somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মৃনালীনি

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আয়েশ করে বিলাসি কায়দায় চা
খাচ্ছিলাম। তখনি বড় স্যার এর ফোন
টা আসে।
এখন নাকি আবার থানায় যেতে হবে।
খুব বিরক্তিকর। পুলিশের চাকরি
মানুষ করে!
খুব রাগ হচ্ছিল। তবে রাগ দেখিয়ে লাভ
নেই। আমার মত লোকের রাগ করা
নিয়ে কারো কিছু আসে যায় না। কি
আর করার! বাধ্য ছেলের মত
ইউনিফ্রম টা ঠিক করে থানার দিকে
চললাম।
সময় টা সন্ধার একটু পর। চারপাশ
ইষৎ আলোকিত। রক্তাক্ত পশ্চিমের
আকাশ। এই সময়টাতেই যুদ্ধক্ষেত্রে
উপস্থিত আমাদের পুরো টিম। আমি,
বড় স্যার, কমল স্যার আর দু'জন
মহিলা কনস্টেবল। এলাকার সবচেয়ে
ভদ্র পল্লিতে এসে গাড়ি থামাবার
নির্দেশ দেয় বড় স্যার।
এখানে আবার ক্রাইম!
আমার কন্ঠে বিস্ময় ! এটা একটা
আবাসিক এলাকা। শহরের সব ভদ্র
লোকেদের নিবাস এখানে। এখানেও কী
ক্রাইম থাকতে পারে? আর থাকলেই বা
কী? ভদ্র লোকেদের ক্রাইম আমাদের
দেশের আইন অনুযায়ী ক্রাইম এর
আওতায় পড়ে না। আর পড়বেই বা
কেন? ওরা তো ভদ্রলোক। পকেটে
অনেক টাকা । মুক্ত হস্থে দান
করতেও সিদ্ধহস্থ তাঁরা।
কথাগুলি ভাবতে ভাবতেই বুকের মাঝে
মৃদু একটা আফসোসের ঢেউ তুলে একটু
মুচকি হাসলাম।
"চল সবাই।"
আমার প্রশ্নটা হয়তো কর্ণগোচর
হয়নি বড় স্যার এর। আমার মত
ক্ষুদ্র পুলিশদের এমন অনেক কথাই
স্যারদের কর্ণপাত হয় না।
চুপচাপ স্যার এর হুকুম তামিল করে
সবাই স্যার এর পিছু পিছু চললাম।
কিছুদূর যেতেই দেখি যে মনসুর ভাই।
আমাদের সিভিল বিভাগের লোক।
কিছুটা সময় এর অবস্থা পর্যবেক্ষন
করে বুঝতে পারলাম যে, ঘটনা খুব
বড় কিছু নয়। কিছু অসাধু লোক এই
ভদ্রপাড়ায় একটা পতিতালয় খুলে
বসেছে।
ভদ্র এলাকা। পতিতাদের কদর ও একটু
বেশি।
কিন্তু সমস্যা টা অন্য জায়গায়।
আমাদের বড় স্যার আবার অতীব
দয়ালু মানুষ। ওনার এক কথা, "কেউ
তো আর ইচ্ছে করে পতিতা হয় না।
জীবনের তাগিদে বাধ্য হয় এই পথ বেছে
নিতে। তোদের যা ইচ্ছে করার কর না।
কিন্তু থানা থেকে একটা অনুমোদন
পত্র তো সাক্ষর করিয়ে আনবি।"
পতিতাদের বিরুদ্ধে স্যার এর আনিত
অভিযোগকে আমরা সবাই ঠিক ঠিক
কলরবে সমর্থন জানাই।
.
বিলাসবহুল বাড়িটা থেকে চার জন
তরুনী নিয়ে বের হয় দু'জন মহিলা পুলিশ
সহ বড় স্যার। এরাই নাকি পতিতা।
ঘৃণায় ওদের দিকে তাকালামও না।
কোনো কথা না বলেই, স্যার এর
নির্দেশ পেয়ে গাড়ি নিয়ে এগিয়ে
চললাম।
তরুনী চার জনকে হাজতে রাখা হয়েছে।
আর আমরা সবাই বড় স্যার এর রুমে
বসে নাস্তা-পানি খাচ্ছিলাম। জয় এর
সাথে বড় একটা যুদ্ধের সদ্য
সমাপ্তিতে স্যার এর মুখ টা খুব
উজ্জ্বল দেখাচ্ছিল।
লোকটির বয়স পঞ্চাশ প্রায়। তবে
দেখতে এখনো বেশ তাগড়া দেখা যায়।
- স্যার কে আজ খুব খুশি খুশি লাগছে!
ডাল-ভাজি দিয়ে মুখে এক টুকরো রুটি
পুরে দিয়ে চিবুতে চিবুতেই কথাটা
বললাম। আমার মুখেও অস্পষ্ট হাসির
রেখা।
- হুম, অনেক দিন পর আজ একটা বড়
কাজ করলাম।
স্যারের হাসি মাখা মুখের কথা শুনে
আমি অবাক না হয়ে পারলাম না।
বড় কাজ!
অসহায় চারটা মেয়েকে ধরে এনে
জেলহাজতে বন্দী করে রাখার মাঝে কী
এমন বাহাদুরী!
যাই হউক, সেদিকে আর গেলাম না।
ঠান্ডা মাথায় খাওয়া-দাওয়ায়
মনোযোগ
দিলাম।
রাত্র দশটার মত বাজে। বাসায়
যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম।
সারাদিনের ক্লান্তিতে শরীরে একটু
ঝিমুনী চলে এসেছে।
সেই সময়টাতেই স্যার এর রুমে দু'জন
ভদ্র গোছের লোকের আগমন ঘটে।
তাদের কিছু কথা কর্ণগোচর হতেই
বুঝতে পারলাম এরাই সেই অসাধু
নামের ভদ্রলোক। তবে আমাকে পাশে
রেখে ওদের গোপন পরামর্শ করাটা
উনাদের জন্য একটু বিভ্রান্তির সৃষ্টি
করেছে। তাই স্যার এর নির্দেশে রুম
থেকে বেরিয়ে আসি আমি।
করিডোরে একটা বেঞ্চিতে বসে আছি।
চোখের ঘুম ঘুম ভাবটা কেটে গেছে। আর
মনের মাঝে উঁকি দিচ্ছে কী সব উদ্ভট
প্রশ্ন!
কলেজে থাকতেই পতিতা নামটির সাথে
পরিচিত ছিলাম। আর পুলিশে আসার
পর ওদের সম্পর্কে এবং ওদের কাজ
সম্পর্কে যথেষ্ট ধারনা হয়ে যায়। সেই
থেকেই এই নামটি আর এই নামের মানুষ
গুলোর প্রতি প্রচন্ড ঘৃণা।
কিন্তু আজ মনের মাঝে বারংবার শুধু
একটা প্রশ্নই উঁকি দিচ্ছিল। ওদের কী
বিবেক, বুদ্ধি কিছু নেই? এতটুকু
লজ্জাও নেই! মানুষ কী এতটা
নির্লজ্জ হতে পারে!!!
কথা গুলি ভাবতেই ওদের প্রতি ঘৃণাটা
আরও বেড়ে যায়।
অদ্ভুত কিছুর ভাবনায় হারিয়ে
গিয়েছিলাম। স্যার এর ডাকে আমার
ভাবনায় ছেদ পরে। স্যার এর রুম থেকে
বের হয়ে ভদ্রলোকদ্বয় তরুনীদের সাথে
কিছুক্ষন কথা বলে চলে যেতেই স্যার
আমাকে ডেকে পাঠায়।
- জ্বী স্যার।
-- আরে এদিকে আস মিয়া।
পূর্বের থেকে স্যার এর মুখটা
বহুগুনে উজ্বল দেখাচ্ছিল। কিছুটা
উত্তেজিতও লাগছে বৈকি।
- খুশির কোনো খবর মনে হয়!
আমার মুখেও একটা মুচকি হাসি।
- হুম। আর খবর টা শুনলে তুমি
আমার থেকে বেশি খুশি হবে।
- কী স্যার?
আমিও কিছুটা উত্তেজিত।
- চল।
কথাটা বলেই স্যার ঐ মেয়েদের
হাজতের দিকে গেল।
দেখতো, এদের মাঝে কাকে ভাল লাগে?
আমাকে উদ্দেশ্য করে স্যার এর
কথাটা শুনে কিছুটা অবাকই হলাম।
- এদের দেখে আমি কী করব?
বিস্ময় নিয়ে স্যার কে পাল্টা প্রশ্ন
করি আমি।
- আরে মিয়া, তুমি তো আস্ত একটা
হাদারাম। বোঝনা কিছু?
শুন, এদের মাঝে যাকে তোমার পছন্দ
হবে, আজ রাতের জন্য সে তোমার।
আনন্দ করবে, মাস্তি করবে। আরে
মিয়া, জীবনে আর আছে কী বল?
স্যার এর কথা শুনে বিস্ময়ে নির্বাক
হয়ে যাই আমি। একটা অবিবাহিত যুবক
ছেলে কী এমন কিছু পাওয়ার লোভ
সংবরণ করতে পারে! শুনেছি, পুরুষের
জন্য নারী মাংসের চেয়ে অধিক
লোভনীয় কিছু আর এই পৃথিবীতে নেই।
দুঃসাহসী, অপরাজেয় হাজারও বীর
সেনানি এই একটি স্থানে এসে পরিজিত
হয়েছে। মানুষ আর সব লোভ সংবরণ
করতে পারলেও এই একটা জায়গায় এসে
পরাজিত হয়ে যায়। আমিও কী
পরাজিতদের একজন?
.
কথাগুলি ভাবতে ভাবতেই সামনের দিকে
চোখ গুলি তুলে ধরি আমি। এবার যেন
বিস্ময় এর নতুন ঘোরে পড়ি। চোখের
সামনে সম্ভাব্য সুন্দরী তিন রমনী।
কামনাময়ী এই রমনীদের মায়াজালের
আকর্ষণ, আমার অন্তসত্বা যেন
আমাকে তাদের কাছে নিয়ে যেতে
চাইছে।
তিন জনের মধ্য থেকে সব থেকে
আকর্ষণীয় মেয়েটা কী সব অদ্ভুত
লোভনীয় অঙ্গভঙ্গি করে আমাকে
কাছে
ডাকছে। সেদিকে তাকাতেই ওর দিক
থেকে চোখ ফিরিয়ে ওর প্রতি এক রাশ
ঘৃণা ছুড়ে দিলাম।
.
চোখের সামনে এসব আকর্ষণীয়,
লোভনীয় বস্থু গুলি দেখে মনের
লোভকাতর আর ভোগকাতর অস্থিগুলি
জেগে উঠছিল।
তখনই চোখ যায় হাজত এর একটা
কোণে। দেয়ালে ঠেস দিয়ে, হাটু গেড়ে
বসে
আছে মেয়েটা। বোধহয় কান্না করছে।
সেদিকেই নিবিষ্ট হয় আমার চোখ
জোড়া।
-- কী মিয়া, পছন্দ হইছে নাকি?
-- হুম।
নিজের অজান্তেই কিভাবে যেন মুখ
থেকে কথাটা বের হয়ে যায়। কিন্তু
পরক্ষনেই চমকে উঠি। এটা কী বলছি
আমি? কী করতে যাচ্ছি!!!
এসব ভাবতে ভাবতেই কী একটা বিষয়
যেন আমার মাথায় ঢুকে যায়।
-- স্যার, ওকে কী আমি বাসায় নিয়ে
যেতে পারি?
-- অবশ্যই।
এই, ঐ কর্ণারের মেয়েটিকে বের করে
নিয় আস তো।
আমার কথায় সম্মতি দিয়ে স্যার ঐ
মেয়েটিকে নিয়ে আসতে একজন মহিলা
পুলিশকে নির্দেশ দেন। অতঃপর একটা
অটো করে মেয়েটিকে নিয়ে চললাম
আমার বাড়ির উদ্দেশ্যে। মেয়েটি
তখনো কাঁদছিল।
.
বাসার এসে ওকে নিয়ে সোজা চলে যাই
আমার বেড রুমে। খাটের একটা কোণে
গুটি মেরে বসে থাকে ও। আর কাঁদতে
থাকে অবিরাম। তবে সবচেয়ে
আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, তখনো
আমি ওর চেহারাটা দেখি নাই। আমি
ফ্রেশ হয়ে আসলাম।
-- আপনি ফ্রেশ হবেন?
আমার কথা শুনে মেয়েটা কিছুটা
বিস্মিতই হয় বৈকি, তবে কোনো কথা
বলে না। এভাবে বেশ কয়েকবার
জিজ্ঞাসা করে উত্তর না পেয়ে খুব
রাগ লাগছিল।
-- কী ব্যাপার, কথা বলছেন না কেন?
কবে থেকে আবার এতটা লজ্জাবতী
হয়ে গেলেন? রাস্তার এক পতিতা,
নির্লজ্জ, চরিত্রহীন।
-- চুপ, একদম চুপ।
বসা থেকে দাড়িয়ে চেচিয়ে উঠে মেয়েটি।
-- কেন চুপ করব, হ্যাঁ? তোমাদের মত
নির্লজ্জ, চরিত্রহীন, মেয়েদের জন্য
এদেশের হাজারও যুবক তাদের চরিত্র
নষ্ট করছে।
-- আমার মত মেয়েরা, না?
কথাটা বলেই আবারও অঝোরে কাঁদতে
থাকে মেয়েটা।
থাক, আর কিছু বলবেন না। আমি
নির্লজ্জ, চরিত্রহীন, রাস্তার এক
নষ্ট মেয়ে, পতিতা।
মেয়েটির প্রতিটা কথাই যেন বুকের
মাঝে শূল এর মত বিদ্ধ হয়।
-- এখন এই দুঃশ্চিরত্র, নির্লজ্জ
মেয়েটিকে যে উদ্দেশ্যে এখানে নিয়ে
এসছেন, আপনার সেই মনোবাসনা পূর্ণ
করেন।
এবার যেন বুকের ভিতরটা কেমন কেঁপে
উঠে আমার। এক ভয়াবহ অপরাধ বোধ
এসে ঘিরে ধরে নিজেকে।
-- আমাকে দেখে আপনার কি মনে হয়?
আর অন্য সবার মত আমিও
নির্লজ্জের মত আপনার সাথে একই
কাজ করব?
-- পৃথিবীর সব পুরুষ এক। মুখে
হাজারও নীতি কথা, অন্তরে হিংস্র
পশুত্ব। কিন্তু তারপরও তারা
চরিত্রহীন হয় না। নির্লজ্জতার
উপাধি পায় না। হাজারও মেয়ের সাথে
পশুর মত আচরণ করলেও তাদের কেউ
পতিতা বলে না।
.
উত্তরহীন কিছু কথা শুনে একদম
নির্বাক হয়ে যাই আমি। তারপরও
নিজেকে নিয়ন্ত্রনে এনে মেয়েটির
প্রতি পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দেই আমি।
-- কয়জন পুরুষ দেখেছেন আপনি,
পৃথিবীর সকল পুরুষ কে এক বলছেন?
-- কয়জনের কথা বলব? আমার বাবা,
আমার জন্মদাতা পিতা। পুরুষের
পশুত্ব দেখেছি আমি তাঁর মাঝে।
অসংখ্য মেয়ের সাথে ছিল তাঁর
সম্পর্ক। আর মাতাল হয়ে ঘরে এসে
পিটাতো আমার মা কে। বাবা নামের ঐ
নরপশুর অত্যাচার সইতে না পেরে
একটা সময় মা বাধ্য হয়ে আমাকে এই
শহরে নিয়ে আসে। কই, আমার বাবা কে
তো কেউ চরিত্রহীন বলে না?
কথাগুলি বলে দীর্ঘ একটা শ্বাস নেয়
মেয়েটি। চোখে তার টল-টলায়মান
অশ্রু। আমি নির্বাক।
একটু থেমে আবারও বলতে শুরু করে ও,
"এই শহরে আসার এক বৎসরের মাথায়
পরপারে পাড়ি জমায় আমার মা।
ক্ষুধার যন্ত্রনায় মরণপন অবস্থা।
অতঃপর নিজেই পথে নামি অন্ন
সংস্থান এর খোজে। ঘুরতে ঘুরতে
একটা
সময় এসে পড়ি ঐ ভদ্র লোক গুলির
খপ্পরে। যাদের কে আপনারা পা ঠুকে
সালাম করেন।"
ওর শেষের কথা গুলিতে স্পষ্ট
উপহাসের সুর। চোখ জোড়া দিয়ে ঝড়ে
পড়ছে ঘৃণায় ভেজা জল। কষ্টে চাপা
ঢোক গিলে আবারও বলতে থাকে ও,
"আর তার পর থেকেই আমার এই
দূর্বিসহ জীবন। গত তিনটা মাসের
প্রতিটা সময় কেটেছে এক অসহ্য মৃত্যু
যন্ত্রনায়। প্রতিটা সময় এই কাজ
করার সময় ইচ্ছে করেছে নিজেকে শেষ
করে দেই। কিন্তু পারিনি। অজানা
একটা ভয় আমার পথ রোধ করে
দাঁড়ায়। খুঁজেছি পালাবার অসংখ্য পথ,
পাইনি।"
.
অনেক্ষন কেঁদেছে মেয়েটা। কাঁদতে
কাঁদতে শুকিয়ে যায় অশ্রু। এখন আর
ওর চোখে জল নেই। আছে অসহায়ত্বের
এক করুণ চাহনি। জীবনের চরম আর
করুন কিছু কথা বলে একটা দীর্ঘ
নিশ্বাস নেয় মেয়েটা। বুকের মাঝে হয়ত
বয়ে চলছে ভয়াবহ এক যন্ত্রনা।
আবারও বলতে শুরু মেয়েটা, "প্রথম
যেদিন ওরা আমাকে এই কাজ করতে
বাধ্য করেছিল, সেদিনের একজনের
মাথা ফাটিয়ে দিয়েছিলাম। আর এর
পরদিনই খাটের সাথে আমার হাত পা
বেঁধে........।"
.
আর কোনো কথাই বলতে পারেনা
মেয়েটা। শরৎ এর আকাশের মত
মূহুর্তেই অশ্রুসজল হয় তার চোখ
জোড়া । ডুকরে কাঁদতে কাঁদতে
ফ্লোরেই
বসে পড়ে ও।
নিজেকে যেন আর ঠিক রাখতে
পারছিলাম না। আমার চোখের সামনেই
ভাসছে সেই মূহুর্তে মেয়েটির করুণ
অসহায়ত্ব। আর কানে যেন ভেসে
আসছে তার নিদারুন আত্মচিৎকার।
সেই নরপশুদের ধিক্কার দিতে দিতে
চোখের কোণে জমে উঠে কয়েক ফোটা
জল। কয়েক মূহুর্ত কেউ কোনো কথাই
বলতে পারছিলাম না।
.
চোখের জল মুছে, নিজেকে একটু শক্ত
করে আবারও কিছু বলতে যাচ্ছিল
মেয়েটা।
আমি থামিয়ে দিলাম। এসব শুনে সহ্য
করার মত ক্ষমতা যে আমার নেই।
- আপনাকে বলার মত কোনো কথা
আমার কাছে নেই। তবে এটা বলব,
সবাই এক নয়। তা না হলে অনেক
পূর্বেই এই পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যেত।
- জানি।
ছোট একটা উত্তর দিয়ে আবারও
চুপসে যায় মেয়েটা। আমি কিছুক্ষন চুপ
থেকে বলি, আচ্ছা আজ থেকে তো
আপনি মুক্ত। এখন কি করবেন?
আমার কথার প্রতি উত্তরে কোনো
কথাই বলে না ও। শুধু অবাক নয়নে
চেয়ে থাকে আমার দিকে।
- কিছু বলছেন না যে?
- কি বলব? আমার সাথে মজা
করছেন? নাকি করুণা করছেন?
- কোনোটাই না। শুধু মাঝি-মাল্লা হীন
একটা নরবড়ে তরী নিয়ে পাড়ে পৌঁছার
স্বপ্ন দেখছি।
- সেটাকি কখনো সম্ভব?
- হ্যাঁ সম্ভব। আমি আপনাকে এই শহর
থেকে অনেক দূরে নিয়ে যাব। যেখানে
আপনাকে কেউ চিনবে না। নতুন করে
শুরু করবেন আপনার জীবন। আপনার
হবে খুব সুন্দর একটা জীবন।
- আবার স্বপ্ন। এই স্বপ্নের ঘোরে
পড়েই তো আজ আমার এই অবস্থা।
মেয়েটির কথায় স্পষ্ট হতাশার সুর।
- বিশ্বাস হচ্ছে না? ওকে ওয়েট।
.
খামের মধ্যের কাগজ টা পড়েই অবাক
নয়নে ও আমাকে প্রশ্ন করে, "এটা
কি?"
- রেজিগনেশন লেটার। অনেক দিন
আগেই লিখে রেখেছি। শুধু সময়ের
অপেক্ষায় ছিলাম। আজ সেই সময়টা
এসে গেছে।
- কিন্তু কেন?
- এর কোনো জবাব নেই। তবে এখন কি
স্বপ্ন দেখতে পারবেন?
- যদি আবারও কোনো ভুল হয়ে যায়?
- চান্স নেই। কারণ আপনার পাশে
আমি আছি।
- মানে?
- মানে বুঝতে হবে না। আপনার নাম টা
যেন কি?
- মৃণালীনি।
- অসম্ভব সুন্দর নাম!
এই প্রথম ওর ঠোঁটের কোণে ফুটে ওঠে
একটা হাসির রেখা।
.
সমাপ্ত
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:৩০
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×