somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোয়েটিক গদ্য | দুটি স্কেচ

১২ ই জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এরা ও তাঁরা
যখন তখন চা খাওয়ার বদস্বভাব আমার আছে। হ্যাঁ, বদস্বভাব। দিন রাতের ঠিক থাকেনা, যখন ইচ্ছে যায় তখনই চা গিলে ফেলি আমি। আমার বাসায় থার্মোক্স ভর্তি করে চা থাকে সবসময়।
সাংবাদিক হাসিমুখে বলল- একজন চিত্রকরের জন্য খুব রিডিকুলাস হয়ে গেলোনা ব্যাপারটা?
বোতলভরা শিভাস রিগাল নিয়ে বসে থাকলে কি ব্যাপারটা গুরুগম্ভির আর আর্টিস্টিক হতো? শিল্পি পালটা প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন সাংবাদিকের দিকে।
না, ঠিক সেটা আমি মিন করিনি।
চা খাই, শিভাস রিগাল গিলিনা। এইজন্য তুমি আবার আমাকে অতি উন্নত চরিত্রের ভেবে বসোনা। আদতে আমি কি খাচ্ছি, তার সাথে চরিত্রের সংশ্রব নেই।
আচ্ছা? আপনি নিজেকে দুশ্চরিত্র ভাবেন নাকি?
কি ভাবি ওটা পরে বলছি। তার আগে বলো- চরিত্র বলতে তুমি নিজে কি বোঝ?
সাংবাদিকের হঠাৎ মনে হলো- শিল্পিকে প্রশ্ন করে লাভ নেই। বরং তাঁর শিল্পকর্মে ডুব দেওয়া যাক। ওইযে ওই ছবিটা- চাঁদের আলতে নুয়ে পড়া এক পথচারি আর তার ছায়া। কালো পিচের উপর রুপালি জোছনার ধারা। ওই ধারায় ডুব দিয়েই অনেক প্রশ্নের জবাব মিলে যায়, সেটাই তো লাভজনক।
ঠিক সে রাত্রিতেই শিল্পি নতুন একটা ছবি আঁকলেন। একজন লোক দৌড়ুচ্ছে, তার আশে পাশে ভিঞ্চির মোনালিসা, দালি’র দ্যা লাস্ট চাইল্ড কিংবা ভ্যানগঘের স্ট্যারি নাইট কিংবা জয়নুলের ম্যাডোনা ৪৩। কিন্তু সেসবে লোকটার খেয়াল নেই। তার দৃষ্টি কিছু পদচিহ্নের দিকে...
সাংবাদিক পরদিন রিপোর্টে লিখলো- মহৎ শিল্পের পিছনে সবচেয়ে বড় ভুমিকা রাখে মহৎ শিল্প। শিল্পি নন। তিনি মাধ্যম মাত্র। অর্থাৎ আমরা স্মরণ করবো সুইস আলকেমিস্ট প্যারাসেলসুসের সেই অমোঘ বাণী- “যাদুকে বলা হয় মায়াবিদ্যা। মায়াবিদ্যা হচ্ছে বিশেষ ধরণের জ্ঞান। অথচ যাদুতে জ্ঞান বলে কিছু নেই।“

গল্পকার
গভীর অনুরাগ ব্যপারটা বুঝিস?
কবি সাহেবের কথা শুনে আমি হাসলাম। বললাম-
জ্বিনা জনাব। এসব অনুরাগ টনুরাগ তেমন বুঝিনা আমি। তবে আপনি যদি ব্যাখ্যা করার কসরত করেন, আমি বোঝার চেষ্টা করতে পারি।
আমার কবি বন্ধু রওশন গভীর অনুরাগের ব্যখ্যায় গেলনা। তার সকল চিন্তা ভাবনার ক্ষণস্থায়িত্বের মত অনুরাগের গভীরতাও সম্ভবত স্থায়িত্ব হারাল।
জিজ্ঞাস করলাম- আমার কথায় কিছু মনে করলি নাতো?
রওশন গম্ভীর স্বরে বলে উঠল- না, কিছু মনে করিনি..

আমি নিশ্চিন্ত হতে পারলাম না। তার গলার স্বরে কিছু একটা ছিল। আমি কিছু বলে ওঠার আগেই রওশন চায়ের দোকানের বেঞ্চটা থেকে উঠে রাস্তায় নেমে হাঁটতে শুরু করলো।
খুব একটা অবাক হলাম তা নয়। ও বেচারা একটু এরকমই। নির্ঘাত কোন বিষয় নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে। কবিদের চেতনা যে কত দ্রুত গঙ্গা থেকে যমুনায় চলে যেতে পারে, সে বিষয় আমাদের আম আদমিদের বোধগম্য হবার কথা নয়।
রওশন আজ রাস্তার উল্টো পাশ ধরে হাঁটছে। আশ্চর্য্য বিপদের একটা গন্ধ পেলাম আমি! ফাঁকা রাস্তা বলেই কি? ওর গতীটা কেমন যেন এলোমেলো!
জামিল আকুল গলায় বলল- থামলেন কেন? কি হল তারপর? কি হল?
বহুলোকের কাছে বহুবার করে বলা আমার এই গল্পটির নতুন শ্রোতা জামিল। আমার নতুন মেসমেট। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকোলজির ছাত্র।
আমি বললাম- এত অস্থির কেন হে? মনোবিদ হবে তুমি একদিন, অথচ অস্থিরতা পকেটে নিয়ে হাঁটো?
জামিল মোটেও গায়ে মাখলোনা আমার কথা। উহ জাহান ভাই, বলেন না কি হল তারপর? গল্পটা শেষ করেন না!
বাকিটা শুনবেই তাহলে তুমি? কি আর করা তবে শোন...

কবি সাহেব যে বিপদে পড়বে আমি প্রায় নিশ্চিত। দৌড়ে গেলাম তাকে রাস্তা থেকে টেনে সরিয়ে আনবো। ওমা! তাকে টেনে সরালাম ঠিকই, এর মধ্যে একটা ছুটন্ত কাভার্ড ভ্যান কোত্থেকে এসে, কিভাবে আমায় ধরাশায়ী করে আমার বাঁ পা টার ওপর দিয়ে চলে গেলো কে যানে!
উদাসী কবি সাহেব কে বাঁচাতে গিয়ে আমি নিজেই বেঁচে গেলাম সব কাজ কর্ম থেকে। আজীবনের জন্য! হাহা হা.. হাহাহা..

হাসতে হাসতে দেখলাম জামিল আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। ওর অবাক মুখ দেখে আমার এত আনন্দ হচ্ছে! অকারণ সুখ। আমি হাঁসির তোড়টা আরও উচ্চ মার্গ্যে তুলে দিলাম।


সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:২৪
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছায়ানটের ‘বটমূল’ নামকরণ নিয়ে মৌলবাদীদের ব্যঙ্গোক্তি

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



পহেলা বৈশাখ পালনের বিরোধীতাকারী কূপমণ্ডুক মৌলবাদীগোষ্ঠী তাদের ফেইসবুক পেইজগুলোতে এই ফটোকার্ডটি পোস্ট করে ব্যঙ্গোক্তি, হাসাহাসি করছে। কেন করছে? এতদিনে তারা উদঘাটন করতে পেরেছে রমনার যে বৃক্ষতলায় ছায়ানটের বর্ষবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বয়কটের সাথে ধর্মের সম্পর্কে নাই, আছে সম্পর্ক ব্যবসার।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৫০


ভারতীয় প্রোডাক্ট বয়কটটা আসলে মুখ্য না, তারা চায় সব প্রোডাক্ট বয়কট করে শুধু তাদের নতুন প্রোডাক্ট দিয়ে বাজার দখলে নিতে। তাই তারা দেশীয় প্রতিষ্ঠিত ড্রিংককেও বয়কট করছে। কোকাকোলা, সেভেন আপ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×