somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার প্রথম খন্ডকালীন চাকুরীর প্রচেস্টা

১৬ ই জুলাই, ২০০৯ রাত ৯:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঘটনাটি ছয় বছর আগের। ভার্সিটির নতুন ছাত্র। টিউশন তখনও যোগার করা হয় নাই। হঠাৎ একদিন পত্রিকায় নজরে আসলো একটি ডাটা এন্ট্র অপারেটর নয়োগ বিজ্ঞপ্তি। একটি ঠিকানা দিয়ে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তির শেষে অনভিজ্ঞদের বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। যেন আমাকেই খুজছে তারা!

দ্রুত সেটি ছিড়ে নিলাম, চলে গেলাম বন্ধু বাপ্পি কে দেখাতে। সেও দারুন খুশী হলো। পরদিনই আমরা যাব ঠিক করলাম। খুব খুশী লাগছিল। আমার ধারনা ছিল আমাদের চেয়ে যোগ্য কোন লোক তারা খুজেই পাবে না। তাছাড়া, এরা অনভিজ্ঞ লোক চেয়েছে, ঘাগু লোকেরা বাগড়া দিতে আসতে পারবে না।

পরদিন দুপুরে খেয়েই রওয়ানা দিলাম। ঢাকার অলিগলি ভালভাবে চিনতাম না তখন। তাই রিক্সা থেকে আগেই নেমে বিভিন্ন দোকানে খোজ নিয়ে নিয়ে এগোচ্ছিলাম। সর্বশেষ একটি চায়ের ঝুপরিতে জিজ্ঞেস করতে গিয়ে দেখি আরেকজন মাঝবয়সী লোক একই ঠিকানার খোজ করছে। বুঝলাম প্রতিদ্বন্দী। বাপ্পীর সাথে চোখে চোখে কথা হয়ে গেল। এই লোকের আগেই আমাদের পৌছতে হবে। কোন কথা না বলে দ্রুত হাটা দিলাম। ঐ লোকের আগেই পৌছে গেলাম, ইয়াহু!

প্রকাশিত ঠিকানাটি দেখলাম কোন অফিসের না, একটি ফ্ল্যাট বাড়ি, আসবাব পত্রও তেমন কিছু নেই। এত তাড়াতাড়ি এসেও দেখলাম প্রায় ৫০-৬০ জন লোক উপস্থিত। একটি টেবিলে নিয়োগকর্তার এক প্রতিনিধি ছিলেন। তিনি নাম-ধাম জমা নিচ্ছিলেন। আমরাও নাম জমা দিলাম।

একটু পর দেখলাম দুইজন লোক বেশ উত্তপ্ত গলায় তর্ক করছে নিয়োগকর্তার প্রতিনিধির সাথে। সেখানে গিয়ে জানতে পারলাম, এই কোম্পানী(!) দুই পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। এক পত্রিকায় লিখেছে অভিজ্ঞদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে, অন্য পত্রিকায় লিখেছে অনভিজ্ঞদের অগ্রাধিকার। ব্যাপরটা বুঝলামনা, তাই বেশী মাথা ঘামালাম না।

দশ জন দশ জন করে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ভিতরের একটি রুমে ডাকছিল। আমাদের পালা আসলে আমরাও পরীক্ষা দিলাম। শিশুতোষ কিছু প্রশ্ন ছিল, যা সবাই পারবে। পরীক্ষার ফি হিসেবে ১০ টাকা নিল। ফি এর কথা শুনে একজন বললো এই কোম্পানী নিশ্চত ভুয়া। সে তার ফাইল খুলে ৮/১০ টা অভিজ্ঞতা সনদ দেখালো এবং বললো যে এসব ভুয়া কোম্পানীতে সে কাজ করতে আগ্রহী নয়।

যাই হোক, লিখিত পরীক্ষার পর ১০ জন ১০ জন করে এবার কোম্পানীর এম.ডি. এর সাথে দেখা করতে আরেকটি রুমে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। এম.ডি.-এর রুমে ঢুকে দেখি এক মহিলা বড় সড় গদি ওয়ালা চেয়ারে আসীন। পাশে শুকনো এক ভদ্রলোক। তারা আমাদের বললো, আমরা খুবই ভাগ্যবান। তাদের হাতে লক্ষ লক্ষ টাকার কাজ। তাদের প্রচুর লোক দরকার। আমাদের সবাইকে তারা নিয়োগ দিতে পারে। তবে, ওদের কাজগুলো একটু কঠিন, তাই বিশেষ কোর্স না করলে পারা যাবেনা। আমাদের ভাগ্য আরো ভাল, কারন, তারই এই কোর্স করায়। এই কোর্স করতে তাদেরকে দুই দিনের মধ্যে অগ্রীম ৩০০০ (তিন হাজার) টাকা দিতে হবে। টাকা দেওয়ার সাথে সাথে অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার দেওয়া হবে।

শেষ পর্যন্ত আমরা আশাহত হলাম। আমি তখন পুরো মাস ২৫০০ (আড়াই হাজার) টাকায় চালাতাম। নিজের ৩০০০ টাকা বৃত্তির টাকা তুললে বা নতুন সেশনে ভর্তির সময় ছাড়া কখনই থাকতো না। খুবই মর্মাহত হয়েছিলাম। পুরো রিক্সা ভাড়াটাই লস, তার উপর ১০ টাকা পরীক্ষার ফি।

এর পরে আর কখনও এধরনের বিজ্ঞপ্তি দেখে আবেদন করিনি। তবে এই শিক্ষাটা পরে কাজে এসেছে। তখন শিক্ষাটা না পেলে পরে হয়তো আরও বেশী ঠকতাম।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুলাই, ২০০৯ রাত ৯:১৯
১১টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×