দেশের ১৮ তম রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর দেশে এখন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করছেন স্পিকার আবদুল হামিদ । ২০ মার্চ বিকাল থেকে তিনি এ দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে গত ১১ই মার্চ জরুরিভাবে রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানকে এয়ার এম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন স্পিকার আবদুল হামিদ ।
জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক পতিত প্রেসিডেন্ট হো মো এরশাদ শোক প্রকাশ করলেও তিনি নাকি নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। জাতীয় পার্টির একটি উধ্বর্তন সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারক পর্যায়ে এরই মধ্যে এরশাদের পক্ষ থেকে লবিং শুরু করা হয়েছে।
একদিকে নির্বাচনের খুব বেশিদিন বাকি নেই, অন্যদিকে দেশে একধরনের রাজনৈতিক সংকট বিরাজ করছে। তাই এরশাদ মনে করছেন, এটিই তার স্বপ্ন পূরণের মোক্ষম সূযোগ। রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর কয়েক ঘন্টার মধ্যেই তাই তৎপর হয়ে উঠেছেন পতিত স্বৈরাচার এরশাদ জীবনের শেষ ইচ্ছা পূরণের আশায়।
অবশ্য অনেক আগেই বিশ্বের সাড়া জাগানো ওয়েবসাইট উইকিলিকস গোপন তথ্য ফাঁস করেছিল যে, জিল্লুর রহমানের পর প্রেসিডেন্ট হতে চান এরশাদ। এ প্রসঙ্গে উইকিলিকসের ফাঁস করা তথ্যে জানা যায়, ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট ঢাকার মার্কিন দূতাবাস থেকে ওয়াশিংটনে একটি তারবার্তা পাঠানো হয়। এতে বলা হয়, এরশাদ মার্কিন দূতাবাসকে বলেন, জিল্লুর রহমানের পর তিনি কোনো এক সময় প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেবেন। তিনি আরও বলেন, সরকার গঠনের জন্য আওয়ামী লীগের আগামীতেও জাতীয় পার্টিকে প্রয়োজন হবে।
তারবার্তায় তত্কালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি মন্তব্য করেন, দলের জন্য অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ জিল্লুর রহমানকে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব দিলেও আওয়ামী লীগের ইচ্ছা প্রেসিডেন্টের ভূমিকা দুর্বল করা ও প্রধানমন্ত্রীর অধীনে রাখা। এরশাদ প্রতি উত্তরে জানিয়েছিলেন, জিল্লুর রহমান শারীরিকভাবে অসুস্থ। এই অসুস্থতার কারণে তাকে একসময় দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেবে আওয়ামী লীগ। প্রেসিডেন্ট হিসেবে তখন নিজের স্বপ্নপূরণের জন্য এরশাদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চেয়েছিলেন।
২০০৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি দেশের ১৮তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্বগ্রহণ করেছিলেন জিল্লুর রহমান । ২০১৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি তার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা।
ওয়ান-ইলেভেন-পরবর্তী দুর্দিনে দলের কাণ্ডারি জিল্লুর রহমানের মৃত্যুতে সব মহলে শোকের পাশাপাশি আলোচনা শুরু হয়েছে নতুন রাষ্ট্রপতি নিয়ে। আগামী নির্বাচন ও নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে টালমাটাল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আগামী দিনে বঙ্গভবন হয়ে উঠবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফলে কে হচ্ছেন দেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপ্রধান, তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও গুঞ্জন শুরু হয়েছে।
মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদও রাষ্ট্রপতি পদের অন্যতম প্রধান দাবিদার বলে জানা গেছে। আলোচনায় নাম আসছে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীরও।
সংবিধান অনুযায়ী আপাতত জাতীয় সংসদের স্পিকার অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করবেন। গত ১৪ মার্চ মন্ত্রিপরিষদ সচিব স্পিকারের অস্থায়ীভাবে দায়িত্ব পালনের কথা জানান। সংবিধানের ৫৪ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হইলে কিংবা অনুপস্থিতি, অসুস্থতা বা অন্য কোন কারণে রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হইলে ক্ষেত্রমত রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত কিংবা রাষ্ট্রপতি পুনরায় স্বীয় কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত স্পিকার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করিবেন।’ স্পিকার আবদুল হামিদের রাষ্ট্রপতি পদে স্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা সংশ্লিষ্ট অনেকে নাকচ করে দিয়েছেন।
মহাজোটের প্রধান পার্টনার জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ প্রেসিডেন্ট পদটির অন্যতম দাবিদার বলে জানা গেছে। জাতীয় পার্টির দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, মহাজোটে যোগ দেয়ার সময় জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে প্রধান দাবি ছিল এরশাদকে কিছু সময়ের জন্য হলেও রাষ্ট্রপতি করা। মো. জিল্লুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি করার পর এরশাদ অভিমান করে বেশ কিছু দিন মহাজোট ছাড়ার হুমকি দেন। জাতীয় পার্টির দাবি মহাজোট অটুট রাখতে বিভিন্ন সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এরশাদের সাক্ষাতের সময় তাকে আশ্বস্ত করা হয়েছে, জিল্লুর রহমানের পরে তার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। বিভিন্ন সময়ে এরশাদ তার ঘনিষ্ঠদের বলেছেন, এক দিনের জন্য হলেও তিনি আরেকবার বঙ্গভবনের চেয়ারে বসবেন। রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের ইন্তেকালের পর জাতীয় পার্টিতে নতুন করে এসব আলোচনা জোরদার হয়েছে। জাতীয় পার্টির অনেক সিনিয়র নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিকট প্রতিবেশী দেশের কাছে শেখ হাসিনার পরই সবচেয়ে বিশ্বস্ত হচ্ছেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। সে সুবাদে জাতীয় পার্টি শিবিরে আশাবাদের সৃষ্টি হয়েছে।
যদিও জাপার শীর্ষ নেতাদের কেউ কেউ বিশ্বাস করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে যে রাজনৈতিক দুর্যোগ অপেক্ষা করছে তাতে তিনি এরশাদকে রাষ্ট্রপতি পদে বসানোর ঝুঁকি নেবেন না। তার চেয়ে ‘গৃহপালিত বিরোধীদলীয় নেতা’ হিসেবেই এরশাদকে বেশি পছন্দ করবেন শেখ হাসিনা।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মার্চ, ২০১৩ ভোর ৪:২৮