somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাসাইদের দেশে - পর্ব ২

১৬ ই এপ্রিল, ২০১১ রাত ১২:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কেনিয়া থেকে ঘুরে যাবো আর মাসাই মারা সাফারিতে যাবো না, সেটা কি করে সম্ভব!!! স্বপ্নপূরণ হয়ে মাসাই মারা ন্যাশনাল রিজার্ভ যাওয়া নিয়ে এ পর্ব।

নাইরোবি থেকে মাসাইমারার দুরত্ব ২৭০ কিমি। রাস্তার অবস্থা খুব একটা ভাল না হওয়ায় ৫ ঘন্টার মতো লেগে যায়। প্লেনে করেও যাওয়া যায় এবং অনেক সময়ও বাঁচানো যায়। কিন্তু তাতে করে আপনি বিপুল পরিমান অর্থের সাথে সাথে অকৃপণ প্রকৃতি দেখার দুর্লভ সুযোগ হারাবেন। আমরা ঠিক করলাম গাড়িতে করেই যাবো। আমরা বলতে আটজন। আমাদের গাড়ির চালক আবার পার্কের লাইসেন্সধারি গাইড। তার কথা অনুযায়ি খুব ভোরে রওনা দিলে সন্ধার মধ্যে নাইরোবি ফেরৎ আসা সম্ভব।

৩ জানুয়ারী ২০০৯। সূর্যি মামা জাগার আগেই আমরা রওনা দিলাম। গাড়ি ভর্তি করে শুকনা খাবার, পানীয় নেয়া হলো। চালক সারাদিনের কথা চিন্তা করে ট্যাঙ্ক ভর্তি করে তেল নিলো। যাত্রা হলো শুরু! এতোদিন ধরে যা শুধু টিভিতেই দেখে এসেছি তা আজ নিজের চোখে দেখতে যাচ্ছি, ভাবতেই পুলকিত হলাম। ভাবতে ভাবতে একসময় ঘুম চলে আসলো (তখনও বাইরে অন্ধকার—আমার ঘুমানোর সময়! :p)

যখন ঘুম ভাঙল ততক্ষনে চলে আসছি ভুপৃষ্ঠের সবচেয়ে বড় উপত্যকা ‘গ্রেট রিফ্ট ভ্যালি’তে। ভোরের সূর্য আলো ঢেলে উজ্জ্বল করেছিল দুইপাশের খাড়া উপত্যকা। মাঝে বিশাল খাদ। আমরা আছি সমুদ্রপুষ্ঠ থেকে ২৫০০ মি উচুতে, পাহাড়ের ঢাল বেয়ে বানানো রাস্তায়। এই গ্রেট রিফ্ট ভ্যালি দক্ষিণে মোজাম্বিক থেকে উত্তরে সিরিয়া পর্যন্ত প্রায় ৬০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। যদিও রাস্তার পাশের সাইনবোর্ড বলছিল এর দৈর্ঘ্য ৯৬০০ কিলোমিটার। ভূগর্ভস্থ চাপের ফলে সৃষ্ট ফাটল, আর তা এক সময় রূপ নেয় এই সুবিশাল উপত্যকার। কোথাও কোথাও হয় লাভার উৎগিরন। কেনিয়ার বিভিন্ন অংশে এখনও দেখা যায় জীবন্ত এবং সুপ্ত আগ্নেয়গিরির ফাটল থেকে নির্গত প্রাকৃতিক উষ্ণ পানির উৎস বা ন্যাচারাল হট স্প্রিং। এরকম এক হট স্প্রিংয়ে গিয়েছিলাম পরে আরেকদিন। সেটা নিয়ে লিখবো পরের পর্বে।


ভুপৃষ্ঠের সবচেয়ে বড় উপত্যকা ‘গ্রেট রিফ্ট ভ্যালি’





এ ছবিটা যাবার পথে তোলা



যত্ততত্র রাস্তা পার হবেন না, জেব্রা ক্রসিং দিয়ে রাস্তা পার হউন :P

বেলা এগারোটার একটু আগে পৌছলাম মাসাই মারা রিজার্ভের সেকেনানি গেইটে। মূল পার্কে ঢোকার জন্য মোট ছটি গেইট আছে, যার পাঁচটি কেনিয়া থেকে একটি তানজানিয়া থেকে। সেকেনানি গেইট হল নাইরোবি থেকে সবচেয়ে কাছের। উল্লেখ্য যে এ রিজার্ভের শুধু গেইট আছে, কোন দেয়াল নেই। পার্ক না বলে রিজার্ভ বলার কারনও এটা। গেটোর সামনে গাড়ি থামতেই মাসাই রমনিদের ভিড় জমে গেলো। ড্রাইভার ইশারা করে তাদের চলে যেতে বলল। এখান থেকে কিছু না কেনাই ভাল, কারণ অন্যান্য জায়গা থেকে দাম পড়বে কয়েকগুন। আমরা এন্ট্রান্স ফি দিলাম চল্লিশ ডলার করে। এখন শুনেছি ৬০ ডলার করে দিতে হয়। :|


গুগল করে রিজার্ভের এ ম্যাপটা পেলাম। আমাদের এন্ট্রান্স পয়েন্ট সেকেনানি গেইট


এ রিজার্ভের শুধু গেইট আছে, কোন ধরনের বেড়া বা দেয়াল নেই:-/

ভেতরে ঢুকেই আমরা ছাদ খুলে সবাই দাঁড়িয়ে গেলাম। সে এক অভাবনীয় দৃশ্য। সৃষ্টিকর্তা নিজ হাতে রঙের কারুকাজ করে রেখেছেন। বুঝতে পারলাম মাসাই মারার “মারা” নামের তাৎপর্য। মাসাইদের ভাষায় “মারা” অর্থ চিত্রবিচিত্র। যে পর্যন্ত চোখ যায় শুধু সোনালি ঘাসের সাভানা, তা গিয়ে ঠেকেছে পাহাড়ের সাথে। তারপর স্বচ্ছ নীল আকাশ। মাঝে মাঝে একটি কি দুটি গাঢ় সবুজ ঝোপ বা গাছড়া।





আমরা রয়েছি ‘বিগ ফাইভ’ দেখার অপেক্ষায়। প্রথমেই চোখে পড়ল আফ্রিকান বাফেলোর এক পাল। হাজারে হাজারে চরে বেড়াচ্ছে। এরা চলেও দলেবলে, বাসও করে দলেবলে। কোথায় যেনো পড়েছিলাম আফ্রিকার সবচেয়ে ভয়ংকর প্রাণীগুলোর একটি এই বুনো মহিষ। এরা আক্রান্ত হলে সিংহকেও দৌড়ের উপর থাকতে হয়। ওই দূরে এক ঝাক গ্যাজেল। দেখলাম এক দল জেব্রা। সাদা-কালো রং আমার সব সময়ই পছন্দের। তাই এই নিষ্পাপ, অসহায় প্রাণীটাকে আমার খুবই কাছেরজন মনে হয়।












আমাদের গাড়ির আওয়াজে এক সিংহি ঘুম ভেঙে অন্য দিকে হাটা দেয়

গাড়ির মধ্যে রেডিও সিস্টেম থাকাতে গাইডরা পার্কে থাকা অবস্থার নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করতে পারে। সেই রেডিওতে খবর এলো দুটি সিংহ শিকার ধরার অপেক্ষায় আছে। আমরা গেলাম ওদিকেই। আমাদের আগেই কয়েকটি গ্রুপ ওখানে গিয়ে হাজির। দেখলাম দুটি সিংহ তীক্ষ্ণ নজরে অপেক্ষা করছে মোক্ষম সময়ে; খুনি নখর বসাবার জন্য। কিন্তু আমাদেরকে হতাশ করে কোথেকে আসলো এক বুনো মহিষ। তাড়িয়ে দিল সিংহদের। আমাদেরও দেখা হলো না ক্ষুধার্ত সিংহের মৃগশিকার।:((


শিকারের অপেক্ষায় ক্ষুধার্ত সিংহ

আমাদের দেখার ছিল অনেক কিছু, সময় ছিল কম। তাই এক জায়গায় বেশীক্ষণ আটকে থাকতে চাই নি। যখন গেট দিয়ে বের হলাম তখন পশ্চিমে পড়ন্ত সূর্যের লাল-কমলার খেলা। ভীষন ভাল লাগা নিয়ে ফিরছিল প্রতিটি মন।


বিদায় মাসাই মারা

জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত হল সাফারির সবচেয়ে ভাল সময়। এসময় তানজানিয়ার সেরেনগেটি থেকে মাসাই মারাতে খাবারের খোঁজে অ্যান্টিলোপ আসে লাখে লাখে। তাদেরকে মারা নদী পার হয়ে মাসাইমারায় ঢুকতে হয়। এ সুযোগে শিকার ধরার জন্য ঘাপটি মেরে বসে থাকে কুমির, সিংহ, চিতা। আর তা নিজ চোখে দেখার জন্য বা ক্যামেরাবন্দী করার জন্য উৎসাহি মানুষেরা জড়ো হয় এখানে। এই ভয়ানক সৌন্দর্যকে উপভোগ করতে ঘুরে আসুন না মাসাইমারা সাফারি থেকে!

(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই এপ্রিল, ২০১১ রাত ১২:১৩
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×