somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি আত্মহননের গল্প

০৬ ই নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশে মেঘের খেলা দেখছিলাম। কালো মেঘের একটা দল কুন্ডলী পাকিয়ে পুবের আকাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আকাশের সাথে মেঘের এই মেলবন্ধন খুবই দৃষ্টিনন্দন। বৃষ্টিকে বরণ করতে প্রকৃতির এই পূর্বপ্রস্তুতি আমাকে অবাক করেনা। হঠাৎ একঝলক দমকা হাওয়া এসে মুখে লাগলো। বৃষ্টিটা জোরেশোরেই নামবে মনে হচ্ছে।
.
অবশেষে বৃষ্টি নামে। বৃষ্টির ছাট মুখে এসে লাগে। অদ্ভুতরকম ভালো লাগা কাজ করে। এক মুহূর্তের জন্য মনে হতে থাকে মানুষের জীবনটা অনেক সুন্দর। প্রকৃতি আমাদের দুহাতভরে দিয়েছে। আমরাই নিতে কার্পণ্য করি। জাগতিক সব দুঃশ্চিন্তা ভুলে কেবল প্রকৃতির এই সৌন্দর্য নিয়ে থাকতে পারলে কেউ হয়তো নিজের জীবনকে গালাগাল দিতো না।
পরক্ষণেই মনে হয় বিষয়টা হয়তো খুব একঘেয়ে হয়ে যাবে। শুধু প্রকৃতি দেখে কি আর মন ভরে নাকি!!
.
আমি আমার সিদ্ধান্তে অটল থাকি। যে সিদ্ধান্ত আমি নিয়েছি তা বাস্তবায়ন না করা পর্যন্ত জাগতিক কোন মায়াতে আকৃষ্ট হওয়া যাবেনা।
আমি আত্মহত্যা করবো!
হ্যাঁ, অনেক ভেবেচিন্তে নেয়া সিদ্ধান্ত। এই বিষাক্ত জীবন নিয়ে বেঁচে থাকা যায়না।
অনেক চেষ্টা করেছি অনন্যাকে ছাড়া ভালো থাকার। কিন্তু সেইসব চেষ্টাগুলো যখন ব্যর্থতায় রূপ নিতো, নিজেরই প্রচন্ড হাসি পেত।
"ভালোবাসা ছাড়া বেঁচে থাকা যায় নাকি!"
.
অনেক চেষ্টা করেছি অনন্যার সাথে যোগাযোগের। কোন লাভ হয়নি। ও আমাকে ছাড়া ভালো থাকতে শিখে গেছে।
একবার যদি ওর কাছ থেকে ভালো থাকার সূত্রটা জানা যেতো, তাহলে হয়তো এতবড় সিদ্ধান্তটা নিতে হতো না।
.
দুই টাকা দিয়ে একটা ব্লেড কিনে এনে রেখেছি। হাতের শিরা বরাবর টান দেয়ার জন্য!
মৃত্যুযন্ত্রনা কেমন হবে খানিকটা ভাবার চেষ্টা করলাম। ভাবতে পারলাম না!
.
অনেক ভেবেচিন্তেই আজ রাতে কাজটা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আজ বাসায় কেউ নেই। সবাই গ্রামে গেছে।
আমি যখন ব্লেড দিয়ে আমার হাতের শিরা কেটে ফেলবো, তখন আমার হাজার চিৎকার শুনেও আমাকে কেউ বাঁচাতে আসবেনা। রক্তে পুরো ঘর ভেসে যাবে। কেউ আগামী দুইদিনের আগে আমার নিথর দেহটা উদ্ধারও করতে পারবে না।
.
এসব ভাবতেই গা টা একবার শিউরে উঠলো।
নিজের প্রতি এতটা নিষ্ঠুর হলাম কিভাবে আমি!!
আমি হাসি।
মনে হতে থাকে, এভাবে বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়াই ভালো।
আস্তে আস্তে রাত ঘনিয়ে আসে। আশেপাশের দালানগুলোর সব আলো নিভে যেতে থাকে।
নিজের অজান্তেই আমার মুখে একটা ক্রুর হাসি ফুটে ওঠে। আমার সব প্রস্তুতি নেয়া হয়ে যায়।
.
একটা ডেথ নোট লিখি আমি -
প্রিয় পৃথিবী,
তোমার আলোবাতাসে আমি অনেক ভালো সময় পার করেছি। কিন্তু হঠাৎই এলোমেলো হয়ে যাওয়া আমার সবকিছুতে এখন তোমার আলো বাতাস কিছুই আমার ভালো লাগছেনা।
ওইপারের দুনিয়া আমাকে ডাকছে।
বিদায় পৃথিবী। বিদায়!
লেখা শেষ করে আমার মনে হয়, অনন্যাকে কোন মেসেজ দেয়া যাবেনা। মৃত্যুর পর আমার হঠাৎ মৃত্যুসংবাদে ওর চেহারা কেমন হয় তা দেখতে ভীষন ইচ্ছে করছিলো। কিন্তু তা কি আদৌ সম্ভব হবে??
মৃত্যুর পরের জীবনই কেমন হবে তা ই বা কে জানে!
আমি আর কিছু না ভেবে ব্লেডটা হাতে নিই!
এমন সময় হঠাৎ রাতের নীরবতা ভেঙ্গেচুরে মোবাইল বেজে উঠে। আমি চমকে উঠি।
তাকিয়ে দেখি মায়ের ফোন!
আমি দ্বিধায় পড়ে যাই। ফোন তুলবনা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি!
মায়ের মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠে। হঠাৎই মনে পড়ে ছোটবেলার একটা ঘটনা।
.
হাতের নখ কাটতে গিয়ে একবার হাত কেটে রক্ত বেরোচ্ছিলো। তা দেখে মা এতই বিচলিত হয়ে পড়েন যে হুলস্থুল বাধিয়ে দেন। বাড়ির সব লোক জড়ো হয়ে গিয়েছিল সেদিন।
মনে মনে হাসি পায় আমার। চোখটা ছলছল করে ওঠে। অকৃত্রিম ভালোবাসা বোধ হয় একেই বলে।
.
এক মুহূর্তের মধ্যেই আমার মনে হয় এই ভালোবাসা পাওয়ার জন্য হলেও আমার বেঁচে থাকতে হবে।
কারো সস্তা ভালোবাসা না পাওয়ার আফসোসে আমি মায়ের ভালোবাসা হারাতে পারবো না।
হাতের ব্লেডটা ছুড়ে ফেলে দেই আমি!
"হ্যালো মা...................!"

সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:২৮
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×