আবার লিখতে বসলাম।
কুয়েতে পা ফেলে নিজেকে রাজা রাজা মনে হতে লাগলো। কিন্তু আমি যতই রাজা ভাবি না কেনো মাস শেষে আমাকে গুনতে হয় অনলি কুয়েতি ৯০ দিনার।
মোটামুটি ভাবের উপর থাকতাম। রুমমেট একজন সে প্রতিদিন সকালে বের হত আবার অফিস আওয়ারের আগেই অফিসে পোছাতো। বলে নেওয়া ভালো এখানে আমি একজন অফিস পিওন ছাড়া আর কিছু না।
মাষ শেষে যেখানে আমাকে ৯০ দিনার পেয়ে সন্তষ্ট হতে হয়. সেখানে আমার চেয়ে নিম্নমান জীবনয...াপনকারী রুমমেট মাসে মাসে লাখ লাখ টাকা দেশের বাড়ী পাঠাতো।
হ্যা আমার রাজা ভাবই আমাকে জীবনের অঙ্ক মিলাতে দিচ্ছে না। ভাবনার মোড় ঘুড়লো বসের এককথায়। "তোমার অভিবাসী ছাড়া আর কিছুই না".
পরের দিন রুমমেটকে বললাম সকালে যে কাজে যায় সে কাজে আমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য. রুমমেট ভাবলো আমি দুষ্টুমি করছি। সে বললো- আপনাকে দিয়ে এ কাজ হবে না। রিকুয়েষ্ট করাতে সে সকাল ভোড়ে ডাকলো। সভাবত, এতো ভোরে আমি ঘুম থেকে উঠি না।
আমাকে নিয়ে যাওয়া হল একটা শিপইয়ার্ড এর কন্ট্রেইনারের কাছে। সেখানে বাধাকপির এক চালান এসেছে , যেগুলো নামাতে হবে। আমাকে প্রাথমিক অবস্থায় শুধু বোঝা উঠিয়ে দিতে হবে। বিশাল এক কন্ট্রেইনার এর মাল নামাতে হবে ভেবেই আমার মাজা ধরে এলো। যাইহোক এক কন্ট্রেইনার মাল নামিয়ে আমি হাফ ছেড়ে বাচলাম। আর মনে মনে ভাবছি আজই শেষদিন। এরপর অন্যান্যরা বললো তারা আরও ২ কন্ট্রেইনার মাল নামাবে। কষ্ট করে আরো ২ কন্ট্রেইনার মাল নামিয়ে মোটামুটি ৩০ দিনার পেলাম।
বাসায় এসে শরীর সম্পুর্ণ ছেরে দিল। সেদিন আর অফিসে যেতে পারলাম না।
পড়ের দিন রুমমেট জিজ্ঞেস করলো আজকে যাবো কিনা? আমার চেহাড়ার ভাবমুর্তি দেখে সে তাচ্ছ্যিলের দিকে তাকালো। যেটা কখনোই আমি সহ্য করতে পারি না। বললাম "হ্যা যাবো"
আজ কাজ করে আগের মত ততোটা খারাপ লাগলো না বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে অফিস করতে পারলাম। রাতে বাসায় ঘুমানোর আগে ভাবতে লাগলাম-"১ দিনে কামাই ৩০ দিনার আর মাসে কামাই ৯০ দিনার, ১০ দিনের কামাই একদিনে কামাইলে মন্দ কী?"
আমার সাহেবানা ঘুচলো। মাস শেষে লাখ লাখ টাকা বাড়ীতে পাঠাতে পারছি আর নিজের জন্য তো থাকলই।
এখন আর কষ্টকে কষ্ট মনে হয়না। সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত আমাকে বদলাতে সাহায্য করেছে। কোন কাজকেই তুচ্ছ ভাবা উচিত নয়। আর আমাদের প্রবাসীদের টাকা মাটি কামড়েই তুলতে হয়।
ঊতসর্গ: সকল প্রবাসী ভাইদের শুভ কামনায় , যারা আত্মীয়জন ছেড়ে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিক চাকা সচল রাখছে।