একটা নারীর স্বর্ণকালের সময়সীমা কিশোরী থেকে বিয়ের আলোচনার আগ পর্যন্ত । এই সময়ে প্রচলিত সমাজব্যবস্থায় তার কদর অসীম, সমাজে তাদের চাহিদা অনেক । তার পেছনে হাজার ছেলের লম্বা লাইন । প্রপোজ পেতে পেতে ক্লান্ত । অথচ তার সমবয়সী ছেলেদের অবস্থা করুণ । বিশেষ করে যে ছেলেগুলোর বয়স ১৫ থেকে ২০ । একটা মেয়েকে তখন যতোটা পরিবার-আত্মীয়স্বজন-সমাজ গুরুত্ব দেয়, তার সিকিভাগও ছেলেকে দেয় কিনা সন্দেহ । এই সময়টাতে ছেলেরা নিজেকে যথেষ্ট অবহেলিত মনে করে, অসহায়বোধ করে । তার সমবয়সী একটি মেয়ে যখন সামাজিকতায় ঢের বহুদূর, সেখানে সেই মেয়ের কাছে সে শিশুতুল্য ।
নারীদের এই স্বর্ণকালের দিকটা বিবেচনা করে কেউ যদি এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, ‘কে বলেছে নারীদের দাম নেই, মূল্য নেই?’ সে কিন্তু যথার্থই ভুল করেছে । কারণ, সেই নারীর নারীত্ব যখন বিয়ের আলোচনা পর্যন্ত যায় তখন থেকেই শুরু হয় তার সস্তা দামে নারীত্ব বিক্রির বাজারালাপ । নারী সে যতোই শিক্ষিত হোক, সুন্দরী হোক যৌতুক ছেলেকে দিতেই হবে । অথচ এই নারীর জন্যই একসময় কত ছেলে অকাতরে জীবন বিলিয়ে দিতে চেয়েছিলো ।
না, নারীকে আমি ছোট করে দেখছিনা, নারীর অহংকারের পতনের কথাও বলছিনা; বলছি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি কতটা জঘন্য সেটা । আমাদের সমাজে একসময় সেই অবহেলিত ছেলেটিকেই আজীবন মাথায় তুলে রাখে । কখন জানেন? যখন ছেলেটা কিছু একটা করছে । হয় উচ্চশিক্ষা নয়তো অর্থ উপার্জন । তখন সেই ছেলেটার হাজারও দোষ একচোখা, স্বার্থপর সমাজের চোখে পড়েনা । হাজার অন্যায় সত্ত্বেও সেই ছেলেটা যখন সেই মেয়েটির স্বামী হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়, স্বামীর মন যুগিয়েই তাকে চলতে হয় । কী যৌতুক ! কী স্ত্রীর উপর নির্যাতন ! নারীর শরীর না সইতে পারলেও সমাজ ঠিকই সয়ে নেয় ।
আসলে মূল ব্যাপারটা হলো যখন যে সমাজকে কিছু দিতে পারবে তখন সমাজে তার দাম আছে, গুরুত্ব আছে । বিয়ের আলোচনার আগ পর্যন্ত একটা মেয়ে সমাজে সবচেয়ে মূল্যবান জিনিসটা দেয় । তা হলো তার রূপ-যৌবনের সৌন্দর্য্য । সমাজটা পুরুষতান্ত্রিক বিধায়, এক্ষেত্রে কুমারী নারীর গুরুত্ব বেশি (নারীতান্ত্রিক থাকলে অবশ্য পুরো ব্যাপারটাই বিপরীত হতো । সমবয়সী ছেলেদের দাম-গুরুত্ব থাকতো বেশি । আর বাকি পুরো সময়টা মেয়েদের স্বর্ণকাল ) । আবার যখন ছেলেরা নাম ডাক কুড়িয়ে, অর্থ উপার্জন করে পরিবারের-সমাজের ভার গ্রহণ করে তখন পুরো রাজত্বই তার । রাজার আবার বিচার !
এতো কিছু বলার উদ্দেশ্য একটাই । মেয়ে, তুমি আজকে যতো সম্মান-কদর-মূল্য পাচ্ছো তা কিন্তু তোমার জন্য একটা ফাঁদ ছাড়া কিছুই না । ফাঁদে আটকা পড়লেই গেলো । এতো সম্মান-কদরের আবরণের ভিতরে তোমার করুণ দিনগুলো অপেক্ষা করছে । তাই কারো তোষামোদী, সম্মানে, গদগদ রূপ বর্ণনায় দিশেহারা না হয়ে স্থির হও, বিবেক দিয়ে সিদ্ধান্ত নাও, সামনে আগাও, জেগে উঠো । বাকি সারাটি জীবন অন্যায় সয়ে যাবে নাকি মানুষ হয়ে বেঁচে থাকবে । সমাজের ভার পুরুষ একাই তুলে নিবে নাকি তুমিও নিবে । বোকা মেয়ে আর বোকামি করোনা ।
[বিঃদ্রঃ নারী, তোমাকে তুমি করেই বললাম । যদিও আমি অনেক ছোট । ছোট ভাই অথবা বন্ধু হিসেবে কথাগুলো হজম করলেই হয় । ছেলেরা, ক্ষেপবেন না । সব ছেলেরাই খারাপ সেটাও না আবার সব মেয়েরাও খারাপ সেটাও না । সমাজের দায়ভার দুজনকে নেয়া অবশ্যকর্তব্য । তাহলে কেউ কারো দ্বারা প্রতারিত হবেনা, নির্যাতিত হবেনা । ]
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ১২:২৪