ল্যামপোষ্টের আলোয় রাতের আধারের সব কিছুই দেখা যায়।
এমনকি দরিদ্রদের দারিদ্রও দেখা যায়।
কিন্তু দরিদ্রদের দু:খলাঘব করার মত বিষয়গুলো দেখার মত যথেষ্ট
উজ্জল আলো ল্যামপোষ্ট দিতে পারে না।
আশা করি পুরোটা পড়বেন এবং আপনার মতামত আশা করছি।
রহিম চাচা , বয়স্ক এক রিকশাওয়ালা।
প্রত্যেকদিন প্রত্যুশে রিক্সা নিয়ে বের হয় জীবিকার তাগিদে।
কত কিছুই না তাকে সহ্য করতে হয়।...
তপ্ত রোদে রিক্সা চালিয়ে যখন তুচ্ছ বিষয়ে যাত্রীদের গালি খেতে হয়।
তখন নিজেকে এ পেশা থেকে গুটিয়ে ফেলতে মনে চায়।
সংসারের বাকী সদস্যদের মুখের দিকে তাকিয়ে আবার এই পেশায় নামতে হয়।
সকালবেলায় রিক্সা নিয়ে গলির মুখে বেড়োতেই মেয়ে বয়সী একটা যাত্রীকে পেলো।
দিনের প্রথম যাত্রা। যদিও আজ সকালে রহিম মিয়ার যাত্রাটা শুভ হয়নি।
ঘর থেকে বের হওয়ার সময় পথের সামনে ঝাড়ু পড়েছে।
এই নিয়ে মধুর মাকে প্রচন্ড গালমন্দ করছে।
এখন নিজের কাছেই ব্যাপাড়টা খারাপ লাগছে।
চৌরাস্তায় রিক্সাটা আসা মাত্র, পিছন থাকা মেয়েটির ভুল ইশাড়ার
কারনে একটা প্রাইভেটকার সরাসরি রহিম মিয়ার পা বরাবর গাড়ি লাগিয়ে দেয়।
রিক্সাসহ উল্টে পড়ে রহিম মিয়া আর মেয়েটি।
আশেপাশে লোকজন এসে চারপাশ ঘিরে ধরে।
অতিউতসাহীরা ব্যস্ত হয়ে পড়ে মেয়েটিকে নিয়ে।
আপু কোথাউ লেগেছে কিনা, হাতের বাম পাশে আঘাত
পেয়েছেন পাশের ডিসপেনসারীতে চলেন ইত্যাদি ইত্যাদি।
এদিকে রহিম মিয়া তার রিকসাটাকে সাইড করা নিয়ে ব্যস্ত।
রিক্সা সাইড করে দিয়ে মেয়েটির খোজ নিল।
অন্য একটা রিক্সায় উঠিয়ে দিয়ে
নিজের্ রিক্সা নিয়ে গ্যারেজের দিকে রওনা হল।
একবছর আগের পুরনো লুংগীটা ছিড়ে গেছে,
পায়ে মারাত্মক রকমের জখম হয়েছে এতোক্ষন খেয়ালি করেনি।
হঠাত তার মনে প্রশ্ন জেগে উঠলো- আমিও তো এক্সিডেন্ট করলাম,
আমিও রক্তাক্ত হলাম, আমাকে তো কেউ সহানুভূতি পর্যন্ত দেখালো না।
রহিম মিয়ার চোখে পানি চলে আসলো।
গরীব বলে কী আমি মানুষ না?
কেঊ কি সহানুভূতির সাথে এতটুকু সান্তনা দিতে পারতো না?
লুংগীটা রক্তে ভিজে যাচ্ছে। যত রক্ত বের হচ্ছে ততই সমাজের মানুষের
দুই নীতি তার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ করছে। সে বারবার নিজের রক্তের দিকে
তাকিয়ে পরীক্ষা করছে মানুষের রক্ত কিনা।
নিজেকে বার বার ধিক্কার দিতে মনে চাচ্ছে "তুই গরীব, তুই মানুষ না".