আপনারা যারা রোহিঙ্গা ইস্যুতে মুখ বুজে চুপচাপ সব সহ্য করে নিউজফিড স্ক্রল করে চলে যাচ্ছেন কিংবা যারা বার বার রোহিঙ্গা হত্যাতে আমাদের কী আসে যায়, তাঁরা দেশে ঢুকলে দেশেরই ক্ষতি কিংবা পৃথিবীর অন্য কত জায়গায় কত জন অত্যাচারিত হচ্ছে এসব ফাপা যুক্তি দিয়ে সরাসরি ঘটনার বিরুদ্ধে চলে যান তাঁরা দু দলই সমান রকমের ভন্ড। দুই দলই দুই ভাবে দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছেন। দায়িত্ব এড়ানোর সংস্কৃতি টা আমাদের বাঙালী দের মধ্যে নতুন না। বিরক্তির বিষয় হল সেই দায়িত্ব এড়ানো কে ফলাও ভাবে প্রচার করা।
আবেগ আর যুক্তি এক রাস্তা দিয়ে চলে না। তাই সোশ্যাল মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ছবি ভিডিও দেখে যারা বারবার আকুল আবেদন জানাচ্ছেন বাংলাদেশ সীমান্ত খুলে দেয়ার তাঁদের জানা উচিত, এভাবে সীমান্ত খুলে দিলেই আমাদের সমস্ত কাজ শেষ হয়ে যায় না। সীমান্ত খুললে যারা এ দেশে আসবে তাঁদের সামলে রাখার মত অবস্থা আমাদের রাষ্ট্রের নেই। তাই আবেগের বশবর্তী হয়ে রাষ্ট্রীয় কতৃপক্ষ সীমান্ত খুলে দিয়ে তাঁদের আশ্রয় দিতে পারেন না।
কিন্তু এর পুরোটাই কঠিন আর নির্মোহ যুক্তি। ফেসবুক ক্রল করতেই যখন জঘন্যতম অত্যাচারের ভিডিও কিংবা ছবি গুলি ফিডে আসে তখন আবেগ ধরে রাখতে পারেন এমন মানুষ আছেন বলে আমাদের জানা নেই। মৃত শিশুর বিকৃত মুখ দেখে সকলের ভেতরেই ক্রোধের আগুন জ্বলে ওঠার কথা। রোহিঙ্গা দের এই দেশে যারা আগে থেকেই আছেন তাঁরা অনেকেই মাদক ব্যবসা সহ নানান অপরাধের সাথে জড়িত বলে অনেকেই মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন ভাল কথা, কিন্তু এই দেশের অর্ধ শিক্ষিত অশিক্ষিত দরিদ্র বাঙ্গালী দেরও অনেকেই এইসব ক্রাইম সিন্ডিকেটের সাথে সমান ভাবে জড়িত। সমস্যা এই নয় যে তাঁরা রোহিঙ্গা, সমস্যা এই যে তাঁরা এই দেশে আসার পর আশ্রয়হীন, অন্নহীন, সর্বহারা। জীবিকার আর কোন সহজতর উপায় আছে বলে জানা নেই আমার। আজ মায়ানমারে যারা এভাবে নিহত হচ্ছেন অত্যাচারিত হচ্ছেন তাঁদের কোন ধর্মীয় পরিচয়ের কারনে এভাবে হত্যা করা হছে না, তাঁরা সংখ্যালঘু- এই দোষে তাঁরা এভাবে রাখাইন বৌদ্ধদের হাতে নিষ্পেষিত হচ্ছে। আর এটা কোন ধর্মীয় ইস্যু নয় যে রোহিঙ্গা দের সমর্থণ করলে আমরা সাম্প্রদায়িক হয়ে যাব, যেমন টা ইমরান এইচ সরকার ট্যাগ খেয়েছেন। তাহলে সিরিয়া ইস্যুতে সিরিয়া সমর্থণ করে আমাদের সবারই সাম্প্রদায়িক ট্যাগ খাওয়ার কথা।
প্রশ্ন হল, আমরা তাহলে কী করব মশাই? চুপ থাকলে অপরাধ, আবার বিরুদ্ধে বললেও অপরাধ?
প্রতিবাদ করতে পারেন। এভাবে সীমান্ত খুলে দাও- স্লোগান দিয়ে ভাসিয়ে দিলেও এভাবে সীমান্ত খুলে দেয়া যায় না। ক্যাপাবিলিটি আর অপরচুনিটির অনেক জটিল হিসেব কষবার বাকি থেকে যায় যেখানে, সেখানে এরকম সীমান্ত খুলএ তাঁদের আশ্রয় দেয়ার আহবান জানানোর আগে বহু বার ভাবতে হয়, আর বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, এটাই সত্য। ভুমিহীণ মানুষ গুলির মুখের দিকে তাকিয়ে আমারো চিৎকার করে তাঁদের আশ্রয় দেয়ার আহবান জানাতে ইচ্ছে করে, কিন্তু জানি যে বাস্তবতা সে কথা বলে না। বাস্তবতার সমীকরণে অনেক হিসেব ই অন্য ভাবে কষতে হয়।
কিন্তু আমরা প্রতিবাদ করতে পারি। আমাদের সেই ক্ষমতা রয়েছে। সারা পৃথিবী যখন সচেতন হয় তখন পরিবর্তন আসতে বাধ্য। ১৯৭১ এ সব দেখ আমাদের আশ্রয় দেয় নি, আর যে সদেশ দিয়েছিল তাঁর সেরকম লক্ষ লক্ষ মানুষ কে রাখবার ক্যাপাবিলিটি ছিল। কিন্তু পক্ষে থেকে প্রতিবাদ করেছিল অনেক দেশই, পৃথিবীর মুক্তিকামী হাজারো মানুষ। আপনারা কি তাঁদের কাতারে পড়ে প্রতিবাদ জানাতে পারেন না? খবর সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেয়া যায়, যাতে বড় ধরনের কোন পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। বার্মিজ কুকুর দের এই ঐদ্ধত্য রোহিঙ্গা দের আশ্রয় দিলেই শেষ হয়ে যাবে না। তাঁদের আগে থামাতে হবে। আমাদের হাতে অস্ত্র নেই, আমরা সীমান্ত পেরিয়ে যুদ্ধ করতে যেতে পারব না, কিন্তু আমাদের হাতে আরো বড় অস্ত্র হয়েছে। আরব বসন্ত কিংবা শাহবাগ আন্দোলন সংগঠনের অস্ত্র। যোগাযোগ মাধ্যম।
তাই, প্রতিবাদ করুন এখানেই, গলা তুলুন, অপরকে জানান, যাতে সবাই সচেতন হয়। সিংহভাগ মানুষ সচেতন হয়। আর যারা বার বার মিথ্যে দোহাই দেন যে, কই, পৃথিবীর আরো লক্ষ জায়গাতে, এমনকি আমাদের দেশেও কিছুদিন আগেও বন্যায় হাজারো মানুষ মরেছে, তখন কোথায় ছিল এত শোরগোল? তাঁদের সবিনয় জবাব, তখন লেজ গুটিয়ে আপনারাও ছিলেন কোথায়? যারা গলা তুলবার তাঁরা তুলেছে, যারা প্রতিবাদ করে নি, তাঁরা কাপুরুষ। সত্যিকারের মানুষ সব জায়গাতেই সমান ভাবে প্রতিবাদ করে। আজ রোহিঙ্গা বদলে আমাদের দেশে কোথাও মানুষ মারা গেলে, আর কতৃপক্ষ নিশ্চুপ থাকলেও আমি একই ভাবে বলতাম। আপনি কেন বলেন নি তখন?
আগে মানুষ হোন। আগে প্রতিবাদ করুন।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ১১:২৯