সাকিব মাস্টার্স শেষ করেছে আজ প্রায় তিন বছর। সব বন্ধুরা চাকরী করছে, কেউ কেউ বিয়ে শাদীও করে ফেলেছে। কেউ চার পাঁচ বছরের পুরোনো প্রেম চালিয়ে যাচ্ছে। ওর এখনো এখনো চাকরী জুটলো নাহ। পকেট প্রায় সময়ই গড়ের মাঠ। তার উপর মরার উপর খাড়ার ঘা, তিন্নি। ওর গার্ল ফ্রেন্ড। যাক, এই একটা দিক থেকে তো কিছু একটা জুটিয়েছে!
এই বয়সে এসে ওর একটা প্রেম হলো। সাকিব কত চেষ্টাই না করেছে ইউনিভার্সিটি লাইফে একটা প্রেম করবে। মেয়ে দেখে পছন্দ করতো আর বন্ধুদের বলতো, দ্যাখ না, দোস্ত। একটু ম্যানেজ করে দিতে পারিস কিনা।
বন্ধুরা ওকে নিয়ে মজা করতো, তুই করবি প্রেম আর আমরা ম্যানেজ করে দিবো! তুই যা, আমরা পারবো নাহ।
সাকিব মুখ শুকিয়ে তাকিয়ে থাকতো বন্ধুদের দিকে। ওর সেই সাহসটাই ছিলো না কখনো কোনো মেয়েকে গিয়ে প্রেমের প্রস্তাব দিবে। বন্ধুরা মজা করলেও ঠিকই মেয়েগুলোর ব্যাপারে খোঁজখবর নিতো। আর সাকিবের এমনি ভাগ্য, যেই মেয়েই ও পছন্দ করত সেই কিনা এঙ্গেজড!!! ওর বন্ধুরা ওকে শুনিয়েই মজা করে বলতো, শুনছি মানুষের কপালে ভালোবাসা থাকে নাহ তোর তো দেখি মাইয়াই নাই!!! ভালোবাসা তো দূরের কথা!!! সাকিব কিচ্ছু বলতো নাহ। কিন্তু মনে মনে ওর ভাগ্যকে দোষারোপ করতো।
মা, ভাই আর ও। এই তিনজনেই ওদের সংসার। সাকিবের বাবা মারা গেছে ও যখন স্কুল এ পড়ে। কোনো সময় কেউ না জেনে ওর বাবার কথা জিজ্ঞেস করলে বলতো, আমার বাপ তো ফুটবল খেলাইতেসে! আমার খবর নেওনের টাইম কই!
এখনো একটা চাকরী জোগাড় করতে পারলো নাহ।সংসারের বড় ছেলে। টিউশনি করে আর কতদিন চলা যায়। তিন্নির সাথেও বেশ কিছুদিন দেখা করতে পারছে নাহ। ছেলেটার মন খারাপ। এই দুর্মূল্যের বাজারে মামা চাচা না থাকলে চাকরী পাওয়াটা খুবই ভাগ্যের ব্যাপার, সে এই কয়দিনেই খুব ভালো ভাবে বুঝে গেছে। বেশ কিছু চাকরীর পরীক্ষাতো দিলো।
সকাল ১১টা। ঘুম থেকে উঠলো। হাত মুখ ধুয়ে টিউশনিতে যাবে বলে নাস্তা করে বের হলো সাকিব। কি মনে করে বাসার মেইলবক্সটা চেক করলো বের হওয়ার সময়। একটা চিঠি। তার চোখ চকচক করে উঠলো। তার একটা চাকরী হয়েছে। আজ টিউশনি থেকে মাসের মাইনে পাবে। আজ তিন্নির সাথে দেখা করবে, একসাথে হাতে হাত রেখে অনেকক্ষন বসে থাকবে।
হঠাৎ মায়ের ডাকে ঘুম ভাংলো। নাহ! এতোক্ষন স্বপ্ন দেখছিলো সাকিব। ওর মা আজ অফিসে যায় নি, উনার শরীরটা একটু খারাপ। সাকিবকে নাশতা খেয়েই বাজারে যেতে বললো। সাকিব সুবোধ বালকের মতো নাশতা করে বাজারের ব্যাগ নিয়ে বের হলো। স্বপ্ন দেখাতেই কিনা, মেইল বক্সটা চেক করলো। এমনিতে ও কখনোই তা করে নাহ।
মেইল বক্সটা খুলেই সাকিবের চোখ চক চক করে উঠলো। একটা চিঠি পড়ে আছে..
View this link
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ২:১৫