গত পর্বে কিভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে নেয়া যায় তা সম্পর্কে একটা ধারণা দেয়ার চেষ্টা করেছিলাম। শেষে এসে উল্লেখ করেছিলাম আপনার সিজিপিএ এবং GRE-TOEFL/IELTS একটি আরেক্টির পরিপূরক। এই বিষয়টা নিয়ে একটু আলোচনা করা প্রয়োজন বলে আমি মনে করছি।
বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোই সর্বনিম্ন সিজিপিএ ৩.০ চেয়ে থাকে। এরচেয়ে বেশী পেলে আপনি অবশ্যই একটু এগিয়ে থাকবেন। কিন্তু যদি একদম ৩.০ এই থাকেন তাহলে GRE নাম্বার এর দিকে একটু মনযোগ দিন। চেষ্টা করুন যত ভালো করা যায়। ধরুন আপনার সিজিপিএ ৩.০, তাহলে চেষ্টা করুন অন্ততঃ ৩১০ (৩৪০) GRE তে তুলতে। এরচেয়ে বেশি তুলতে পারলে আরো ভালো হয়। আর আপনার সিজিপিএ ৩.৫ এর উপরে, ৩০৫/৩০৭ আপনার জন্য যথেষ্ঠ যদি আপনার গবেষণার পূর্ব অভিজ্ঞতা এবং প্রকাশিত গবেষণাপত্র থাকে। আমাদের দেশের অনেকেরই ভূল ধারণা যে GRE তে ভালো না করলে হয়তো ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া যায় নাহ, কিছু কিছু ক্ষেত্রে সত্য (নাক উঁচু বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর ক্ষেত্রে যারা গবেষণার অভিজ্ঞতার চেয়ে একাডেমিক দিক বেশি দেখে!); তবে সব ক্ষেত্রে নাহ। আর এই ভূলের কারনেই অনেক ভালো প্রোফাইল থাকা সত্ত্বেও অনেকে এমন সব বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করেন যেগুলোর নাম শুনে প্রথমে চিন্তা করতে হয় এই নামের আদৌ কোনো বিশ্ববিদ্যালয় আছে নাকি! এই ভয়টা দূর করতে হবে। সিজিপিএ আর GRE একটি আরেকটির পরিপূরক- এই জিনিসটা মাথায় রাখুন। অনেক সহজেই অনেই ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবেন।
তো আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা তো তৈরী, সাথে শিক্ষক দের নামের তালিকাও। এবার শুরু করুন ইমেইল করা। ইমেইল কেনো করবেন? কারন এর মাধ্যমেই আপনি জানতে পারবেন আপনার কাঙ্খিত শিক্ষকের প্রজেক্ট আছে কিনা, বা তার ল্যাব এ ছাত্র/ছাত্রী নেয়ার সুযোগ আছে কিনা? এই ইমেইল এর ব্যাপারটি খুব সুচারুভাবে করতে হবে, যেটা বেশিরভাগ ছাত্র/ছাত্রীই খুব দায়সারা ভাবে করে থাকে। একটি সুলিখিত ইমেইল আপনার জন্য অনেক জরুরী। এই ইমেইল যোগাযোগ এর মাধ্যমেই আপনি আপনার কাঙ্খিত শিক্ষক এর কাছে আপনার নিজেকে তুলে ধরতে পারবেন, তাই এটি খুব সুলিখিত, সুচিন্তিত হওয়া উচিত।
আমি আগেই বলেছিলাম, যেকোনো শিক্ষকের কাছে ইমেইল করার আগে তার সম্পর্কে একটু পড়াশুনা করুন। তার গবেষণার আগ্রহ, তার প্রকাশিত গবেষণাপত্র দেখুন। ভালো মতো ধারণা নিন। এর পরই তার কাছে ইমেইল করুন। অন্যথায় আপনার খুব বাজে অভিজ্ঞতা হতে পারে।
প্রথমেই আসি ইমেইল এর বিষয় নিয়ে, কি বিষয় লিখবেন??? অনেকেই শুরুতেই ফান্ড আছে কিনা, আপনার সাথে কাজ করতে পারবো কিনা এইগুলো বিষয় প্রথম ইমেইল এই জানতে চান। এইরকম অনেক মেইল পান একেকজন শিক্ষক। এই কাজ করবেন নাহ। উনার যেকোনো একটি গবেষনাপত্র নিয়ে আলোচনা শুরু করুন, আপনি তার গবেষণার বিষয়ে আগ্রহী সেটা জানান। দুই একটা ইমেইল চালাচালি করুন। তার সাথে গবেষনার সুযোগ পেলে আপনি কি করতে চান তা তাকে জানান। এরপর আস্তে ধীরে জানতে চান, আপনি যদি উনার সাথে কাজ করতে চান তাহলে সুযোগ পাবেন কিনা? একি ইমেইল সাবজেক্ট এ ( একই থ্রেড এ) উত্তর করুন। প্রতিবার ইমেইল করার সময় আলাদা আলাদা ইমেইল করবেন নাহ, তাহলে ট্র্যাক রাখা কষ্টকর, কারন একজন শিক্ষককে অনেক ইমেইল এর উত্তর করতে হয় সারাদিন। আপনার ইমেইল এর উত্তর দেয়ার জন্য পুরোনো ইমেইল ঘাঁটার সময় না থাকারই কথা।
শিক্ষককে কিভাবে সম্বোধন করবেন তা নিয়ে অনেকেই দোটানায় ভুগেন। সঠিকভাবে সম্বোধন করুন। মনে করুন, একজন শিক্ষক এর নাম এন্থনি জেমস। তাহলে উনাকে কিভাবে সম্বোধন করা উচিত? অবশ্যই প্রফেসর জেমস অথবা ডক্টর জেমস। কখনোই ডিয়ার এন্থনি, ডক্টর এন্থনি, প্রফেসর এন্থনি, ডিয়ার ডক্টর/প্রফেসর জেমস এইরকম নাহ। সম্বোধন ঠিকভাবে করুন, নয়তো সম্বোধন দেখেই ইমেইল ডিলিট!!!
ইমেইল লিখার সময় অবশ্যই ভাষার দিকে খেয়াল করুন। ব্যাকরনগত এবং বানানগত ভুল পরিহার করার চেষ্টা করুন। কপি পেষ্ট করবেন নাহ! একি কথা লিখে 'বাল্ক' ইমেইল পাঠাবেন নাহ!! তাহলে হয়তো আপনার সুযোগ থেকে থাকলেও সেটা নষ্ট হবে!
আপনার ইমেইল অ্যাড্রেস কি? কুলবয়@ইমেইল.কম বা সুইটসিক্সটিন@ইমেইল.কম??? আপনি অফিসিয়াল ইমেইল করছেন। একটা নতুন ইমেইল অ্যাড্রেস খুলুন। আপনার প্রথম নাম/ পুরো নাম দিয়ে। যেমন ধরুন, আবদূর.রহমান@ইমেইল.কম। না পেলে, আবদুর০৬@ইমেইল.কম অথবা রহমান০৬@ইমেইল.কম।
খেয়াল করুন সুলিখিত ইমেইল কিন্তু আপনার ভর্তির সম্ভাবনা অনেক বাড়িয়ে দিতে পারে।
(চলবে......।)
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মে, ২০১৪ রাত ১২:৩৯