somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প দা তি ক

২৪ শে আগস্ট, ২০১৬ সকাল ৯:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লিংক----পদাতিক/২৭


২৮
পারুলরা সেদিন বড়বাবুর সঙ্গে দেখা করে আসার পর পরদিন বড়বাবুর কথামত তারা কোর্টেও যায়। কিন্তু কোর্ট তাদের কাছে অচেনা জগত। একদিকে কাজের বাড়ির তাড়া আর অন্যদিকে কোর্টের এই গোলক ধাঁধাঁর মত পরিস্থিতিতে তারা কিছুক্ষণ উদ্দেশ্যহীন ঘোরাঘুরি করে যে যার মত কাজে চলে যায়। ইচ্ছে, পরে আরেকদিন থানার বড়বাবুর সঙ্গে দেখা করবে। কিন্তু এদিকে ঐদিনই উর্মিলার জামিন হয়ে যায়। পারুলরা জানতে পারে না। পান দোকানদার সুবল গিয়ে সব ব্যবস্থাদি করে । প্রথম থেকে আড়ালে থেকেই সুবল এই কাজটা সফল ভাবে করে। যদিও এই ব্যাপারে তাকে সাহায্য করেছেন স্বয়ং কল্যাণ সেন। শর্ত, সব কিছু গোপন রাখতে হবে। সুবল তাই রেখেছে।
ছাড়া পেয়ে ঊর্মিলার বস্তিতে ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। তাকে দেখে সবাই উৎসুক কথা বলার জন্য—কিন্তু কেউ আগ বাড়িয়ে কিছু জিজ্ঞেস করছে না। পারুলকে দেখেও ঊর্মিলা কিছু না বলে ঘরে ঢুকে পড়ে। বাচ্চাগুলোকে ঘরের মধ্যে পেয়ে ওদের বুকে জড়িয়ে ঊর্মিলা হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। কিছুক্ষণ কান্নাকাটি শোনার পর পারুল নিজের ঘরের লণ্ঠন জ্বালিয়ে নিয়ে ঊর্মিলার ঘরে গেল। গিয়ে তাদের ঘরের লণ্ঠন খুঁজে পেতে ওঠা মুছে টুছে জ্বালিয়ে দিল। এবার আসার সময় বললো—ঊর্মিলাদি এখন আর কাইন্দো না—এইবার ওঠো, উঠে স্নান টান করে পোলাপান নিয়ে আমার ঘরে এসে চারটে খেয়ে নেও। আমি যাই ভাত বসাইগে। পারুল তার কথা বলে চলে যাওয়ার পর ঊর্মিলা আরো কিছুক্ষণ বসে থেকে উঠলো। বড় ছেলের কাছ থেকে শুনলো তাদের এই ক’দিনের জীবন যাপন। শুনে যেন ঊর্মিলার মনটা একটু হাল্কা হয়ে গেল।

রাতে খাওয়া দাওয়ার পর অনেকেই এলো ঊর্মিলার সঙ্গে দেখা করতে বা কথা বলতে। সবার সঙ্গেই ঊর্মিলা কথা বললো, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলো তার মত করে। পারুল এলো সবার শেষে। ঘরের সব কাজ শেষ করে। একপ্রস্ত কান্নাকাটি সমেত তারা অনেকটা সময় কথা বললো। পারুল উঠে যাওয়ার সময় ঊর্মিলা বললো—বাইচ্চা থাক্‌রে বইন, বাইচ্চা থাক, আগের জম্মে তুই আমার মায়ের পেটের বইন-ই আছিলি,---এই বলে পারুলকে জড়িয়ে ধরে ঊর্মিলা চোখের ফেললো। পারুলেরও চোখের পাতা ভারি হয়ে আসছিলো।

রাত হয়েছে। বাচ্চারা ঘুমিয়ে পড়েছে। শুতে যাবার আগে পারুলের প্রতি কৃতজ্ঞতায় যেমন তার মনটা আর্দ্র হয়ে উঠেছিলো, তেমনি বালিশে মাথা দিয়ে শুতে গিয়ে সুবোধের কথা মনে পড়াতে মনটা ততখানি শুষ্ক হয়ে গেল। ঘুম আসতে তাই অনেক দেরি হলো ঊর্মিলার।

পরদিন ঘুম থেকে উঠে শুনলো যে কমল বেপাত্তা। ঊর্মিলার গ্রেফতারের মূলে কে—এটা জানাজানি হয়ে যাওয়াতে কমল বস্তিতে অঘোষিত বয়কটের মুখে পড়েছিলো। তারপর হঠাৎ একদিন দেখা গেল তার ঘরে একটা টিপ তালা ঝুলছে। প্রথম প্রথম নানা ধরণের লোকজন এসে তার খোঁজ করতো । নানা বিড়ম্বনা আর মানসিক যন্ত্রণা নিয়ে ব্যস্ত থাকা সত্ত্বেও বেশিরভাগ জবাবদিহি ঊর্মিলাকেই করতে হতো, যেহেতু তাদের পাশাপাশি ঘর।

ইতিমধ্যে কিছু ধার-দেনা করে ঊর্মিলা তার দোকানটা আবার বসিয়েছে। দিনে রাতে হাড়ভাঙা পরিশ্রম—মুখ বুঝে কাজ করতে করতে ঊর্মিলা মনের দিক দিয়ে অনেকটাই কঠিন হয়ে উঠেছে। হঠাৎ যেন তার বয়সটা বেড়ে গেছে।
সুবোধের কথা মনে পড়লে বা কেউ জিজ্ঞেস করলে কেমন অসহ্য বোধ করে আজকাল। এ নিয়ে একদিন সমীরের সঙ্গে অনেক কথা কাটাকাটি হয়ে যায়।
--আরে ঊর্মিলা যে,দোকান আবার কবে চালু করলে?
--এই ত ক’দিন হলো—
--তুমি-তো খুব বিখ্যাত হয়ে গেছ দেখছি—কাগজে কাগজে খবর---
--হঃ, শুনছি সবই---
--আসল কালপ্রিটকে না ধরে পুলিশ যা ক’রে আর কি—তোমাকে তুলে নিয়ে গিয়ে বীরত্ব দেখাল---
--হঃ, বীরত্ব কেউ কম দেখায় নাই।
--কেমন ?
--আপনারা, আপনাদের মত ভদ্দর লোকেরা—
--আমরা—মানে ?
--পুলিশের কথা আপনাদের মুখে মানায় না।সবই শুনছি—সব ভদ্দর লোকের এক রা। গরীব লোকের বদনাম দিতে সবাই এক পায় খারা—যাক্‌, ছাড়ান দ্যান ঐ সব কথা—কী নেবেন কন দেখি---
--কিন্তু তুমি যেভাবে বলছো, আসলে মনে হচ্ছে কিছু ভুল করছ তুমি—
--যাক্‌ যাক্‌ এখন সরেন তো, দোকানের সামনাটা ছাড়েন এখন—
ভিড়ের মধ্যে এই সব কথা-বার্তা হয়তো কেউ খেয়াল করে থাকবে। তবে কল্যাণ সেন করেছেন বিলক্ষণ। সঙ্গে একটু মুচকি হাসলেন নিজে থেকেই। যেতে যেতে দেখে নিলেন সুবোধ নেই। আশে পাশে তেমন কোন সোর্সেরও দেখা নেই। তবে ঊর্মিলা থাকলেই-তো সুবোধের একদিন আসার সম্ভাবনা। না থাকলে আর সম্ভাবনা কোথায়?

দীর্ঘ সাত মাস পর কমল ফিরেছে। পুলিশের কাছে খবর সে বাংলাদেশ ঘুরে এসেছে।মাদক চালানের একটা গোটা দল এবার জালে পড়বে।অদৃশ্য প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে।
ঊর্মিলার সঙ্গে মুখোমুখি হলেও কমল কথা বলে না। তবে আজকাল সুযোগ বুঝে ঊর্মিলার বাচ্চাগুলোকে সে একটু আধটু আদর করে দেয়।
তবে ফিরে আসার পর দেখা যায় কমলের চেহারাটা ফিরেছে। এখানে এখন মদ মাংসের গন্ধ রাত বিরেতে ঊর্মিলা টের পায়। টের পায় গভীর রাত পর্যন্ত কমলের ঘরে লোকের আনাগোনা। মনে হয় কমলের এখন রোজগার ভাল।

কমলের প্রতি ঊর্মিলার রাগ নেই। কেন নেই এটা ঊর্মিলা বুঝতে পারে না। ধীরে ধীরে এক ধরণের উদাসীনতা যে তাকে আচ্ছন্ন করে চলেছে তা তার বোধের বাইরে। সাত মাস পর ঊর্মিলার ফিরে আসাটা ঊর্মিলা ইচ্ছে করলে ভেস্তে দিতে পারতো। বস্তিতে ঊর্মিলার সেই প্রভাব ও সমর্থন আছে। কিন্তু কেন জানি, দু’একজন পড়শির উৎসাহ সত্ত্বেও সে ঐ পথে পা বাড়ালো না।
রাগ সে সুবোধ বা জাহানারার উপরও করতে পারে না। কারণ গোটা ঘটনাটা তাকে এতটাই আহত করেছে যে সে এ নিয়ে আর ভাবতে চায় না। পারত পক্ষে কারোর সঙ্গে এ বিষয়ে কথাও বলতে চায় না। চোখের জল বা স্তব্ধতা তার ভেতর আপনা আপনিই জন্মায় বা শুকিয়ে যায়। সে মনে করে এর সঙ্গে যেন তার কোন সম্পর্ক নেই।
তবু, তারপরও এক জেদ, এক ব্যাখ্যাতীত জেদ তাকে বেঁচে থাকার জন্য তৈরি করে নিতে হয়েছে। রাতে ঘরে এসে ঘুমিয়ে না পড়া পর্যন্ত সেই জেদ তার সারা শরীর জুড়ে তীব্র বেগে চলাচল করে।
আজকাল তার ঘুমটা যেন একটু বেশিই পায়। অসহনীয় এক ক্লান্তির বোঝা, যা তার সারা দিনের সঞ্চয়, তাকে নিয়ে বেশিক্ষণ চোখ খোলা রাখা যায় না। ক্রমশঃ শরীর যেন আর তার চেনা শরীরটি থাকে না। পাশে শোওয়া বাচ্চাগুলো উপর ছড়ানো থাকে তার ডানা—একসময় সেই দিকে তার ভাবনাগুলো ক্রমে ঢলে পড়ে। তার ঘুম এসে যায়। ঘুমের ভেতর কখনো সুবোধ আসে না। আসে না এমনকি ছিঁচ কাঁদুনে ঐ শিবানীটাও।(ক্রমশঃ)

সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে আগস্ট, ২০১৬ সকাল ৯:৫৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×