somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অগোছালো কথন

২৭ শে জুন, ২০১৩ সকাল ১১:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এখন রাতের বারোটা বাজে। অনেকক্ষণ ধরে মা ডাকাডাকি করছেন, রাইসা খেতে এসো। রাইসার সেদিকে ভ্রূক্ষেপ নাই। তার দিব্য দৃষ্টি ছোট্ট লোলিতার উপরে।

লোলিতা সেই সকাল থেকে কোন সাড়াশব্দ করছে না অথছ অন্যদিন এমন সময় লোলিতা রাইসার পড়ার টেবিলে বসে তার ছোট খাট কাজে সাহায্য করে, কাঠ পেন্সিল দাঁতে চেপে এনে তার খাতায় রাখে, টেবিলে রাখা অগোছালো বইগুলোর পিছে লুকিয়ে রাইসার হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে দেয়, হঠাৎ লাফ দিয়ে রাইসার ডান কাঁধে বসে তার গালে আলতো স্পর্শ দেয়।

আজ লোলিতা একদম নেতিয়ে শুয়ে আছে। শুধু থেমে থেমে মিউ শব্দ করে চোখ দুটি খুলে আবার বন্ধ করছে। রাইসা এক বাটি দুধ নিয়ে লোলিতার পাশে বসে আছে সেই সন্ধ্যা থেকে। রাইসার মা মানবধিকার কর্মী শাহনাজ হুসাইন এইবার কিছুটা রেগে গিয়ে বল্লেনঃ রাইসা! অনেক হয়েছে! এইবার বাধ্য মেয়ের মত খেতে এসো।
--খাব না মা। লোলিতা কিছু না খাওয়া পর্যন্ত আমি কিচ্ছু খাব না। শুধু শুধু আমাকে বিরক্ত কর না।
--লোলিতা একটা বিড়াল ছানা, রাইসা! তুমি একটু বেশীই রি-এক্ট করছো না?
--করলে করছি! ও আমার সন্তানের মতন।
--সন্তান! এই ধরনের কথা বলতে তোমার লজ্জা করছে না রাইসা?
--না মোটেই লজ্জা করছে না! তুমি আমার চোখের সামনে থেকে এখন বিদায় হওতো মা!

শাহনাজ হুসাইন জোরে জোরে পা ফেলে রাইসার রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।
রাইসার কাছে লোলিতা নেহায়েত একটা বিড়াল ছানা নয়। ইফতির দেয়া শেষ উপহার এইটা। স্কুলের বিদায় অনুষ্ঠানে সকলে যখন ব্যস্ত তখন অডিটোরিয়ামে পাশাপাশি বসে ইফতি রাইসাকে ডেকে বলেছিলঃ রাইসা, আমি তোমার জন্য একটা গিফট নিয়ে এসেছি। নিবে তুমি?

রাইসার কাছ থেকে কোন উত্তরের অপেক্ষা না করে ইফতি তার ব্যাগ থেকে লোলিতাকে বের করে হাতের উপরে রাখে। লোলিতার মুখ স্কচটেপ দিয়ে আটা যাতে সে শব্দ করতে না পারে। ইফতির গাধামি দেখে রাইসার চোখ চড়কগাছে! গাধাটা করেছে কি! যদি নিশ্বাস আটকে মারা যেত?
ইফতি এক গাল হাসি দিয়ে বলে, সেই সম্ভাবনা নাই। দেখছ না, নাক খুলে রেখেছি।
রাইসা লোলিতাকে হাতে নিয়েই এক টানে টেপ খুলে দেয়, লোলিতা মিউ মিউ শব্দে সমস্ত অডিটোরিয়াম দৌড়ে বেড়িয়েছে। লজ্জায় রাইসার মরে যেতে ইচ্ছে হচ্ছিল।

রাইসার বাবা শরীফ হুসেইন বেশ রাশভারী মানুষ। মেয়ের এই পাগলামো দেখে তিনিও বেশ বিরক্ত। তিনি রাইসার রুমে এসে চশমাটা মুছতে মুছতে বল্লেনঃ কি হয়েছে রাইসা?
--কিচ্ছু হইনি তো? আমি কি কিছু বলেছি?
--না, মানে খাচ্ছ না কেন?
--আমার লোলিতা খাচ্ছে না কেন?
--ও খাবে। একটু পরেই ও ভালো হয়ে যাবে।
--তাহলে আমিও একটু পরেই খাব।
--দাড়াও, তোমার মা কে বলছি ডাক্তার ডাকতে।
--মাকে বলতে হবে কেন? তুমি ডাকতে পার না।
--অবশ্যই পারি! তবে তোমার মা যেহেতু মানবধিকার নিয়ে কাজ করেন, সেহেতু বিভিন্ন বড় বড় ডাক্তারের রিপোর্ট ঘেঁটে দেখতে হয়। তিনিই বলতে পারবেন লোলিতার জন্য কোন ডাক্তার ভালো।

শাহনাজ হুসাইন মোবাইলের নাম্বার চেক করছেন। অতি দ্রুত একজন ভালো ডাক্তার দরকার। তার একমাত্র মেয়ে এই রাত দুপুর পর্যন্ত না খেয়ে আছে।

কাকে ফোন দেয়া যায়, ডাক্তার ফিরোজ কে? নাহ! তাঁকে নিয়ে বিশ্বাস নাই। সে একটা ধর্ষণ কেসের আলামত নষ্ট করে ভিকটিমের বিপক্ষে রিপোর্ট দিয়েছিলেন।

ডাক্তার সুশীল? নাহ! তাকেও বিশ্বাস করা যায় না। সে একটা খুনের আসামী কে বাঁচিয়ে দেবার জন্য খুন কে অপমৃত্যু হিসেবে প্রমাণ করার জন্য রিপোর্ট দিয়েছিলেন।

ডাক্তার জাহিদ? নাহ! তাকে তো আরও বিশ্বাস করা যায় না! সে একটা পাঁচ বছরের মেয়ের ধর্ষক কে বাঁচাতে ফরেনসিক রিপোর্টে পুরাই গুবলেট পাকিয়েছিলেন!

শাহনাজ হুসাইন তার কন্টাক্ট লিস্ট চেক করছেন.........
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×