somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প দা তি ক

২৬ শে আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১০:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


লিংক---পদাতিক/২৯,৩০

৩১
রাত এগারটার আগে সুবোধ ঘরমুখো হয় না। দোকান বন্ধ করতে করতে রাত হয়ে যায়। স্টেশন রোডে এই চা দোকানটা আসলে অর্জুন মালাকার নামে একজনের ছিল। রেলের জায়গায় দোকান। পাকা কিছু করা যাবে না। কল্পনা মাসির মধ্যস্থতায় সে এটা এক হাজার টাকার বিনিময়ে পেয়ে গেছে। বিক্রিবাটা তেমন আহামরি নাহলেও ইতিমধ্যে দোকানটাকে সে ভালবেসে ফেলেছে। কারণ নিজের মনে একা একটা লম্বা সময় কাটানোর সুযোগ রয়েছে সেখানে।খদ্দেররা আসে যায়। অধিকাংশই নানা ধরণের শ্রমজীবী মানুষ। চা বিস্কুট পাউরুটি ডিম ছাড়া আর কিছু পাওয়া যায় না। যা কাজ করার তা সে নিজেই একমনে করতে থাকে আর এক মনে চলতে থাকে তার নিজের ভাবনা চিন্তার জগত। অতীত ভবিষ্যৎ নিয়ে নিজের মত ভাঙা গড়ার খেলা।

ইদানীং সুবোধ বেশ সুস্থির হয়ে পড়েছে। রাতে ঘরে ফিরে খাওয়া দাওয়ার পর কী সব করে যেন। মোম জ্বালিয়ে একটা ছোট্ট খাতায় কী সব লেখে যেন। কী লেখে সুবোধ? জাহানারা ভেবে পায় না। একদিন প্রশ্ন করতেই সুবোধ হেসে বলে—‘তোমার জীবনী’। ‘ধ্যাৎ’ বলে জাহানারা বিছানা থেকে নেমে এসে মোমটা নিভিয়ে দিয়ে সুবোধকে নিজের কাছে টেনে নেয়।

সুবোধ লেখে---
তাং-----
চা’পাতা—১০ টাকা
দুধ –৮ টাকা
চিনি—১৪ টাকা
বিস্কুট—২০ টাকা
কয়লা—১৫ টাকা
ডিম—১৫ টাকা
অন্যান্য—২০ টাকা
মোট খরচ—১০২ টাকা।
মোট বিক্রয়—১৮৭টাকা।
অল্প অল্প শীত—বাবা এই সময় খুব সকালে ঘুম থেকে উঠতেন। উঠে আল-পথ ধরে অনেকদূর ধানক্ষেতের মধ্যে দিয়ে কোথায় যেতেন? মনে হতো যেন জোত জমি দেখা শোনা করতে বেরিয়েছেন। আসলে একটা বাড়ি আর সামনের বাগিচাটুকু ছাড়া আমাদের আর কোন জমি ছিল বলে শুনিনি।
মনে হয় জন্মের গন্ধ মাখা নতুন ধানের গন্ধ আর হেমন্তের সূর্যোদয় বাবার খুব প্রিয় ছিল।

এরকম প্রতিদিনের হিসেব। তারপর এক দুই পাতা ব্যাপী এই ধরণের কথা লেখা। আর এভাবেই খাতাটা শেষ প্রায়। কয়েকটা পাতা বাকি। শেষ লেখাটি এরকম—

মোট জমা হয়েছে এক হাজার সত্তর টাকা। পাঁচশ টাকা মূলধনে খারাপ কি?

মা’এর কথা ভাবতে ইচ্ছে করে। মা’এর স্মৃতি বলে-তো কিছু নেই। তবু তাঁর কণ্ঠস্বর কেমন ছিল---।
দেখতে ইচ্ছে করে তাদেরও—যাদের সঙ্গে কত কত দিন---।
কিন্তু কতদিন এভাবে—ফিরতে হবে না?
হ্যাঁ, এবার ফিরবো—সেই পথেই ফিরবো। এ আমার ইচ্ছা।একান্ত আমারই ইচ্ছা। কিন্তু বিপদ? হলে—হউক। তবুও।
কিন্তু লালন, জাহানারা---।

দোকানের বেঞ্চি সারানোর খরচ—২০ টাকা
একটা কেটলি কেনার জন্য—২৫ টাকা
জাহানারার জন্য একটা কম্বল
লালনকে নিয়ে শোয়ার জন্য—১০০ টাকা
খরচ বাড়ছে। দোকানের বিক্রিও একটু বাড়ছে বৈকি। আজ যেমন বিক্রি ৩০০ টাকা ৫০ পয়সা।

জাহানারা মশারি তুলে উঁকি দ্যায়। মগ্ন সুবোধ ঘাড় ঘুরিয়ে একবার দেখে—চোখাচোখি হয়। কিন্তু কথা হয় না । জাহানারা আবার শুয়ে পড়ে। একটা গভীর দম ছাড়ার আবহ টের পায় সুবোধ।

--কেমন আছো জাহানারা?
কী ভাবে বাঁচতে হয় তোমার কাছে শিখতে হবে।
এত প্রাণ শক্তি ছিল তোমার?
বিশ্বাস কর, আমি প্রথম দিন হাসপাতালে তোমার মুখ দেখে রাতভর----।
বেঁচে থাক তোমার এই জন্ম
বেঁচে থাক তোমার আরাধ্য স্বপ্ন—যদি দেখে থাক কখনো—
আচ্ছা তুমি কি স্বপ্ন দেখ?
কোনোদিন বলোনি-তো?
লালন কে তুমি যে এত সাংঘাতিক ভালবাসো—দেখে অনেক সময় মনে হয় তুমি মানুষের মত দেখতে আসলে কোনো বাঘিনী।
তোমাকে আমি অনেক, অনেক ভালবাসি।

এ-রকম আরো প্রাসঙ্গিক অপ্রাসঙ্গিক কথাবার্তায় ভরা দু’টি খাতা। বোঝা যায় এক টানা লেখার মত, গুছিয়ে কিছু লেখার মত ধৈর্য বা একাগ্রতা কোনোটাই সুবোধের ছিল না। শেষদিকে ছিল শুধু জাহানারাকে দেখা। দেখা আর বিস্ময়ের এক যুগপৎ তাড়না। জাহানারা রাতের দিকে যখন সুবোধের কাছাকাছি হতো, তখন সুবোধের আচরণ তার একদম সঙ্গত মনে হতো না। সুবোধের সাড়া না পেয়ে মাঝে মাঝে সে অভিমানও করতো। আবার ভাবতো—বুঝতে চেষ্টা করতো, কেন এমন হচ্ছে। সুবোধের মনে কীসের কষ্ট ! কিন্তু সত্যি কোনো কারণ সে খুঁজে পেতো না। সুবোধকে দেখা সেই উচ্ছল দুর্দম যুবকটি কোথায়—কোথায় সে দিনে দিনে হারাচ্ছে ! জাহানারা মনমরা উদাস সুবোধের সামনে বসে নিজেই নিজের চোখের জল মুছতো। সুবোধের তা দেখে সেই ভাবান্তর কই। বরং সে নিজেই কাঁদতো মাঝে মাঝে। অদ্ভুত ! জিজ্ঞেস করলেও বলতো না কিছুই। বোঝাই যেত যে সে নিজেকে লুকোতে চাইছে। ফলে সুবোধ তার কাছে অধরাই থেকে গেল। সম্পূর্ণ সুবোধকে কি তাহলে তার আর পাওয়া হলো না ! মনে মনে এই আফসোস আজ সে কোথায় রাখে।

দুপুর নাগাদ অর্জুন মালাকার এলো। দোকান বন্ধ দেখে বাড়িতে খোঁজ নিতে এলো। জাহানারা কল্পনা মাসির কোলে মুখ লুকিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। লালন ঘুমিয়ে পড়েছে অনেকক্ষণ কান্নাকাটির পর। সুবোধ চলে গেছে। একটা চিরকুট পাওয়া গেছে । জলের গেলাসের তলায় চাপা দেওয়া।
চিরকুটে লেখা।–চিন্তা করো না, মন খারাপ করো না। খোঁজখবর করার দরকার নেই। ফিরে আসব তাড়াতাড়ি। খাতার ভেতর টাকা আছে ।
(ক্রমশঃ)
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১০:৫৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নেতানিয়াহুও গনহত্যার দায়ে ঘৃণিত নায়ক হিসাবেই ইতিহাসে স্থান করে নিবে

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:৩৮

গত উইকেন্ডে খোদ ইজরাইলে হাজার হাজার ইজরাইলি জনতা নেতানিয়াহুর সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে।
দেখুন, https://www.youtube.com/shorts/HlFc6IxFeRA
ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করার উদ্দেশ্যে নেতানিয়াহুর এই হত্যাযজ্ঞ ইজরায়েলকে কতটা নিরাপদ করবে জনসাধারণ আজ সন্দিহান। বরং এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×