somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কেইস স্টাডিঃ জেনোসাইড ইন বাংলাদেশ - পর্ব ২ (পুরুষদের বিরুদ্ধে “জেন্ডারসাইড”)

২৪ শে মার্চ, ২০০৮ সকাল ৯:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২. বাঙ্গালী পুরুষদের বিরুদ্ধে “জেন্ডারসাইড”

জেন্ডারসাইড বলতে বুঝায় নির্দিষ্ট লিঙ্গের মানুষের গণহত্যা। ৭১ সালের গণহত্যাও এই শ্রেনীর মধ্যে পরে।


২. ক পুরুষ মানুষের প্রতি আক্রোষ

এই গণহত্যার নির্দিষ্ট কিছু টার্গেট ছিলো। এন্থনি মাসকারেনহাসের মতে প্রধান টার্গেট ছিলোঃ (এন্থনি মাসকারেনহাস, দা রেইপ অফ বাংলাদেশ পৃ. ১১৬-১৭) – “গনহত্যার লক্ষ্য নিয়ে কোন দ্বিধা দ্বন্ধ ছিলো না”।

তার মতে - গনহত্যার লক্ষ্য ছিলো যথাক্রমেঃ

১. সেনাবাহিনীতে চাকুরিরত বাঙ্গালী জওয়ান, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস, পুলিশ, আনদার ও মুজাহিদ

২. হিন্দু - আর জে রুমেল কুমিল্লাতে নিজ কানে শুনেন যে মিলিটারিরা বলছিলো, - “আমরা শুধু ছেলেদের হত্যা করার জন্য এসেছি, মহিলা ও শিশুরা নিরাপদ, আমরা কি কাপুরুষ যে তাদের হত্যা করবো” (ডেথ বাই গভার্নমেন্ট পৃ. ৩২৩) তাঁর মতে মিলিটারিরা নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করাকে নায়কোচিত কাজ বলে মনে করতেছিল। অবশ্য অনেক ক্ষেত্রেই পুরো পরিবার হত্যাকান্ডের স্বীকার হয়েছিল।

৩. আওয়ামী লীগের নেতা, কর্মী ও সমর্থক।

৪. ছাত্র - কিশোর ও তরুন বয়সীদের প্রতিও পাকি মিলিটারির নির্মম আক্রোষ দেখা গিয়েছিলো। তারা অল্প বয়সী কেউকে দেখলেই মুক্তিবাহিনী বলে মনে করত এবং নির্বিচারে তাদের হত্যা করে। আর জে রুমেলের বর্নণায় অসংখ্য কিশোর ও তরুনদের মৃতদেহ দেখা গিয়েছিল মাঠে, নদীতে ভাসমান অবস্থায় বা আর্মি ক্যাম্পের আশে পাশে।

৬. বাঙালী বুদ্ধিজীবি - শিক্ষক ও অধ্যাপকদের মধ্যে সেনাবাহিনীর দৃষ্টিতে যাদের “সংগ্রামী” মনে হয়েছ - তাদেরকেই হত্যা করা হয়েছে (এন্থনি মাসকারেনহাস, দা রেইপ অফ বাংলাদেশ পৃ. ১১৬-১৭)

এন্থনী মাসকারেনহাসের লেখার সারমর্ম হলো এই যে, হত্যাকান্ডের সাথে লৈঙ্গিক ও সামাজিক শ্রেনীর (বুদ্ধিজীবি, অধ্যাপক, শিক্ষক, নেতা/কর্মী, এবং মুক্তিসংগ্রামীরা প্রায় সবাই পুরুষ ছিলো)। অনেক ক্ষেত্রে উপরোক্ত ব্যক্তিবর্গের পরিবারের সদস্যদেরও হত্যা করা হয় শুধু মাত্র পারিবারিক বা রক্তের সম্পর্কের কারনে।

এই সব বিষয় থেকে প্রমানিত হয় ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী কর্তৃক একটা জেন্ডারোনাইড সংগঠিত হয়েছে।

ড. রওনক জাহানের মতে - “ মুক্তিযুদ্ধের সম্ভ্রাব্য যোদ্ধা হিসাবে সকল যুবকদের গ্রেফতার ও নির্যাতন চালায় আর্মি - পরে আধিকাংশকে হত্যা করা হয়। এই অবস্থার প্রেক্ষিতে শহর ও উপশহরগুলো যুবক শুণ্য হয়ে যায়। তাদের অনেকে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেয় অথবা মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়। ”

“সক্ষম যুবকদের মধ্যে যাদের খাতনা করা হয়নি তাদের জন্যে মৃত্যু অবধারিত হয়ে যায়”। (জেনোসাইড অব বাংলাদেশ, আর জে রোমেল, পৃষ্ঠা ২৯৮)


রোমেল আরো বলছেন - “পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর দৃষ্টিতে প্রতিরোধ যুদ্ধে যেতে স্বক্ষম কিশোর যুবকদের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান চালায় - সেই অভিযানে ধৃত যুবকদের আর কখনও জীবিত অবস্থায় দেখা যায়নি। তাদের মৃত দেহগুলো ভাসতে দেখা গেছে নদীতে, সেনা ক্যাম্পের কাছে। এই অভিযানে স্বাভাবিক ভাবে ভীত হয়ে পড়েছিলো সকল যুবক আর তাদের পরিবারবর্গ। এই অব্স্তার প্রেক্ষিতে ১৫ থেকে ২৫ বছরের সকল যুবক গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে পালিয়ে বেড়িয়েছে - যাদের অনেকে ভারতে চলে গিয়েছিলো। যারা বাড়ী ছাড়তে চাইছিলো না - তাদের মা বা বোনেরা তাদের জোর করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে - যাতে তাদের জীবন রক্ষা পায়।“ ( ডেথ বাই গভর্নমেন্ট)

রোমেলের বর্ননা মতে ( পৃষ্টা - ৩২৩) এই গা হিম করা গনহত্যার উৎসবটি অনেকটা নাজীদের “পুরুষ নিধন” কর্মসূচীর সাথে তুলনীয়-যাতে - “এটা ছিলো প্রদেশব্যাপী একটা গনহত্যা, যেখানে হিন্দুদের আলাদা করে হত্যা করা হয়েছে - সেই প্রক্রিয়ায় সেনা সদস্যরা ধৃতব্যক্তিদের খাতনার বিষয়টা নিশ্চিত হতো - যা মুসলমানদের জন্যে বাধ্যতামুলক - যদি খাতনা করা থাকতো - তাহলে হয়তো তাৎক্ষনিক মৃত্যু এড়ানো যেত।“


রবার্ট পাইন ঢাকা শহরের আশেপাশে গনহত্যার স্থানগুলোর বর্ননা করতে গিয়ে সেইগুলোকে পরিকল্পিত গনহত্যা - বিশেষ করে লৈঙ্গিক” গনহত্যার একটা ক্লাসিক উদাহরন হিসাবে দেখেন - যা লিঙ্গভিত্তিক ও নিরষ্ত্র মানুষের উপর সংগঠিত হয়ে ছিলো বলা হয়।



“ঢাকা ও তার আশেপাশে নির্জন প্রান্তগুলোতে মিলিটারি জান্তা গণহত্যার এক্সপেরিমেন্ট চালায় (বিশেষ করে পুরুষদের উপরে) যাতে করে সাংবাদিকদের চোখ এড়িয়ে যায় এই ঘটনাগুলো। বুড়িগঙ্গার তীরে হরিহারাপারাতে এইরকম তিনটা প্রমান রবার্ট পাইন আবিষ্কার করেন – একটি বন্দীশালা (নদী তীরবর্তী গোডাউন), মৃত্যুদন্ড দেবার জায়গা (নদীর তীরে) ও তাদের লাশ ধামাচাপা দেবার উপায় (নদীতে ভাসিয়ে দিয়ে)। ছয় থেকে আট জন বন্দীকে দড়ি দিয়ে বেধে রাতের আধারে মেরে ফেলা হয়েছে। এই ঘটনা ঘঠেছে রাতের পর রাত। পাকিস্তান ন্যাশনাল ওয়েল কোম্পনীর গোডাউনটি ছিল নদীর ধারে - সেখানে প্রতিরাতে দলে মানুষ ধরে আনা হতো - আট দশজনকে দড়ি দিয়ে বেধেঁ নদীর অল্প পানিতে নামিয়ে গুলি করা হতো। ভোরে কোন নৌকার মাঝিকে দিয়ে ভাসমান লাশগুলোর দড়ি কেটে আলাদা করে দিয়ে নদীর মাঝে টেনে নিয়ে যাওয়া হতো - যাতে স্রোতের টানে লাশগুলো আলাদা আলাদা ভাবে ভেসে যায় (রবার্ট পাইন, ম্যাসাকার, পৃ. ৫৫)।

উপরের বর্ননা থেকে এইটা বলা যায় যে, এই হত্যাকান্ডগুলো আর্মেনিয়া ও নানজিং (১৯৩৭) গনহত্যার সাথে সমাঞ্জ্যস্যপূর্ন।



মুল রচনা: জেন্ডারোসাইট ওয়াচ
http://www.gendercide.org/

[জোন্ডারসাইট ওয়াচ সাধারন মানুষের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত হত্যালীলার বিষয়ে গবেষনা করে। তাদের মতে নিরস্ত্র মানুষের উপর সংগঠিত হত্যাকান্ড বা গনহত্যা বর্তমান শতাব্দীতে বিশ্বমানবতার বিরুদ্ধে বড় একটা হুমকী]

১. পর্ব ১-সূচনা ও পূর্ব কথা

সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মার্চ, ২০০৮ সকাল ১০:০৫
১৩টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×