somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্যারাম খেলার সাথে প্রেমিকা বদল

২৩ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ২:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সময়টা ২০০৬ এর নভেম্বর বা ডিসেম্বর হবে সূর্য বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে উঠে পড়েছে মানে এক বড় ভাইয়ের সিটে উঠে বসেছে। সূর্যের মেসজীবন খুব একটা স্থায়ী হয়নি ব্যাপারটা এমন যে কারনে বেকারনে বিভিন্ন সময় ইচ্ছা না থাকা সত্তেও মেস পরিবর্তন করতে হয়েছে। প্রথমে ছিল গল্লামারী ব্যাংক কলোনিতে চল্লিশ নাম্বার বাসার হয় তলায়। বাড়িওয়ালার মেয়ের সাথে বেদনাবিধুর ঘটনার পর এক দিনের নোটিশে বাড়ি ছেড়ে দেয়। এর পর নিরালা আবাসিকের বাইশ নাম্বার রোডের চারশত সত্তর নাম্বার বাসার দ্বিতীয় তলায় এর কিছুদিন পর দুইশত পঁয়তাল্লিশ নম্বর বাসায়। কোন বাসায় খুব বেশি দিন স্থায়ী হতে পারেনি, নানা জায়গা ঘুরে ছাত্র হল নামে এক বিশেষ হলের তয় তলায় এক ভাইয়ের কাছে আশ্রয় মেলে। হলে নানাবিধ সুবিধা না আছে বাড়িওয়ালার ঝামেলা না আছে পানি বিল, বিদ্যুৎ বিল এর ঝামেলা সাথে আছে অল্প টাকায় খাওয়া দাওয়া করার সুবিধা। সূর্য নিজে হলে উঠে ওর এক বন্ধুকে বিছানা শেয়ারিং চুক্তিতে ওর সাথে তুলে নিল। কারন বিনা যেমন কার্য হয় না তেমন দাদাকে হলে নিয়ে আসার পেছনে কারন ছিল আর সেটা হল দাদা মেধাবী ছাত্র এতে করে সূর্যের পড়ালেখার একটা সুবিধা হবে এবং পরে দাদা অন্য হলে সিট পেয়ে গেলে সূর্য আর দাদা চলে যাবে। এর বাইরেও দাদার সাথে ওর আলাদা রকমের বোঝাপড়া ছিল।
দাদা ছিল অসম্ভব মেধাবী পরীক্ষার আগে সূর্যকে ঘণ্টা খানেক সবক দিত আর সূর্য তা সম্বল করেই পরীক্ষা দিয়ে চলে আসত এবং অনেকের চেয়ে ভাল করত। এরকম ঘটনাও ঘটেছে যে দাদা উত্তর মনে করতে পারছে না সূর্য ইশারায় দাদাকে উত্তর ধরিয়ে দিয়েছে আর দাদা সমানে লিখে চলেছে সাথে সূর্য শতকরা নব্বই ভাগ কপি করে ফেলছে। আবার কিছু প্রশ্নের উত্তর দুজন মিলেমিশে লিখছে। সব কিছু চলে এক নিখুঁত ইশারা ও সংকেতের ভিত্তিতে পরীক্ষক তো অনেক দূরের ব্যাপার পাশে বসে থাকা অন্য বিভাগের ছেলে মেয়েরাও বুঝতে পারত না কিভাবে কি হচ্ছে। সূর্য আঙ্গুলে করে বিশেষ ভংগিতে পেন্সিল নাড়াচাড়া করছে আর সবাই ভাবছে ব্যাপারটা এমনি এমনি আর দাদা ঠিক বুঝতে পারছে এটা এক প্রকার রসায়নিক সংকেত। এই হত তাদের মধ্যকার বোঝাপড়ার ধরন।
সন্ধ্যার সময় দাদা আর সূর্য প্রায় নিয়ম করে ক্যারামা খেলা শুরু করল একসময় ব্যাপারটা নেশায় পরিনত হয়ে গেল। শীতের সময় প্রতিদিন সন্ধ্যায় কিছু সময় ব্যাডমিন্টন খেলে ওরা চলে আসে হলের টিভিরুমের পাশে ক্যারাম টেবিল গুলোর পাশে এর পর কোন বোর্ড ফাকা হলে সেটা নিয়ে দুজনে খেলা শুরু করে। কে কাকে কিভাবে গেম দিতে পারে তার এক প্রদর্শনী চলে প্রতিদন রুটিন করে সাথে থাকে নানা বয়সী দর্শক। কিছুদিন এভাবে খেলাধূলা চলার দেখা গেল সূর্য ব্যাডমিন্টন বেশ ভালোভাবেই রপ্ত করে ফেলেছে এবং নিয়মিত ভাবে দাদাকে সিংগেলে হারিয়ে দিচ্ছে। ডাবলসেও দাদা নানা প্রকার খেলোয়াড় নিয়ে দাদা সুবিধা করতে পারছে না কারন দাদার কিছু দুর্বলতা সূর্য খুব ভাল করে জানে এর দাদা যত ভালো খেলোয়াড় নিয়েই আসুক না কেন সূর্য কিন্তু দাদার থেকেই পয়েন্ট নিয়ে ডাবলসেও দাদার দলকে হারিয়ে দেয়। ব্যাট বলদিয়ে বা পাশ বদল করেও দাদা তেমন সুবিধা করতে পারছিল না। র‍্যাকেট কোর্টের নিয়মিত হারের কাহিনী কোর্ট থেকে বের হয়ে মানুষের মুখে মুখে হয়ে গেল। এনিয়ে দাদার মনে একটা আক্ষেপ ছিল কি করে সূর্যের অত্যাচার থেকে বাঁচা যায়। দাদা নানা উপায় নিয়ে চিন্তা করে কয়েকদিন পার করার পর সিদ্ধান্ত নিল সূর্য কে জব্দ করার সবথেকে ভাল উপায় হচ্ছে সূর্য কে ক্যারাম খেলায় হারিয়ে দেওয়া। দাদা বরাবরই ক্যারামে পারদর্শী ছিল, প্রতিটা শট নেবার আগে ২ মিনিট ধরে পকেটের দিকে তাক করে থাকত এবং জটিল গুটি কে জাদুকরের মত পকেট করে ফেলে। সূর্য এতটা পারদর্শী না ও সরলভাবে গুটি মারে তাতে যায় বা না যায় সেটা অন্য ব্যাপার। সূর্যের খেলার ধরন হল দাদাকে যতটা দেরি করিয়ে দেওয়া যায় এবং সেই ফাঁকে কিছু গুটি কমিয়ে ফেলা। সূর্য অধিকাংশ সময় বিপরীত পয়েন্ট পায় মানে রেড নামের লাল গুটি পকেট করে দাদা আর সূর্য এই ফাঁকে নিজের গুটি শেষ করে। এই হল দুজনের খেলার ধরন।
দাদা এক দিন খেলার সময় বলল সূর্য এভাবে হয় না আমি আর তোর মত আনাড়ি খেলোয়াড়ের সাথে খেলব না দাদা ভাল করেই জানত যে সূর্য কে এক আধটু অপমান করলেই কাজ হবে। সূর্য বলল আচ্ছা তাহলে হয়ে যাক বাজি দেখি কে জেতে ক্যারামে। দাদা তো এই তালেই ছিল, দাদা সাথে সাথে বলল আচ্ছা এক হাজার টাকা বাজি সাথে প্রেমিকা বদল। দাদার কোন প্রেমিকা নেই তাই হারলে কেবল টাকার উপর দিয়েই যাবে আর সূর্য হারলে টাকা সাথে প্রেমিকা মানে আম ছালা সবই যাবে। প্রশ্ন যেখানে সন্মানের সেখানে টাকা বা প্রেমিকা কোনটাই বড় না। সূর্যের কাছে মান সন্মানই সব থেকে বড়। সূর্য বলল উত্তম প্রস্তাব আমি জানাচ্ছি খেলার ধরন এবং দিন তারিখ। এই বলে সূর্য চলল আলেক এর চায়ের দোকানে। দোকানে যেয়ে টাটকা লেবু চা সাথে একটা সিগারেট টেনে আবার দাদার কাছে ফিরে আসল, এসে বলল দাদা আমি রাজি তোমার প্রস্তাবে খেলা হবে আগামী শুক্রবার নামাজের পর বিরানি খেয়ে সাথে আমার কিছু শর্ত তোমাকে মানতে হবে।
১) খেলায় আমার পক্ষে ৮ জন দর্শক থাকবে এর মাঝে ২ জন মেয়ে থাকবে
২) টাকা আগেই দিয়ে দিতে হবে রেফারির কাছে
৩) খেলা চলাকালীন সময়ে পর্যাপ্ত পরিমাণ লেবু চা সিগারেট এর ব্যবস্থা থাকতে হবে
৪) ঐতিহাসিক ক্যারাম খেলার ভিডিও ধারন করে রাখতে হবে
৫) খেলা হবে তিন বার
৬) খেলায় যে হারবে সে আর কোনদিন ক্যারাম খেলবে না
৭) খেলা হবে বাইরে যাতে ছেলে মেয়ে সবাই খেলা দেখতে পারে

দাদা দেখল যে শর্ত গুলো এমন কঠিন কিছু না। দাদা মনে মনে ভাবল শর্ত যাই হোক না কেন সূর্য খেলোয়াড় ভালো না। কিন্তু কেবল খেলা না প্রভাবক ও যে খেলার ধরন ও গতি পথ বদলে দেয় তা দাদার জানা ছিল না। সূর্য হিসাব করে দেখল ওর হাতে দুই দিন সময় আছে এর মাঝে অনেক বিষয় আছে যে সব ব্যাপারে যত্ন নিতে হবে। বুধবার রাতেই সূর্য কাজে নেমে পড়ল সারা হলে ও দোকানে পোস্টার ও ফেস্টুন মেরে দিল যার শিরোনাম ছিল “ঐতিহাসিক ক্যারাম ফেস্টিভ্যাল” । নানা ফেস্টুন আর পোস্টারের বদৌলতে দশ গ্রামের মানুষ জেনে গেল আগামী শুক্রবার এক ঐতিহাসিক ক্যারাম খেলা হতে যাচ্ছে যাএ এক পক্ষে অদক্ষ সূর্য আর অন্য পক্ষে বিশিষ্ট তাক বিদ দাদা। দাদা, আংকেল, মহাজ্ঞানী কিহি সাথে হবিটরা বুঝে উঠতে পারছেনা সূর্য কেন প্রচারণা চালাচ্ছে? ওদের মতে সূর্যের উচিত দুদিন ভাল করে প্রাকটিস করা যাতে করে অন্তত মুখ রক্ষা করা যায়। কিন্তু ওই যে সবাই বলে সূর্য যে কি করবে তা আগে থেকে কিছুতেই বলা বা বোঝা যাই না।

বৃহস্পতি বার সূর্য সকালে ঘুম থেকে উঠেই চলল দুই হাজার টাকা যোগাড় করতে এর মধ্যে ফোন করে ট্যাংরা, জ্ঞানী, হারুন হাকশি কে দাওয়াত দিয়েছে আগামীকাল খেলা দেখতে আসার জন্য। এদিকে সূর্যের হয়ে প্রেচারের দায়িত্ব নিয়েছে কয়লা নামের ওর এক বন্ধু হাত মাইক নিয়ে বলে বেড়াচ্ছে ভাই সব ভাই সব ঐতিহাসিক এক খেলা হবে যেখানে হাজার টাকার সাথে প্রেমিকা বদল হবে, খাওয়া দাওয়া হবে ফুর্তি হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। এসব দেখে দাদা মানসিক একটা চাপে পড়ে যাচ্ছে কারন সূর্য এত প্রচারণা চালাচ্ছে নানা জায়গা থেকে মানুষ আসবে আর সে খেলায় যদি হেরে যায় তাহলে মান সন্মান আর এক বিন্দু ও থাকবে না আর সূর্য ও যদি হেরে যায় তাহলে হো হো করে হেসে বলবে দাদা এই নে আমার প্রেমিকা আর দুই হাজার টাকা আমি নাকে খত দিলাম আর কোন দিন ক্যারাম খেলব না কিন্তু দাদার ব্যাপারটা ভিন্ন কারন সবাই জানে সেই চ্যালেঞ্জ দিয়েছে সূর্যকে আর তার ভাল খেলোয়াড় হিসাবে সুনাম তো আছেই। সূর্য ওর দুই বান্ধবী তানিয়া আর সামিয়াকে অনেক বলে কয়ে রাজি করিয়েছে খেলার সময় থাকতে, আর দুজনকে একটু সেভাবে সেজে আসতে বলেছে। দাদা এদিকে দারুনভাবে প্রাকটিস করে চলেছে, সন্ধ্যার পর থেকে রাত এগারোটা অবধি খেলায় মত্ত, প্রতক্ষদর্শীর বর্ননা মতে দাদা নাকি তিন বারেই এক বোর্ডের সব গুটি পকেট করে দিচ্ছে। দাদা স্টাইক ধরে ইনসুইং, আউটসুইং, হালকা টাচ, কাট মার যা কিছু আছে সব প্রাকটিস করে হাত পাকিয়ে নিচ্ছে। সূর্য সব শুনে বলল সময় আসুক দেখা যাবে। সূর্যের পকেটে টাকা আছে হাজার খানেক বা তার থেকে কিছু কম টাকা আছে লাগবে অন্তত দেড় হাজার। সূর্য তখন প্রেম করত তাসনুভা নামের এক মোটাসোটা এক মেয়ের সাথে। লালনগীতি খুব ভাল গাই মেয়েটা আর এই জন্যই মেয়েটার প্রেমে মজেছে দেখা যাক কয়দিন যাই। সূর্য ফোন করে তাকে জানিয়ে দিল তার কর্মকান্ড এবং দাওয়াত দিয়ে দিল। এছাড়া সে দাওয়াত করল মাসুদ ভাইকে, ওর এলাকার ছোটন ভাইকে। সূর্য বাড়িতে ফোন করে ওর বাবা কে বলল দেখ মান সন্মানের ব্যাপারে একটা পরীক্ষা দিতে যাচ্ছি আগামী কাল হাজার দুয়েক টাকা লাগবে বাসে করে পাঠিয়ে দিও। ওর বাবা বেশি কিছু বলল না তবে কন্ঠস্বর থেকে ওর বাবা বুঝল ব্যাপারটা গুরুত্বপূর্ন তাই দেরি না করে এস এ পরিবহনের মাধ্যমে সন্ধ্যার দিকেই পাঠিয়ে দিল। সুর্য রাত নয়টার দিকে টাকা তুলে নিয়ে আসল। রাতে একটু হালকা পানি আর কিছুটা সবজি খেয়ে নিল এর পর মধুর এক নেশায় ঘন্টাখানেক কাটিয়ে একা হাটতে বের হল। হাটছে সবাই কিছুটা দুরত্ব বজায় রেখে হারুন হাকশি, জ্ঞানী ও হবিট, সূর্য দশ বারোটা গুটি নিয়ে নিরিখ পরীক্ষা করছে গাছে মেরে। জ্ঞানী বলল মামু তুমি গাছে না মেরে লাভ নেই পকেটে ফেলতে হবে। হবিট বলল ভাই বড় গর্তে জিনিস ফেলে অভ্যস্ত ছোট পকেট রোচে না। এই কথা শোনার পর সবাই হো হো করে হেসে উঠল সি হাসি অন্ধকারের নিস্তব্ধতাকে ভেঙ্গে খান খান করে দিল। এদিকে গোয়েন্দা বাহিনী খবর দিল দাদা ক্যারামের বোর্ডে হাত পাকাচ্ছে। সূর্য দাদাকে ফোন দিয়ে বলল দাদা প্রেমিকা জোগাড় কর তা না হলে কিন্তু পরে তোমার বউ নিয়ে আসব আর আমার প্রেমিকাও কিন্তু খেলার সময় থাকবে হেরে গেলে তোমারে দিয়ে দিব। দাদা কি বলবে কিছু বুঝে উঠতে না পেরে কেবল বলল সূর্য আগে তুই জিতে দেখা তার পর। সব কিছুর পর দাদা যে একটা মানসিক চাপের মধ্যে আছে তা তার নানবিধ কর্মকান্ডের মাধ্যমে প্রকাশ পেয়ে পেতে থাকল। দাদার পক্ষে দর্শক হিসাবে উজ্জ্বল, রাঘু, নিখিলেশ, আংকেল, সিমিন, কালাম, সহ আরো কিছু বন্ধু বান্ধবী থাকবে। ওদের হাতে থাকবে দাদার বিভিন্ন ভঙ্গিমায় গুটি পকেট করার কালার ছবি।

শুক্রবার সকাল আটটা, সূর্য ঘুম থেকে উঠে দেখল তাসনুভার মিসকল। তাসনুভাকে ফোন দিতে দিতে হাত মুখে ধুয়ে কাপড় চোপড় পরে বাইওরে নাস্তার জন্য বের হল। তাসনুভা আদুরে ক্ষোভ মিশ্রিত কণ্ঠে বলল আজ যদি হেরে যাও তাহলে তো ওই দাদার সাথেই আমার প্রেম করতে হবে, আমি দাদার সাথে প্রেম করতে রাজি হওয়া না হওয়া আমার ব্যাপার কিন্তু তুমি তো আর আমার সাথে প্রেম করতে পারবে না। সূর্য সব শুনে বলল তোমাকে বাদ দিয়ে তোমার জমজ বোন এর সাথে প্রেম করব হা হা হা হা হা হা। সব খানে সাজ সাজ রব দাদা সকালে উঠেই পুজো সেরে নিয়েছে, গোয়েন্দা বালক তথ্য দিয়ে গেল যে দাদা পুজোর সময় স্টাইক ও নাকি পুজো দিয়ে সিদ্ধ করে নিয়েছে, সূর্য বলল বাপরে বাপ এতো কালো জাদুরে আমি পারব কি করে তোরা আমারে ক্ষমা করে দে।
রঙিন সামিয়ানার নিচে বড় ক্যারাম বোর্ড সাদা আর কালো গুটি সব নতুন, একজন বরিক নিয়ে বোর্ডের উপর ভাল করে ঘষে চলেছে। বোর্ডের দুপাশে পঞ্চাশ পঞ্চাশ একশত জনের আসন বিন্যাস করা। একদল সূর্য সামর্থক গ্রুপ অন্য দল দাদা সামর্থক গোষ্ঠী। দাদা সামর্থক প্রায় সবাই উপস্থিত কেবল আংকেল ছাড়া সবার হাতে দাদার ছবি। একটু পরে দাদা এসেই বলল দর্শক দেখলেই বোঝা যায় ম্যাচের কি হবে। সূর্য ‌জনা দশেক মানুষ নিয়ে এসে হাজির হল এর মধ্যে তাস্নুভা, তানিয়া, সামিয়া, জ্ঞানী, হারুন হাকশি উল্লেখযোগ্য। নামাজ এর পর সবাই খাওয়া দাওয়া করে কিছু ক্ষন বিশ্রাম নিয়ে ফিরে এল সামিয়ানার তলে। আলেক্স এর লেবু মিশানো চা পরিবেশোন চলছে সাথে মাইকে গান এবং সেই সাথে চলছে রান্না বান্নার মশলার আয়োজন। দাদা বলল সূর্য এসব কি? সূর্য বলল আমি স্বপ্নে দেখেছি আমি জিতব আর জিতলে চার হাজার টাকা পাব আর তাই দিয়ে এই আয়োজনের খরচ মেটাবো। রেফারি হিসাবে দায়িত্ব দেওয়া হল সবার পরিচিত কবি কে।

তানিয়া ও সামিয়ার সাথে সূর্যের আলাদা রকমের একটা বন্ধুত্ব আছে। আজ তাসনুভাকে আসতে বলার কারন হল ওকে বুঝিয়ে দেওয়া যে সূর্যের নিজের একটা আলাদা জীবন আছে প্রেম ভালবাসা ছাড়া সেখানে বন্ধু আছে, আছে বান্ধবী, আছে ফাজলামি ও নানা রঙের মানুষ। সামিয়া পড়েছে কালো রঙের স্যালোয়ার কামিজ সাথে কালো সানগ্লাস দুপুরের রোদে সামিয়ানার নিচে বসে তরমুজের একটা শরবত নিয়ে পাইপ দিয়ে টানছে। সামিয়ার ঠেলে বেরিয়ে আসা যৌবন দুপুরের রোদের তীব্রতাকে হার মানিয়ে দিচ্ছে, ও সব সময় টাইট পরে আজ ইচ্ছা করেই ভি কাট গলার জামা পড়েছে তার ভিতর থেকে ঠেসে রাখা যৌবন উকি দিচ্ছে। দর্শকদের কেউ কেউ পায়ের দু আঙ্গুলে ভর দিয়ে উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে সেই যৌবনের ঘ্রান নেবার চেষ্টা করছে। তানিয়াও কম না সে এসেছে চুড়িদার পাজামার সাথে শর্ট স্লিভলেস জামা পরে ওর টকটকে হাতের দিকেই মানুষ হা করে তাকিয়ে আছে। ছেলেরা চা সিগারেট টানছে, চা খাচ্ছে কেউ বা মোবাইল ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলছে । তাসনুভা এসেছে সাধারন কিন্তু অপূর্ব এক সাথে সেজে, খোপায় জবা ফুল হাতে মেহেদি, আর মেরুন রঙের কামিজ সাথে কালো স্যালোয়ার এবং ওড়নায় মুখ ঢাকা।

দুপুর তিনটা বাজে বোর্ড ঘষুনি বলল সূর্য ভাই এবং দাদা ভাই বোর্ডে বরিক গেলে গেছে এখন শুরু করেন। রেফারি কবি এসে বোর্ডে গুটি সাজিয়ে টস করে বলল দাদা আপনি প্রথমে হিট করবেন এবং সেই সাথে খেলার নিয়ম কানুন সুন্দর করে দুপক্ষকে বুঝিয়ে দিল আন্তর্জাতিক নিয়মে মেনে ২৯ পয়েন্টের খেলা, ২৪ পয়েন্ট পাবার পর আর রেড পয়েন্ট যোগ হবে না ও বোর্ড গেম থাকবে। দাদা সাদা শার্ট কালো প্যান্ট কালো সু আর কালো গ্লাস হাতে কালো ঘড়ি পরে স্টাইকার টা নিয়ে শূন্যে ছুড়ে দিয়ে কসরত করছে। সূর্য বলল দাদা শুরু কর। দাদা বোর্ডে হাত দিয়ে কি যেন মন্ত্র পড়ে নিল সাথে একতু বরিক নিয়ে আলতো করে স্টাইকারে ঘষে নিয়ে বোর্ডে জায়গা মত রেখে বাজপাখির মত নিরিখ করতে শুরু করল। আশেপাশের সবাই দাদা দাদা দাদা মানবে না কোন বাধা, দাদা দাদা, দাদা দাদা মানবে না বাধা বলে চিক্কুর দিতে লাগল সূর্যের কপালে একটু একটু ঘাম। সূর্য মনে মনে ভাবছে দাদা চাপে পড়লে ভাল খেলতে পারে না এটাই আজ ওর ভরসা। সূর্যের সকল পূর্বানুমান কে মিথ্যা করে দিয়ে ৬৫ ডিগ্রী এঙ্গেলে হালকা বাতাস কাটা একটা জোরালো শট নিল একটা কালো গুটি বের না হয়ে তিন পকেটে তিনটা সাদা গুটি ঠিক মত চলে গেল যারা দর্শক ছিল তারা একরকম হতভম্ব হয়ে দেখল দাদা পর পর আরো তিনটা গুটি পকেট করে দিয়ে রেড ও হাপিশ করে দিল। সূর্য মনে মনে প্রমাদ গুনলো আর ভাবলো শালা কি কালো জাদু করেছে না ওর জায়গায় ভুতে খেলতে বসেছে আজ। রেড কাভার দেওয়া হচ্ছে দাদার জন্য এক টেকনিক্যাল সমস্যা খুব জটিল গুটির মধ্যে থেকে সে কাভার দেয় তিনটা সহজ গুটির মধ্য থেকে চেষ্টা করল কিন্তু পেরে উঠল না। সূর্য নিজের প্রথম শটে কিছু কালো গুটি ও রেড কে নিজের কাছে টেনে আনলো দাদার রেড পকেটস্ত করার কাজে দেরি করিয়ে দেওয়ায় যার মূল উদ্দেশ্য। দাদা তার মুস্নিয়ানা খাটিয়ে রেড বের করে নিয়ে গেল সূর্য হা করে দেখল কাভার ও হয়ে গেল। দাদার দুইটা সাদা সূর্যের নয়টা কালো বোর্ডে ঝিকমিক করছে এমন সময় তানিয়ে উঠে এসে বলল দেখিতো কেমন খেলা চলছে সূর্য বলল খেলছে দাদা আর আমি খেলিতো হচ্ছিরে। তানিয়া বলল তাইতো দেখছি দাদার হাতের কি মাইর রে বাবা। দাদা এমনিতে মেয়েদের থেকে দূরে থেকে আর মেয়ে কাছে এলে নার্ভাস হয়ে যায়। দাদা এবার এর শট টা জোরালো ছিল যে গুটি পকেট থেকে লাফ দিয়ে আবার বোর্ডে চলে এসেছে। দাদা বলল সমস্যা নেই সূর্য প্রেমিকা কিন্তু আমার আজ সন্ধ্যা থেকে তাসনুভার হাত কিন্তু আমিই ধরে থাকব সূর্য যেন চিন্তায় সেই প্রাগঐতিহাসিক সময়ে চলে গেল যেখানে কিছুর বিনিময় বউ বা প্রেমিকা দিয়ে দিতে হত। স্টাইক নিয়ে খুব ধীর ভাবে একটা শট নিয়ে একটা দুর্বল শর্ট নিয়ে একটা গুটি ফেলে দিয়ে বলল যাক খাতা তো খোলা হল। এর পর দাদা আর সুযোগ দিল না সূর্য অন্তত এবার নিজেকে বোর্ড গেম থেকে নিজেকে রক্ষা করল। দাদা ১৩ আর সূর্য শুন্য পয়েন্ট নিয়ে খেলা শেষ করল। পরের বোর্ডে সূর্য প্রথমে হিট করেই একটা সাদা একটা কালো ফেলে দিল। এর পর দাদার মত এমন জোরালা শট নিল যে স্টাইক বোর্ড থেকে বের হয়ে শূন্যে উড়ে গিয়ে আংকেল এর মুখের সিগারেট এ আঘাত করল। এ দৃশ্য যদি ক্যামেরা বন্দি করা যেত তাহলে নিশ্চিত ভাইরাল হয়ে যেত এখনকার সময়ে। যা হোক এ নিয়ে হাসাহাসি কম হল না। দাদা আর তার সামর্থক গোষ্ঠী বলল আগে খেলত ধানের মাঠে এখন জাতে ওঠার চেষ্টায় আছে তাই এমন শট। এবারো দাদা রেড কভার দিয়ে দিল সূর্য সবাইকে অবাক করে দিয়ে তিনবার এর মাথায় নিজের সব গুটি ফেলে দিয়ে বলল দাদা ৫ পয়েন্ট নিয়ে নিলাম এত সহজে প্রেমিকা দেব না। দাদা পরের বোর্ডে আবার বার পয়েন্ট নিয়ে ২৫ এ ন নিয়ে সূর্য কে বলল নতুন প্রেমিকার খোজ করো বলেই তাসনুভার দিকে হায়েনার মত তাকিয়ে একটা রোমান্টিক হাসি দিয়ে বলল আমিও ভাল খেলোয়াড়। ওই যে মেয়ে মানুষের চাপ দাদা নিতে পারে না নার্ভাস হয়ে যায় এবারো হল তাই তাসনুভা সবাই কে অবাক করে দিয়ে দাদার হাত ধরে বলল তুমি কিন্তু আসলেই দারুন এক খোলোয়াড় যেমন তোমার হাতের টিপ তেমন চোখের ও না জানি আরো কত ভেলকি তুমি জানোরে বাবা। দাদা পরের বোর্ডে সাদা গুটি হিট করার ফাঁকে তাসনুভার দিকে তাকাচ্ছে আর বাজপাখির মত তাক করছে। কালে কালে মেয়েদের ষোল কলায় কত পুরুষ যে দিক ভ্রান্ত হয়েছে তার শেষ নেই, দাদা সেই তালিকার একজন হয়ে গেল। স্টাইক টা বোর্ডের মাঝে থাকল না উড়ে চলে গেল দর্শক সারিতে। দাদা সামলে বলল ভালকেবল আমি বাসি না আমার স্টাইক ও দর্শক সারির লেডিসদের ভালবাসে এটা ফ্লাইং স্টাইক কিস, এই কথা শোনার পর সবাই হো হো করে হেসে দিল। সূর্য কোন কথাই বলল না ও সিরিয়াস হয়ে উঠেছে নিজেকে শান্ত করে সব চিন্তা ক্যারামের বোর্ডে সন্নিবেশিত করে আনছে সাথে সিগারেটে টান দিচ্ছে। এবার খুব শান্ত ভাবে স্টাইক নিয়ে পর পর চারটা গুটি ফেলে দিয়ে রেড কাভার ও দিয়ে দিল। দাদা বিস্ময় নিয়ে দেখল সূর্যের খেলা, সাথে সবাইকে যেন মন্ত্রের মত মুগ্ধ করে ফেলছে। আলেক্স তার স্পেশাল দিয়ে গেল সিগারেট হাতে পুড়ছে কিন্তু সূর্যের মুখে কোন কথা নেই। দাদা মানসিক চাপে পড়ে একটার বেশি গুটি ফেলতে পারল না। সূর্য সিগারেটে পর পর চারটা টান দিয়ে একবারে ধোয়া ছেড়ে সবার দিকে তাকিয়ে তাসনুভার দিকে একবার তাকিয়ে বোর্ডে ফিরে এল। কোন রকম সুযোগ না দিয়ে বোর্ডের বাকি গুটি ফেলে দিয়ে তের পয়েন্ট নিয়ে নিল। তাসনুভার ষোল কলার এক কলা যে কাজ করেছে তা ভেবে তাসনুভা মনে মনে দারুন খুশি হল। দাদা আসলে দারুন এক চাপে পড়ে গেছে। এরকম অনেক বার হয়েছে দাদা আটাশ পয়েন্ট নিয়েও হেরে গেছে আবার সূর্যকে বোর্ড গেম দিয়ে দিছে পাঁচ মিনিটে। পরের বোর্ডে রেড পয়েন্ট নেই দাদা ২ পয়েন্ট তুলে নিল। এর পর এর বোর্ডে আবার ১ দাদা আটাশ সূর্য ১৮ পয়েন্ট নিয়ে খেলছে। যা হোক সূর্য ভাবছে এর পর তো দুই বোর্ড আছে এজন্য ই তিন ম্যাচ নিয়েছে। পরের বোর্ডে জাদু মন্ত্রের ন্যায় খেলে গেল সূর্য এতে অবশ্য তানিয়া আর সামিয়াকে ধন্যবাদ দিতে হবে ওরা জানে সূর্যের কিছু বিশেষ দিকে নজর ভাল আর দাদার কিছু দুর্বলতা আছে তাই দুজন খেলা দেখার ভান করে দাদার দুপাশে গিয়ে দাড়ালো। সূর্য এ বোর্ডে ১১ পয়েন্ট তুলে নিয়ে দাদাকে বলল দাদা কন্ট্রোল কন্ট্রোল মোহে পড়তে নেই আগে পড়ে গেলে কাম হয় না কাম হইতে হলে পরে ফেলাইতে হয়। এতক্ষনে শতাধিক লোক জমে গেছে বিকাল এর আকাশে সূর্যের উত্তাপ কিছুটা কমেছে। কিছুক্ষন বিশ্রাম নিয়ে আবার বোর্ডে ফিরে এল সূর্য ও দাদা। দাদা এসেই বলল সূর্য দেখ দর্শক থাকবে সামিয়ানার মধ্যে তারা যেন বোর্ডের ধারে পাশে না আসে বিশেষ করে মেয়েরা সূর্য বলল কেউ আসবে না তুমি খেল।

সুর্য হিট করে কোন গুটি ফেলতে পারল না। দাদা দেখতে দেখতে পাঁচ ছয়টা গুটি ফেলে দিল। সূর্যের পরবর্তী দুটি শটে গুটি পকেট থেকে বের হয়ে এলো সূর্য বলল দাদা তুমি ও তোমার মানুষের পকেটে কালো জাদু করেছো তা না হলে গুটি বের হয়ে যাবে কেন? দাদা বলল লাগলে হুজুর এনে ঝাড় ফুক করিয়ে নাও সময় তো আছে। সাথে আরো বলল খেলতে না পারলে কত কি সব তো আর বিছানার খেলা না যে লাইট বন্ধ করলেই হল। সুর্য বলল দাদা এখন কিন্তু লাইট বন্ধ করা ছাড়াও কাজ হয়। দাদা কিন্তু এবার পণ করে নেমেছে বোর্ড গেম দিবে দাদা তার চিরকালীন স্বভাব ভেঙ্গে সূর্যের গুটি নষ্ট করে দিল সূর্য কিছুটা অবাক হল কিন্তু মুহূর্তেই খেলায় ফিরে এল। এবারো সুর্য কোন গুটি পকেটে ফেলতে পারলো না। এদিকে ছাগলের মাংস আর ডাল রান্না চলছে। দাদা কোন প্রকার হেন তেন না করে বাকি গুটি গুলো পকেটে ভরে দিয়ে বলল আমি কিন্তু প্রেমিকা নিয়েই যাব আজ রাত কিন্তু আমার ইতিহাসে লেখা হবে আমার নাম। বোর্ড গেম মানে এক বোর্ডেই দাদা চোদ্দ পয়েন্ট নিয়ে নিয়েছে। সূর্যের মুখ লাল হয়ে উঠল চরম অপমানে।

সবাই মিলে রান্না করা গরু খাসীর মাংসের সাথে খিচুড়ি খাচ্ছে আর বলাবলি করছে এমন ম্যাচ যেন মাঝে মধ্যেই হয়। সব মিলে পাঁচ হাজার টাকা খরচ কিছু কম বা বেশী আছে অবশ্য কিছু দর্শক টাকা দিয়ে সূর্য কে সাহায্য করেছে এর মধ্যে তাসনুভা, সামিয়া, হারুন হাকশি, হীরামন, বাকি বিল্লাহ। দাদার ইচ্ছা ছিল ম্যাচ জিতে টাকা নিয়ে একটা ভাল র‍্যাকেট ব্যাট কিনে সেটা দিয়ে খেলবে এবং বাকি টাকা দিয়ে জামা কাপড় কিনবে। দাদা বুঝে উঠতে পারছে না ও যদি ম্যাচ জিতে যায় তাহলে সূর্য কিভাবে টাকা দিবে কারন ও তো ম্যাচের বাজির থেকে বেশি খরচ করে ফেলেছে মানে সূর্য হেরে গেলে তাকে মোট সাত হাজার টাকা দিতে হবে এর মধ্যে বাজির দুই হাজার আর আয়োজন বাবদ পাঁচ হাজার। সূর্য বরবরই রিস্ক নিতে অভ্যস্ত সে অনেক ভেবে চিন্তেই এমন আয়োজন করেছে যাতে যদি সে হেরে যায় তাহলেও যেন মানুষ কিছু মনে না করে বা কেউ খোচাখুচি না করে। সূর্য বলল এই দাদারে মোরগের ডিম দে সাথে মুরগির রান আর দুইটা কোক লেবু আর লবন দিয়ে। খেয়ে দেয়ে সামিয়া বলল খুব গরম লাগছে সূর্য বলল কি করবে জামা খুলে ফেলবে নাকি আগে তো একবার বোরকা খুলে ফেলেছিলে পাশে তাসনুভা বসেছিল ওর দিকে তাকিয়ে সামিয়া বলল কেন তাসনুভা কি গরম পড়লে জামা কাপড় খুলে ফেলে নাকি। তানিয়া বলল আর জামা কাপড় খুলতে হবে না এখন গেম শেষ করার জন্য প্রস্তুত হ। এদিকে জ্ঞানী, হবিট দাদা সামর্থক গোষ্ঠীর সাথে কি নিয়ে যেন বিতর্কে মেতে উঠেছে। আলেক্স এর মধ্যে সবাইকে চা আর সিগারেট দিয়ে চলেছে। শীতের দিন সন্ধ্যা হয় দ্রুত পাঁচটা ত্রিশ বাজে খেলা আবার শুরু হবে। দু পক্ষ নানা খিস্তি খেঁউড় করছে মোট কথা সবাই মিলে উপভোগ করছে। দাদার চোখ কিন্তু ঘুরে ফিরে সামিয়া আর তাসনুভার উপর দাদা হা করে গিলছে দুজনকেই সূর্যের নজর কিন্তু কিছুই এড়ায়নি। সূর্য আসলে এটাই চাচ্ছিল দাদার মন সংযোগ অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিতে এবং বলা যায় এ কাজে সে মোটামুটি সফল এখন নিজের মত করে খেললেই জিতে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।

খেলা শুরু হল দাদা তার বিশাল পেটটা বোর্ডে ঠেকিয়ে আয়েশি ভংগিতে স্টাইক দিয়ে একটা শট দিল কোন গুটি পড়ল না। সূর্যের অবস্থাও এক সিগারেট টেনে ধোয়া ছাড়ায় ব্যস্ত গুটির দিকে মন নেই। সামিয়া বলল দাদা আপনি কি এবার ও এক ধাক্কায় ঢুকিয়ে দেবেন মানে একবারেই শেষ করে দিবেন। দাদা মনে মনে ভাবল কি বাজে মেয়েরে বাবা কি সব কথা বলে আসল ব্যাপার হল দাদাকে খুব আস্তে আস্তে উত্তেজিত করছে সূর্য গ্যাং আর দাদা না বুঝেই ওদের ফাঁদে পা দিচ্ছে। রেফারি কবি বলল বাইওরে থেকে কথা বলা নিষেধ তাই বাধ্য হয়ে সামিয়াকে থামতে হল। ঘণ্টা খানেক খেলার পর সূর্য আর দাদার দুজনের পয়েন্ট আটাশে এসে থামল। শীতের বিকালে দুজনেই ঘেমে নেয়ে উঠেছে। দাদা বলল মানুষ যে আসলে সহজে প্রেমিকা বা নিজের মেয়ে মানুষ অন্য কে দিতে চাই না সেটা এই খেলার আয়োজন না হলে বোঝাই যেত না। যে সূর্য পাঁচ মিনিটে হেরে যায় সে আজ জাদুকরের মত খেলছে। শেষ বোর্ড বসছে এই বোর্ডে যে পয়েন্ট পাবে সে জিতে যাবে। সূর্য স্টাইক নিয়ে কোন কিছু চিন্তা না করেই ঠুকে দিল তাতে কাজের কাজ কি হবে একটা সাদা গুটি পকেটে গেল আর একটা পকেটের মুখে যেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দাদা এই দেখে বলল যাক আসল খেলা বেরিয়ে এল এতক্ষণে। সূর্যের উপর মানসিক চাপ কয়েক হাজার পাউন্ডের মত প্রতিটা গুটি মারার আগে ভুল করে বসছে। দাদা কিন্তু ভুল না করে আরো দুটিও গুটি কমিয়ে ফেলল। সুর্য স্টাইক হাতে নিয়ে এক অদ্ভুদ ভঙ্গিতে ছুড়ে দিল, কপালের নাম গোপাল তা না হলে এই শটে তিনটা গুটি পড়ল একটা গুটি রেল গাড়ির মত গড়াতে গড়াতে পকেটে গিয়ে পড়ল। দাদা কিন্তু রেড নিয়েই আছে ব্যাটা আসলেই গাড়ল প্রতি বোর্ডে রেড তার ফেলানো লাগবেই তা না হলে যেন মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে। এই ভুলের জন্যই সুর্য অপেক্ষা করছিল। দাদা শট মিস করার পর সে রেদ বাদ নিয়ে নিজের গুটি কমাতে ব্যস্ত হয়ে গেল হাতের মুঠোই রেড পেয়ে ছেড়ে দিল এই দেখে দাদা বলল পারে না রে পারে না, লাল দেখলেই মাল খালাস কাভার দিতে পারে না। সূর্য কিন্তু নিখুঁত ভাবে কাজ শেষ করে দিল এখন মাত্র দুটো গুটি আছে তাও দুই পকেটের কাছে। দাদা হাতে স্টাইক পাবার সাথে সাথেই রেড দিয়ে কাভার দিয়ে বোর্ডের দিকে তাকিয়ে বুঝল কত বড় ভুল করে বসেছে সে। দাদা খেয়াল করে দেখল বোর্ডে তার পাঁচটি আর সূর্যের মাত্র দুটি গুটি আছে। দাদা পাগলের মত বলে উঠল শালা ধান্ধা বাজ সামনে মেয়ে মানুষ বসিয়ে মাথা নষ্ট করে গেম জিতে নিয়ে যাবি তা হবে না এই দেখ। দাদা সুদক্ষ খেলোয়াড়ের মত তিনটা গুটি ফেলে দিয়ে নব্বই ডিগ্রীতে একটা গুটি দিতে যেয়ে নিজের গুটির বদলে সূর্যের কালো গুটি দিয়ে দিয়ে নিজেই নিজেকে গাল পাড়তে লাগলো। সূর্য উত্তেজনায় কাপছে আর বলছে দাদা রে এবারের মত প্রেমিকা দিলাম না তর আশা পুরন হল না রে কিন্তু বিধি বাম মারল আস্তে গুটী পড়বে কি দুলছে পকেটের কোনে যেয়ে। দাদা দেরি না করে খপ করে স্টাইক নিয়ে হাতের কাছে গুটি পকেটে পুরে দিয়ে উত্তেজনায় কাপতে কাঁপতে আবার শট নিল কপালে আসলেই ছিল না তাই স্টাইক গুটি স্পর্শ করার আগেই থেমে গেল। সূর্য ভয়ে ভয়ে স্টাইক নিয়ে আল্লাহ খোদার নাম নিয়ে হাত থেকে কো রকমে স্টাইক টা ছেড়ে দিল স্টাইকের বাতাসেই কালো গুটি পড়ে গেল। সূর্য চেচিয়ে বলে উঠল যাক একজন নারীকে অসন্মানের হাত থেকে বাচানো গেল। যদিও দাদা প্রেমিকা নিয়ে যেত না কিন্তু কথাটা রটে যেত এবং অসস্তিকর একটা ব্যাপার হত সেটা এখন আর হবে না। তাসনুভা উঠে এসে কেদে ফেলল ও আসলে এর আগে বোঝেই নি সূর্য ওকে কতটা পছন্দ করে। সূর্য বলল যাও যাও এখন নিশ্চিন্ত মনে হলে চলে যাও প্রেমিকা বদল হবে না। দাদাকে বলল দাদা প্রেমিকা তো নেই তোমার, কিন্তু মনে রেখ ভাবীর নাভী পর্যন্ত দাবি উপর না নিচের অংশ তা কিন্তু বলছিনা। দাদা বলল ভাই অনেক হয়েছে এখন চল ক্লাস টেস্টের পড়া পড়ি আমি আর কোন দিন ক্যারাম খেলব না রে ভাই চল চল ।

সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ২:১১
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস-পরীক্ষার হলে দেরিঃ পক্ষ বনাম বিপক্ষ

লিখেছেন BM Khalid Hasan, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

×