somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুস্মৃতি : স্থাপত্যের গল্প ২ অথবা কিছু জ্ঞান গম্যির কথা

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৩:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগের পর্ব টি পড়তে এখানে ক্লিক করতে পারেন বই কি


ভেবেছিলাম টানা স্মৃতি কথা লিখে যাব স্থাপত্য জীবনকে কেন্দ্র করে, তা আর হল না। সমস্ত টা এলোমেলো হয়ে গেল।
আমাদের যখন প্রজেক্ট জমা থাকে, তখন সময় থাকে খুব অল্প, কাজ থাকে বড্ড বেশি। ডিজাইন কর রে, ডিজাইন শেষ হলে তার এপ্রুভাল খোঁজ রে, এপ্রুভড হলে তাঁর প্রেসেন্টেশন শীট বানাও রে, প্রেসেন্টেশন শীটে মাপমত সব প্ল্যান এলিভেশন সেকশন আঁক রে, মডেল বানাও রে। সময় ভয়াবহরকম কম। রাতের পর রাত জেগে থাকা, এক ফোঁটা ঘুম ছাড়া, নির্ঘুম ঘোরে প্রজেক্ট শেষে আবার প্রজেক্ট বোঝাতে জুরিতে দাঁড়ানো। তারপর জুরীতে অনিবার্য কঠিন সমালোচনা কাটা ছেঁড়া, আপনার সাধের আইডিয়া কিংবা কন্সেপ্টের পোস্ট মর্টেম। এত সব জ্বালা যন্ত্রণা শেষে বাড়ি ফিরে ঘুম। আহা, সে কী যে শান্তির ঘুম তা কি বলে বোঝানো যায়?
ভাবতে পারেন, এত সব নিয়মতান্ত্রিক জ্বালা যন্ত্রণায় ইনোভেশন কিংবা সৃষ্টিশীলতার জায়গা কোথায় ভাই? বানাচ্ছ তো সেই দেয়াল ঘেরা বাড়িই।
না হে ভাই, দেয়াল আর দেয়াল তুলে বাড়ি বানাচ্ছি না। সমস্ত টাই শিল্প, সমস্ত টাই কনসেপ্ট। শিল্পী যখন ছবি আঁকতে বসেন, তাঁর সামনে থাকে খালি ক্যানভাস। আমাদের কাছে পুরো পৃথিবীটাই ক্যানভাস, শহরের বুকে একটা খালি জায়গা আমাদের কাছে একটা বিশাল খালি কাগজ, আর স্থাপনা আমাদের কাছে আমাদের শিল্প।
একটি স্থাপনা ডিজাইন করতে মূলত কী লাগে? শুধুমাত্র প্রকৌশল জ্ঞান? কিভাবে দেয়ালের পর দেয়াল তুলে ঘর বানাতে হয়, কিভাবে ইটের ওপরে ইট তুলে মনুমেন্ট ( আমাদের ভাষায় স্কাই স্ক্র্যাপার কিংবা হাই রাইজ ) দাঁড়ায়? না। লাগে আরো গভীর জ্ঞান। আর এই জ্ঞানের প্রথমার্ধের সাথে ওতপ্রোত সম্পর্ক শিল্পের, সাহিত্যের, সংগীতের।
সবার প্রথমেই, স্থপতি হওয়ার জন্য গড়ে তুলতে হবে পরিপূর্ন এক শিল্প মন। থাকতে হবে তুখোড় কম্পোজিশন জ্ঞান, আলো ছায়া নিয়ে সম্যক ধারণা, জানতে হবে ব্যালান্স হারমনি হায়ারারকি। প্রকৃতির প্রতিটা উপাদানের ধরন জানতে হবে, তাদের অনুভব করতে হবে মন থেকে, ইট কাঠ পাথরকে ভালবেসে ফেলে খুঁজতে হবে তাঁদের সাথে সৌন্দর্যের সংযোগ। দেয়াল কিংবা দালানের ভেতর খুঁজে পেতে হবে সংগীত, আবার তার সুত্র ধরে বুঝতে হবে প্রকৃতির সুর, কোথাও একটু কেটে গেলেই মুশকিল, সমস্ত টাই উলটে পালটে যাবে। স্থপতিরা ঘর বাড়ি বানান না শুধু, তাঁরা ছবি আকেন ইট কাঠ পাথর দিয়ে। গান লেখেন, তাদের কথা যোগায় কংক্রিট, সুর যোগায় আলো ছায়া বাতাস শব্দ, তারা নিঃশব্দে প্রাণ এনে দেয় সেই স্থাপনায়।
ঠিক যেভাবে একটি আইডিয়া থেকে জন্ম নেয় কবিতা কিংবা গল্প, সেই ভাবেই আইডিয়া আর কনসেপ্ট থেকেও জন্ম নেয় স্থাপত্য। ধরা যাক, একটি সমুদ্রের ধারে একটি বাড়ি বানাবেন আপনি। স্থপতির মাথায় কনসেপ্ট এল, এমন এক বাড়ি হবে, যার সাথে দিন রাত সংযোগ থাকবে সমুদ্রের। তাই আপনার বাড়িতে চলে এল বিশাল বিশাল জানলা, খোলা দেয়াল, এমনভাবে বড়ি তৈরি হল, যে দিকেই যান না কেন, দেখতে পাবেন সমুদ্র কে, শুনবেন সেই সমুদ্রের গান। অদ্ভুত সুন্দর না? অথবা ধরুন বিজন প্রান্তরে রয়েছে একটি বিশাল মহীরুহ, ভাবলেন তাকে ঘিরেই বানাবেন আপনার ঘর। স্থপতি নিয়ে এলেন প্রকৃতির সাথে স্থাপনার এমন এক সংযোগ, যেখানে সেই বৃক্ষকে ঘিরে এমন ভাবে নির্মিত হল আপনার বাড়ি, যেখানে প্রতিটি জায়গা থেকেই অনুভব করা যেতে পারে সেই বৃক্ষের অস্তিত্ব, স্পর্শ করা যায় সবুজকে। ফ্রাংক লয়েড রাইট এর বিখ্যাত স্থাপত্য দা ফলিং ওয়াটার দেখেছেন কী? সেখানে জলপ্রপাত, সবুজ আর জলের সাথে এমন ভাবে মিশেছে তাঁর স্থাপনা, ফারাক বের করবার যো নেই, কোথায় শুরু কোথায় শেষ।



তাই শুধুমাত্র বাড়ি বানিয়েই ক্ষান্তি নেই আমাদের, আমাদের একটি স্থাপনা গড়বার আগে গড়ে নিতে হয় এমন এক মননশীলতার, যেখানে শিল্প সংগীত আর আধ্যাত্নিকতা এসে মিলেছে এক সুচারু মেলবন্ধনে।
স্থাপত্য জীবনের দ্বিতীয়ার্ধের গল্প হবে আগামী পর্বে। আপাতত ইতি টানা যাক। নিজের স্মৃতিতেও ফিরব অন্য এক সময় আবার।



জাপানের সুবিখ্যাত স্থপতি তাদাও আন্দোর চার্চ অফ লাইট, যেখানে আলো ছায়ার খেলায় ধরা দেয় ঐশ্বরিক আধ্যাত্নিকতা

সর্বশেষ এডিট : ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:১২
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৯

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???



আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে আছি,
আমাদেরও যার যার অবস্হান থেকে করণীয় ছিল অনেক ।
বলা হয়ে থাকে গাছ না কেটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×