ঈদ শ্যাষ
এইবার ও ঈদের মজা অর্ধেক শেষ! ঈদ সবসময়েই বাড়ীতে করি ,দাদা-দাদু-নানা-নানু-চাচা-মামা-পিচ্চি-কাচ্চি-খালা-ফুফু সব্বাই মিলে। বংশের বড় ছেলে , সুতরাং কিছুটা দায়িত্ববোধ আর অনেকটা মজাতেই প্রায় সব আত্মীয়স্বজনের বাড়ীতে যাওয়া হয়, খাওয়া হয়। আসলে ঈদের দিনে একবেলার পর ফেরা পর্যন্ত আর কখনো নিজের বাড়ীতে একবেলাও খাওয়া হয় না। আর সব মজাই ঈদের পর পর।
গতবার কুরবাণীর ঈদ এর পরদিনই হঠাৎ দৌড়, সিস্টেমে সমস্যা । ঢাকায় ওই কাজের জন্য ওই মূহুর্তে কেউ নেই, তাই দৌড়াও। ঈদ শেষ!
এইবছর রোজার ঈদ করেছি জার্মান সালাদ আর ফান্টা খেয়ে, বাংলাদেশের ঈদের দিন দুপুরে ছিলাম শুধু কফি খেয়ে...
এবারের কুরবাণীর ঈদের শেষদিকে ছিলো ছুটি,আব্বু-আম্মুরাও তাই চট্টগ্রাম থেকে বাড়ী যাবার প্ল্যান করলেন ওভাবে। কিন্তু আমার যে কলিগের ঈদের পরে থাকার কথা উনি হাঙ্গেরি থেকে ফিরতে পারেন নাই, তাই বৃহঃস্পতিবার অফিসে গিয়েই শুনি আমার ছুটি শুরু হয়ে গেছে... মানে হলো , ঈদের পরদিন থেকেই আবার আমার অফিস শুরু! এই ফাঁকা ফাঁকা ঢাকা শহরে ফিরে করবোটা কি, ঘুমানো ছাড়া?
এই ঈদটাও গেলো...।
একান্নবর্তী...
জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে আমাদের পরিবারটা বিচ্ছিন্ন। দাদা-দাদু-বড়চাচী গ্রামের বাড়ীতে আব্বু-আম্মু-ভাইরা চট্টগ্রামে , আমি ঢাকায় পান্থপথে, বড়কাকা বাইরে, মেজকাকা ঢাকায় মিরপুরে , ছোটকাকা ফেণী শহরে...। কিন্তু আমরা মূলত একান্নবর্তী পরিবার। আর এই মজাটা পুরোপরি পাওয়া যায় অল্প কয়েকবার, ঈদ যার অন্যতম। আর তাই ঈদ আমাদের জন্য অন্যরকম একটা উপলক্ষ। সব ভাইবোন মিলে হই হল্লা, খাওয়া-দাওয়া , খেলা নিয়ে ঝগড়া, ঈদের নামাজে যাবার আগে মান-অভিমান... কি নেই।
অন্তর্মূখীতা, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র টানাপোড়নে বিশাল ফাঁক সৃষ্টি হয়ে যাবার এই যুগে জানি না আর কতদিন এইভাবে একান্নবর্তী থাকতে পারবো, এই থাকার মুল সুরটাই হচ্ছে শেয়ার করা। নিউক্লিয়ার আর একান্নবর্তী দুইধরনের পরিবারের অভিজ্ঞতা থাকায় বুঝতে পারি নিউক্লিয়ার পরিবারের কনসেপ্টে স্বাতন্ত্র্যতার মোহে আমরা কি হারাচ্ছি। জানি না আর কদ্দিন টিকবে এই যৌথ পরিবারগুলো......।
বাচ্চা ভয়ংকর , কাচ্চা ভয়ংকর…
গ্রামের বাড়ীতে এসেছি গত শুক্রবার, এসেই পড়েছি বাচ্চা-কাচ্চাদের যন্ত্রণায়, আমি ওদের সবার বড়ভাই, বংশেরও বড়- কিন্তু একটু বড়্গুলা তো ভাইয়া বলে সালাম-টালাম দেয়, পিচ্চি কাচ্চিগুলা ... ... বলে নাম ধরে যেভাবে ডাকে তাতে ভাবা অসম্ভব না যে ওরা আমার তিনযুগ আগে জন্মিয়াছে! যাই হোক এই পিচ্চি-কাচ্চি-বাচ্চাদের বিচ্ছুগিরি নিয়ে প্রচুর মজার অভিজ্ঞতা আছে। আপাতত একটা...
ঈদের দিন নানা কথায় এক আপুর খুনসুটি, ‘গাধা একটা, একটা প্রেমে-ট্রেমে ও পড়তে পারলি না। তোরে নিয়া চাচা-চাচীর খুব যন্ত্রণা হবে...’। আমি ও ঠাট্টা করি, ‘দিন বদলাইছে না, দেওনা তোমার বান্ধবী একটা দুইটার সাথে বাইন্ধা । একটু বড়ই না হয় হলো, পড়ি যখন বড় প্রেমেই পড়ি...’।
শেষাংশ শুনে ফেলে পিচ্চি জারীন... সব্বাই মিলে দাদুর রুমে গ্যাঁজাচ্ছে, আব্বু-আব্বু-চাচারা-চাচীরা-দাদু-মেহমান মিলে... দৌড়ে গিয়ে জারীনের চিৎকার, জেঠু জেঠু তাড়াতাড়ি আসেন, ... ভাইয়া বড় ‘পেরেমে’ পড়ি যায়, তাড়াতাড়ি ধরেন...
মান ইজ্জত চাঙে তুলি দিলো এই পিচ্চি-কাচ্চিগুলা...
আমি আর বাবা একসাথে হাঁটি...
আজ সকালের বাস ধরার জন্য রওনা দিয়েছি সকাল পাঁচটায়, যাতে আটটায় ঢাকা ফিরতে পারি।
অন্ধকারে উঠে আম্মুর রান্না রস-চিতই খেয়ে দাদা-দাদু থেকে বিদায় নিয়ে রওনা দিচ্ছি, বারণ করলেও আব্বু আমাকে এগিয়ে দিতে এলেন মূল রাস্তা পর্যন্ত। ভয়ংকর কুয়াশা , দুইপাশের বাড়ীগুলোর আলোর নাচন আধিভৌতিক কাঁপন দিচ্ছে। দুই প্রজন্মের দুইজন, আমি আর বাবা একসাথে হাঁটি, গুটি গুটি পায়ে, কুয়াশা আর অন্ধকারকে পায়ে দলে।
আব্বু খুব অসুস্থ বছর দুয়েক ধরে।
চোখ ভরে যায় জলে, বাবা তুমি আর কতোদিন আছো তোমার ছেলেকে অন্ধকারে অভয় দিতে পাশে হেঁটে হেঁটে যেতে? তারপর?
ফাঁকা ফাঁকা ঢাকা শহরে...
এই খালি শহরে ফিরেছি আজ, পুরো শহরটাই কেন জানি বন্দী কারাগার মনে হচ্ছে আমার কাছে। কোথাও যাবার নেই, কিছু করার নেই। তাই ভূতুড়ে গুলশানে অফিসেই থাকলাম সাতটা পর্যন্ত। বুয়া নানু ছুটিতে,বাসায় ফিরে ভাত-ডাল রান্না। ডালে গুড়া মরিচ দেয়ায় রঙ হয়েছে ঘন লাল! মুভি দেখবো? বই? ব্লগ? তোলা ছবিগুলো ? না , না , না ...।
কিচ্ছু ভালো লাগছে না........।
পুরোপরি নাগরিক এই আমি এখনো গ্রামীন ঈদ পালনে, বুঝে যাই। ঈদ মানে সময়হীনতা আমার কাছে। ঈদ মানে ঈদের দিন সকালে ছাড়া নিজের বাড়ীতে আর খেতে না পারা... ঈদ মানে গ্রামের প্রতিটি চেনা-অচেনা বাড়ীতে যাওয়া, কতো দূর-বহুদূরের আত্মীয়দের বাড়ীতে সহজ-সরল আন্তরিক যত্ম। এক্টাই উদাহরণ দেই, গতবার রোজার ঈদে গিয়েছিলাম আমার বড়মামীর খালার বাড়ী, বৃদ্ধার আবদারে থেকে গেলাম একদিন, আসার সময় কি যে মন টানছিলো।
-------------------------------------------------
( ঈদের পর হাল্কা একটা লেখা লিখতে গিয়া মনে হইতাছে এক্টূ ইমোশনাল হইয়া পড়ছি... কি আর করতাম। এক্ষনে কথা হইতাছে ওই লাল লাল ডাইল খাইয়া পোষাইতেছে না, বহুবার হানা দেয়া ক্লাস্মেটগো বাসাত ও যাইতে মন চাইতেছে না, কেউ যদি এই অভাগা বাইচ্চাটারে কুরবানের সদকা হিসাবে দাবাত-টাবাত দ্যান বাইচ্চা যাই। আছেন কুনো দিলওয়ালা ব্লগবেরাদর...? )
ছবি@আমার তোলা।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ডিসেম্বর, ২০০৮ রাত ১০:২২