২০০৬ সালে আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্র, তখন আমার খুব কাছের এক বন্ধু প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়ে আবার মেডিকেলে রিএডমিশন দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলো। একই ক্লাশের মেয়ের কাছে প্রত্যাখ্যাত হয়ে সেই ক্লাশেই ক্লাশ করাটা কষ্টকর। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সে প্রিপারেশনের জন্য সব বই, নোট,গাইড নিয়ে আসল যাতে হলে বসেই পড়াশুনা করতে পারে। মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষার ফরমও তুলল। কিন্তু প্রথম ২-৪ দিন পড়াশুনার পরে আবার সিদ্ধান্ত বদল করে আমাদের সাথেই পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল এবং মেডিকেলে পরীক্ষা দেবে না এমনটাই ফাইনাল করল।
যাইহোক, আমি ছিলাম বংগবন্ধু হলের ছাত্র, সে ফজলুল হক হলের ছাত্র। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার আগের রাতে কিছু ছাত্রনেতাদের মাধ্যমে হঠাত বিশ্ববিদ্যালয়ে খবর ছড়িয়ে পড়ল যে প্রশ্নপত্র পাওয়া যাচ্ছে!! কেউ চাইলে ৫০ হাজার টাকার চুক্তিতে নিতে পারে। টাকা প্রশ্ন কমন পড়লে দিবে, নইলে দিতে দিতে হবে না।
যাইহোক লোভনীয় এই অফারটি হলে হলে ছড়িয়ে পড়ায় ভর্তি পরীক্ষার্থী অনেকেই নিয়ে নিল। টাকা যেহেতু পরে দিতে হবে। তবে চুক্তিমত পরীক্ষার হল থেকে বের হলেই ছাত্রনেতারা প্রবেশপত্র নিয়ে নিবে, ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার পরে ফেরত পাবে!!
তো আমার সেই বন্ধুটার যেহেতু ফরম উঠানো ছিলো, তাই সেও অফারটা নিয়ে নিল!! চুক্তিতে রাজি হওয়া ১৭-১৮ জন ছাত্রকে রাতে ফজলুল হক হলের একটা রুমে রাখা হল। তাদের সবার মোবাইল সেট বন্ধ করে রেখে দেয়া হল।
রাত ২ টার দিকে মোবাইল ফোনে প্রশ্নপত্র আসলো। তখন অবশ্য এখনকার মত ফেসবুক ছিলো না। তাদেরকে প্রশ্নগুলো মুখস্থ করানো হল। পরেরদিন ছাত্রনেতারাই তাদের পরীক্ষার হলে নিয়ে গেল।
পরীক্ষার হলে তো তারা অবাক। প্রশ্ন ১০০% কমন!! আমার সেই বন্ধুর কথানুযায়ী সে ইচ্ছা করে ২-৩ টা ভুল করে উত্তর দিয়েছিলো যাতে কেউ ধরতে না পারে!!
প্রেমে প্রত্যাখ্যাত আমার সেই বন্ধুটা এখন ময়মনসিংহ মেডিকেল থেকে পাশ করা ডাক্তার!!!
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৮