হঠাৎ গুরুত্বপূর্ণ 'হেফাজতে ইসলাম'
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
হঠাৎ করেই দেশজুড়ে আলোচনায় উঠে এসেছে 'হেফাজতে ইসলাম' নামের একটি ইসলামী অরাজনৈতিক (!) সংগঠন। আগামী ৬ মার্চ এ সংগঠনটি লং মার্চের কর্মসূচী ঘোষণা করেছে। চট্টগ্রামের দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসা হলো সম্প্রতি বহুল আলোচিত হেফাজতে ইসলামের প্রধান কার্যালয়। হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতা হলেন শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী।
সরকারের কাছে হেফাজতে ইসলাম এতোই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে যে, তাদের দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কজন ব্লগারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ব্লগার মশিউর রহমান বিপ্লব, রাসেল পারভেজ, সুব্রত শুভ ও আসিফ মহিউদ্দিনের পর আরো ৭ ব্লগারকে গ্রেফতারের জন্য গোয়েন্দা পুলিশ অভিযান শুরু করেছে। হেফাজতে ইসলামসহ কয়েকটি ইসলামী দলের দাবির প্রেক্ষাপটে সরকার ব্লগারদের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নিয়েছে। একটি গণতান্ত্রিক দেশে যা মোটেও কাম্য নয়, এ হলো মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপ।
যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ও জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগে গত ৫ ফেব্রুয়ারি ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের প্রতিবাদই দেশব্যাপী গণজাগরণ সৃষ্টি করে এবং এই আন্দোলনে যুক্ত হয় বিভিন্ন ছাত্র ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। শাহবাগে গণজাগরণ আন্দোলন শুরুর পর হেফাজতে ইসলামের নামে মাঠে নামে কয়েকটি ইসলামী দল, যারা মঞ্চের মুখপাত্র ইমরানসহ ব্লগারদের বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে ইসলাম অবমাননার অভিযোগ এনে তাদের শাস্তি দাবি করে।
' হেফাজতে ইসলাম' নামের ভুঁইফোড় সংগঠনটি সরকারের কাছে হঠাৎ করেই এতো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলো তা রহস্যজনক। সরকারের কাছে সংগঠনটি ১৩ দফা দাবী জানিয়েছে। দাবীগুলো হলো---
১. সংবিধানে ‘আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনঃস্থাপন এবং কোরান-সুন্নাহ্ বিরোধী সকল আইন বাতিল করতে হবে।
২. আল্লাহ্, রাসুল (সা.) ও ইসলাম ধর্মের অবমাননা এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে কুৎসা রোধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে আইন পাস করতে হবে।
৩. কথিত শাহবাগী আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী স্বঘোষিত নাস্তিক-মুরতাদ এবং প্রিয় নবী (সা.)-র শানে জঘন্য কুৎসা রটনাকারী কুলাঙ্গার ব্লগার ও ইসলাম বিদ্বেষীদের সকল অপপ্রচার বন্ধসহ কঠোর শাস্তিদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
৪. ব্যক্তি ও বাক-স্বাধীনতার নামে সকল বেহায়াপনা, অনাচার, ব্যভিচার, প্রকাশ্যে নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ, মোমবাতি প্রজ্বলনসহ সকল বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হবে।
৫. ইসলামবিরোধী নারীনীতি, ধর্মহীন শিক্ষানীতি বাতিল করে শিক্ষার প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে।
৬. সরকারিভাবে কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা এবং তাদের প্রচারণা ও ষড়যন্ত্রমূলক সকল অপ-তৎপরতা বন্ধ করতে হবে।
৭. মসজিদের নগরী ঢাকাকে মূর্তির নগরীতে রূপান্তর এবং দেশব্যাপী রাস্তার মোড়ে ও কলেজ-ভার্সিটিতে ভাস্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপন বন্ধ করতে হবে।
৮. জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সকল মসজিদে মুসল্লিদের নির্বিঘ্নে নামাজ আদায়ে বাধা-বিপত্তি ও প্রতিবন্ধকতা অপসারণ এবং ওয়াজ-নসিহত ও ধর্মীয় কার্যকলাপে বাধাদান বন্ধ করতে হবে।
৯. রেডিও, টেলিভিশনসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় দাড়ি-টুপি ও ইসলামী কৃষ্টি-কালচার নিয়ে হাসি-ঠাট্টা এবং নাটক-সিনেমায় খল ও নেতিবাচক চরিত্রে ধর্মীয় লেবাস-পোশাক পরিয়ে অভিনয়ের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের মনে ইসলামের প্রতি বিদ্বেষমূলক মনোভাব সৃষ্টির অপপ্রয়াস বন্ধ করতে হবে।
১০. পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশব্যাপী ইসলাম বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত এনজিও এবং খ্রিস্টান মিশনারীদের ধর্মান্তকরণসহ সকল অপ-তৎপরতা বন্ধ করতে হবে।
১১. রাসুলপ্রেমিক প্রতিবাদী আলেম-ওলামা, মাদরাসা ছাত্র এবং তৌহিদী জনতার ওপর হামলা, দমন-পীড়ন, নির্বিচার গুলিবর্ষণ এবং গণহত্যা বন্ধ করতে হবে।
১২. সারা দেশের কওমী মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষক, ওলামা-মাশায়েখ এবং মসজিদের ইমাম-খতিবকে হুমকি-ধামকি ও ভয়ভীতি দানসহ তাদের বিরুদ্ধে সকল ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে।
১৩. অবিলম্বে গ্রেপ্তারকৃত সকল আলেম-ওলামা, মাদরাসা ছাত্র ও তৌহিদী জনতাকে মুক্তিদান, দায়েরকৃত সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং আহত ও নিহতদের ক্ষতিপূরণসহ দুষ্কৃতকারীদেরকে বিচারের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দিতে হবে।
এই ১৩ দফা দাবীতেই হেফাজতে ইসলাম ৬ এপ্রিল লং মার্চের ঘোষণা দিয়েছে। লংমার্চে কোনো রকম বাঁধা দেওয়া হলে তারা লাগাতার হরতাল কর্মসূচী দেবে বলে হুমকি জানিয়েছে। তাদের হুমকির কাছেই নত শিকার করে সরকার মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে খর্ব করে ব্লগারদের গ্রেফতার করা শুরু করেছে। শুধু তাই নয়, সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায় থেকে হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের সন্তুষ্ট করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা সূত্রে জানা গেছে।
হেফাজতে ইসলাম নিজেদের অরাজনৈতিক দল হিসেবে দাবী করলেও অনেকেই এটাকে ছদ্মবেশধারী জামাতে ইসলাম বলে মনে করছেন। ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের প্রতিপক্ষ হিসেবেই এদের সব কর্মসূচি। দূর্ভাগ্যের ব্যাপার হলো, সরকারের কাছেও এরা হয়ে উঠেছে গুরুত্বপূর্ণ।
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…
১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন
ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)
ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন
মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট
মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন
'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'
নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ
আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন