.....আমার বন্ধু মিথুর আমার প্রতি অনেকদিনের একটা পুরোনো অভিযোগ হচ্ছে, আমি নাকি তাকে ঠিক বুঝিনা, কেয়ার করিনা, অবহেলা করি। জানিনা তার এমন অভিযোগের ভিত্তি কি?!! তবে ধারনা করি তার মনের গভীরের কোনো এক জায়গায় তার আত্মবিশ্বাসের কিছুটা ঘাটতি আছে। ইদানিং সামুতে আমার টুকিটাকি ব্লগিংয়ের কথা জানতে পেরে তার অভিযোগের লিস্টে নতুন একটা অভিযোগ যুক্ত হয়েছে যে, তাকে নিয়ে নাকি আমি কখনোই কিছু লিখিনা। এই অভিযোগটাকে মিথ্যে প্রমাণিত করার জন্যই "যাহা বলিব সত্য বলিব, সত্য ছাড়া মিথ্যা বলিবনা। যে সত্য অন্তরে ব্যথা দেয়, এমন সত্য গোপন করিব"
মিথুর সাথে আমার পরিচয় খুব অল্পদিনের। হয়তোবা বড়জোর এক বছরের!! জানি সময়টা খুব অল্প। তবুও এই একবছরই তাকে চেনার জন্য যথেষ্ট। আমার জীবনে আমি কখনোই কোনো মেয়ের সাথে এত কম সময়ে এত বেশী আড্ডা কখনোই দেইনি, যতটা মিথির সাথে দিয়েছি। এমন আড্ডাবাজ, উচ্ছ্বল মেয়ে আমি জীবনে খুব কমই দেখেছি। ওর কল্যানে শহরের ফাষ্টফুডের দোকানে আমাদের চেহারা দিন দিন পরিচিত হচ্ছে। এই ক্ষেত্রে ওর ডিজিটাল ক্যামেরার অবদানও কম নয়। যেখানেই যায়, সাথে আর কিছু না থাকুক ওর সখের ডিজিটাল ক্যামেরা থাকবেনা তা কখনোই হয়না। রাস্তায় অবহেলায় পড়ে থাকা পিচ্চি বিড়াল ছানাটিও ওর ক্যামেরার নির্যাতনের শিকার। আমি বারণ করলেও কে শোনে কার কথা!! হয়তোবা রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি, হঠাৎ করেই মিথির আবদার "এই!!! রাস্তার পরিবেশটা না অনেক সুন্দর, এখানে আমার একটা ছবি তুলে দাওনা প্লিজ??!!" আবার কখনো দেখা গেল শো-রুমের ডামি পুতুলটার সাথে তার একটা ছবি তুলে দিতেই হবে। এমন অন্যায় আব্দার শুধুমাত্র মিথুকেই মানায়। এসব কারনে মাঝে মাঝে বিরক্তও লাগে। কিন্তু কি আর করা!! ওর "পিচ্চি বাচ্চা" টাইপের আব্দার আমি সবসময়ই কিছুটা হলেও রক্ষা করে চলি। মাঝে মাঝে অবাক হয়ে ওর কীর্তি-কলাপ আমি দেখি আর অবাক হয়ে ওর বয়সের সাথে ওর ছেলেমানুষির অসামঞ্জস্যতা দেখে হিসাব মেলাতে পারিনা। তবুও এই বান্ধবীটার বাচ্চা-বাচ্চা স্বভাব আমার ভালোই লাগে। কারন এই ধরনের আচরণ শুধু ওকেই মানায়।
ওর আরেকটা বদভ্যাস আছে যে, ফেসবুকে ওর স্ট্যাটাসে রিপ্লাই কমেন্টের বন্যা না বইলে ওর পেটের ভাত কখনোই হজম হয়না। তাই এই সুযোগে আমিও ওকে রাগানোর জন্য মাঝে মাঝে ইচ্ছে করেই কোনো কমেন্ট করিনা। এমনো হয়েছে- ওর ফেসবুকের স্ট্যাটাসে কি রিপ্লাই কমেন্ট করতে হবে মাঝে মাঝে তাও আমাকে বলে দেয় ( দুঃখিত মিথু, তোমার গোপনীয়তা রক্ষার শত চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলাম!!)। "রিয়েল ফেসবুক ক্রেজী" বলতে যা বুঝায় মিথু কিছুটা সেই রকম। মাঝে মাঝে ভাবি, ফেসবুক যদি কোনোদিন বন্ধ হয়ে যায় তবে মিথুর কি হবে!!?? তবে মাঝে মাঝে ওর ফেসবুক স্ট্যাটাস আপডেট না দেখলে কেমন জানি "ফেসবুক" কে অপূর্ন অপূর্ন মনে হয়।
পোষাকের নতুন নতুন ডিজাইন নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করা এবং আমাদের দিয়ে সেই ডিজাইনের ব্যপারে জোর করে প্রশংসা আদায় করে নেওয়া তার আরেকটি মহৎ কর্ম। ওর কল্যানে দুই-একটা মহিলা দর্জির দোকানও আমার চেনা হয়ে গিয়েছে। কি করব!!?? বন্ধু বলেই পাশে থাকা!!
আমার ব্লগের একমাত্র ভক্ত হচ্ছে মিথু। আমার টুকিটাকি লেখা পড়ে মিথু এমন ভাব করে যে, আমার মত কেউ এত সুন্দর লিখতে পারবেনা। যদিও জানি মিথু যদি কখনো সামুর ব্লগ গুলো পড়ে তবে জীবনেও আমার লেখার আর প্রশংসা করবেনা। এই ভয়ে আপাতত ওকে সামুতে নিয়ে আসিনি। কিন্তু ভবিষ্যতে যে কি হয়!!
মিথুকে নিয়ে পরিপূর্ন ভাবে লিখতে গেলে মনে হয় একটা বই'ই লেখা হয়ে যাবে। আসলেই মানুষের জীবনটা অনেকগুলো গল্পেরই সমষ্টি। যাইহোক, মিথুর কল্যাণে আমি আমার জীবনের অনেক ছোট-খাটো মেয়ে-ঘটিত ব্যাপার অনেক সুন্দরভাবে মোকাবিলা করতে পেরেছি। এসব ব্যাপারে ওই ছিল আমার একমাত্র পথ-প্রদর্শক এবং পরামর্শদাতা। কারন মিথু মেয়ে হওয়ার কারনে মেয়েদের অনেক মনস্তাত্বিক ব্যাপারে ও ভালোভাবেই বুঝে আমাকে পরামর্শ দিত। সত্যি বলতে কি ওর কারনে আমি অনেক ব্যাপারে সঠিকভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছি। জানিনা এটা একধরনের আবেগ কিনা তবুও বলতে পারি-ওর মত নিবেদিত-প্রাণ বন্ধু জীবনে আর আসবে কিনা জানিনা।
শুনতে পাচ্ছি, মিথুর বিয়ের কথা-বার্তা চলছে। জানিনা কোনো একদিন হয়তোবা আমাদের বন্ধুদের ছেড়ে অনেক দূরে চলে যাবে। নতুন একটা জগত গড়ে তুলবে। সেই জগতে হয়তোবা আমি থাকবনা। কিন্তু কেমন জানি বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে, কোনো এক অলস দূপুরে মিথুর ক্লান্ত মনের স্মৃতিতে আমি হয়তোবা মুহূর্তের জন্য ঠাঁই পেতেও পারি।
[ মিথু, জানিনা বন্ধু হিসেবে কেমন ছিলাম আমি!!?? শুনেছি তোমার অনেক অকৃতজ্ঞ বন্ধু ছিল বা এখনো আছে। আমি তাদের মত কিনা-তা জানতে চেয়ে তোমাকে কোনো বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন করতে চাইনা। তুমি আমার জন্য যা করেছ বা করতে চেয়েছ-তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর জন্য আজ এই লেখাটা তোমাকে উৎসর্গ করলাম। এই মুহূর্তে তোমার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা জানানোর জন্য এর থেকে বেশী কিছু করার সামর্থ্য আমার নেই। দোয়া করি জীবনে যেন সর্বদা সুখে থাকো। আর একটা কথা- "এই পুরুষ-শাসিত সমাজে পুরুষদের কোনো মেয়ে-বন্ধু থাকলে সেইটা কোনো দোষের হয়না, কিন্তু একটা মেয়ের ছেলে-বন্ধু থাকলে সেটার অর্থ অনেকের কাছে অনেক রকম হয়।" যদি আমাকে শুভাকাঙ্খী মনে কর, তবে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কথাটা মনে রেখো। ]
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মার্চ, ২০১১ সকাল ১১:৩০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



