somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ময়ূর

২৩ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পৃথিবীর প্রাণিকুলের মধ্যে পাখিকে শান্তির প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আদিকাল থেকে মানুষ খাদ্য তালিকায় পাখির ডিম ও মাংসের সংযোজন করে আসছে। রসনা তৃপ্তির পাশাপাশি সৌন্দর্যপিয়াসী মানুষ নানা জাতের পাখি পালনও করে আসছে আদিকাল থেকে। কারও কারও কাছে পাখি পালন শখের বিষয়। তাই মানুষ নিজেদের খাদ্য চাহিদা, শখ ও মনোরঞ্জনের জন্য পাখিকে নিজ আয়ত্তে রাখার প্রয়াস অব্যাহত রেখেছে। এরই ধারাবাহিকতায় অনেক পাখিই মানুষের পোষ মেনেছে।
পৃথিবীর সব সুন্দরতম পাখির মধ্যে ময়ূর রয়েছে সবার শীর্ষে। বাংলাদেশের সুন্দরতম পাখিগুলোর মধ্যেও ছিল বর্মি ও ভারতীয় ময়ূর। এ প্রজাতি দুটি বর্তমানে দেশে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ময়ূর যেমন সুন্দর পাখি, তেমনি এদের অপূর্ব সুন্দর পেখম সবাইকে বিমোহিত ও আকৃষ্ট করে। তাই ময়ূরের পালক সবার কাছেই অত্যন্ত সমাদৃত। যারা কোনোদিন ময়ূর দেখেনি তারাও এদের পালকের খুব ভক্ত। ময়ূরীর পেখম নেই কিন্তু ময়ূরের রয়েছে অপূর্ব আকর্ষণীয় পেখম। ময়ূরের সবুজ পেখমের পালকে অনেক রঙীন বড় ফোঁটা থাকে, যা খুবই আকর্ষণীয়। পেখমগুলো লেজের গোড়ার ওপরের পালক, যা অতিমাত্রায় লম্বা। ময়ূরের চূড় আছে। ময়ূর পিঠের ওপর পেখম তুলে ডানা ঝুলিয়ে নেচে নেচে ময়ূরীকে আকর্ষণ করে, যা অত্যন্ত মনোহর ও চিত্তাকর্ষক। এদের দেহে উজ্জ্বল সবুজ ও নীলাভ পালক থাকে। মাথা, ঘাড়, গলা ও ডানার পালক কিছুটা নীলাভ। ডানার বাকি অংশ ও পা লালচে।
মৎস্য শিকারিরা সেই যুগ যুগ ধরে আগে থেকে মাছ ধরার ছিপের সঙ্গে ময়ূরের পালক ব্যবহার করে আসছেন। বিদেশেও ময়ূরের পালকের যথেষ্ট জনপ্রিয়তা রয়েছে। ময়ূরের মাংস বেশ সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর। যেহেতু এদের মাংস বাজারে বিক্রি হয় না, সেহেতু তা পাওয়া গেলেও তার জন্য মূল্য দিতে হয় অত্যধিক। এই প্রেক্ষাপটে কবুতর, তিতির, কোয়েল এবং টার্কির মতো ময়ূরকেও পোলট্রি শিল্পের অন্তর্ভুক্ত করা যায়।
ময়ূর দলবদ্ধভাবে বনে-জঙ্গলে বিচরণ করে। ৫-৬টি ময়ূরীর সঙ্গে এক এলাকায় একটি ময়ূর থাকে। এরা মাটিতে চলাফেরা করলেও বেশিরভাগ সময় বড় গাছের ডালে থাকে। শস্যদানা, কীটপতঙ্গ, সাপ, ব্যাঙ প্রভৃতি এদের প্রিয় খাদ্য। মাটিতে সামান্য গর্ত করে ৩-৫টি ডিম পাড়ে। ডিমগুলো ধূসরাভ। ডিম থেকে বাচ্চা ফুটতে ২৭-৩০ দিন সময় লাগে। এদের গড় আয়ু প্রায় ৩৫ বছর। ময়ূরের যৌবনপ্রাপ্তি ঘটে সাধারণত ৩-৪ বছরে। আবদ্ধ অবস্থায় লালন-পালনের ক্ষেত্রে এদের নিয়মিত গম, ধান, সবজি, বীজ প্রভৃতি খেতে দিতে হয়। পেঁপে, তরমুজসহ অন্যান্য পাকা ফলও এদের প্রিয় খাদ্য।
ময়ূরের পালকের প্রচুর জনপ্রিয়তা থাকার জন্য দেশের বহু অভিজাত দোকানে এদের পালক বিক্রি হয়ে থাকে। দেশে বিদ্যমান চিড়িয়াখানাগুলো ছাড়া দেশের অন্য কোথাও ময়ূর সাধারণত দেখা যায় না। তবে কখনও কখনও চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন বনে কদাচিৎ বর্মি ময়ূরের দেখা মেলে। এমনও এক সময় ছিল যখন ময়ূর ঢাকা জেলার শালবন থেকে ময়মনসিংহ, ভারতের মেঘালয় ও আমাদের দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিচরণ করত। বাংলাদেশে এ মূল্যবান পাখিটি বিলুপ্ত হয়ে গেলেও ভারতে যথেষ্ট সংখ্যক ময়ূর পাওয়া যায়। ময়ূর ভারতের জাতীয় পাখি। বাংলাদেশের আবহাওয়া ময়ূর লালন-পালনের জন্য বেশ উপযোগী। কিন্তু বর্তমানে তা শুধু চিড়িয়াখানা ও বিত্তবানদের পাখি হিসেবে পরিচিতি লাভ করছে। প্রকৃতপক্ষে এ পাখিটি গ্রামের হতদরিদ্র মানুষ থেকে অনেক পরিবারই স্বাচ্ছন্দ্যে লালন-পালন করতে পারে।

৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এই ৩০ জন ব্লগারের ভাবনার জগত ও লেখা নিয়ে মোটামুটি ধারণা হয়ে গেছে?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৬ ই জুন, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৯



গড়ে ৩০ জনের মতো ব্লগার এখন ব্লগে আসেন, এঁদের মাঝে কার পোষ্ট নিয়ে আপনার ধারণা নেই, কার কমেন্টের সুর, নম্রতা, রুক্ষতা, ভাবনা, গঠন ও আকার ইত্যাদি আপনার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আর্তনাদ

লিখেছেন বিষাদ সময়, ১৬ ই জুন, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২১

গতকাল রাত থেকে চোখে ঘুম নাই। মাথার ব্যাথায় মনে হচ্ছে মাথার রগগুলো ছিঁড়ে যাবে। এমনিতেই ভাল ঘুম হয়না। তার উপর গতকাল রাত থেকে শুরু হয়েছে উচ্চস্বরে এক ছাগলের আর্তনাদ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মন তার আকাশের বলাকা || নিজের গলায় পুরোনো গান || সেই সাথে শায়মা আপুর আবদারে এ-আই আপুর কণ্ঠেও গানটি শুনতে পাবেন :)

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১৬ ই জুন, ২০২৪ রাত ১০:০০

ব্লগার নিবর্হণ নির্ঘোষ একটা অসাধারণ গল্প লিখেছিলেন - সোনাবীজের গান এবং একটি অকেজো ম্যান্ডোলিন - এই শিরোনামে। গল্পে তিনি আমার 'মন তার আকাশের বলাকা' গানটির কথা উল্লেখ করেছেন। এবং এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল্যাইকা লেন্সে ওঠানো ক’টি ছবি

লিখেছেন অর্ক, ১৭ ই জুন, ২০২৪ সকাল ১১:৩০




ঢাকার বিমানবন্দর রেল স্টেশনে ট্রেন ঢোকার সময়, ক্রসিংয়ে তোলা। ফ্ল্যাস ছাড়া তোলায় ছবিটি ঠিক স্থির আসেনি। ব্লার আছে। অবশ্য এরও একটা আবেদন আছে।




এটাও রেল ক্রসিংয়ে তোলা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×