গত পর্বে আমেরিকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়ার বিভিন্ন ধাপ এবং ভর্তির শর্তগুলো লিপিবদ্ধ করেছিলাম। শেষ করেছিলাম এমন একটি বিষয়ে যেটা আমার কাছে আসলেই গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে, আর তা হলো গবেষনার পূর্ব অভিজ্ঞতা।এই বিষয়ে আরেকটু বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।
এই বিষয়ের গুরুত্ব বুঝার জন্য প্রথমে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাটা সবার সাথে ভাগাভাগি করে নিতে চাই। আমাকে যখন বিশ্ববিদ্যালয় গুলো সাক্ষাতকার এর জন্য ডাকে তখন আমি আরো অনেক ভর্তিচ্ছুক ছাত্র/ছাত্রীদের সাথে পরিচিত হই। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, এই সরাসরি সাক্ষাতকার শুধুমাত্র আমেরিকাতে বসবাসরত ভর্তিচ্ছুক ছাত্র/ছাত্রীদের নেওয়া হয়, আর অন্যদের স্কাইপ অথবা ফোন এর মাধ্যমে সাক্ষাতকার নেওয়া হয়। এই সাক্ষাতকারে সাধারনত একবারে একজন ছাত্র/ছাত্রী একজন শিক্ষক এর কাছে সাক্ষাতকার দিয়ে থাকে, কিন্তু যদি সময় কম থাকে তাহলে একসাথে দুইজনকেও সাক্ষাতকার দিতে হয়। এরকমই একটা ঘটনা হলো আমার সাথে। আমি আর আরেকজন ছেলে একি সাথে এক শিক্ষক এর কাছে সাক্ষাতকার দিতে ঢুকলাম। এক পর্যায়ে ওই শিক্ষক আমার সাথের ছেলের কাছে তার গবেষনার পূর্ব অভিজ্ঞতা জানতে চাইলেন। ওই ছেলের উত্তর শুনে উনি তো অবাক হলেনই, সাথে আমিও অবাক হলাম। কারনটা হলো আমার জানামতে আমেরিকার সব ছাত্র/ছাত্রীই স্নাতক পর্যায়ে কোনো না কোনো গবেষনায় যুক্ত থাকে। কিন্তু সেই ছেলেটি কোনো গবেষনাই করে নি! সাথে সাথে শিক্ষক আমাকেও একি প্রশ্ন করলেন এবং আমার অভিজ্ঞতার কথা শুনে ওই ছেলেকে সাক্ষাতকার এর বাকী ২০ মিনিট কোনো প্রশ্নই করলেন নাহ!
আরেকটা উদাহরন দেই। আরেকটা বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন আমি সাক্ষাতকার দিতে যাই, সেখানে একই শিক্ষক এর কাছে চারজন সাক্ষাতকার দেয়। চারজনই গবেষনায় যুক্ত, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওই চারজন এর মধ্যে যে দুজনের অভিজ্ঞতা ও গবেষনাপত্র বেশি তারাই ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়। তাই গবেষনার সাথে নিজে লিখে একটি কি দুটি গবেষনা পত্র প্রকাশের চেষ্টা করুন।
আশা করি এই ঘটনাগুলো বর্ণনার পর গবেষনার পূর্ব অভিজ্ঞতার গুরুত্ব আমাকে বুঝিয়ে বলতে হবে নাহ। একজন ছাত্র/ছাত্রীর গবেষনার পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকলে ভর্তি প্রক্রিয়ায় অনেকটাই এগিয়ে থাকা যায়। তার সাথে যদি কিছু গবেষনাপত্র প্রকাশিত হয়, তাহলে তো সোনায় সোহাগা!
এখন প্রশ্ন হচ্ছে কিভাবে এই অভিজ্ঞতা লাভ করা যায়? বিশেষ করে আমাদের এখানে গবেষনামূলক কাজের ক্ষেত্র যখন অনেক কম!
খুব সহজ! আপনি কেনো আপনার স্নাতক/স্নাতকোত্তর এ গবেষনা করছেন নাহ? গবেষনা করুন মন দিয়ে, আপনার গবেষনার সম্পর্কে জানুন, চেষ্টা করুন একটি কি দুটি গবেষনাপত্র প্রকাশ করতে। ব্যস। অন্য অনেকের চেয়ে এগিয়ে গেলেন।
একটা কথা জানিয়ে রাখা প্রয়োজন মনে করছি। অনেকেরই ধারনা গবেষনা মানেই গবেষনাগারে বসে গবেষনা করা। তা কিন্তু নয়। গবেষনা হলো আপনার ব্যবহারিক জ্ঞান। আপনি যে বিষয়ে পড়াশোনা করুন না কেন, সেই বিষয়ে বা তার সাথে সম্পর্কিত যে কোনো উল্লেখযোগ্য কাজই যা আপনার কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর দক্ষতা আরো শানিত করে তাই গবেষনার আওতায় পড়ে।
আগামী পর্ব থেকে ইনশাআল্লাহ ধাপ গুলো বর্ণনা শুরু করব, আশা করি তার মাধ্যমে অনেক প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়া যাবে।
(চলবে......।)
[লেখাটি একই সাথে ফেসবুকে পড়তে পারবেন এখানে]
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১০:০৪