somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নার্ভীয় পদ্ধতি এবং স্বপ্ন

১৮ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১০:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্বপ্নদর্শীর মৌখিক কথার উপর ভিত্তি করে স্বপ্ন নিয়ে গবেষণা করা হয়। যদি কোন ব্যাক্তি স্বপ্ন দেখে, আমরা তার স্বপ্ন স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারি না। আমরা সবাই স্বপ্ন দেখি, এমনকি আমরা যার রিপোর্ট পড়তেছি, তিনিও স্বপ্ন দেখেন। আমরা যদি ইইজি মেশিনে মানুষের স্বপ্ন দেখার ধরন দেখি, তাহলে দেখা যায়, মানুষের স্বপ্ন দেখার নির্দিষ্ঠ কোন সীমা নেই বরং এই সীমা আরো বাড়তে পারে। মানুষ যখন অসম্পূর্ণ ঘুম জেগে উঠে তার মানে এই না যে সে স্বপ্ন দেখেছে। তারপরেও বেশিরভাগ সময়, বেশিরভাগ মানুষই স্বপ্ন দেখে যখন অসম্পূর্ণ ঘুম নিয়ে জেগে উঠে।
যদি আমরা মেনে নেই যে, কোন মানুষ স্বপ্ন দেখতে পছন্দ করে, কিন্তু আমরা জানি সে কি ধরনের স্বপ্ন দেখতে পছন্দ করে। আমরা যদি জানতে চাই সে কি ধরণের স্বপ্ন দেখতে পছন্দ করে তাহলে আমরা তাকে জিজ্ঞেস করতে হবে। আবারও আমরা মানুষের মৌখিক বক্তব্যের উপর নির্ভরশীল।
কিন্তু একজন মানুষকে তার স্বপ্ন সম্পর্কে জিজ্ঞেস না করাই ভালো। এতে সে বিরক্তি বোধ করতে পারে। তার বদলে আমরা যদি মানুষের মৌলিক নার্ভীয় কোড জানতাম তাহলে আমরা খুব সহজেই মানুষের মস্তিষ্কের কার্যাবলি সম্পর্কে জানতে পারতাম। এতে আমরা খুব সহজেই স্বপ্ন নিয়ে গবেষণা করতে পারতাম। যদিও আমরা মানুষের নার্ভীয় কোড এবং মস্তিষ্কের কার্যাবলির রহস্য উদযাঠনে অনেক পিছনে আছি। কিন্তু বর্তমানের সাইকোলজিস্টরা এর রহস্য উদযাঠনে অনেক অগ্রসর অবস্থানে আছেন।
হরিকাওয়া এটওল নামের একজন সাইকোলজিস্ট তিনজন সেচ্ছাসেবক কে বেছে নিলেন তাদের মস্তিষ্কের কার্যাবলি সম্পর্কে গবেষণা করতে। প্রথম ধাপে তিনি গবেষণা করলেন, যখন মানুষ কাল্পনিক হ্যালুসিনেশনে ভোগে। এবং তিনি দেখলেন যে হ্যালুসিনেশনে থাকা মানুষগুলো কথা বলে ঘুম থেকে জেগে উঠে। এফএমআরআই সিস্টেমে স্বপ্নে দেখা দৃশ্যের কোড কম্পিউটার এর মাধ্যমে ইইজি মেশিনে দিলে স্বপ্নে দেখা দৃশ্য সম্পর্কে জানা যায়। হরিকাওয়া একজন সেচ্ছাসেবক কে পর্যবেক্ষ্ণ ও সে যখন স্বপ্ন দেখছিলো তখন তার অঙ্গভঙ্গি লক্ষ্য করলেন এবং তার এই অঙ্গভঙ্গি গুলো কে কোড আকারে কম্পিউটারের মাধ্যমে ইইজি মেশিনে দেয়া হলো। তখন মেশিনে জবাব এলো সে স্বপ্নে এক্স এর মতো দেখতে একটি জিনিস দেখেছে। যা “লাল ঘর” কে ইঙ্গিত করে। তখন সেচ্ছাসেবক বলল, সে স্বপ্নে “লাল ঘর”ই দেখেছিলো।
মেশিন যদি অনেকগুলো সংখ্যার অর্থ একবার জেনে যায়, তাহলে খুব সহজেই এবং দ্রুত বলে দিতে পারবে মানুষ ঘুমের সময় স্বপ্নে কি দেখেছে। সুতরাং মানুষের নার্ভীয় চিন্তাধারা বিশ্লেষণ করে তারা কি স্বপ্নে দেখেছে তা বলে দেয়া যায়।
এটা নিয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ দিক এবং কিছু প্রশ্নও রয়েছে।
প্রথমতঃ যখন হরিকাওয়া’র সেচ্ছাসেবক নিশ্চিত করল যে মেশিন তাদের ঘুমের মধ্যে কি স্বপ্ন দেখেছিলো এটা সঠিক বলেছে। তখন আমরা দেখতে পারলাম যে মানুষের নার্ভীয় কোড বা তথ্য থেকে জানা যায় তারা কি স্বপ্নে দেখেছে।
যদি আমরা কোনদিন এরকম অনেকগুলো বিষয়ের উপর হাজার হাজার নার্ভীয় তথ্য এক করে এগুলোর সংক্ষিপ্ত আকারে বর্ণ্না করি যে তারা কি স্বপ্নে দেখেছিলো। তখন আমরা স্বপ্ন গবেষণা এবং নার্ভিয় তথ্যের তুলনা করতে পারবো। যদি এটা যথাযথ ভাবে মিলে যায়। তাহলে আমরা সহজেই মানুষের স্বপ্ন সম্পর্কে তাদের মৌখিক বক্তব্য বিশ্বাস করতে পারবো। আমরা সহজেই বুঝতে পারবো যে তাদের কোন খারাপ উদ্দেশ্য নেই, তারা তাদের স্বপ্ন সম্পর্কে সঠিক তথ্য বলেছে।
দ্বিত্বীয়তঃ মানুষের স্বপ্ন সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানের পরিধি বাড়লে আমরা তাদের সাথে তাদের মতো যথাযথ ব্যাবহার করতে পারবো।
তৃতীয়তঃ স্বপ্ন বিজ্ঞান শুরুর পর থেকেই একটা ঘূর্ণায়মান প্রক্রিয়ায় একই স্বপ্ন বিভিন্ন মানুষ দেখে এবং একইভাবে ঘুম থেকে জেগে উঠে। মেশিন এগুলোকে ব্যবহার করে মানুষের স্বপ্ন দেখে ঘুম থেকে জেগে উঠার তথ্য হিসেবে।
চতুর্থতঃ এটি খুব আকর্ষনীয় যে একই রকম মস্তিষ্কের কার্যাবলি অন্য মানুষের মাঝে সংঘঠিত হয়।
পঞ্চমতঃ স্বপ্ন অনেক সময় মানুষের আবেগ এর উপর নির্ভর করে। এবং আবেগ মানুষের নার্ভের সাথে সম্পৃক্ত। তাহলে মেশিন কি মানুষের আবেগও বলে দিতে পারে?


স্বপ্নকে কি নিজের ইচ্ছেমতো নিয়ন্ত্রণ করা যায়?

আমরা প্রায়শ মনে করি যে, স্বপ্নকে ইচ্ছেমত নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। কিন্তু সত্য এটাই যে, আমাদের অভ্যাসগত আচরণ, চিন্তাধারা এবং নিদ্রাভঙ্গের কারণ স্বপ্নকে প্রভাবিত করে। আমরা কিভাবে কোন নির্দিষ্ঠ অবস্থায় আচরণ করি এবং অবশিষ্ঠ ঘুম রেখে জেগে উঠার ধরণ নির্দেশ করে আমরা স্বপ্নে কি ধরণের অঙ্গভঙ্গি করেছিলাম। এর মাধ্যমে আমরা আমাদের স্বপ্নের জন্য দায়ী।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, কি ধরনের স্বপ্ন তুমি দেখতে চাও?
১। একটি ভিন্ন পথ খুজুনঃ কোন ভয়ানক স্বপ্ন এড়ানোর একটি যৌক্তিক পন্থা হলো, শারীরিকভাবে কোন বিপদজনক ঘঠনা এড়ানোর প্রস্তুতি রাখতে হবে। নিদ্রাভঙ্গ জীবনে নিজের দূর্বল জায়গা ও কোন ভয়ানক দৃশ্যে চোখ স্থির না রেখে সরিয়ে নিতে হবে এবং এটা থেকে মনোযোগ সরানোর জন্য শারীরিকভাবে প্রস্তুতি রাখতে হবে। মূলত যেকোন ভয়ানক অবস্থা থেকে চোখ সরিয়ে নিজে অন্য কিছুতে মনোযোগী করতে হবে। মানুষের বর্তমান চিন্তাধারাই মূলত স্বপ্নের মধ্যে প্রতিফলিত হয়।
প্রথমিকভাবে স্বপ্নের এই পদ্ধতি আমাদের মধ্য থেকে আবেগের তাড়নায় ক্ষোভ প্রকাশ থেকে বিরত রাখতে সাহায্য করে। এবং প্রায়শ স্বপ্ন আমাদেরকে আমাদের জীবনের সমস্যার সৃজনশীল সমাধান দিতে এবং বিষন্নতা দূর করতে সহায়ক হয়।
২। মনে করুন আপনি অন্য কোথাও আছেনঃ ধরুন, আপনি একটি সেতু পার হবেন, যে কোন মূল্যে নিচের দিকে তাকাতে পারবেন না, ধরে নিন আপনি অন্য কোথাও আছেন। আপনি আপনার ভাগ্যকে বিশ্বাস করেন কিন্তু নিজের মধ্যে সেই ইচ্ছা রাখুন যে, কঠিন কোন কিছুর মোকাবেলায়ও আপনি সক্ষম। এই কৌশল স্বপ্নকে ব্যাপক প্রভাবিত করে। স্বপ্ন একজন থেকে আরেকজন এর মধ্যে স্থানান্তরিত হতে পারে। স্বপ্নদর্শী স্বপ্নের মধ্যে বেশিরবাগই মূল চরিত্রে থাকে এবং মাঝে মাঝে পার্শচরিত্রেও থাকে। স্বপ্ন দেখা অনেকটা ফিল্ম দেখার মতো। এটি মূলত বিষন্নতা দূর করে নিজেকে সুবিধাজনক অবস্থায় নিয়ে আসতে সাহায্য করে।
৩। ভয়কে জয় করুনঃ ভয় এর মতো নেতিবাচক আচরণ পরিত্যাগ করতে হবে। ভয় মনের মধ্যে একধনের আচরণ তৈরী করে যেটা মানুষের মনে সবসময় আশান্তির সৃষ্টি করে। ভয় প্রাথমিক ভাবে আবেগ ও চিন্তা থেকে তৈরী হয়, এবং এই আবেগ একসময় স্বপ্নের মধ্যেও বিচরণ শুরু করে। এবং মানুষের শরীর অবশ এবং নড়াচড়ার অযোগ্য হয়ে যায়। যেমন, কোন গভীর খাদ দেখলে মানুষ ভয়ে জমে যাবে। এবং স্বপ্নের মধ্যে মনে হবে এটি সত্য। মনে হবে কোন পাহাড়ী এলাকায় অনেক খাড়া একটি গর্তের পাশে তুমি দাঁড়িয়ে এবং গর্তটি চারিদিক থকে তোমাকে ঘিরে ফেলেছে। এবং স্বপ্নের মধ্যে মনে হবে গর্তটি আরো গভীর হয়ে আপনাকে টেনে নিচ্ছে।
৪। সামনের দিকে এগিয়ে যানঃ ইতিবাচক আবেগ আমাদের মানসিক চিন্তা শক্তিকে আর শক্তিশালী করে এবং অন্যের কাছে নিজেকে প্রমাণে সাহায্য করে। ইতিবাচক আবেগ মানুষের স্বপ্নকে অবিস্বরনীয়ভাবে বাস্তবায়নে সাহায্য করে। যেমন, যখন আপনি নিজেকে স্বপ্নে গর্তের পাশে অনুভব করবেন। তখন মনে হবে আপনি গর্তের উপর দিয়ে লাফিয়ে পার হয়ে যাচ্ছেন। এবং অসম্ভব সুন্দর আকাশে ডানা মেলে উড়ছেন। আশেপাশে সব সুন্দর সুন্দর দৃশ্য পেরিয়ে যাচ্ছেন। আনন্দ এবং ভালোবাসার মতো ইতিবাচক আবেগ মানুষের মনকে শক্তিশালী এবং স্বপ্নকে আরো রহস্যময় করে তুলে। ইতিবাচক আবেগ সবসময় স্বপ্নদর্শীকে এক অফুরন্ত স্বপ্নের জগতে বিচরণ করতে সহায়তা করে ও বিষন্নতার মতো নেতিবাচক স্বপ্ন এবং বাধা থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে সাহায্য করে।
সুতরাং নিজের চোখ বন্ধ করেন, এবং বেছে নিন, স্বপ্নে কি দেখতে চান।
উৎস: সাইকোলজি টুডে ব্লগ

লেখকঃ
এহসানুল করিম কাওছার
শিক্ষার্থী
ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ
ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১০:২৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×