বাংলাদেশে বহুল উচ্চারিত শব্দ “মুক্তিযুদ্ধের চেতনা”। কিন্তু কখনো প্রশ্ন করতে পারবেন না, এই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিষয়টা কী? এটা নিয়ে যারা প্রশ্ন করে তারা "রাজাকার"। অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে আপনি শুধু জাবর কাটতে পারবেন বুঝতে চাইতে পারবেন না, কারণ সেটা ঐশ্বরিক। ঠিক এভাবেই বুদ্ধিজীবীরা এটাকে সংজ্ঞায়িত করতে চান।
মুক্তিযুদ্ধ, একাত্তর - শিহরণ জাগানিয়া অপরাজেয় একেকটি শক্তি। এর সাথে জুড়ে আছে পুরো মাণচিত্রের বিজয়স্মারক, সংগ্রাম মুখর কঠিন সময়ের কতকথা। আছে গৌরবের সূর্যাধ্যায়। আছে না বলা অন্ধকারের ভীবৎসতা। আছে তাজা খুনের দীপ্ত নজরানা। এসব নিয়েই বাঙালীর উনিশশো একাত্তর, শৃঙ্খল ভাঙার মুক্তিযুদ্ধ।
রাজনীতিতে একাত্তর ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে কী পরিমাণে যে বাণিজ্যিক করা হয়েছে, তা বলে শেষ করার নয়। রক্ত, ইজ্জত আর প্রাণের বিনিময়ে জেতা মুক্তিযুদ্ধ রাজনীতির বিশাল এক বাজার। রাজনীতির (অনেক) লাঠিয়ালরা সব কিছুতে এই অর্জন নিয়ে বাণিজ্যর পসরা সাজান। ‘চেতনার ব্যবসা’য় মার দিতে চান অন্যদের। যেকোন কিছুকে ‘মুক্তিযুদ্ধের’ বিরোধিতায় সংজ্ঞায়িত করা এই বাণিজ্যের সাধারণ একটি নমুনা। তারা নিজেদের বিরুদ্ধে যায়, এমন সব কিছুকে বিবেচনা ছাড়াই মুক্তিযুদ্ধের বিরুধী, চেতনার পরিপন্থী বলে বাজার জয়ের চেষ্টা করেন। ঘায়েল করতে চান বিরোধী দলকে । এটা দিনে দিনে এতোই মারাত্মক আকার ধারণ করেছে যে, তা প্রাথমিক বিচার-বিবেচনাকেও লজ্জিত করে। আহত ও ম্লান করে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ ও মর্মস্পৃহাকে।
লেবু বেশি কচলালে যেমন তিতা হয়ে যায় , তেমনি অনবরত মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বুলি খোদ আওয়ামিলীগেরই অনেককেই বিরক্ত করে তুলেছে। সাম্প্রতিক সময়ে তাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ব্যবসার বাজার ভালো যাচ্ছে না ।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনার একচেটিয়া ব্যবসায় ব্যর্থ হয়ে আওয়ামী লীগ এখন জঙ্গিবাদের ফেরিওয়ালা সেজেছে। আন্তর্জাতিক মহলে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে জঙ্গিবাদের দোসর সাব্যস্ত করার জন্য আইএস, আল কায়দা, তালেবান, বুকোহারাম, আন্ডারগ্রাউন্ড পার্টি ইত্যাদির সাথে তুলনা করার কোরাশ গাওয়া অব্যাহত রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী ও তার নেতা-মন্ত্রীরা।
বেশ কিছু ব্লগার খুন হলেও বিচার হয়নি একটিরও। শুধুমাত্র সংবাদ সম্মেলনে দায়সারা দোষ চাপিয়ে গেছে অগ্গাত জঙ্গিদের উপরে। এখন আন্তর্জাতিক মহলে সাড়া ফেলতে বিদেশী নাগরিক খুন হলেও তার কোন বিচার না করে পূর্বের মতই দোষ চাপানো হচ্ছে নাম না জানা জঙ্গিদের উপরে ।
যদি ধরেও নেই যে জঙ্গিরা খুন করেছে, তাদের একটাও উপযুক্ত তথ্য-প্রমান সহ কেন আজো গ্রেপ্তার হয়নি ? ব্লগারসহ বিদেশী খুনিদের গ্রেপ্তারে অনিচ্ছুক ক্ষমতাশীনদের দিকেই এখন তাই সন্দেহের তীর !!
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১০:২৯