somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে...

৩০ শে মে, ২০১১ রাত ১১:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঘটনাস্থল রাজধানীর মৌচাক মার্কেটের একটি কফি শপ। ঘটনার প্রধান চরিত্র হল একজন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রী। ধরে নেই তার নাম মহুয়া। পুরো ঘটনার প্রতক্ষদর্শী আমার এক বন্ধু কমল। সামান্য ঘষেমেজে তার বয়ান থেকেই ঘটনাটি শেয়ার করছি।


কফি শপের বামদিকের একদম শেষ টেবিলে বসে আছে মহুয়া। কিছুক্ষণ পর পর হাতঘড়ির দিকে তাকানোর ভংগি বলে দিচ্ছে সে কারো জন্য অপেক্ষা করছে। তার চোখে মুখে সন্ত্রস্ত ভাব। ভীরু ভীরু হরিণ চাহনি। নিজেকে ব্যস্ত রাখার জন্যই হয়ত আইফোনে নিয়ে খেলা করছে।

হঠাৎ তার ফোন বেজে উঠলো,
“হ্যালো, তুমি কই?”
ওপাশ থেকে কি উত্তর আসলো বোঝার উপায় নেই।
“আরো ২০ মিনিট! প্রথমদিন দেখা করতে আইসাই আমারে ২০মিনিট বসায় রাখবা? তুমি এখখুনি আসো। আমার ভাল্লাগতেছে না।“
আবার বিরতি...
“আমি কিচ্ছু জানি না...তুমি আসো।”
ফোনটা কেটে গেলো বোধ হয়।

আমি বসে আছি রেস্টুরেন্টের মাঝ বরাবর টেবিলটাতে।

প্রায় ২৫ মিনিট পর রেস্টুরেন্টে আগমন ঘটলো এক যুবকের। হাতে বেশ বড়সড় একটা বক্স আর কিছু লাল গোলাপ। বক্সটা সুদৃশ্য কাগজে মোড়ানো। তার তীক্ষ্ণ চোখজোড়া ছোটখাটো রেস্টুরেন্টটা একবারে দেখে নিল। তারপর সোজা চলে গেলো বামদিকের শেষ টেবিলটাতে যেখানে মহুয়া বসে আছে তার সামনে।

মহুয়ার চাহনিতে শিশুসুলভ হাসি। মনে হলো বহুদিনের পরিচিত দুজনের পুনর্মিলন।

ধরে নেই ছেলেটির নাম রাজিব। রাজিব কাগজের বক্সটাকে টেবিলের এক পাশে রেখে গোলাপগুলো মহুয়ার হাতে দিলো। মহুয়ার হাসিতে বালখিল্যতা।

আবার দীর্ঘক্ষণ বিরতি।

রাজিব: “আরে ধুর...মোবাইলে একটা টাকাও নাই। অ্যাই মহুয়া, তোমার মোবাইলটা একটু দাও না একটা কল করি।”
মহুয়া কফির কাপে চুমুক দিতে দিতেই তার মোবাইল টা রাজিবের হাতে দিয়ে দিল, “কিপটুস কোথাকার!”
রাজীব আইফোনটা হাতে নিয়েই একটা কল করল “ওই শোন্, আমি রাজিব। আমার টাকা শ্যাষ, তাই আরেক খান মোবাইল থেইকা কল করছি। তুই আইছছ?....মৌচাকের নিচে? আচ্ছা, তুই ১ মিনিট খারা আমি আইতাছি”।

“মহুয়া একটু দাড়াও তো। আমার এক ফ্রেন্ড আসছে নীচে। আমি যাবো আর আসবো।” মহুয়ার ফোনসহই সে নিচে নেমে যায়।

মহুয়া আবারো অপেক্ষা করছে। তার চোখে মুখে সন্ত্রস্ত ভাব। ভীরু ভীরু হরিণ চাহনি। কিন্তু নিজেকে ব্যস্ত রাখার জন্য এবার তার হাতে ফোন নেই।

বিরতি এবার আরো দীর্ঘ হয়। ঘন্টা পেরিয়ে যায়। একজন ওয়েটার এসে বিল রেখে যায় সামনে। আমি আরেকটি কফির অর্ডার দেই।

ঘটনা কিছুটা আঁচ করতে পেরে এগিয়ে যাই আমি।
“আপু কোন সমস্যা?”
অসহায় চাহনি, “না ভাইয়া, থ্যাংকিউ”।
আমার চোখের দিকে তাকাতে পারছে না মেয়েটা। আমি কথা বাড়াই না, ফিরে আসতে যাই আমার টেবিলে।
পিছুডাক, “ভাইয়া...একটা কল করা যাবে?”
“হমম”। ফোনটা বাড়িয়ে দেই আমি।

প্রথমে রাজিবের নাম্বার, পরে নিজের নাম্বারে কল করার চেষ্টা করে মহুয়া। দুটি থেকেই একই উত্তর, “এই মূহুর্তে সংযোগ দেয়া সম্ভব নয়....”।

এবার বোধ হয় ঘটনা মহুয়াও আঁচ করে ফেলেছে। তার চোখের কোণে জ্বলে উঠে অশ্রু কণা।

ঘটণা বুঝতে পেরেছে রেস্টুরেন্টে অন্য কর্ণারের দাড়ানো ওয়েটার দু’জনও। তারা এতক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে উপভোগ করছিল। একজন এসে জানান দিল, “ম্যাডাম, বিল আসছে ৬৯৫ টাকা”।

মহুয়ার রক্তিম গাল বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। বুঝতে পারি এত টাকা তার কাছে থাকার কথা না।

বিষন্ন গলায় বলে “ভাইয়া আরেকটা কল করা যাবে?” এবার কল করে সে তার মা’কে। মায়ের সাথে কথা হয়।

একজন ওয়েটার আমার পিছন থেকে বলে, “বস, বক্সটা খুলতে কন না”।

আমার বলতে হয় না। মহুয়া নিজ থেকেই খুলে ফেলে সুদৃশ্য র‌্যাপিং পেপার। বেরিয়ে আসে কয়েকদিনের ভাঁজ করা খবরের কাগজ। এবার আর মহুয়া কান্না ধরে রাখতে পারে না। শিশুর মত ডুকরে কেঁদে ওঠে।

প্রায় ৩০ মিনিট পর রেস্টুরেন্টে প্র্রবেশ করেন মধ্যবয়সী এক নারী। কেউ কিছু বলার আগেই মহুয়ার গালে বসে যায় তার আঙ্গুলের ছাপ। বুঝতে সমস্যা হয় না ভদ্রমহিলা-ই মহুয়ার মা।

ভদ্রমহিলা বিলের টাকা পরিশোধ করে দ্রুতই ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।

আমিও দু’টি কফির বিল দিয়ে বিদেয় হই।

*****



রাজিবের মতো মানুষ আছে বলেই অমর হয়ে আছে হুমায়ুন আজাদের প্রবচনগুলো। তিনি বলে গিয়েছেন, মানুষের ওপর বিশ্বাস হারানো পাপ, তবে বাঙালির ওপর বিশ্বাস রাখা বিপজ্জনক।
৮৩টি মন্তব্য ৬৫টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×