামাস ঘোষণা করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×