কখনো কখনো এমন সময় আসবেই, লিখিয়ের জীবনে, লেখার মালমশলা ঘুর ঘুর করবে মাথায়, লিখতে ইচ্ছে করবে না। লম্বা ছুটিগুলো এভাবেই কাটে, এক অদ্ভুত বিষন্ন যন্ত্রণাবোধে। তাই পুরনো কবিতাগুলো হাতড়ে বেড়াই।
প্রচন্ড ঘরকুনোরা অনেকটা শতবর্ষী মহীরূহের মতোন, একবার কোথাও জেঁকে বসলেই শেকর ছড়িয়ে যায় অনেকটা গভীরে। তেমনি আমার শেকড় ছড়িয়েছিল আমাদের পুরনো বাড়িটায়। নিতান্ত সাধারণ, পুরনো ধাঁচের বাড়ি, শহরকে আধুনিকতা ছোঁয়ার আগে তৈরি হয়েছিল। চার খানা কামরার ইট পলেস্তরা খসা ভাড়া বাড়িটায় আমার জন্ম, যে বাড়ির ব্যালকনিতে আজকালকার বড় বড় এপার্টমেন্টের চেয়েও অনেক বেশি আলো আর বাতাসের আনা গোনা ছিল।
চার তলা বাড়িটাতে আরো ছিল নোনা দেয়ালের এবড়ো খেবড়ো, অনেক গুলো মাটির টব জমা ছাদ। সেই ছাদে কেটেছে শৈশব কৈশোরের লম্বা সময়, অলস বিকেল, রহস্যময় সন্ধ্যা, গ্রীষ্মের উষ্ণতম রাত্রি। ঘুড়ি ওড়ানো থেকে শুরু করে আকাশ দেখা, গভীর রাতে একলা শুয়ে তারা গোনা কিংবা চোখ বুজে গাছপালার সোঁদা ঘ্রাণ কেমন আলাদা করে রেখেছিল জীবনটাকে, যান্ত্রিক শহরের অনুভুতিহীন শূন্যতা থেকে।
ভালই ছিলাম, বড্ড ভাল ছিলাম। কেমন ছিলাম?
কতদিন কেটে গেছে বিশ বছরের পুরনো বাড়ির
নির্জন ছাদে শুয়ে-ধীরে ধীরে রাত ঘুরে গেলে
এক ঝাক হিমেল বাতাস মুখ ছুয়ে দিয়েছে জানান
রাত শেষ হল,এবার বাড়ি যাও
এবার আলো শুরু হবে।
কতটা সময় কেটে গেছে শুকনো পাতার গন্ধ গায়ে মেখে
চোখের সামনে সব অস্পষ্ট হয়েছে যখন
ধুসর কুয়াসার ভীড়ে পঞ্চমীর মুমূর্ষ চাঁদ তবু
প্রানপনে করে গেছে বিবর্ন আলো বিতরন-
সেই আলো ভালবেসে কাছে টেনে ঘুমিয়ে পড়েছি কখন?
আজ নির্জন রাতে সে ঘুমের সময় খুঁজি অস্থির।
একা একা নিঃসঙ্গ আমি-দেখেছি সন্ধ্যার
আকাশে শহরের নিম্ন মধ্যবিত্ত পাখি বাড়ি ফেরে
উড়ে যায় অচকিতে ;ফিরে আসে শরনার্থী ফলভুক বাদুড়ের দল
ঘন কালো ডানা মেলে-আকাশের নীল রঙনীল থেকে
আরো ঘন নীল হয়ে আধারের দেহে মেশে কি আদিম কামনায়!
শ্যাওলার সোঁদা ঘ্রান এতটা দুরেও ভেসে আসে,উচু দালানের
অস্পৃশ্য কোনায় মোহময়!সন্ধ্যা কেন মায়াবী মনে হয়?
চেয়ে দেখি এ আমার পুরনো ছাদের খসে পড়া
ধুলোমাটি বিবর্ন পলেস্তারা,সাদা রঙ ধুসর হয়েছে কবে
শীতল নিস্পৃহ অবহেলায়,আসবে কি এবার ভাঙ্গন?
অনেকটা দূর পরবাসে-অজানা অবিশ্বাসী অনিশ্চিত এই ঠিকানায়
আজো চারপাশে বিশ বছরের জমে থাকা স্মৃতির গন্ধ পাই
চারপাশে।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:২০