ছবিঃ সংগৃহীত
প্রিয় মা-বাবা, হঠাৎ ঘুম আসছেনা। তোমাদের কথা মনে হলো। এই সংকটময় অবস্থায় হুট করে যাতায়াতের সকল ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তোমাদের সাথে আমার মাঝে এখন প্রায় ৪০০ কিলোমিটারের দূরত্ব। তোমাদের খুব মিস করছি।অজান্তেই আমার জন্য তোমাদের অপরিসীম ত্যাগ-তিতিক্ষার কথা মনে চলে এলো।তাই ,মহান আল্লাহতায়ালার নিকট তোমাদের সুস্বাস্থ্য এবং দীর্ঘায়ু কামনা করে দুটো লাইন তোমাদের উদ্দেশ্যে লিখতে ইচ্ছে হলো। আসলে তোমাদের বলতে তো চাই অনেক অনেক কিছুই, কিন্তু কেনো যেন কখনই কিছু বলা হয়ে উঠেনা। কিসের যেন একটা আড়ষ্টবোধ এসে ঘিরে ধরে। এই যেমন কখনোই মুখ ফুটে তোমাদের বলা হয়নি, আমি তোমাদের ভালোবাসি, প্রচন্ডরকম ভালোবাসি। যাই হোক, আজ অন্তত একটা কথা না বললেই নয়...
আর্থিকভাবে তোমরা উচ্চবিত্তের অধিকারী হয়ত ছিলে না.. কিন্তু ভালোবাসা, ত্যাগ, মমতা স্নেহে আমাদের আগলে রাখার ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে তোমরা পৃথিবীর সবচেয়ে মহান ও বিত্তবান মা-বাবা। সবসময়ই তোমারা তোমাদের এই বিশাল সম্পদ দিয়ে আমাদের মুড়িয়ে রেখেছো, ভরিয়ে দিয়েছো ভালোবাসায় যেমনটা আজো রেখেছো প্রতিমুহূর্তেই..! তোমাদের হক পরিপূর্ণভাবে আদায় করার তৌফিক যেন মহান রাব্বুল আলামিন আমাদের দান করেন।আমিন ।
আসলে পৃথিবীর সকল মা-বাবাই সন্তানের জন্য সর্বস্ব বিলিয়ে দেয়, কেবল আমরা সন্তানরা সেটা বুঝতে চাইনা বা বোঝার চেষ্টা করিনা। আর যখন বুঝি, তখন অনেক দেরি হয়ে যায়, এমন এক সময় বুঝি যখন আর সে বোঝার কোন মানে থাকেনা।
আমার পরিচিত কিছু সন্তান দেখেছি, যাদের বয়স প্রায় ১৫ থেকে ২০ ছুই ছুই, তারা প্রায়ই নানান বায়নায় তাদের মা-বাবাকে নাজেহাল করে দিয়েছে, দেখে শুনে খুব রাগ ক্ষোভ হত। এদের কথা কি বলব, এরা তো সে তুলনায় এখনো ছোট, স্বপ্নে তাদের বসবাস। কিন্তু ঐসকল নয়া সন্তান গুলোকে কি বলব, যারা বিয়ে করে নতুন মা-বাবার সন্তান হয়েছে আর দুরত্ব রেখা টেনে দিয়েছে নিজ মা-বাবার সাথে।
আসলে অনেক সন্তান আছে যারা এখন আর সেই ছোট্টটি নেই..কিন্তু তবুও তারা বুঝে বা না বুঝে হোক, তারা তাদের মা-বাবকে অনেক কষ্টদেয়।এই ধরুন, তাদের মনে যে জিনিসটির জন্য কখনো ইচ্ছে জাগে, সেটি পাওয়ার জন্য মা বাবার উপর বায়নার হাট বসায়, তাদের সে সামর্থ্য আছে কিনা সেটা বুঝতে না চেয়েই বরং চাপ প্রয়োগ করে। কখনো বা অমুক বেসরকারি নামি-দামি ভার্সিটিগুলোতে পড়ার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য.. কখনোবা অমুক জায়গায় ঘুরতে যাওয়ার জন্য.. কিংবা কখনো বন্ধু বান্ধবীর দামী কোন জিনিস দেখলে সেটা তারোও লাগবে এমন বেহুদা কারণের জন্য।
আফসোস তারা পৃথিবীর সকল দামী জিনিস চোখে দেখে.. তার প্রতিবেশী বা তার বন্ধু বান্ধবের মা-বাবার স্নেহ দেখে.. বিয়ের পর শশুড়-শাশুড়ির ভালোবাসা দেখে কেবল দেখতে পায়না নিজ মা-বাবার নিস্বার্থ ভালোবাসা, স্নেহ.. তাদের ঘাম ঝড়ানো কষ্টটুকু,..!! তারা দেখতে পায়না কিভাবে তাদের খাবারের প্লেটে প্রতিদিন তরকারির ভালো অংশটুকুই জুটে, কেনো তাদের মা-বাবা কখনো কখনো অভুক্ত থাকে..!গুটিকয়েক জামা আর লোকাল বাসে চড়ে বাবার রাত দিন খাটুনি তাদের নজরে আসেনা। নজরে আসেনা মমতাময়ী মায়ের অহর্ণিশ পরিশ্রমটুকুও। আহা! আফসোস, তারা বুঝতে পারেনা যে,তাদের জন্য এই যে তাদের মা-বাবার এতো জোগানের প্রচেষ্টা.. সেটা কতটা কষ্টের নিঃশেষিত ফসল। তারা কখনো বুঝেনা এতসব কিছুর পরও, যা অবশেষে অবশিষ্ট বেচে যায় তা দিয়ে তারা কিন্তু নিজেদের জন্য কিছু করেনা। সেটা তারা তাদের সন্তানের জন্যই তোলা রাখে সযতনে...!!
আসলে প্রত্যেক মা-বাবা যেমন তার সন্তানদের জন্য ভালোবেসে সব উজাড় করে দেয়, তেমনি সকল সন্তানও তাদের পিতা-মাতার প্রতি এক অজানা নাড়ির বন্ধনে আবদ্ধ থাকে। কেবল তারা সেটি অনেক সময় বুঝতে পারেনা।
হে আল্লাহ, তুমি এই সকল সন্তানদের হেদায়েত দান করো, এই সকল অবুঝ সন্তানদেরকে তাদের মা বাবার ত্যাগ ভালোবাসা স্নেহ বোঝার ক্ষমতা দান করো।
আমিন।