somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

“পণ্য বর্জন করো”, এ কেমন জিহাদ? এবং একজন আলেমকে খুজছি

১৭ ই মে, ২০২১ ভোর ৬:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মুসলমানদের এখন সবচাইতে বড় জিহাদ “পণ্য বর্জন করো”। কখনও ফ্রান্সের পণ্য বয়কট করো, কখনও ইসরায়েলের পণ্য বয়কট করো, কখনও স্পেনের পণ্য বয়কট। এরকম পণ্য বয়কট করে জিহাদের সামিল হয়ে ঈমানদার হওয়ার তরিকা সব আলেম দিচ্ছে।


এই জিহাদের ডাকটা যে ইহুদীদের বিরুদ্ধে দিচ্ছে, এবং সেই ইহুদিরা যদি মুসলমানদের এ জিহাদে কোন সময় যুদ্ধ করতে রাজি হয়ে যায়, কি হবে ভেবে দেখেছেন?
পুরো লেখাটা মনোযোগ দিয়ে পড়ুন, আর একটু ভাবুন, কারন এখন ভাবার সময় এসেছে।

ইহুদিদের বানানো ফেসবুক কিংবা ইউটিউবে বসে ডাক দিচ্ছে ইহুদিদের পণ্য বর্জন করে জিহাদ করো।
- ইহুদীরা যদি কাল ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপসহ সকল যোগাযোগ মাধ্যম মুসলমানদের জন্য বন্ধ করে দেয়, তখন মুসলমানদের এ জিহাদের অংশগ্রহনের অস্ত্রটা কি হবে?
- ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব টিকে আছে কনটেন্টের উপর। এ মাধ্যমগুলোতে যত কনটেন্ট পোস্ট করবেন, তত এসব ইহুদীদের প্রতিষ্ঠানগুলোর ইনকাম। আর সেই ইনকামের একটা অংশ মুসলমানদের হত্যার জন্য ব্যবহৃত হয়। সেখানেই কনটেন্ট পোস্ট করে পণ্য বর্জনের আহবান জানানোর কনটেন্ট পোস্ট করছে জিহাদী মুসলিম ভাইয়েরা। যে পোস্ট করে ইহুদীদেরকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ডোনেট করছে মুসলিম জিহাদী ভাইয়েরা। আবার ওয়াজের ভিডিও ইউটিউবের চ্যানেলে পোস্ট করে যেমন সওয়াব কামাচ্ছে, আবার সেই সাথে ইহুদীদের ফান্ডেও কিছু ডোনেট নিয়মিত করছি।
আচ্ছা, একবার ভাবুনতো, আপনি ক্ষেপে গেলেই বলছেন ইহুদিদের পণ্য বর্জন করো, ইহুদিদের কোন কাজ ফ্রিল্যান্সাররা আর করবেনা, ক্লায়েন্ট বর্জন। ইহুদিরা কেন মুসলমাদের বর্জন করছেনা? তারা কেন যত ডিজিটাল প্রোডাক্ট বানিয়েছে, সেটা ব্যবহার করে মুসলমানরা ইহুদীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার উসকানী দেওয়ার পরও তারা মুসলমানদেরকে সেবা বন্ধ করার প্রতি আগ্রহী না??
এর উত্তর কি জানেন?
আপনি ইহুদীদের সেবা নিতে বাধ্য, এটাই ইহুদীদের বিজয়।

আপনি তাদের পণ্য ব্যবহার করেই তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ডাক দিচ্ছেন, এটাই ইহুদিদের মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিজয়। চূড়ান্ত যুদ্ধের সময় তারা এসব পণ্য ব্যবহার হয়তো মুসলমানদের জন্য বন্ধ করে দিয়ে, সেই যুদ্ধকে মুসলমানদের জন্য কঠিন করে দিবে। মুসলমানরাই জিতবে, কিন্তু অনেক হতাহত বাড়বে, মুসলমানদের এখনকার অজ্ঞতার জন্য।
আরেকটা প্রশ্নও করতে চাচ্ছি, এটা নিয়েও কঠিনভাবে ভাবুন।
উমর ফারুক (রাঃ) অর্ধ পৃথিবীর খলিফা ছিলেন। খলিফা হিসেবে রাস্ট্রের বাজেট পরিকল্পনা, যুদ্ধ ও প্রতিরক্ষা পরিকল্পনা, শিক্ষা ব্যবস্থার পরিকল্পনা, জনগণের স্বাস্থ্য সেবার পরিকল্পনা আবার রাজ্যের বিচারকায্যেও উনি বিচারক হিসেবে সময় দিতেন। রাস্ট্র পরিচালক হিসেবে আরও অনেক নিয়মিত কাজ উনাকে করতে হতো। এত বিশাল দুনিয়াবী কাজে ব্যস্ত থাকতে গিয়ে নিশ্চিতভাবে উনি প্রচুর নামাজ পড়ার সময় দিতে পারতেন না। আরও অনেক ইবাদত করার সময় কিংবা সুযোগ পেতেন না। আমরা উনার কিছু ঘটনা জানি, উনি প্রায়ই সারারাত ছদ্মবেশে উনার রাজ্য ঘুরে জনগনের অভাবের খোজ নিতেন, এবং নিজেই কাধে করে অভাবীর ঘরে খাদ্য পৌছিয়ে দিতেন। তার মানে সেই সময় তাহাজ্জুদ পড়ার সময় মিস করতেন। হয়ত ২-৪ রাকাত পড়তে পারতেন, কিন্তু সারারাত জেগে ইবাদত করার সুযোগ মিস করতেন দুনিয়াবী এ দায়িত্ব পালনের জন্য।
এবার লেখার সমাপ্তি টানি, আর একটু সময় নিয়ে বাকিটা শেষ করুন। এবার কয়েকটি প্রশ্ন করে শেষ করবো।
- উমর ফারুক (রাঃ) সহ চার খলীফারা রাষ্ট্র পরিচালনা করতেন, সেটা কি আসলেই দুনিয়াবী কাজ? যদি সেটা সারারাত জেগে তাহাজ্জুদ পড়া কিংবা অন্য ইবাদতের চাইতে ওই দুনিয়াবী কাজগুলো কম সওয়াবের কাজ হতো, তাহলে মুসলিম জাতির শ্রেষ্ঠ এ মানুষগুলো কখনও কি এ দায়িত্বগুলো পালন করতেন নাকি দুনিয়াবী কাজের প্রেসারে ইবাদতে যথেষ্ট সময় দেওয়া যাচ্ছে না দেখে আল্লাহকে কাছে পাওয়ার জন্য সব কিছু থেকে দূরে থেকে সন্নাসীব্রত পালন করতেন।
- যদি রাস্ট্রযন্ত্র পরিচালনা করাটা দুনিয়াবী কাজ না হয়, সেটাও যদি অনেক সওয়াবের কাজ হয় তাহলে ফেসবুকের মত একটা প্রতিষ্ঠান কিংবা লিভার ব্রাদার্সের মত একটা কোম্পানী গড়ার সম্মিলিত প্রচেষ্টা আমাদের আলেম সমাজ নিচ্ছে না কেন? সেটা কি ওয়াজ করা, কিংবা মিছিল করে জ্বালাও পোড়ার করার চাইতে কম সওয়াব হবে?
- ইহুদীদের পণ্য ব্যবহার করে তাদের প্লাটফরম ব্যবহারে ইহুদীদের পণ্য বর্জন করার আহবান করলে ইহুদীদের জন্য বেশি ক্ষতি করতে পারবেন নাকি মসজিদে মসজিদে খুতবাতে কিংবা ফেসবুক ইউটিউবে ইহুদীদের এ পণ্যের বিকল্প পণ্য, বিকল্প যোগাযোগ তৈরির উদ্যোগ গ্রহণের আহবান জানানো এবং সম্মিলিত ফান্ডিং, সেটার জন্য পরিকল্পনাতে সময় ব্যয় করলে সেটাতে ইহুদিদের জন্য ক্ষতির সম্ভাবনা তৈরি করতে পারবেন।
- ইহুদিদের বিরুদ্ধে যদি এরকম পরিকল্পনা নেওয়া হয়, তাদের বিকল্প প্লাটফরম তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হবে, তাহলে সেই উদ্যোগে টাকা দান করলে সেটা কি মসজিদে দানের চাইতে কম সওয়াব হবে? কিংবা এরকম একটা ফেসবুক, ইউটিউব কিংবা লিভার ব্রাদার্স, কোকাকোলার মত কোম্পানী তৈরি করাতে অনেক অনেক সময় ব্যয় করতে হবে, সেটি কি দুনিয়াবী কাজ হবে? সেই কাজ করতে গিয়ে কি আখেরাত ছুটে যাবে?
- ইহুদীদের আনুগত্য মেনে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়ার আহবানকারী কি ভালো সেনাপতি নাকি তাদের আনুগত্যকে ছিন্ন করে তাদের প্যারালাল শক্তি তৈরির আহবানকারীকে পারফেক্ট সেনাপতি হিসেবে মানবো?
সব শেষের প্রশ্ন,
এ প্রশ্নের উত্তরগুলো দেওয়ার মত কোন আলেম কি আছেন?

ইহুদীদের পণ্য ব্যবহার করে তাদের পণ্য বর্জনের আহবানকারী আলেম অনেক আছে কিন্তু ইহুদীদের পণ্যের বিকল্প পণ্য তৈরির উদ্যোগ নেওয়ার আহবানকারী আলেমকে খুজে পাওয়া যাবে না।
আড়ংয়ের পণ্য বর্জনের আহবানকারী অনেককে দেখেছি, সেদিনো অনেক খুজেছি, অপেক্ষা করেছি, একজন আলেম পাওয়া যায় কিনা, আড়ংকে ঠেকাতে চলেন সব ইসলাম প্রেমীরা একসাথে ফান্ডিং করে আড়ংয়ের মত একটা প্রতিষ্ঠান তৈরি করে, এটাই হবে আড়ংয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, আড়ংয়ের বিরুদ্ধে জিহাদ। সেদিনও এরকম জিহাদের আহবানকারী একজন আলেমকে খুজে পায়নি।
করোনা টিকা মুসলমানরা আবিস্কার করো, এটা আবিস্কার করা মুসলমানদের জন্য ঈমানী দায়িত্ব, এটাই এখন মুসলমানদের জন্য জিহাদ এ আহবান জানানোর মত একজন আলেম খুজছি।

সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০২১ ভোর ৬:২৩
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×