somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প: দু:খী সবুজ পাতা - ২

১৯ শে আগস্ট, ২০১০ দুপুর ১২:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দু:খী সবুজ পাতা আগের পর্ব

তেতুল গাছের আজ খুব ব্যস্ত দিন। গাছের উপরে একটা খোড়লে ফাটল ধরেছে। কাঠঠোকরা এসেছে ভোরে। সে নষ্ট হয়ে যাওয়া গাছের অংশটা ঠুকরে ঠুকরে আলাদা করে দিচ্ছে। এবার প্রচুর তেতুল হয়েছে। সেগুলো নিয়ে যেতে এসেছে বুলবুলি।

এর মধ্যেই তেতুল গাছটা দেখতে পায় ছোট্ট লতানো পাতাটার মন খারাপ। সে একদৃষ্টে দীঘির পানির দিকে চেয়ে আছে। তেতুল গাছ আস্তে করে জিজ্ঞেস করে, মাগো, এত বেশী মন খারাপ কেন তোমার? উপরে চেয়ে দেখো কি দারুণ রোদ!হিমালয় থেকে দেশান্তরী পাখীরা বেড়াতে এসেছে।

ছিটে পাতাটা ঘাড় ফিরিয়ে লজ্জা পেয়ে চোখ মুছে ফেলে। তেতুলের পাতারা তাকে খুশী হতে দেখে আনন্দিত হয়।

ঠিক এমন সময় দ্রুত গতিতে কিছু একটা ছুটে আসে তার দিকে। একগাদা তেতুল পাতা ঝর ঝর করে নিচে পড়ে যায়।একদল স্কুলপালানো ছেলে পাকা তেতুল পাড়ার জন্য গুলতিতে মার্বেল ছুড়ে মারছে। মার্বেল তো নয় যেন গুলি। ক্রমাগত মার্বেল উড়ে আসছে। তেতুলে না লেগে ডালে আর পাতায় লাগছে। ছিটে পাতা মাথা নিচু করে মায়ের সঙ্গে প্রার্থনা শুরু করছে।

ছিটে পাতার ঠিক কান ঘেষে একটা মার্বেল সদ্য গজানো অঙ্কুর ছিন্ন ভিন্ন করে চলে যায়। পাতারা সমস্বরে ভয়ে বিলাপ করতে থাকে। ছেলেগুলো এমন কেন? তারা কেন বুঝতে পারে না পাতাদের কত কষ্ট হয়? কিছুক্ষণ পর সেই বালকেরা চলে গেলে বন্ধ ছিটে পাতা চোখ খোলে। সে দেখে তার তার সেজ বোন কষ্টে ব্যথায় চিত্কার করছে। বোনের হাত পা মার্বেলের গোলায় ছিঁড়ে গেছে।

মাসখানেক পর আবহাওয়া বদলে যেতে থাকে। দমকা বাতাস বয়ে যায়। সাধারণত: অল্প বাতাসে তেতুল গাছের কিছু হয়না। তবুও ছিটে পাতার মনে হয় তার মায়ের গল্পটা। তেতুল গাছ ছিটে পাতাকে বলে,মাগো, গাছ হতে হলে আর শক্ত হতে হয়। এভাবে তেতুলের স্নেহে দু:খী ছিটে পাতা ভুলে যায় অনেক কষ্ট।


গাছটাকে কিছু জোরে কাঁপাচ্ছিল। তেতুল গাছ খুব ভোরে ঘুমের ঘোরে ধরফড় করে ওঠে। তারপর যা দেখে রক্ত হীম। কয়েকজন কাঠুরে কুড়াল দিয়ে তার সবচেয়ে বড় ডালটা কাটছে। এরই মধ্যে ঠুক ঠুক শব্দে ছালবাকল খুবলে নেয়ায় তারা ব্যস্ত। লোকগুলোর চেহারা যেন কঠিন, দয়া মায়াহীন। দয়া মায়া থাকলে কেউ গাছ কাটতে পারে? ব্যথায় চিৎকার করে সাহায্য চায় তেতুল গাছ। বলে, এই গাছ তোমাদের, তোমরা একে কেটে ফেল না! কিন্তু গাছেদের শব্দ মানুষ শুনতে পায় না। ওরা আরো জোরে গাছের ডাল কাটতে থাকে।

তেতুলের শিশু পাতাদের মরাকান্নায় চারদিক ছেয়ে যায়। ছিটে পাতা ছোট্ট চোখের পাতায় তখনো ঘুম জড়ানো,সে কিছুই বুঝতে পারছিল না। তেতুল গাছকে সে কখনো কাঁদতে দেখেনি। সে দেখে তার মার চোখে পানি। সে প্রার্থনা করছে যাতে কাঠুরে চলে যায়। ছিটে পাতা তখনই বিলাপ করতে থাকে - বাঁচাও মানুষেরা, এমন কাজ তোমরা করো না। কেউ শুনতে পায় না অথবা শোনে না। মগডালটা বিকট শব্দ করে ভেঙে পড়ে যায় নিচে। মা-- বলে আর্তনাদ করে ওঠে তেতুলের বিশাল শরীরটা।

কাঠুরেরা ততক্ষণে একটু ক্লান্ত হয়। কাঠ কাটা থামিয়ে তারা তখন খেতে যাবে।

একটা বিকট চেহারার কাঠুরে গাছ বেয়ে উপরে উঠছে। কেন? তার লাল টকটকে চোখ ছিটে পাতার দিকে। গাছের কান্ড বেয়ে উপরের দিকে উঠে আসে। থপ থপ শব্দ হয়।

শুনেছে মানুষ পাতা থ্যাতলে ঔষধ বানায়। কখনো গরম করে সিদ্ধ করে খায়। মানুষের মতো পাষন্ড আর স্বার্থপর কেউ নেই। ছিটে পাতা তার মাকে আঁকড়ে ধরে চোখ বন্ধ করে। কাঁপতে থাকে। মাও। স্পষ্ট দেখতে পায় - ভয়ংকর লোকটার হাত তাকে ছিঁড়ে নিচ্ছে। ছোট্ট দু:খী পাতার মনে হয় সে অজ্ঞান হয়ে যাবে।

কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে লোকটা খুব কাছে এসেও তাকে ধরে না। সে চট করে পানের সবুজ পাতাগুলো ছিড়ে নেয়। কয়েকটা মুখে পোরে। রাক্ষসের মতো দাঁত দিয়ে চিবাতে থাকে। টুপ টুপ করে পানির মত রক্ত ঝরতে থাকে পান গাছের লতা থেকে।

পরপর কয়েকটা নিষ্ঠুরতা দেখে ছিটে পাতার চোখ তখন শুষ্ক।
সবুজ পানপাতাকে সে হিংসা করতো। সুন্দর হয়নি বলে তার আক্ষেপ ছিল । অথচ এত সুন্দর হয়েও কত সহজে তারা নিহত হয়ে গেল।

( ড্রাফট ১.০ - বানান ও বিন্যাসের ভুলগুলো মার্জনীয়)
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে আগস্ট, ২০১০ দুপুর ১২:৫০
১০টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পেচ্ছাপ করি আপনাদের মূর্খ চেতনায়

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৮

আপনারা হাদি হতে চেয়েছিলেন, অথচ হয়ে গেলেন নিরীহ হিন্দু গার্মেন্টস কর্মীর হত্যাকারী।
আপনারা আবাবিল হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে চেয়েছিলেন, অথচ রাক্ষস হয়ে বিএনপি নেতার ফুটফুটে মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারলেন!
আপনারা ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×