somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিজের মেয়ের কান্না থামাও, তবে এমনিতেই দেশের কান্না থেমে যাবে

২৪ শে জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আবির আজকাল বড্ড বেশী কথা বলে। মাঝে মাঝে নিজের কাছেই নিজেকে বাঁচাল বলে মনে হয়। খালী কলস নাকি বাজে বেশী, এই কথা আবির একদম বিশ্বাস করে না। বিশ্বাস করবেই বা কি করে, তার কলস তো আর খালী নয়! তার কলস বিভিন্ন গল্পে ভরা। চাইলেই পরিবেশ ভেদে গল্পের ঢেঁকুর তুলে পরিবেশ মাতিয়ে দেয়।

এই এখন যেমন চায়ের দোকানে বসে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতার উপরে বক্তৃতার সুরে ঝড় তুলেছে, শ্রোতা উত্তরাধিকার সুত্রে চায়ের দোকানের মালিক হওয়া শিশু কামাল, রিকশাচালক হাবলু মিয়া আর নুরার মা।

কামালের বয়স তিরিশের কাছা কাছি কিন্তু নাম এখনো শিশু কামাল। তার বাবা শখ করে তাকে ডাকতো, শিশু বলে। বাবা মারা যাওয়ার পরে নাম আর বদলাই নাই, এলাকার সকলেই তাকে শিশু কামাল বলে ডাকে। শুধু নুরার মা তার নামটা একটু বিকৃতভাবে ডাকে, কামাইল্লা!

নুরার মা প্রতিদিন সকাল-বিকাল কামালের দোকানের পানির কলসটা ভর্তি করে দিয়ে যায়। এক কলস পানি তিন টাকা! এখন পানির টাকা নিতে এসেছে। ১০৫ কলস পানির দাম পাবে সে।

রিকশাচালক হাবলু মিয়ার গ্যারেজ পাশেই। যত দূরের ভাড়াই মারুক না কেন, ঘুরে ফিরে শিশু কামালের চায়ের দোকানে তার আসাই চাই। শিশু কামালের হাতের চা না খেলে সে শরীরে যোর পায় না। হাবলু মিয়ার মতে শিশু কামাল চায়ের মধ্যে কেরুর মাল ঢালে। তা না হলে এতো নেশা হবে কেন!

আবির কামাল কে বল্লঃ কামাল আরেক কাপ চা দাও। এইবার চা টা একটু বড় কইরা দিবা। কি চা দাও, দুইটা কথা বলতেই শেষ হয়ে যায়! বুঝেছ নুরার মা, দেশটা আসলেই রসাতলে গেল।

নুরার মা কপালে ভাঁজ ফেলে জিজ্ঞেস করেঃ কার তলে ভাইজান?
--আরে বুঝ নাই! রসাতলে।
--ওঃ কবে থাইক্যা যাইতাছে ভাইজান?
--কবে থেকে মানে? সেই ৭১ এর পর থেকেই তো বিভিন্ন রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সাথে সাথে দেশটারও পরিবর্তন হচ্ছে। দেশ কখনো কাঁদছে কখনো হাসছে। এখন প্রতিদিনই আমি দেশের কান্না শুনতে পাই।
--ভাইজান ঠিকই কইছেন! গত কইয়েক দিন ধইরা শান্তি মতন ঘুমাইতে পারি না। মইধ্য রাইতে কেডা জানি কু কু কইরা কান্দে! আমার ভীষণ ডর লাগে!

হাবলু মিয়া শব্দ করে চায়ে চুমুক দিয়ে প্রায় শেষ হয়ে যাওয়া আজিজ বিড়িটার শেষ অংশে আরেকটা সুখ টান দিয়ে বল্লঃ মাঝে-মইধ্যে পরভাতে আমিও কান্দন শুনি।
--কিসের কান্দন? কিছুটা বিচলিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো আবির।
--জানি না! তয় আপনে যে কইলেন দেশের কান্দন।
--হাবলু মিয়া! তুমি দেশের কান্না শুনতে পাও?
--হ ভাইজান! কু কু কুৎ কইরা কান্দে!
--হেয় ঠিকই কইছে, আমার ঘরের পিছনে দেশে কান্দে। বল্ল নুরার মা।
--তোমরা সবাই সিক! দেশের কান্না শোনা যায় নাকি? উহ!
--আপনে শুনলে আমরা শুনুম না কেন? গরীব বইলা কি কান খারাপ নাকি? বল্ল হাবলু মিয়া।

শিশু করিম রনে ভঙ্গ দিয়ে বল্লঃ ভাইজান! ঐ যে ভাবী আপনারে ডাকে।
দোকান থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে আবিরের স্ত্রী রাহেলা। রাহেলা দাঁত কটমট করে জিজ্ঞেস করলোঃ তুমি সেরেলাক আনতে বের হয়েছিলে কখন?

হাত ঘড়ির দিকে একবার তাকিয়ে আবির বল্লঃ ঘণ্টা দুই আগে। কেন?
--কেন? ঐদিকে তোমার মেয়ে যে সেরেলাকের জন্য গলা ফাটিয়ে চিৎকার করছে তার খেয়াল আছে তোমার?
--ওঃ তাইতো! কিন্তু রাহেলা একবার ভেবে দেখ, হাবলু মিয়া, নুরার মা দেশের কান্না শুনতে পায়!
--তাতে তোমার সমস্যা কি?
--এই কান্না থামাতে হবে!
--আগে নিজের মেয়ের কান্না থামাও, তবে এমনিতেই দেশের কান্না থেমে যাবে।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×