somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফাউন্টেন পেন, পেন্সিল কিংবা সুলেখা কালি

৩০ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ৯:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লেখকদের কলম নিয়ে নানান ধরনের শুচিবাই আছে, এখবর কি সবার জানা আছে? শিল্প সৃষ্টির পথ ও প্রক্রিয়া যেমন একেক লেখকের একেক রকম, অস্ত্র শস্ত্রও সেরকম আলাদা। একেক জন লেখক এ কাজে একেক ধরনের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করেন।
আমাদের দেশের কথা সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের যদ্দুর জানা যায়, এ ফোর সাইজের কাগজ আর বলপয়েন্ট কলম দিয়েই লেখার কাজ চলত। তিনি লিখতেন মেঝেতে বসে ,সাবেকি আমলের একটি জলচৌকি সামনে রেখে। আবার একটি রচনায় পাওয়া যায়, তিনি লীলাবতী উপন্যাস লেখার সময় একবার লেখালেখি বন্ধ হওয়ার উপক্রম। লেখার টেবিলে কাগজ কলুম সিগারেট চা সবই রয়েছে কিন্তু লেখা আসছে না। তার মানে তিনি টেবিলে বসেও লিখতেন?
এ প্রসঙ্গে কেও আরো নির্ভরযোগ্য খবর পেলে জানাবেন।
এবার যাই বিদেশে। আর্নেষ্ট হেমিংওয়ে লিখতেন পেন্সিলে, প্রতিদিন ভোরবেলা সবাই ঘুম থেকে ওঠার আগে কিংবা সুর্যদেব তাপ ছড়ানোর আগে, নৈঃশব্দে একা । আরো অবাক করা ব্যপার তিনি লিখতেন ঠায় দাঁড়িয়ে, তার সমস্ত লেখালেখিই হয়েছে দাঁড়ানো অবস্থায়। এরকম পেন্সিলের ভক্ত আরো কয়েক জন স্বনামধন্য লেখককে পাওয়া যায়। জন স্টেইনবেক, বিখ্যাত নোবেলজয়ী আমেরিকান সাহিত্যিক প্রচন্ড ভালবাসতেন ব্ল্যাক উইং নামক কোম্পানির পেন্সিল। আজীবন লেখালেখি করেছেন পেন্সিলেই, বসতেন ছাব্বিশটি পেন্সিল সামনে সাজিয়ে।তার ইষ্ট অফ ইডেন নামক উপন্যাসটি লেখা হয়েছিল কয়েক হাজার পেন্সিলের সাহায্যে।
নাট্যকার ট্রুম্যান কাপুট লিখতেন একেবারে আধশোয়া হয়ে, পেনসিলে। তিনি তার স্মৃতিচারনে নিজেকে বর্ণনা করেছেন হরাইজেন্টাল লেখক হিসেবে। একেবারে না শুয়ে তিনি লিখতে পারতেন না। লেখার সাথে সাথে ধুমপান মদ্যপান কফিপান বাধ্যতামূলোক।
পেনসিলে লেখার বাতিক আরো কজনের ছিল, এই মুহুর্তে মনে পড়ছে না। চলে যাই ফাউন্টেন পেনে। ফাউন্টেন পেন অবশ্য তিন চার দশক আগেও লেখার একমাত্র উপকরণ ছিল। অনেক লেখকই লিখেছেন নানান জাতের নানান রকম ফাউন্টেন পেনে। হালের লেখকেরা অনেকেই বল্পয়েন্ট ছেড়ে ফাউন্টেন পেনে লিখছেন, আর তার সঙ্গত কারণ ও রয়েছে। ভৌতিক গল্পের সম্রাট স্টীফেন কিং ২০০৯ সালে এক্সিডেন্টের পর থেকে কম্প্যুটারের সামনে বসে লিখতে পারেন না, তাই লেখেন ফাউন্টেন পেনে। ফাউন্টেন পেনে লিখলে তার মতে তার লেখার গতি কমে, ফলাফলস্বরূপ প্রতিটা বাক্য অনেক ভেবে চিন্তে লেখা হয়। আরেক ফ্যান্টাসি লেখক নীল গেইমানও লেখেন ফাউন্টেন পেনে। স্টারডাস্ট উপন্যাস লেখার সময় থেকে তিনি ফাউন্টেন পেনে লেখা শুরু করেন। ফাউন্টেন পেনে লেখার কারনে তাঁরও নাকি একইভাবে লেখার গতি কমে, ফলে লেখার প্রতিটা বাক্য ভেবে চিন্তে লেখা যায়। এ ছাড়াও তিনি এক এক দিনে এক এক রকমের কালি ব্যবহার করেন, এ কারনে প্রতিদিনের লেখার পরিমান তার মনে রাখতে সুবিধে হয়।
আজকাল অনেকেই লেখেন কম্প্যুটারে, এই মুহুর্তে যেমন এই লেখাটি আমি অক্ষম হাতে টাইপ করেই লিখে যাচ্ছি। তবে কম্প্যুটার আসার আগেও এভাবে লেখার একটি উপায় ছিল। টাইপ রাইটার।
উইলিয়াম ফকনার, আগাথা কৃষ্টির মত জননন্দিত লেখকেরা লিখেছেন টাইপ রাইটারে টাইপ করে করে। হেমিংওয়ে আবার প্রবন্ধ লেখার সময়ে ব্যবহার করতেন টাইপ রাইটার। তিনি সম্ভবত নিজেই নিশ্চিত ছিলেন না কী দিয়ে লিখলে লেখা ভাল হতে পারে। এটি অবশ্য আমার কথা নয়, এই কথা পেয়েছি ইন্টার নেট গবেষনায়। বড়ই বিচিত্র মতিগতি।
লেখালেখির উপরে কি এই লেখার উপকরণ প্রভাব বিস্তার করে? আমার ঠিক জানা নেই, এটী মানসিক কোন স্বস্তি কিংবা অস্বস্তির ব্যপার হতে পারে। লেখালেখি কিংবা সাহিত্য সৃষ্টি একটি রহস্যময় ম্যাজিক, আর এই ম্যাজিকের যাদু কাঠিটিও রহস্যময় হওয়ারই কথা। ইহা বিজ্ঞান নয়, যাহার উপকরণ নির্দিষ্ট করা রহিয়াছে। একেক লেখকের মনের কল্পনা রাজ্যের চাবি হয়তো এক এক উপকরণে বাঁধা। গবেষক রা গবেষণা করে দেখতে পারেন। আমি অধম মানুষ, আমি কেন যেন বিভিন্ন লেখকের নানান লেখার উপকরণের কথা পড়ে তৃপ্তি লাভ করি।
ব্যক্তিগত ভাবে আমি কী দিয়ে লিখি?
আমি খুবই নিম্ন মানের লেখক, তাই আমার এরকম বিশেষ কোন উপকরন থাকার কথা না। তবে ব্যক্তিগত ভাবেই কেন যেন বলপয়েন্টের প্রতি আমার আজন্ম বিরাগ রয়েছে। এই কলম দিয়ে পরীক্ষায় অনবরত লিখতে লিখতে মধ্যমায় কড়া পড়ে যেত। এ কারনে লেখা লেখির সময়ে বলপয়েন্ট থাকলে লেখা বেরোয় না। ফাউন্টেন পেনের প্রতি আশৈশব এক অদ্ভুত টান রয়েছে। প্রথম ফাউন্টেন পেন কিনে দেন বাবা, রুপালি রঙের সোনালি নিবযুক্ত ওয়াটার ম্যান। আমি অবাক। কাগজে ছোঁয়াবার সাথে সাথে তরতর করে লেখা, আঙ্গুলে কোন ব্যথা নেই, এ তো বড়ই আনন্দ! তবে অবচেতন মনে সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করেছিল কালি ভরার প্রক্রিয়া ও তীরের মাথার মত তেকোনা ছুচোল নিব। গল্প লিখলে তাই ওই ফাউন্টেন পেনেই লেখা হয় আমার।আপাতত একটি হিরো কোম্পানির মেরুন রঙের কলম সম্বল।
মাঝে মাঝে কম্প্যুটার টাইপিং। অবান্তর লেখা সমূহ। ফাউন্টেন পেনের স্পর্শে অদ্ভুত এক আনন্দ লাগে, তখন মাঝে মাঝে লেখা থামিয়ে অবাক হয়ে ভাবি, এই কলমের জায়গা বলপয়েন্ট কেড়ে নিল কিভাবে? স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য কি তবে সুখ ছেড়ে দেওয়া যায়?
_____________________
পাদটীকাঃ কবিগুরু রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর নানান ফরমায়েসী লেখায় অভ্যস্ত ছিলেন। একারনে একবার তাকে একটি কালি কোম্পানির বিজ্ঞাপন ও লিখে দিতে হয়েছিল। সাহিত্যের একমাত্র মহীরূহ হওয়ার এই এক জ্বালা।
কালি কোম্পানির নাম ছিল সুলেখা কালি। কবিগুরু লিখেছিলেন,
সুলেখা কালি

এ কালি কলংকের চেয়েও কালো।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ৯:১৭
৮টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৯

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???



আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে আছি,
আমাদেরও যার যার অবস্হান থেকে করণীয় ছিল অনেক ।
বলা হয়ে থাকে গাছ না কেটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×