somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প: ধ্রুবর টুনটুনি বোন

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ভোর ৬:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চারদিকে হাজার ব্যস্ত মানুষের
কোলাহল। সেই সাথে গাড়ির ইঞ্জিন
আর হর্ণ এর শব্দতো আছেই। আরও
আছে গাছের ডালে বসে থাকা কাকের
কা কা শব্দ। এত কিছুর মাঝেই
নির্বাক হয়ে একটা বেঞ্চে বসে আছে
ধ্রুব। তার চোখ জোড়া এক দিকে
স্থির হয়ে আছে। মুখের ভাব দেখে মনে
হচ্ছে খুব মনোযোগের সাথেই কিছু
একটা দেখছে সে। একটু খেয়াল করলেই
বুঝতে কষ্ট হবে না যে, ধ্রুবর থেকে
কয়েক গজ দূরে বরাবর সামনেই দু'হাতে
মাথা গুজে বসে আছে একটা মেয়ে। চোখ
থেকে তার অঝোরে জল ঝড়ে পড়ছে।
সেই দৃশ্যটাই লোহাকে চুম্বকের
আকর্ষণ করার মতই ধ্রুবকে
আকর্ষণ করছে। মনে হচ্ছে মেয়েটির
ভিতরকার ভয়ংকর ঝড়টি এসে ধাক্কা
দিচ্ছে ধ্রুবর মনে। মনকে আর বুঝাতে
না পেরে অবশেষে মেয়েটির উদ্দেশ্যে
বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় ধ্রুব। অতঃপর
মেয়েটির পাশের চেয়ারে গিয়ে নিঃশব্দে
বসে পড়ে ও। মেয়েটি তখনো টেবিলের
উপর রাখা হাতে মাথা রেখে কেঁদে চলেছে
। এভাবেই কিছুটা সময় কাটার পর মুখ
খুলে ধ্রুব- ছেলেটা কি আপনার BF
ছিল?
নিজের অতি নিকটে অচেনা কন্ঠে
আচমকা এমন প্রশ্ন শুনে চমকে উঠে
মেয়েটা। কান্না ভেজা মুখটা নিয়েই
তাকায় সে ধ্রুবর দিকে। তার চোখে
জলের সাথে এখন বিস্ময়। মনের মাঝে
হয়ত ভয়টাও কাজ করছে। ধ্রুবর সেটা
বুঝতে কষ্ট হয় না। তাই কোমল
কন্ঠেই সে বলে- আপনি ভয় পাবেন না।
আসলে অনেকটা সময় থেকেই
আপনাদের কথা বার্তা এবং ঐ ছেলেটা
চলে যাবার পর আপনার অবস্থাটা
দেখছিলাম। শেষ পর্যন্ত নিজেকে আর
মানাতে না পেরে আপনার মনের এই
করুণ অবস্থাতেই আপনাকে বিরক্ত
করতে বাধ্য হয়েছি।
: কি বলবেন, বলেন।
কিছুটা শান্ত সুরেই কথাটা বলে
মেয়েটা। মেয়েটার নাম তিনা। নামটা
অবশ্য ধ্রুব পূর্বেই জেনে গিয়েছিল,
যখন চলে যাওয়া সেই ছেলেটার সাথে
তিনা কথা বলছিল।
: ছেলেটা কি আপনার BF ছিল।
ধ্রুবও খুব শান্ত কন্ঠেই কথা বলছিল।
তবে প্রশ্নটা শুনে তিনাকে খুব বিব্রত
লাগছিল। হয়তবা কিছুটা বিরক্তও।
তবে কষ্ট যে তার কন্ঠটাকে চেপে
ধরছে তাও বুঝতে কষ্ট হয় না ধ্রুবর।
ধ্রুব বুঝতে পারে মেয়েটা হয়ত তাকে
ঠিক বিশ্বাস করতে পারছে না। সেটা
ভেবেই কিছু বলতে যাচ্ছিল সে, তবে
তার কথা উপেক্ষা করেই কথা বলে
তিনা- হ্যাঁ, আমি রিসাতকে ভালোবাসি।
রিসাতও আমাকে ভালোবাসে। তবে
ইদানিং ও কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে, কি
সব করছে আর বলছে! আমি সবই মেনে
নিচ্ছিলাম। তবে আজ ও এমন কিছু
বলল যা আমি মানতে পারিনি। ফলাফলে
হয় ঝগড়া এবং ব্রেকআপ।
দূরে কোথাও শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে
কথা গুলি বলছিল তিনা। ধ্রুব আনমনা
হয়ে শুনে চলছে একটা জীবনের দুঃখের
কাহিনী। দুজনেই বেশ কিছুটা সময় চুপ
করে থাকে। যখনি ধ্রুব মুখটা খুলে কিছু
বলবে, তখনই বলতে শুরু করে তিনা।
ধ্রুব চুপ হয়ে শুনতে থাকে।
: প্রায় এক বছরের সম্পর্ক আমাদের।
আমার প্রতি ওর ভালোবাসা দেখেই
আমি ওর প্রেমে পড়ে যাই। কিন্তু
হঠাত্ যে কি হয়ে গেল!
ওকে ছাড়া আমি নিজেকেই ভাবতে পারি
না। কিন্তু ও যা বলছে তাও মানতে
পারছি না। জানিনা কি হবে।
মেয়েটির মনের কষ্ট গুলি যেন নদীর
উপচে পড়া ঢেউ এর মত বেরিয়ে
আসতে চাইছে। চোখ থেকে গড়িয়ে
পড়ছে জল। হাত দুটি বেঞ্চে রেখে, তার
উপর মাথাটা রেখে বসে থাকে তিনা।
ধ্রুব বুঝতে পারে মেয়েটা খুব কাঁদছে।
কিছুটা সময় চুপ থেকে বলতে শুরু করে
ধ্রুব- আমার নাম ধ্রুব। ভবঘুরের মত
ঘুরে বেড়াই। আমার একটা ছোট বোন
ছিল। নাম নাইলা। আপন বোন না। তবে
আমি ওকে খুব ভালোবাসতাম। নাইলাও
আমাকে খুব সম্মান করতো,
ভালোওবাসতো। ও ওর জীবনের সব
কথা আমাকে শেয়ার করতো। তবে
ভাগ্য খুব বেশি দিন সমর্থন করেনি
নাইলা কে। ও কিছু একটা আমার কাছে
লুকাতে থাকে। আমি বুঝতে পারতাম,
তবে প্রকাশ্যে কিছু বলতে পারছিলাম
না। আমি বুঝতে পারতাম ও চেঞ্জ হয়ে
যাচ্ছে। ওর জীবনে ওর ভাই থেকেও
অধিক গুরুত্বপূর্ণ কেউ চলে এসেছে।
ধীরে ধীরে আমার থেকে অনেক দূরে
চলে যায় নাইলা। আমার কিছুই করার
ছিল না, বলারও ছিল না। এর প্রায়
চার মাস পর নাইলার একটা চিঠি পাই।
অতঃপর পকেট থেকে চিঠিটা বের করে
পড়তে শুরু করে ধ্রুব।
আমার প্রিয় ভাইয়া,
ভালো আছো তো তুমি? আমি একদম
ভালো নেই ভাই। জীবনটা এমন হতে
পারে কখনো ভাবিনি। তোমার যে
চঞ্চলা বোন টাকে তুমি টুন টুনি বলে
ডাকতে, সে আর চঞ্চল নেই। সে আজ
অনেক শান্ত একটা মেয়ে। একদম
নিশ্চুপ। রাজু আমাকে ধোকা দিয়েছে
ভাই। ও আমাকে নয়, আমার শরীর কে
ভালোবাসতো। আর যখন ও ওর চাহিদা
মিটিয়ে ফেলেছে, ছুড়ে ফেলে দেয় ও
আমাকে। এ পৃথিবীতে আর থাকতে
ইচ্ছে করছে না ভাই। চলে গেলাম
তোমাদের ছেড়ে। তোমার আর কোনো
বোন কে এভাবে চলে যেতে দিও না।
ভালো থেকো ভাই।
ইতি,
তোমার টুনটুনি।
.
চিঠি পড়তে পড়তে ধ্রুবর চোখের
কোণে জমে উঠে কয়েক ফোঁটা জল।
কিছুটা সময় নির্বাক হয়ে দূরে কোথাও
তাকিয়ে থাকে সে। তারপর বলতে থাকে
ও- চিঠিটা পেয়েই আমি ছুটে যাই
নাইলার কাছে। তবে ততক্ষনে অনেক
দেরি হয়ে গিয়েছিল। আমার টুনটুনি
বোনটা পাড়ি জমায় পরপারে। আজও
পথে ঘাটে আমি রাজুকে খুঁজে বেড়াচ্ছি।
ওকে যেখানেই পাব, সেখানেই ওর সমাধি
বানিয়ে দিব।
ধ্রুবর চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা জল
গড়িয়ে পড়ে। তিনা তখনো হাতে মাথা
গুজে বসে আছে। অনেক টা সময় কেটে
যায় এভাবে। চোখ মুছে, বসা থেকে উঠে
দাঁড়ায় ধ্রুব। কয়েক পা আগাতেই পিছন
থেকে একটা ডাক আসে- 'ভাইয়া।'
পিছনে ফিরে আসে ধ্রুব। তিনা তখন
উঠে দাঁড়িয়েছে।
: আমি তোমার টুনটুনি বোন হতে চাই
ভাইয়া। কখনো তোমার কাছে কিচ্ছু
লুকাবো না।
কান্না ভেজা কন্ঠে কথা গুলি বলে
তিনা। ধ্রুবর চোখ জোড়া ভিজে উঠে।
এ জল কষ্টের নয়, আনন্দের। ধ্রুব
ফিরে পেয়েছে তার হারিয়ে যাওয়া বোন
টুনটুনি কে।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×