সপ্তদশ শতাব্দীতে ইসলামিক বিশ্বের বৃদ্ধির ফলে বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় নতুন সোনালী যুগের আর্বিভাব ঘটে। প্রাচীন সভ্যতার জ্ঞান-বিজ্ঞানের উপর ভিত্তি করে মুসলিম ডাক্তারগন মেডিকেল বিজ্ঞানের সীমারেখার নতুন মাইলফলক উন্মচোন করেন।
সপ্তদশ শতাব্দী : ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে মোহাম্মদ ( সা. ) এর ইহকাল ত্যাগের পরে ইসলাম আরব থেকে পারস্য,ফিলিস্তান, সিরিয়া, লেবানন, ইরাক এবং উত্তর আফ্রিকা পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করে।
অষ্টাদশ শতাব্দী : খলিফা হারুন-অর-রশিদ বাগদাদে "হাইজ অফ উইজডম " মানে জ্ঞানের ঘর খুঁজে পান। তখনকার বিদ্বানেরা সেই জ্ঞানের ঘর থেকে প্রাচীন অনেক পান্ডুলিপি উদ্ধার করেন এবং অনেক মেডিকেল বিষয়াদি ভাষান্তর করতে সক্ষম হন।
নবম শতাব্দী : আল রাজী(Rhazes) পারস্যে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন একাধারে ফিজিশিয়ান , কেমিস্ট এবং শিক্ষক । তিনি মেডিকেল বিষয়ক অনেক লেখা লেখেন যেগুলো পরে ল্যাটিন এবং গ্রীকে ভাষান্তরিত হয়।
দশম শতাব্দী : সার্জন আল-জাহরাউইয়ি (Abulcasis) করডোবায় জন্মগ্রহন করেন। তিনি বিভিন্ন মেডিকেল যন্ত্রপাতির আবিষ্কার করেন এবং প্রথম চিত্রিত করা সার্জিকাল বই লেখেন।
একাদশ শতাব্দী : বাগদাদে ইবনে সিনা (Avicenea)
''ক্যানন অফ মেডিসিন '' নামে একটি ৫ ভলিউমের বই লেখেন যাতে ওই সময়ের সমস্ত মেডিকেল জ্ঞানের উপস্থাপন করা হয়৷
দ্বাদশ শতাব্দী : ইবনে রুশদ (Averroes) জন্মগ্রহন করেন। তিনি একজন ফিজিশিয়ান , দার্শনিক এবং জ্যোতির্বিদ ছিলেন। তিনি একটি মেডিকেল এনসাক্লোপিডিয়া লিখেন যেটি ল্যাটিনে কল্লিগেট (Colliget) নামে পরিচিত।
চতুর্দশ শতাব্দী : অটোম্যান সেরেফেদ্দিন সাবুংচুওগুলো জন্মগ্রহন করেন। তিনি ছিলেন সার্জন এবং তার চিত্রিত লেখাসমূহে মুসলিম মেডিকেল বিজ্ঞানের এডভান্সড পদ্ধতি সমূহ বর্নিত হয়।
শুরুর দিকের কথা : মহানবী ( সা. ) এর বানী আরব উপদ্বীপের বাইরে ছড়িয়ে পড়ার আগে লোকাল মেডিকেল চর্চা গড়ে উঠেছিল ইসলামের মহান বানী :-
আল্লাহ বার্ধ্যক্য ব্যতীত সকল রোগের প্রতিষেধক দিয়ে রেখেছেন।
প্রাচীন ইসলামিক মেডিকেল বিজ্ঞান গড়ে উঠেছে ধর্মীয় দিক থেকে। প্রাচীন মোসপটেমিয়া, ব্যবিলন সভ্যতা থেকে জ্ঞান আরোহন করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত অনেক মুসলিম বিশ্বে ইসলামিক ঐতিহ্যবাহী প্রাকৃতিক চিকিৎসা হিজমা(Suction Cups), মধু কিংবা অলিভ ওয়েলের প্রচলন চালু আছে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা স্বরুপ।
চিত্র ; হিজমাপদ্ধতি
৬২২ খ্রিস্টাব্দে মহানবী (সা .) এর মদিনায় হিজরতের বছরে ইসলামিক ক্যালেন্ডার চালু হয়। এর দুই শতাব্দী পর তাঁর উত্তরসূরী খলিফারা ইসলামিক রাজত্ব পূর্বে ইরান এবং ভারত, পশ্চিমদিকে আফ্রিকা এবং ইউরোপ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। সাথে সাথে আরব্য মেডিসিন এসব এলাকায় প্রবেশ লাভ করে,ঐসব এলাকার শাসনকর্তারাও বাইরের সংস্কৃতির জ্ঞান আরোহন করতে আগ্রহী হয় বিশেষ করে গ্রীক এবং রোমান সংস্কৃতি মিশরে এবং তার পূর্বে গৃহীত হয়৷ তারা দর্শন, প্রযুক্তি, মেডিসিন একসাথে বলা হয় প্রাচীন যুগের বিজ্ঞান নিয়ে চর্চা করে।
ইসলামিকে মেডিসিনে পশুপাখির অংগপ্রতংগ প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে এমন নজির পাওয়া যায়। এরকম চিকিৎসা ব্যবস্থার অংকিত পান্ডুলিপি পাওয়া গেছে বেশ সংখ্যক। যেমন চতুর্দশ শতাব্দীতে লেখা "The usefulness of Animals " বইটি লিখেছেন সিরিয়ান বিদ্বান ইবনে আল দুরাইহিম। ইবনে সিনা পাখির ডানা, কবুতরের রক্ত, গাধার লিভার দিয়ে নির্দিষ্ট কিছু রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করেছেন এরকম লিখেছেন।
সাপ : ভাইপারকে প্রথমে চামড়া খুলে শুকানো হত, পরে এর ছাই ভিনেগারের সাথে মেশানো হত। এই পেস্ট অর্শ্ব এবং এরিসিপেলস (এক প্রকার ত্বকের ইনফেকশন) রোগ সারাতে ব্যবহার হত।
(সূত্র : Snake miniature, 14th century edition, from Marvels of Creation, by al-Qazwini)
এছাড়াও খরগোশ, উট, সারস, ঘোড়ার বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন রকম রোগ সারাতে ব্যবহার করা হত।
ইসলামের রাজত্ব বৃদ্ধির সাথে সাথে, যেসব শহর গ্রীক বিজ্ঞানের চর্চা হত এবং মুসলমানদের আয়ত্তে এসেছিল সেখানে বিজ্ঞানের আলো আরো বেশি বিচ্ছুরিত হয়েছিল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া এবং আধুনিক তুর্কি। পূর্বদিকের ইসলামিক সীমানায়, পারস্যের গন্দেশাপুর গ্রীক মেডিসিন এবং বিদ্বানদের কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠেছিল যখন ৫২৯ খ্রিস্টাব্দে বিদ্বানরা মাইগ্রেট হওয়া শুরু করে, এর পিছনে কারন ছিল এথেন্সে সম্রাট জাস্টিনাইন জ্ঞান বিজ্ঞানের একাডেমি বন্ধ করে দিয়েছিলেন। মুসলিম বিদ্বানেরা যারা গন্দেশাপুরে ছিল তারা এই সু্যোগে সেখানে নতুন করে জ্ঞান বিজ্ঞানের আলোর কেন্দ্র তৈরি করতে সংকল্পবদ্ধ হয়েছিল।
Translated From History Magazine (National Geographic)।
কপিরাইট সংরক্ষিত ।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ৮:৩৮