somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পরিযায়ী শিশির

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ৯:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


জন্মগত ক্ষমতায় কি আসে যায়। অধিকাংশ পাখিই নিচু বৃক্ষডালে বসে ঝিমোয় । শিশির জন্মের লিখনে তৃণলতায় ঝরে যায়, অপেয় জল শুষ্ক শিলা থেকে গড়িয়ে সমাধিতে শুষে যায়। অথচ বেসিনের আয়নায় যে সামান্য কয় ফোটা শিশির জমে ছিল তারাও উড়ে যেতে চেয়েছিল। শুধু অভিজাত জলের ফোয়ারা শাহরিক নলে বহমান হয়, সলিলের মিছিলে মার্চপাস্ট-হাটুসৈনিকের মত প্রভুর পেয়ালায় তৃষ্ণা নিবারণ করে। সংস্কারের মধ্যাকষ বল সমস্ত জলের পা টেনে ধরে। মনে হবে মৃত বা নির্ভরশীল হলেই সব সমাধান। বয়সে যেমন মাংসের সঞ্চয় বেড়ে যায়, সাওতালপুরুষদের বাঁশে করে পশু বহন করার মত ভারী হয়ে পিণ্ড কণ্ঠহাড়ে ঝুলতেই থাকে। বড় বেশি লঘু এবং দৈনন্দিন লাগে তাকে ।

পরিযায়ী পাখি মাতৃভূমিকে ছেড়ে পরদেশে উড়ে যাচ্ছিল। শিশির জলও পাখিদের পালে উড়তে উড়তে রাতের সীমান্তে অভিবাসী হতে চাইছিল। অথচ জলবাষ্পের ডানা ঋজু নয়, পাখির মত স্বাধীনও নয়, শীতের আতঙ্কে সে কাঁপে, ধপ করে বসে পড়ে যেখানেই তাপমাত্রা শূন্যগামী হয়। প্রবেশাধিকারে জন্য সে অদৃষ্টরক্ষীর সঙ্গে তর্ক করে, তবুও সে ওড়ে। খানিক সময় পরই দেখতে পেলাম সড়কবাতির কাচের শীতল মোড়কে অসহায় এক চিমচিকার মত ঝুলছিল সে । এখন তৃণলতার জলবিন্দুরা তার উর্ধ্বগামী হবার ইচ্ছেকে বিদ্রুপ করছে। কি লাভ তবে বিফল স্বপ্নে? আদতে জল তো জলই রইল। ব্যক্তিত্ব কমে গেল, যেন সব চুমকিঝরা ইচ্ছে নয়, আড়ালে থাকা অক্ষমতাটা আমাদের পরিচয়। রঙিন আঠাটেপে যে টেনিস বল, বাহ্যত কর্কবল হয়ে বালকদের ক্রীড়া হয়, তার অন্তরে ঠুনকো টেনিসের বল। এ ছাড়া কান্নার জলবিন্দুতে যতই রঙ থাকুক বেদনার দিনগুলো কখনোই একত্রে মেশে না।


জন্ম আমার অঘ্রাণে। কখনো পাতলা ঘ্রানটুকুও আমার ইন্দ্রিয় এড়াতে পারে না। এত যে বিচিত্র দ্বন্দ্ব আমার জানা ছিল না আগে। স্বচ্ছ মাধ্যমে বর্ণহীন মাধ্যমে কিছু আঁকলে কেউ চিত্রকলা বলে না। কিছুদিন হল জেনেছি প্রেম ও মৃত্যুর ও অরূপ অন্বয় থাকে । উড়ন্ত শিশির কণা যে ছবি এঁকেছিল আয়নায় আমি হলে সেখানেই থমকে থাকতাম। অথচ আজকে অনুপস্থিতিটাও তাও ভাল লাগছে। আমি পারি নি সেই কষ্ট কমে গিয়ে দেখি বকুল ফুলের মত ভেজা এক মিষ্টি একটা সৌরভ থাকে আমার না পারা জুড়ে। আমি ব্যস্ত হয়ে যাই নি। সেজন্য ইন্দ্রিয়ে খড় পুড়িয়ে ধান সেদ্ধের মত কিছু গন্ধ পাই । সেদ্ধ হবার সময় চোকলার আচ্ছাদনে ধানের টুকরো ভাগ হয় দৃশ্যের অন্তরালে।

শুনেছি অদৃশ্য কিছু পুড়ে গেলে তার ছায়াটাও উল্টো হয়, উল্টো চিলের মত শ্মশানের উপর দিয়ে উড়ে যায়। চতুর্দোলার পিছনে শোকার্ত বেহারা যেভাবে অনিচ্ছায় চলে, আর দেখতে পায় শববাহী ছায়া ছায়া গন্ধটা উড়ে গিয়ে পাথুরে ধ্বনি সৃষ্টি করেছ। যে পাথরটাও নদীতে ডুবে থাকে, জলছবি শুকিয়ে গেলে, ছায়া আর তার প্রতিবিম্ব অঙ্গাঙ্গিভাবে লেপ্টে থাকে।

অনুভব শিল্পকে নির্ধারণ করে। কাব্য দর্শনের জন্য সুক্ষ্ম অনুভূতি প্রয়োজন। বৈথেলহামে যিশুর সংবাদ জানতে পরিব্রাজকদের আকাশের তুচ্ছ নক্ষত্র ধরে পথ চলতে হয়। অথচ খালিচোখে বড় নক্ষত্রই দেখতে পায়। ভোঁতা আলো দেখতে পায়, আর পিনফোটানো কষ্টে সুখের দুর্ভিক্ষ, অন্ধকার ব্যতিত যেন কিছু নেই। তবে কীটদংশনে পর্বতের গায়ে বৃক্ষ কম্পিত হলে যতটুকু স্পন্দন হয় সেই চারু কম্পনেও কিন্তু ভাবনার জন্ম হতে পারে।

শূন্যতাকে এভাবে দেখা শিখিনি আগে। একজন মা যার সন্তান নেই বলে কষ্ট আছে, অন্য একজন যার সন্তান গর্ভে থেকে মরে গেল, আর তৃতীয় জন যার সন্তান থেকেও অজ্ঞাতবাসে - প্রত্যেকেই শূন্যতাকে নিয়ে বসবাস করে, তারপরও তিনটি গল্পের শূন্য গুলো পৃথক। জনৈক স্কেচকর আঁকতে পারছিল না। বন্ধাত্বের জন্য সে তার হৃদয়কে দায়ী করে যায়। যে খাতার মুখোমুখি পাতা চোখের পাতার মত লাগালাগি ঘুমিয়ে ছিল, শত চেষ্টাতেও কোন আঁচড় দিতে ইচ্ছে হল না। দ্বিতীয় এক চিত্রকরের মন যখন প্রস্তুত তার হাতের কাছে রঙ নেই, হয়তো তুলিও ছিল না । মাঝ রাতে প্রবত চায়ের প্রবল তেষ্টার কৌটো উপুর করেও চা পাতা মিলল না - এভাবে বহু রকম শূন্যতা কিছু না থাকায় অস্তিত্ব জানান দেয়।

আসল কথা কিছু আঁকি নি। লিখিও নি। সান্ত্বনা দেই - যে দিন খাতা খুলে কিছুই আঁকা হয় না, সেই শূন্যতা একেবারে বন্ধ খাতার চাইতে পুরোপুরি আলাদা। কেননা বস্তু নয়, পারস্পরিক গল্পসমূহই আমাদের নির্মাণ করে।

--
ড্রাফট ১.০ /পরিমার্জনরত

সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মার্চ, ২০১২ ভোর ৬:১১
১৩টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×